দায়িত্বের সংসার ।। লেখক: সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
বিয়েটা হয়েই গেলো।হুহ্ আমিও বিবাহিত। আমারো এখন আলাদা ছোট্ট একটা সংসার হতো কিন্তু এসে পড়লাম বড় বোনের সতীন হয়ে। হ্যাঁ! বিয়ে টা তো হলো আমার বোন জামাই সায়ান মাহমুদ এর সাথে। যার সাথে ঠিক ছয় মাস আগে আমার বড় বোন অনামিকা ইসলামের সাথে হয়েছিলো। না আপু মরেনি। বেঁচেই আছে তবুও আমাকে তার সতীন হয়েই আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে৷
.
পাঁচ মাস আগে যখন ভাইয়া - আপু ফ্যামিলি ট্রিপ থেকে ফিরছিলো তখন হঠাৎ এক্সিডেন্টে ভাইয়ার বাবা মা মারা যায়। আর আপু চলে যায় কোমায়। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙেছে, মাথায় আঘাত লেগেছে।মা-বাবা কে হারিয়ে সায়ান ভাইয়ার পৃথিবীই তো অনামিকা আপু। সব ভালোই চলছিলো কিন্তু ওই যে কপালের লিখন। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো আপুর জন্য রাখা নার্স আপুর টেককেয়ার করেনি সেই মূল্য আমাকে আমার জীবন দিয়ে দিতে হলো।
.
.
কোন কালেই আমি আমার বাবার প্রিয় ছিলাম না। আমার জায়গায় ছেলে আশা করেছিলো তো তাই হয়তো আমাকে মেনে নিতে পারেনি। সেদিকে আপু তার চোখের মণি বড় মেয়ে৷
আপুর দেখাশোনা করার জন্য আমাকে তার সতীন করার কোন প্রয়োজন ছিলো কি না আমি জানি না। তবে বিগত পনেরো মিনিটে যতটা আন্দাজ করেছি তা হলো
১- আমাকে বিয়ে দিলে বাবার ঘাড়ের বোঝা কমবে।
২-সংসার টা নিজের মনে করে আগলে রাখবো। যদিও আমাকে বলা হয়েছে আপুর আমানত এসব।
.
আচ্ছা? আমিও তো এখন সায়ানের স্ত্রী তাহলে কি করে এসব আপুর আমানত হলো?.
৩- মেয়ের জামাই যদি পর নারীতে আসক্ত হয়ে যায়? যদি আপুকে না রাখে তাই তার জন্য তার বেড পার্টনার দিয়ে গেলো।
.
আপু তো কোন একদিন সুস্থ হবে। সেদিন কি জবাব দিবে তারা? তার ভালোবাসার সংসারে কি আপু আমাকে মেনে নিবে?
.
.
ডায়েরি তে কথা গুলো লিখে আয়নার সামনে দাঁড়ালো অতসী। কিছুক্ষণ আগেই তার বিয়ে হয়েছে অথচ তার শরীরে নেই কোন হলুদের গন্ধ নেই কোন বিয়ের সাজ। চুপচাপ আয়নায় নিজেকে দেখছে সে।
গলার নিচে বেশ কালো হয়ে গেছে। কপালের বা পাশে ব্যান্ডেজ লাগানো৷ ঠোঁট কেটেছে।হাত, পায়ে কালশিটে।
.
ফোন টা নিয়ে গেছে ওর বাবা। তাইতো চাইলেও প্রিয় মানুষটা কে আর দেখতে পারবে না। তার ছবিও যে অতসীর জন্য অনেকটা সাহস জুগান দিতো।
এক হিসেবে ভালোই হয়েছে সে তো মুক্তি চেয়েছিলো আজ পেয়েও গেলো।
আচ্ছা সে কি জানে সে মুক্তি পেয়েছে?
.
দরজায় নক পড়ছে। সায়ান ভিতরে এলো। কেনো যেনো অতসী কে তার সহ্য হচ্ছে না। সায়ান প্রচন্ড ভালোবাসে অনামিকা কে। তাই তো তার জন্য বাধ্য হয়েই তার সতীন আনলো। হাহ্ সতীন? এই মেয়েকে সায়ান চেয়েও দেখবে না। অনামিকা জীবন্ত লাশ হলেও ওকে নিয়ে সায়ান সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
.
অতসী কে ডেকে সায়ান বললো
- দেখো অতসী! আমি জানি তুমি মেনে নিতে পারছো আমাকে কিন্তু আমি তোমাকে মানতে পারবো না। আমার কাছে কখনো কোন অধিকার চাইবে না। তোমাকে বিয়েটা শুধু মাত্র অনার জন্য করা । তুমি অনার খেয়াল রাখবে এতেই হবে। তাছাড়া আর কোন কিছুই আমার থেকে আশা করবা না। এই বাসায় যথেষ্ট শালীন হয়ে চলবে। যখন তখন যেনো ওড়না ছাড়া না দেখি। আর হুম! এবার ছেলেদের পিছন ছাড়বে। তুমি এখন মিসেস সায়ান মাহমুদ। আশা করছি মাথায় রাখবে।
.
-ভাইয়া! একটা কথা ছিলো
- বলো
-আসলে আমি টিউশনি করাতাম। মূলত আমার লেখাপড়া তাতেই চলতো৷
-তো?
-আমি আসলে একটু বের হতাম। সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসবো।
.
.
সায়ান কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে অতসীর সামনে না অতসীর গায়ে টাকা ছুড়ে মারলো আর বললো
- নার্স কে আমি ২৫ হাজার দিয়ে রেখেছিলাম। এখানে ত্রিশ আছে। প্রতি মাসের এক তারিখে পেয়ে যাবে। কিন্তু মাইন্ড ইট অনার যত্নে যেনো ক্ষতি না হয়।
.
.
ঠোঁটের পাশে লেগে আবার একটু রক্ত আসলো। কষ্ট লাগছিলো কিন্তু প্রকাশ করে কি লাভ? টাকাগুলো রেখে অনামিকার কাছে চলে এলো অতসী। আপুর সব টাইমটেবল করতে হয়। লিকুইড খাবার দেওয়া হয়। অতসী খাবারের চার্ট দেখে খাবার বানিয়ে এনে খাইয়ে দিলো। হাত মুখ মুছিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে দিয়েছে।
অতসীর আপু খুব সুন্দরী তাই তো সায়ান ভাইয়াত মতো স্বামী পেয়েছে। দুজন দুজনের সমান সমান। রুপে, গুণে কিংবা শিক্ষায়।
আপুদের বিয়ে টা হলো ঘরোয়া ভাবেই। কথা ছিলো ট্রিপ থেকে ফিরে এসে বড় করে আয়োজন করবে কিন্তু তার আগেই সব ওলট পালট হয়ে গেছে।
.
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে
অতসী ঘুমিয়ে গেছে তার খেয়াল নেই। কারণ সারাদিন না খাওয়া শরীরে টানছিলো না।
.
ঘুম যখন ভাঙলো তখন বুঝতে পারলো ও কোথাও থেকে পড়ে যাচ্ছে। কারো কথার শব্দ শুনতে পারছে।
.
-এই বেহায়া মেয়ে! এত সাহস কি করে হয় আমার অনার পাশে ঘুমানোর? অনার জায়গা নিতে চাও? এটা আমার আর অনার খাট। এই ঘরে তুমি আসবে কিন্তু অনার সংসারে ঢুকার চেষ্টা করবে না। সাহস কি করে হয় এই খাটে স্পর্শ করার? এখানে অনা ব্যতীত অন্য কোন মেয়ের জায়গা নেই।
.
কথাগুলো বলে সায়ান জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। অতসীর হাত পা কাপছে। ঘুম ঘুম চোখে দরজার কাছে দু পা মুড়ে বসে অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠলো
------মা!!!
.
চলবে
.
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসীর মা মাগরিবের নামাজ পড়ে কেবল দুচোখ বন্ধ করেছিলো। হঠাৎ মনে হলো অতসী ডাকছে। চোখ খুলে দেখে মেয়ে তো নেই। থাকবেই বা কি করে? মেয়ে তো অনামিকার বাসায়।
.
- অতসীর বাবা... মেয়েটার একটু খোঁজ খবর....
.
-কত বার বলছি আমাকে অতসীর বাবা বলবা না? বলছি না অনামিকার বাবা বলে ডাকতে?
- কেনো অনামিকার বাবা বলে ডাকবো? অতসী আমার বড় সন্তান তাই অতসীর বাবা বলেই ডাকবো।
- অতসী না! অনামিকা আমাদের সন্তান৷
-হ্যাঁ! মানছি অনামিকা আমাদের সন্তানের মতো। কিন্তু কেনো আপনি নিজের মেয়ের সাথে এমন করেন? কোন দায়িত্ব তো পালন করলেন না। মেয়েটা কে কোন দিন আদর করে মা ডাক টাও ডাকলেন না। অথচ?
- অথচ কি? তোর মেয়ের জন্মের সময় আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে ভুলে গেছিস?
-শোন অনামিকা আমাদের প্রথম সন্তান। ও আমাদের সন্তান আর কারো না। ওর থেকে প্রথম মা-বাবা ডাক শুনেছি। আর হ্যাঁ! আমার মেয়েটা পাঁচ মাস পর কোমা থেকে ফিরেছে কিন্তু প্যারালাইজড। সব শুনতে পাচ্ছে অথচ রেসপন্স দেখাচ্ছে না। সময় মতো দেখাবে। এখন ওর সেবা যত্নের প্রয়োজন তাই অতসীর ওখানে থাকা বেশি দরকার।
- মেয়েটার পরীক্ষা চলছে।
- তোর মেয়ে জজ হবে না ব্যারিস্টার? যে এত পড়তে হবে?
- আপনি কি মানুষ? অনামিকা কে তো....
- কোথায় কোথায় আমার মায়ের সাথে তোর অপয়ার তুলনা করবি না। ভুলে যাস না তোর ওই মেয়ে জন্মের সময় আমার অনামিকার মা কে খেয়েছে। আমার অনামিকা কে অনাথ করেছে৷ আমার থেকে আমার কলিজার টুকরা বোন কে কেড়ে নিয়েছে।
.
- এসব আপনি কি বলছেন? ও কিভাবে নিবে? সেদিন যা হয়েছিলো সব টা এক্সিডেন্ট মাত্র।
- কিন্তু সেদিন ওই মেয়ে জন্ম নিলো। অনামিকা কে অনাথ করে।
- নাহ্! অনামিকা অনাথ হবে কেনো? অনামিকা তো পেয়েছে মা-বাবা হিসেবে মামা-মামি কে কিন্তু আমার মেয়েটা জন্মের সাথে সাথে অনাথ হয়েছে।
- আমি অতসীর প্রতি দায়িত্বের অবহেলা করিনি।
-তাই বুঝি অনামিকার সতীন বানিয়ে রেখে এলেন?
- আমার অনামিকা মা সুস্থ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। দোয়া করো অনামিকা একটু একটু রেসপন্স করুক।
-অনামিকা সুস্থ হলে কি করবেন? সায়ান-অতশীর ডিভোর্স দিবেন? আমার মেয়েটার জীবন জীবন না?
.
.
আমিনুর ইসলাম আর কথা বাড়ায় না। চলে যায়। তার কাছে উত্তর আছে কি নেই? কিন্তু অনামিকা তার দায়িত্ব। তার বোনের শেষ অংশ। অনামিকার জন্য সে সব করবে। কখনো জানতে দিবে না অনামিকা তাদের সন্তান না। অনামিকা কে আগলে রাখবে সব টা দিয়ে।
.
.
ডক্টর এসে অনামিকা কে চেকাপ করছে। অনামিকার রেসপন্স খুব কম। ব্রেনের অনেকটা অংশ কাজ করছে খুব ধীরে। পাঁচ মাস কোমায় থাকার জন্য কি হাত-পা খুব একটা নাড়াচ্ছে না? কিন্তু সব বুঝা যাবে টেস্টের রিপোর্ট আসলে। অনামিকা কোমা থেকে বেরিয়েছে ৭দিন কিন্তু অতসী মেয়েটা বেশ যত্ন করছে।
বুঝাই যায় মেয়েটা খুব ভালোবাসে বোন কে। প্রতিদিন বোনের পাশে গিয়ে নিয়ম করে বসে থাকতো। সাত দিন আগে যখন অনামিকা প্রথম রেসপন্স করলো তখন সায়ান জেদ ধরলো বাসায় নিয়ে আসবে আর রাখবে না। কথা মতো তাই হলো কিন্তু আজ সকালে সায়ান অফিস যাওয়ার পর নার্স নিজের মতো বসে ফোনে কথা বলছিলো এদিকে অনামিকার শ্বাসটান উঠে খুব খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। এমনি তেই অনামিকার এজমার সমস্যা রয়েছে।
.
ভাগ্যিস সায়ান ফিরে আসে। তারপর খুব কষ্টে সব টা সামাল দেয় ডক্টর ইফাদ৷
.
.সায়ান -ইফাদ অনেক দিনের বন্ধু। স্কুল কলেজের গন্ডিকে এরা একত্রে পার করেছে। সায়ানের সব সিদ্ধান্তে ইফাদ সাহায্য করেছে। এমনকি অনামিকা কে পটানোর জন্য যা যা করা প্রয়োজন সব করেছে, ফ্যামিলি রাজি করানোর ক্ষেত্রেও ইফাদের অবদান অনেক কিন্তু আজ অতসীর সাথে যেটা হলো মেনে নিতে পারেনি ইফাদ। অনামিকার দেখাশুনা করার জন্য বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিলো? তাছাড়া মেয়েটার জীবন কে অনিশ্চিত করার কি খুব প্রয়োজন ছিলো? একদিন না একদিন অনামিকা সুস্থ হবে। তখন অতসীর কি হবে কারো কোন মাথা ব্যথা কি নেই এই বিষয়ে? অবশ্য অতসীর বাবার আজ যে রুপ ইফাদ দেখেছে তাতে করে ইফাদ বুঝে গেছে আর যাই হোক এই মেয়ের প্রতি তার বাবার কোন দরদ নেই।এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কল এলো ইফাদের ফোনে । স্ক্রীনে সায়ানের নাম৷
.
-অনামিকার রিপোর্ট কোন নাগাদ পাওয়া যাবে?
-আসবে দু এক দিন পর। সায়ান তুই কি ফ্রি আছিস?
- হ্যাঁ।
-অতসী কে কেনো বিয়ে করলি?
- জানি না।
- জানি না মানে কি? তুই অন্তত মেয়েটা কে বিয়ে না করলেও পারতি।
- মানে?
-অতসী তো পালানোর চেষ্টাও করলো, পরিনাম দেখলি তো, যদি তুই একবার না করতি তাহলে তো বিয়ে হতো না।
-ও পালানোর চেষ্টা করলো বলেই তো বিয়েটা করলাম।
- মানে?
- যে মেয়ে আমরা সবাই থাকতে অনামিকা কে ছেড়ে পালাতে পারে সে মেয়ে আমার অজান্তেও পালাতে পারে।
- অতসী পালাচ্ছিলো কারণ ও বিয়ে করবে না বলে। মেয়েটার ভবিষ্যৎ শেষ করে দিলি।
-হুহ্! ওর মনে তো লাড্ডু ফুটছে।
-মানে কি?
- অতসী বরাবর অনামিকা কে হিংসে করতো আর সবার সামনে এমন ভাব টা করতো যাতে করে মনে হয় কিছুই জানতো না। অনামিকার সব জিনিস ওর চাই এমন কি আমাকেও ওর চাই। তুই জানিস অতসী কতটা ক্যারেক্টারলেস মেয়ে? কত ছেলের সাথে ওর চলাফেরা? আমার সাথে অনামিকার বিয়ে ঠিক জেনেও আমাকে চাইতো। এমন কি অনামিকা কে ও ধমকিয়েছিলো ও যেকোন মূল্যেই আমাকে বিয়ে করবে।
.
- এসব তোকে কে বলেছে? তুই নিজে দেখেছিস এমন কিছু?
-নাহ্! অনা এসব বলেছিলো।
- বাহ্! ভালো তো তাহলে বলতে হয় তুই অতসীর মনের ইচ্ছা পূরণ করলি!
-নাহ্!আমি ঠিক সে পরিমাণ কষ্ট ওকে দিবো যতটা অনামিকা কে অতসী দিয়েছে। যতটা অনামিকা কেঁদেছে ঠিক ততটা কাঁদাবো।
- তুই দিন দিন মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছিস.... যখন বুঝতে পারবি তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। হয়ে যাবে না অলরেডি হয়েছে। মেয়েটাকে পারলে মুক্তি দিয়েদে৷ এখনো সময় আছে।
.
সায়ান কোন কিছু বলে না। প্রতিশোধ তো সবে শুরু৷ অনামিকার প্রতিটি কষ্টের হিসেব তো অতসীকে দিতে হবে। তারপর না হয় মুক্তির কথা চিন্তা করা যাবে।
.
স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে বেডরুমে যাওয়ার সময় অতসীর রুম পড়লো। হুহ্ আজ তাদের বাসর রাত। অতসী কি তার জন্য অপেক্ষা করছে না কি? সাত পাঁচ ভেবে অতসীর রুমে গেলো সায়ান। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে । নিস্পাপ লাগছে কিন্তু মিস অতসী তোমার এই চেহারার পিছনে যে এক জঘন্য ব্যক্তি লুকিয়ে আছে। যাকে সায়ান টেনে হিচড়ে বের করে আনবে। খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার তাই না আমার বউ হওয়ার । এজন্য তুমি এত জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছিলে।সেদিন তোমার জন্য আমার পরিবার শেষ করে দিয়েছো। তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। সব থেকেও নেই। তোমাকে তো আমি ছাড়বো না। তুমি কতটা অসহায় হতে যাচ্ছো তুমি নিজেও জানো না৷ অনামিকার প্রতি করা তোমার প্রতিটা অত্যাচারের হিসেব তুমি পাবে। আমার মা-বাবা কে খুন তুমিই করেছো। সেদিন যদি তুমি জঘন্য নাটক টা না করতে তাহলে আমি এত ডেস্পারেট হতাম না৷ এক্সিডেন্ট হতো না। অনামিকার মান-সম্মান নিয়ে খেলতে চেয়েছিলে না তুমি? তোমাকে আমি মাঝ রাস্তায় বেইজ্জত করবো।
.
চলবে....
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
বিয়ের পর দিন মেয়েদের জীবনে সকাল টা হয় অনেকটা মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ সকাল।স্বামী,সংসারে প্রথম সকাল। নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়। কিন্তু অতসীর জন্য এমন কিছুই নেই। অনামিকার সংসার, অনামিকার স্বামী। সম্পর্কে সে তার সতীন হলেও অতসীর কোন জায়গা হয়তো এই সংসারে হবে না।
আফসোস নেই। যার বাবার সংসারেই সে ছিলো না থাকার মতো এটা তো আবার তার বাবার আদরের মেয়ের সংসার।
মাঝেমধ্যে অতসীর মনে হয় সে তার বাবার মেয়ে না। না হলে তার বাবা তার সাথে এতটা খারাপ কিছু করতো না৷
ছোট বেলায় অনামিকা হয়তো সত্য বলতো -অতসী কে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো। প্রথমে বিশ্বাস করতো না কিন্তু যখন থেকে ওর বাবাও রাস্তার মেয়ে বলে ডাকতো তখন থেকে অতসী নিজেও মনে করে হয়তো তাকে সত্যি রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে।
.
.
সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো অতশীর। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে তার চা খাওয়া খুব দরকার মেয়েটা খুব চা-খোর।
চা বানিয়ে রুমে যেতেই সায়ানের ডাক পড়লো। কয়েক চুমুক সবে নিয়েছে কিন্তু সায়ানের চিল্লানিতে আর চা!
.
-ষাড়ের মতো চেচাচ্ছেন কেনো?
- কি বললা?
- না মানে ডাকছিলেন কেনো?
- তোমাকে এমনি এমনি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে রাখিনি যাও অনাকে ফ্রেশ করো।
.
অতসী কোন উত্তর দেয় না। চুপচাপ অনামিকা কে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসে।
সায়ান স্টাডিরুমে বসে বসে সব দেখছিলো। অতসী কে সে বিশ্বাস করেনা। তাই কাল রাতেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে পুরো রুমে। অতসী অনামিকার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করলে ওকে শেষ করে দিবে।
অতসী যখন অনামিকার পা মুছিয়ে দিচ্ছিলো তখন সায়ান হাসতে থাকে। বিদ্রুপের হাসি৷ ডুব দেয় অতীতে
.
.
কল দেওয়ার পর অনেকক্ষণ যাবত কান্না করছে অনামিকা। ওর প্রতিটি নাকটান দিয়ে কান্নারসুর যেনো তীরের মতো বিধছে।
.
- অনা? কি হয়েছে?
-কিছু না।
- কাঁদছো কেনো?
- কাঁদছি না তো।
-আমি বুঝি তো। কেউ কিছু বলেছে?
.
এবার অনামিকার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। ফুপাতে ফুপাতে বললো
.
-অতসী বাসার কোন কাজ করে না, সব কাজ আমি করি। আজ একটু পানি আনতে বলেছি বলে ও আমাকে যা ইচ্ছা বলে গালি দিলো। আর জানো কি বললো?
-কি?
-আমাকে না কি সারাজীবন ওর দাসীবান্দি হয়ে থাকতে হবে। ওর বাসায় কাজ করে খেতে হবে।
.
কথা বলেই আবার কাঁদতে থাকে অনামিকা৷ সায়ানের প্রচন্ড রাগ সেদিন উঠলেও কিছু করতে পারেনি কিন্তু আজ মিস অতসী কে সে অনামিকার দেখাশুনা করার জন্যই রেখেছে। যে অনামিকার কাজের লোক ব্যতীত কিছুই নয়।অনামিকা বুঝতে না পারলেও অনুভব তো করতে পারবে?
.
.
ঘোর কাটলো ফোন কলে। সায়ানের ফ্রেন্ড আরহান কল দিয়েছে। পেশায় সে এডভোকেট। সায়ানের লিগ্যাল এডাভাইজারো বলা যেতে পারে।
.
-সায়ান! তুই কি সিউর?
-হ্যাঁ!
-কিন্তু এতে অতসীর লাইফ রিস্কে পড়তে পারে।
-আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট হার। আই জাস্ট ওয়ান্ট দ্যাট ম্যান।
- ভেবে বলিস। আজ থেকে অতসী তোর নামে পরিচিত হবে যেখানে অনামিকার পরিচয় ঠুনকো নয় বলতে গেলে অস্তিত্ব নেই। কারণ কেউ কিন্তু জানে না যে অতসী না অনামিকা তোর প্রথম স্ত্রী। আর এটা যদিহয় যে এক্সিডেন্ট টা তোর বিজনেস রাইভালদের মধ্যে কেউ করেছে তাহলে কিন্তু অতসী হবে ওদের নেক্সট...
- আমি এটাই চাইছি। ওরা নেক্সট মুভ দিক। কেনোনা এতেই এর পিছনে কে আছে বেরিয়ে আসবে।
-তুই অতসী কে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছিস। মেয়েটার লাইফের একটা মূল্য আছে৷ যদি ওর কিছু হয়?
-অনার থেকে এট্যাকার দের দূরে রাখার এর থেকে ভালো কোন উপায় আমি এখন আর দেখছি না।
- যা ভালো বুঝিস কর।
.
.
সায়ান অনামিকার বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হয়। আগেই কাউকে জানায় নি। কারণ বিজনেস ট্রিপ ছিলো। সায়ান চেয়েছিলো ফিরে এসে বিয়ে করবে বেশ ধুমধামে কিন্তু অতসীর অত্যাচারে অনামিকা প্রায়ই মন খারাপ করে থাকতো। সায়ান বুঝতো না কেনো অনামিকা এসব সহ্য করে। ওর বাবা কে জানালেই তো অতসী ওকে জ্বালাতে পারে না কিন্তু অনামিকা ওর বাবা কে জানাতে নারাজ। এদিকে অনামিকার মন খারাপ দেখে কোন মতে বিয়ে করে ওকে নিয়েই সায়ান বিজনেস ট্রিপে। সাথে সায়ানের বাবা -মা ছিলো।। কারণ সায়ান ছিলো একমাত্র সন্তান আর ওর বাবা ওর মা কে ছাড়া কোথাও যেতো না।
.
দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছিলো। স্বপ্নের মুহূর্ত ছিলো। অনামিকার হাসি খুশি চেহারা, মা-বাবা। সব মিলিয়ে সময় টা সায়ানের জন্য অমূল্য।
কিন্তু....
কিন্তু অতসীর জন্য সব শেষ হয়ে গেলো। অতসী, অতসী, অতসী... এই মেয়েকে সায়ান ছাড়বে না। কোন দিন না।
.
.
- অতসী? এই অতসী?.
-জ্বী বলুন?
- এক কাপ চা দাও। পাঁচ মিনিটের মধ্যে
.
সাত মিনিটের মাথায় অতসী চা নিয়ে দাঁড়ায় সায়ানের সামনে।
মুচকি হেসে সায়ান চায়ের কাপ হাতে নেয়। অন্য হাতে অতসীর হাত ধরে হেটে বেসিনের সামনে নিয়ে গিয়ে ওর বাম হাতে পুরো এক কাপ গরম চা ঢেলে দেয়।
অতসী চিৎকার করতে নিলে বলে
-ভুলেও চিৎকার করবে না। অনা ঘুমে।
.
অতসী দাতে দাত চেপে সহ্য করে। চোখ দিয়ে পানি তো পড়ছেই। সায়ান অতশীর কানের কাছে গিয়ে ধীরেধীরে বলে....
.
- যার বউ হওয়ার জন্য এত কাঠখোট্টা করলে তার সম্পর্কে এটা জানোনা যে সে চা না কফি পছন্দ করে? কফি চাই। পাঁচ মিনিট সময়। না হলে আবার এমন হবে মাইন্ড ইট মিস অতসী।
.
.
অতসী চুপচাপ চলে গেলো। সায়ান রুমে এসে থম মেরে বসে গেছে। অতসীর কাছে যেতেই ওমন কেনো ফিল হলো? মেয়ের চুলে তো মারাত্মক স্মেল। কি দেয় চুলে? আর এত লম্বা চুল? বরাবরই সায়ানের লম্বাচুল পছন্দ হলেও অনামিকার চুল এত বড় রাখতো না। গরমের কারণে। উফফফ কি সব ভাবছে?
দ্রুত ফোন বের করে ম্যানেজার কে কল দিয়ে আজকের পার্টি সম্পর্কে সব কাজ দেখে নিতে বললো। আজ সে মিসেস সায়ান মাহমুদ হিসেবে অতসী কে পরিচয় করিয়ে দিবে৷ অতসী হয়তো চিন্তাও করতে পারবেনা যে পরিচয় সে এতদিন পেতে চেয়েছিলো সে পরিচয় পেয়ে ও ওর জীবনে কতটা বিপদ ডেকে আনছে। কথা গুলো ভেবে বিদ্রুপের হাসি হাসতে হাসতে পিছনের দিকে ঘুরতেই সায়ানের মনে হলো কেউ ওর দিকে গরম কিছু একটা ছুড়ে মেরেছে। উফ গলার দিকে, বুকে জ্বলে যাচ্ছে। চোখ গরম করে সামনে তাকাতেই দেখে অতসী দাঁড়িয়ে আছে। যার হাতে কফির মগ। তার মানে অতসী গরম কফি সায়ান কে ছুড়ে মেরেছে। এত সাহস কি করে হয় ওর? কিছু বলার আগেই অতসী বা হাতের তর্জনী নাড়িয়ে বললো....
.
- মি. সায়ান মাহমুদ। ভুলেও আমাকে এতটা অবলা নারী ভাববেন না। আমি স্টার জলসার কোন সিরিয়ালের নায়িকা নই যে আপনি অত্যাচার করবেন আর আমি সহ্য করবো। মনে রাখবেন আপনি যদি বুনো ওল হয়ে থাকেন তাহলে আমিও বাঘা তেতুল।
.
.
চলবে....
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসী এমন একটা কাজ করতে পারে এটা সায়ানের চিন্তা ভাবনার বাহিরে ছিলো। অবশ্য অনামিকা কে ও যে ভাবে প্রতিনিয়ত অত্যাচার গুলো করতো এখানে আজকের বিষয় কিছুই না।
ফ্রেশ হয়ে অনামিকার কাছে গিয়ে বসে সায়ান। সায়ানের দুহাতে মাঝে অনামিকার ডান হাত। কথা ছিলো আজকে ঠিক নতুন বউয়ের মতো করে সাজিয়ে ঘরে তুলবে৷ সেরাতে যখন ওরা মালেশিয়া তে রিসিপশনের শপিং করছিলো সে রাতেও অনামিকা খুব খুশি ছিলো। হঠাৎ সায়ানের ফোনে ম্যাসেঞ্জারের ওই রিকুয়েষ্ট ম্যাসেজ, ছবি গুলো সব উলট পালট করে দিলো। কেনো সেদিন যে অনামিকা কে সায়ান কষ্ট দিয়েছিলো? ওসব ছবি, ম্যাসেজ দেখার পরে সায়ানের একবারের জন্য মনে হয়নি সেসব ফেইক। অনামিকা বার বার বলেছিলো এসব অতসীর করা। ও গ্রাফিক্সের কাজ শিখছে ও এসব করেছে। কিন্তু সায়ান তখন অনামিকা কে বিশ্বাস করেনি।
রেগে অনামিকার গায়ে হাত তুললো। নেক্সট ফ্লাইটে বিডি তে ফিরে এয়ারপোর্টে থেকে বনানী বাসায় আসার সময় এক্সিডেন্ট টা হলো।
এক্সিডেন্টে মা-বাবার স্পট ডেথ, অনামিকার বেশ লাগলো। সায়ানের পায়ে লেগেছিলো। ড্রাইভারের ডান হাত চলে যায়। পিছন থেকে ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়।
.
সায়ানের মা-বাবা কে মাটি দেওয়ার সামর্থ্য হয়নি সায়ানের। এতটা দুর্বল ছিলো অসহায় হয়ে পড়েছিলো। শুধুই অতসীর জন্য।
বিষয় টা সায়ান পড়ে চিন্তা করে।
অতসী অনামিকা কে সরানোর জন্য ফেইক স্ক্রিনশট বানিয়ে সায়ান কে পাঠায়। সায়ান বিশ্বাস ও করে কিন্তু ফিরে আসার পর ওদের এক্সিডেন্টের বিষয় টা অজানা।
কে করিয়েছিলো এসব? সায়ানের আপন জন বলতে এখন শুধুই ওর স্ত্রী। ওর স্ত্রী হবে এট্যাকারদের জন্য নেক্সট।
তাই টোপ হিসেবে অতসী কে ব্যবহার করবে।
.
.
নিজের রুমে বসে গলার লকেট টা হাতে নিয়ে দেখছিলো অতসী।
দিহানের দেওয়া শেষ চিহ্ন৷ আচ্ছা? দিহান কি কখনো জানবে যে অতসী কতটা কষ্টে আছে? না কি সে কখনো খোঁজ নিবেনা। হয়তো নিবে না কারণ অতসী শুধুই তার জন্য অপমানের ছিলো। সে পাইলট, আর অতসী ন্যাশনালের স্টুডেন্ট। তার আগে পিছে কত মেয়েরা ঘুরে আর সেখানে অতসী ব্যাকডেটেড।বোরখা পড়ে, বিলাসিতা নেই, আসলে বিলাসিতা করার ক্ষমতা নেই। উচ্চ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থাকলেও ক্লাস এইটের পর বাবার কাছে থেকে দু পয়সাও পায়নি। অতসীর প্রতি দিহানের যা ছিলো সবটা ছিলো মোহ, আবেগ বা নেশা। তিন মাসের ছোট্ট সসম্পর্ক তো আরো দুই মাস আগেই শেষ করে দিয়েছে দিহান৷
আসলে সবাই দূর্বল কে নিশানা করে কি না!
তবে দিহান তো অতসীর জন্য ছিলো এক আশার ক্ষীণ আলো। যে ক্ষীণ আলো শক্তি যোগাতো। ফোনের ওয়ালপেপারে দিয়ে রাখা দিহানের ছবি দেখে প্রতিদিন মুচকি হাসতো অতসী৷
কাল খুব চেষ্টা করেছিলো পালিয়ে যেতে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না৷
কিভাবে থাকবো তোমায় ছাড়া দিহান জি? তুমি তো আমায় ভুলে বেশ আছো। আমি কেনো পারলাম না? জানো তো আমার না বিয়ে হয়ে গেছে৷ তোমার বন্ধুর সাথে। জানো তো আমি না এখন কারো দ্বিতীয় পক্ষ, আপুর সতীন৷ অন্যের সংসার আমাকে সামলানোর জন্য বন্দী করে রাখা হয়েছে।
আমাকে নিয়ে যাও না দিহানজি এখান থেকে। প্লিজ নিয়ে যাও। আমি পালানোর চেষ্টা তো কম করিনি কিন্তু পারছি না। আমি পারছি না দিহান জি।
.
.
কথাগুলো বলেই লকেট টা ঠোঁটের কাছে নিয়ে কেঁদে উঠে অতসী। জীবন কি শুধু কেড়েই নিতে জানে?
.
.
.
হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে অতসী। পার্লার থেকে মেয়েরা এসে সাজিয়ে দিলো। বউ বউ লাগছে। এই সাজের জন্য অতসী অনেক অপেক্ষা করেছিলো। ও নীল বেনারসি পড়বে আর দিহান পড়বে সাদা পাঞ্জাবি। কিন্তু আজ সব নিয়তি। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দিহানের লকেট টা খুলে ড্রয়ারে রেখেছিলো। সায়ান বেশ গয়না দিয়েছে কিন্তু সেসব মন ছুয়ে যায় নি। দিহানের দেওয়া লকেট টা পড়ে নিলো। সায়ানের দেওয়া গয়নার নিচে পড়ে গেলেও অতসীর শরীরের সাথে মিশে গেলো।
.
.
সাদা রঙের শার্টের সাথে এশ কালারের সুট, হালকা গোলাপি রঙের টাই । ম্যাচিং করে মেটাল বেল্টের রোলেক্স সাবমেরিন রিস্ট ওয়াচ । জুতোর ব্রান্ড টা অতসী জানে না। এক নজর দেখলো সায়ান কে।
হ্যাঁ! সুপুরুষ যথেষ্ট স্মার্ট কিন্তু অতসীর কাছে সে দুনিয়ার সব থেকে বড় কাপুরষ।
.
হঠাৎ অতসী কে দেখে সায়ান টাই আগলা করে বিছানায় ফেলে দেয়।
অতসী কে বলে টাই পড়িয়ে দিতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অতসী এগিয়ে যায়।সায়ান যথেষ্ট লম্বা হওয়ায় নাগাল পাচ্ছিলো না। টুল আনতে যাবে তখন সায়ান ওর কোমর জড়িয়ে উঁচু করে তুলে। অতসী প্রথমে অবাক হলেও পরে বুঝতে পারে সায়ান কেনো এমন করছে। কোমরের মাংস ভেদ করেছে মনে হয় সায়ানের নখ ততক্ষণে।অতসী দাতে দাত চেপে টাই বাধছিলো। হঠাৎ একটু উঁচু হয়ে সায়ানের গলার বা পাশের শার্টের কলার ধরে। সায়ান আরো একটু উঁচু করতেই অতসী খুব জোরে সায়ানের গলায় কামর দেয়।
.
.
- এটা কি ছিলো অতসী?
সায়ান বেশ রেগে জিজ্ঞেস করে।
.
অতসী ও কোমরের পাশের শাড়ি উঠিয়ে জিজ্ঞেস করে
- তাহলে এটা কি ছিলো?
- আমাদের বিয়ে হয়েছে তো। তোমার শরীরে লাভ সাইন না থাকলে চলে?
- এক্সাক্টলি! আপনার শরীরেও তো থাকতে হবে। তাই আমিও দিলাম।
.
.
শায়ান কথা বলে না চুপচাপ ওরা বেরিয়ে যায়।
অতসী বসে আছে স্টেজে। সবাই এসে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
অতসী মাথা নিচু করে বসেছিলো। হঠাৎ কেউ একজন এক গুচ্ছ কদম এগিয়ে দিয়ে বলে
- কংগ্রেটস ভাবীজি....
.
কন্ঠশুনে অতসী ছলছল চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো
---- দিহান জি.......
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অসী? তুমি এখানে? তুমি বউ সেজেছো কেনো?
কি ব্যাপার কান্না করছো কেনো? আর তোমার কপালে কি হয়েছে?
ড্যাম! এই লেডি কিছু তো বলো?.
ফোন অফ তোমার, আমার টেনশন হচ্ছে অতসী!
অনামিকা কই? অনামিকা সুস্থ হয়েছে বলেই তো আজ এই পার্টি, কিন্তু তুমি....
অসী বাবু প্লিজ কিছু বলো
.
.
এতক্ষণ অতসী দিহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হ্যাঁ! একমাত্র দিহান পারে তাকে এসব থেকে মুক্তি দিতে৷ অতসী দু হাত দিয়ে দিহানের হাত শক্ত করে ধরেছে, যেমন টা দিহান ধরেছিলো প্রথম দিন।
-দিহান....
বলার আগেই সায়ান এসে দিহানের হাত থেকে অতসীর হাত ছাড়িয়ে নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
অতসী ছাড়াতে চাইলেও পারে না।
দিহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে।
কেউ একজন এনাউন্সমেন্ট করে সায়ান -অতসী কে নিয়ে।
পরিচয় হয় ওদের সম্পর্কের সাথে দিহান। ডান্স করার জন্য বললেই অতসী না করে।
সায়ান জোড় করে অতসী কে নিয়ে পা বাড়ায় ডান্সফ্লোরে।
.
ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বাজছিলো
- tume apna bana ne ka junun sar pe hain kab se hain
.
.
দিহান অতসীর সম্পর্ক টা কেমন কেমন করে যেনো শুরু হলো। তখন অনামিকাদের এক্সিডেন্ট হয়েছে। সায়ান, অনামিকা হস্পিটালে।
অনামিকার রক্ত লাগবে অতসী দিলো। নিজেই বাঁচে না আবার রক্ত। কিন্তু রক্ত কেনা বেচা হারাম তাই দিলো।
নামীদামী হস্পিটাল গুলো তে রোগীর সাথে থাকতে দেয় না।
অতসী কে রেখে ওর বাবা চলে গেলো। একে তো মেয়েটা এই শহরে নতুন আরেক থাকবে যে এমন কোন জায়গা নেই। অতসী যখন ব্লাড দিয়ে ওয়েটিং সিটে বসে ছিলো খুব অসহায় লাগছিলো। ওর বাবা অযথা রেখে গেলো। কারণ না পারবে ও অনামিকার কাছে যেতে না পারবে কিছু করতে। এদিকে হস্পিটালের কেবিন সব বুকড। ইফাদ নিজের চেম্বারে নিয়ে বসালো।
মেয়েটাকে দেখে বরাবর ইফাদের বড্ড মায়া হয়৷ মায়া না করুণা না জানে না৷।
অনামিকার বিয়ের সময় মেয়েকে প্রথম দেখে ওরা সবাই। বিয়েটা হয় অনামিকাদের গ্রামের বাড়িতে। বিয়েবাড়িতে
বেয়াইদের সাথে অনেকে অনেক মজা করছিলো।
তেমন একটা মজা ছিলো ওদের ফ্রেন্ডদের সবাইকে মরিচের গুঁড়ো দিয়ে শরবত খাওয়ানো।
যখন ফান টা বেশি হয়ে গেলো তখন মেয়েরা অতসীর নাম দিলো।
বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে ওর বাবা ওকে বাশের ঝাড়ু দিয়ে ঢেল দেয় । ঝাড়ু গিয়ে লাগলো অতসীর কপালে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। বাবাকে বড্ড ভয় পায়।
সেদিন ইফাদ অতসীর কপালে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার সময় কয়েকটা মেয়ে এসে সরি বলে। অতসী মুচকি হেসে বলে
- ব্যাপার না। আমি ঠিক আছি।
.
ইফাদ অবাক হলো এমন টাও হয় বুঝি? বাবার কাছে তো মেয়ে মানেই জান্নাত অথচ অতসী এতটা অবহেলার পাত্রী কেনো?
তাছাড়া পুরো তিনদিন অতসীর ঘাড়ে বাড়ির যেকোন দোষ চাপিয়ে ওকে বকা হতো।
কিন্তু চুপচাপ শুনে যেতো৷ প্রতিবাদ করলেই ওর বাবা এসে মারতো।
এমনকি বিয়ের দিন অতসী কে দূরে রাখা হলো।
.
.
দিহানের আসার শব্দে ইফাদের ঘোর কাটলো।
-ইফাদ! কিছু মনে না করলে আমি অতসী কে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।
-ওর বাবা আসলে?
-এখানে ওর কি কাজ একটু বলবি? ওই লোকটার সমস্যা কি?
মেয়েটাকে ওভাবে কেনো কষ্ট দিচ্ছে? আজব ক্যারেক্টার। তুই ম্যানেজ করবি কিছু একটা বলে। মেয়েটার রেস্ট দরকার।
.
দিহান কোন কথা না শুনে অতসীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
-বিশ্বাস করতে পারেন। সেদিনের মতো। সেদিন পানিতে পড়তে দেইনি আজ এই শহরের ভীড়ে....
.
.
দিহানের সাথে বাসায় এসে চুপচাপ বসে আছে অতসী৷ বাসায় কি কেউ নেই?
.
অতসীর সামনে দিহান ডাবের পানি, আর জুস এনে রাখে।
-নিন!
-আমি ডাবের পানি খাই না
-জুস?
- উঁহু
.
দিহান উঠে যায়। একগ্লাস গরম দুধ নিয়ে আসে। তারপর বলে
- এবার দয়া করে বলবেন না আপনি দুধ খান না।
-আসলে...
-লাইক সিরিয়াসলি? আমি না শুনছি না।
-আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবো। কিন্তু
-কি?
-আমিতো কোন ড্রেস আনিনি।
.
দিহান কিছু চিন্তা করলো তারপর একটা শাড়ি এনে দিলো।
-আমার মা-বাবা নেই। মা গতবছর আর বাবা সাত বছর আগে মারা গেছেন। একটা বোন। সেও ইতালি। এটা আমার মায়ের শাড়ি। পড়ে নাও। আপনার মাপের হয়তো সব কিছু না তবে মায়ের অনেক পুরাতন বিয়ের ব্লাউজ টা এনেছি। এটা পড়ে নিন।
আর হ্যাঁ ফ্রেশ হয়ে জলদি আসুন। খাবার খেতে হবে।
.
.
অতসী ফিরে এলো। দিহান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুপচাপ খেয়ে নিলো। হাতে এক্সট্রা চাবি, মাষ্টার কি আর একটা কার্ড দিলো।
.
-এসব দিয়ে আপনার রুম না সব রুমের লক খুলা যায়। দয়া করে এসব রাখুন আর ভিতর থেকে লক করে ঘুমাবেন।
-কেনো?
-পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই।
.
.
এভাবেই দুদিন কাটলো। হঠাৎ করে অতসীর বাবা ওকে নিয়ে গেলো। দিহানের অবস্থা খারাপ। ফোন নাম্বার টাও নেই।কিন্তু কি থেকে কি করবে? যাওয়ার সময় দেখাও হয়নি৷ অতসী কে ইফাদের কেবিনে রেখে বেড়িয়ে ছিলো যাওয়ার পর শুনে ওর বাবা ওকে নিয়ে গেছে।
.
.
অতসী ফিরলো তিন দিন পর। সে সময় কেবিন খালি হলেও দিহান ওর জীবনের সব থেকে বড় ডিসিশন টা নিলো। অতসী কে জোর করে ওর বাড়ি নিয়ে গেলো।
বাড়ি ঢুকেই অতসী কে কাউচে বসিয়ে ওর দুহাত নিজের হাতে ভরে নিলো
-কি হলো দিহান ভাইজান এমন করছেন কেনো?
- এই মেয়ে ভাইজান কেমন ডাক? আর আমি তোমার ভাই না। হ্যাঁ জান বলতে পারো। দিহান জান। না বেশি বড় হয়ে যায়। তুমি আমাকে দিহানজি বলে ডাকবে। জানের ছোট্ট মিষ্টি ভালোবাসার প্রথম অক্ষর দিয়ে জি।
.
- মনে হচ্ছে স্টার প্লাসের নাটক চলছে। আর আমি ন্যাকা নায়িকা যে তার নায়ক কে ন্যাকামো করে জি জি ডাকছে।
.
- মনে হলে তাই৷ কিন্তু অতসী আমি সত্যি তোমাকে আমার জীবনে চাই। আমার নায়িকা হিসেবে।
-এটা হয় না। আপনি আমার সম্পর্কে জানেন না।
-জানার প্রয়োজন বোধ করছি না।
-প্লিজ
-অতসী! আমি তোমাকে ভালোবাসি। এর থেকে বড় কোন সত্যি বা কথা আছে বলে এখন ভাবছি না। আমার এলোমেলো জীবনে তোমাকে চাই। একটু সুখ চাই। একটু। তুমি যদি রাজি না থাকো তাহলে চুপচাপ কাল সকালে চলে যেও। আর রাজি থাকলে শুধু আমার বলা নামটা ধরে ডেকো তাই হবে।
.
.
সারা রাত অতসী খুব কেঁদেছে।দিহানের ঘুম উবে গেছে। সকালবেলা দিহান অতসীকে দিতে যাওয়ার জন্য বের হলেই অতসী বলে
- দিহান জি! যদিও স্টার প্লাসের সিরিয়ালের ন্যাকা ডাকের মতো লাগছে তবুও ডাকছি
দিহানজি!
- আর ইউ শিউর?
- হু।
- আই লাভ ইউ অসী। প্লিজ একটু দুই হাত ধরি? প্রমিজ এর বেশি আর কিছুই না।
.
অতসীও সেদিন দুহাত এগিয়ে দিয়েছিলো।
.
.
করতালীতে দিহানের ভাবনায় ছেদ পড়লো। খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে সে। অতসী তার পিছনে যেতে নিলে সায়ান আটকায়। কানে কানে বলে
.
-মিসেস মাহমুদ! আমাকে এত বোকা মনে হয়? আমি সব টা জানি। আমি জানি দিহান তোমাকে ঠিক নিয়ে যাবে তাইতো বিয়ে টা করলাম যাতে শুধুই আমার অধিকার থাকে তোমার উপর৷ দিহান যাতে চাইলেও নিতে না পারে। আর হ্যাঁ! ভুলেও তোমার দিহান জান কে এসব বলবে না। নাহলে ওই যে দুটো লোক কে দেখছো দিহানের সাথে সাথে যাচ্ছে? ওরা তোমার দিহানজান ওহ্ দিহানজি কে শুট করে দিবে। আশা করি তুমি চাইবে না তোমার জান এত দ্রুত মরে যাক।
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
সায়ানের এমন ফাকা কথা যে অতসী বিশ্বাস করলো না সায়ান বেশ বুঝতে পারলো। এক্সকিউজ আস! বলে সায়ান অতসী কে নিয়ে রুফটপে চলে যায়। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে দিহান পার্কিং প্লেসের দিকে যাচ্ছে।
.
.
- ইয়েস! শুট দ্যাট ম্যান।
.
অতসীর ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে সায়ান ফোনে কাউকে কথাটা বললো
.
সামনে তাকিয়ে অতসী দেখলো সত্যি লোক দুটো রিভলবার বের করছে। তার মানে সায়ান সত্যি?
সায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অতসী বললো
.
- ওদের থামতে বলুন। না হলে আমি এখান থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিবো।
.
সায়ান অতসীর হাত ধরে এনে আবার আগের মতো করে দাড়ালো।
অতসী দেখছে দিহান গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো।
.
-ওয়েট! নট নাও। ফলো হিম এন্ড ওয়েট ফর মাই নেক্সট অর্ডার।
.
এরপর অতসী আর কোন কথা বলেনি। মনে হচ্ছিলো অদৃশ্য কোন দুই হাত গলা চেপে ধরেছে৷
মুখে মেকি হাসি রাখতে রাখতে সে ক্লান্ত৷ চোখগুলো লাল হয়ে গেছে প্রচন্ড জ্বালা করছে।
চুপচাপ ছিলো হঠাৎ হাতে টান অনুভব করে। তাকিয়ে দেখে ওর বাবা
-কি রে? মুখ গোমড়া করে আছিস কেনো? সবাই কে জানাতে চাস? জোড় করে বিয়ে দিয়েছি? বোনের জন্য এটুক করতে পারিস না? কেমন বোন তুই? মনে রাখিস সায়ান যদি তোকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে আমার ঘরে তোর জায়গা হবে না। তাই বলছি চুপচাপ আমার অনা মায়ের সেবা যত্ন করে যা। আমার মা কে সুস্থ করে তোল।
.
-আর আপু সুস্থ হলে? তখন কি উত্তর দিবেন?
খুব সাবলীল বাংলায় জিজ্ঞেস করলো অতসী।
-সময় আসলে দেখা যাবে। তখন যাওয়ার জায়গা না পেলে রাস্তায় নেমে যাবি। তোর জায়গা তো রাস্তা তে। রাজ প্রাসাদে তোর কাজ শুধু দাসীর মতোই থাকা।
.
.
অতসী ওর বাবার কথায় হাসলো। এর পর হাসিটা মুখে লেগেই ছিলো। ওরা আজ বাসায় যাবে না। একটা হোটেলে ওদের জন্য স্পেশাল সুইট বুক করা হয়েছে। ধীরে ধীরে গাড়ি এগিয়ে চলছে সেদিকে।
.
পুরো রাস্তা অতসী কোন কথা বলেনি। কান্না করছিলো যা সায়ান কে অবশ্যই শান্তি দিচ্ছিলো। সায়ান বেশ সুখেই বাসায় ফিরলো।
অতসী রুমে যেতে নিলেই সায়ান ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে বলে
-কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?
জানো তো আর একটু দেরি করলে অনেক বড় ব্লান্ডার হয়ে যেতো। তোমার থেকে দিহান কে আলাদা করতে কম কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে?
উফফফ আজ শান্তি।
.
-মানে?
-কি? ওহ হ্যাঁ! তুমি তো আবার কিছু জানো না। এদিকে আসো। আরে লজ্জা কিসের? তুমি তো আমার এই সান্নিধ্য চেয়েছিলে? আমার স্পর্শ গভীর ভাবে চাইতে তাহলে বলো কিভাবে দিহানের হয়ে থাকতে দেই?
.
- মানে? কি বলতে চাচ্ছেন?
- হস্পিটালে থাকতেই আমি খবর পাই তোমার দিহানের সম্পর্কের। আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে তুমি দিহানের সাথে খুশি থাকবে??
বিশ্বাস করো মানতে পারিনি৷ তাই তো দিহানের জন্মদিনের দিন সুযোগ নিয়েছিলাম। হয়তো বিপরীত কিছু হতে পারতো কিন্তু রিস্ক টা আমাকে নিতেই হয়েছিল।
হ্যাঁ! আমিই সেদিন ছিলাম দিহানের সাথে। আমরা দুজন মিলে বেশ ড্রিংক করি। ও প্রথমে রাজি হয়নি।তাই বলে তো এত দিনের প্ল্যান নষ্ট হতে দিতে পারি না।
যখন বুঝলাম দিহানের নেশা হয়ে গেছে, ওকে বাসায় রেখে আসলাম। তখন তুমি দিহানের বাসায় দিহানের নাম করে আমার পাঠানো লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বসে আছো।
বিশ্বাস করো! সেদিন তোমাকে দেখে আমার মাথাই খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো আর ও তো নেশায় ছিলো।
একটা বাসায় একটা নেশাগ্রস্ত পুরুষের সামনে আবেদনময়ী হয়ে বসে থাকবে আর কিছু হবে না এটা হয়?
প্ল্যান মতো দিহান তোমাকে চাইলো তুমি বাধা দিলে।
এক সময় দিহান তোমাকে জোড় করলো আর তুমি তোমার জান কে কষিয়ে থাপ্পড়।
তারপর দিহানের কিছু কথা, ওর অপমান সহ্য করতে না পেরে পর দিন সকালে চলে গেলে।
সেদিন সারা রাত কি হলো আমি সব দেখছিলাম। জানো তো তোমাদের বিচ্ছেদ আমার প্রশান্তি হয়ে উঠলো।
দিহানের নাম্বার থেকে তোমার নাম্বার আর তোমার নাম্বার থেকে দিহানের নাম্বার সিম কোম্পানি থেকে ব্লকড করিয়ে দেই।
এমন কি তোমার নাম্বারে ইন্টারন্যাশনাল কল সার্ভিস অফ।
না পারছিলে তুমি দিহানের সাথে যোগাযোগ করতে আর না পারছিলো দিহান৷ হ্যাঁ! তোমাদের ভুল ছিলো, বিশেষ করে তোমার। দিহানের জেগে উঠা পর্যন্ত ওয়েট করা উচিৎ ছিলো। তাতে হয়তো এত ভুল বুঝাবুঝি হতো না। তবে আমার কাজ আরেকটু কঠিন হতো। এই আর কি!
দুই দিন আগে জানলাম দিহান দেশে ফিরছে। ও দেশে ফিরেই তোমার কাছে যাবে এটা আমি জানি। প্রয়োজনে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসতো তাই তাড়াহুড়ো করেই বিয়ে করলাম। ভাগ্য সায় দিলো অনামিকাও সেদিন অসুস্থ হলো।
তাই তোমার বাবা না করতে পারেনি।
আমি চাইলে তোমাকে এমনিতেই অনার দাসী করে রাখতে পারতাম কিন্তু দিহান ব্যাটায় ঝামেলা।
আমরা বন্ধু। বন্ধু বললে ভুল হবে জিগরি দোস্ত কিন্তু তাই বলে তোমাকে মাফ করবো এমন তো নয়। দিহান তোমাকে যাতে না নিতে পারে তাই লিগ্যালি তোমাকে আমার বানিয়েছি। এখন দিহান চাইলেও নিতে অধিকার দেখাতে পারবে না।
তুমি ভুলেও দিহান কে এসব জানাতে যাবে না। যদি কিছু জানাও তাহলে ওকে আমি আমার রাস্তা থেকে নয় দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবো।
বেচারার মা-বাবা নেই। বোন দেশের বাহিরে। শিয়াল কুকুরে টেনে ছিড়ে খাবে। তুমি কি তাই চাও??
.
.
.
.
এত ক্ষণ অতসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে সায়ানের কথা শুনছিলো। এই মানুষ টা তার জীবন নিয়ে এভাবে খেলতে পারে না। নাহ্! সে থাকবে না। সে চলে যাবে। দিহান কে সব জানাবে সে। দিহান কে জানালে অবশ্যই দিহান কিছু করবে।
এই কাপুরুষের সাথে সে থাকবে না।
.
.
-কি হলো? কিছু তো বলো?
-আপনি একটা কাপুরষ। না কাপুরষ না আপনি একটা কমন জেন্ডার। আরে আপনি মানুষই না। কিভাবে পারলেন?
.
.
সায়ান বেশ রেগে যায়। হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে রুমে। পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো। অতসীর হাত পা জমে গেছে।
.
.
- আমি কাপুরুষ? কমন জেন্ডার? দেখবি আমি কি কি করতে পারি?
.
অতসীর হাত মুচড়ে ধরে চিৎকার করে বলে সায়ান। অতসী ওর পায়ে লাথি মেরে সরে আসে।
.
.
- কি করবি তুই,? কি করবি? রেপ করবি? ভোগ করবি? বিছানায় নিবি? নে! প্রমাণ দে তোর কাপুরুষতার।
এর জন্য বিয়ে করেছিস তো?
আমি তোর কি ক্ষতি করেছি রে?ওই একটা মানুষ ছিলো যে আমাকে বুঝতো আগলে রাখতো আর তুই তাকে কেড়ে নিলি?
কি রে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? আয়! ফলাও কর তোর পুরুষত্ব, স্বামীত্ব।
.
কথা গুলো বলতে বলতে অতসী নিজের শরীরের গয়না গুলো খুলে ছুড়ে ছুড়ে মারছিলো। দুল খুলার সময় কান থেকে রক্ত বের হয়। হাতের চুড়ি দিয়ে হাত বেশ খানিকটা ছুলে গেছে। গলায় লেগেছে। এক পর্যায়ে অতসী শাড়ির আঁচল খুলে ফেলে।
.
সায়ান অতসীর এই রুপ আগে দেখেনি। চুপচাপ মেয়েটা এত আগ্রাসী? চাইলে সে ভোগ করতে পারবে অতসী কে। কিন্তু অতটাও খারাপ না সে। চুপচাপ বেরিয়ে যায়।
কান্না করতে করতে অতসী এক সময় ফ্লোরে বসে পড়ে। নিজের দুহাতে চুল টেনে জোড়ে জোড়ে দিহানের নাম ধরে কাঁদতে থাকে।
.
.
চলবে
.
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৭,৮
.
.
-আচ্ছা বাবা আমি কি সত্যি তোমার অবৈধ সন্তান?.
.
এগারো বছর বয়সী অনামিকার মুখে এমন কথা শুনে বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছেন আমিনুল ইসলাম।
-এসব কি বলছো? মা?.কে বলেছে এসব?.
-কেনো? অতসী তো স্কুলে সবাই কে তাই বলে।
-কি বলেছে?
-তোমাদের বিয়ের বয়স এগারো আর আমার বয়স এ এগারো। কিভাবে হয়? আমি না কি বিয়ের আগের সন্তান৷ আর বিয়ের আগের সন্তান তো অবৈধ হয় তাই না বাবা?.
.
অনামিকার কথার কি উত্তর দিবে আমিনুল ইসলাম জানে না। তবে এখন তাকে মিথ্যে বলতে হবে। সত্যি টা বলা যাবে না। অনামিকা সহ্য করতে পারবেনা।
.
-আরে মা! শোন তো। ছোট বেলা থেকেই তুমি খালি পড়তে চাইতে। এট্টুনি থাকতেই শুধু কান্না করতে স্কুলে যাবো। তাইতো তোমার বয়স বাড়িয়ে স্কুলে ভর্তি করাতে হয়েছে।
-সত্যি তো বাবা? তাহলে অতসী যে বলে?
-না আর বলবে না।
.
অনামিকা দিব্যি রুমে চলে গেলো। আর অতসী দৌড়ে বাবার কাছে এসে একটা ডায়েরি দেখাতে দেখাতে বললো
-বাবা! বাবা! দেখো আজকে আমি রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছি। হেড স্যার আমাকে এই ডায়েরি আর কলম টা দিয়েছে। দেখো?.
.
.
আট বছর বয়সী অতসীর এতটা উল্লাস তার বাবার কান অবধি পৌছায় না। সে খুব জোরে ধমক দিলো। অতসী কুকড়ে গেছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
.
-খুব বৈধ,অবৈধ শিখেছিস তাই না? আরে তুই তো রাস্তার মেয়ে তুই শিখবি না তো কে শিখবে?.
.
বলেই আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো। বাঁশের একটা ছোট ডান্ডি পেয়েও গেলো।
.
- হাত পাত। হাত পাত বলছি।
.
জোরে জোরে ধমকিয়ে যাচ্ছে সে।ছোট্ট অতসী চুপচাপ হাত বাড়িয়ে দেয়। কারণ জানে তার বাবা আজকে মারবেই।
দুহাতে ততক্ষণ পর্যন্ত মারলো যতক্ষণ হাত ফুলে না গেলো। অতসীর মা থামাতে আসলে তার শরীরেও কিছু লাগলো।
যখন অতসীর মায়ের লাগলো তখন ওর বাবা থেমে যায়। অতসীর মায়ের হাতে লেগে প্রায় কেটেছে । খুব দ্রুত অতসীর বাবা ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে এসে হাতে লাগাতে গেলে অতসীর মা বলে
-আমার দুহাত শক্ত আছে৷ রক্ত ঝড়লেও সামলে নিবো কিন্তু আমার ছোট্ট মেয়েটা এতটা সইতে পারে না। ওকে মারবেন না। আর যদি মারেন তাহলে আজ বিষ কিনে এনে দিবেন ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো তখন না হয় আপনি শান্তি পাবেন।
.
.
ছোট্ট অতসী সেদিন পুকুরের পানিতে দুহাত ডুবিয়ে রেখেছিলো অনেক ক্ষণ। রাতে ভাত খেতে পারেনি৷ ডায়রী টা খুব যত্ন করে তুলে রাখে।
.
.
অতসীর পুরষ্কার কিংবা সার্টিফিকেটস এর কোন অভাব নেই। ঘর পরিষ্কার করার সময় আজ অতসীর মা অতসীর প্রথম পুরষ্কার ডায়েরী টা পেলো। হাতে নিতেই অতীতে হারিয়ে গিয়েছিলো সে।
.
.
অতসীর দিনগুলো কেমন যেনো যাচ্ছে। অনামিকার সেবা যত্ন তারপর সায়ানের সাথে মাঝেমধ্যে বাহিরে যাওয়া,বিভিন্ন পার্টি এটেন্ড করা, বাহিরে ডিনার করা। বেস্ট কাপল হিসেবে এই এক মাসে অনেকেই তাদের উদাহরণ দেয়।
এই এক মাস অতসী যে দিহানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি এমন নয়।
কিন্তু পারেনি। পুরো বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। বাসায় ফোনের সব কানেকশন বন্ধ, কাজের লোকগুলোর সাথে কথা বলা যায় না। সব থেকে মারাত্মক হলো
অতসীর জন্য বডিগার্ড রেখেছে সায়ান। চব্বিশ ঘণ্টা তার উপর কড়া নজর থাকে।
বড্ড অসহ্য লাগছে এসব।
.
বিউটিশিয়ান এসেছে। বাহিরে বের হওয়ার কথা থাকলেই আসে। পুতুলের মতো করে সাজিয়ে দেয়।
আজ অতসী কে লাইম কালারের শাড়ি পড়িয়েছে। হালকা কাজল, হালকা মেকাপ। চুল গুলো খোপা করে বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিবে।
বেশ উঁচু করে খোপা বাধতে গেলে অতসী থামতে বলে।
দিহানের বলা কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে।
.
যখন অনামিকারা হাসপাতালে ছিলো তখন মাঝেমধ্যে দিহান বায়না ধরতো শাড়ি পড়ার জন্য। অতসীও না করতো না। একদিন অতসী কে কপালে টিপ দিয়ে দিতে গেলে অতসী মানা করে।
কারণ ইসলামে টিপ পরিহিতা নারী কে সরাসরি পতিতাদের সাথে তুলনা করা হয়।
তখন দিহান অতসীর চুল খুলে দেয়। আর বলে
-একটা মানবেন আর অপর টা মানবেন না?
-বুঝলাম না।
.
.
.আবূ হুরায়ররা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একটি হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন,
.
”জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে।
“আর অন্য দল এমন নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়।” [মুসলিম : ২১২৮]
হাদীসের ভাষা হল: উটের পিঠের কুঁজের মত। মাথার উপর চুল বাধলে বা ঝুটি থাকলেই তখন উটের পিঠের কুঁজের মত দেখা যাবে;অন্যথায় নয়।
আমি তো খোপা করছিলাম।
-ওটাও দেখতে তো কুঁজের মতোই লাগছিলো।
-তাহলে কি খোপাও করবো না?.
-কেনো করবে না? করবে তো। তবে ঘাড়ে ফালিয়ে করো না। দেখো আরো বেশি সুন্দর লাগবে।
.
.
বিউটিশিয়ানের কথায় হুশ ফিরে অতসীর।
-ম্যাম খোপা করবো না?
-নিচু করে ঘাড়ে ফালিয়ে করুন।
.
সায়ান বাসার বাহিরে অতসীর হাত ছাড়ে না। এই বুঝি অতসী পালিয়ে গেলো।
সব সময় হাত ধরে রাখে কিন্তু অতসীর অসহ্য লাগে। সে সায়ানের সাথে বের হয় মূলত যদি দিহানের সাথে দেখা হয়ে যায়?.
দিহানের সাথে একবার কথা বলা খুব প্রয়োজন। একমাত্র দিহান পারবে অতসী কে এসব থেকে বের করতে।
.
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ওরা পৌঁছে যায় খেয়াল করেনি অতসী। একদম অন্ধকার। হঠাৎ সায়ান হাত ছেড়ে দেয়। কিন্তু কেনো? সায়ান তো এমন করে না।
.
হঠাৎ অতসী হাতে কারো স্পর্শ অনুভব করলো। খুব কাছে থেকে। ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক বেজে উঠলো
-কেসে কাহু ইশক্ মে তেরে কিত্না হু বেতাব মে আখো সে আখে মিলা কে চুরা লুন তেরে খোয়াব মে
.
.
স্পট লাইড় পড়তেই চেহারা স্পষ্ট হলো।
দিহান??
অতসী দুটো হার্টবিট মিস করলো।
আজকেই সব টা জানাবে আর ফিরবে না। কিন্তু আজ দিহানের চোখের ভাষা বড্ড অচেনা লাগছে। খুব শক্ত আর বাজে ভাবে স্পর্শ করছে সে৷ ওর সাথে তাল মিলিয়ে কাপল ডান্স টা করতে প্রায় কষ্ট হচ্ছে অতসীর। অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু অতসীর কোন কথা দিহান শুনলো না।
গান শেষে দিহান অতসীর কানে কানে বললো
-তুমে ভুলো কেসে ম্যে? মেরি পেহেলি খাত্বা তুম হো....
.
গান শেষে দিহান অতসীর হাত খুব শক্ত করে ধরে অন্য হাত বাড়িয়ে দেয় অন্ধকারে।
লাল চুড়ি পড়া একটা মেয়ের হাত। মেয়েটা আলোতে আসতেই দিহান অতসীর হাত ছেড়ে দিয়ে বলে
-মিট মাই ওয়াইফ। মিসেস রাইমা মেহেবুব।
ওয়াইফ অফ দিহান মেহেবুব।
.
অতসী দু পা পিছিয়ে যায় আর সামনের মেয়েটা দৌড়ে এসে ওর উপর পড়ে।
-অতসী! দোস্ত তুই কই হারিয়ে গেছিলি? এতটা পর আমি তোর? সেদিন এক্সাম হল থেকে আমি আগে বের হলাম আর তোকে পাইনি। কই ছিলি তুই? আমি তো তোকে খুঁজে হয়রান। পরে আন্টির কাছে সব টা শুনলাম। দোস্ত তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে।
.
.
অতসী রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে। দিহান রাইমা কে ওর ওয়াইফ বলে পরিচয় দিলো কেনো? ও কি তাহলে রাইমা কে?
না! না! তা কি করে হয়? তার প্রাক্তন প্রেমিক তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করেছে? তার শেষ আশাও শেষ হয়ে গেলো?
ঘোর কাটে রাইমার ডাকে।
-জানিস তো! যখন বিয়ে ঠিক হলো তখন তোকে আমার সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো। ফোনেও যোগাযোগ করতে পারিনি। আজ সকালে দিহান বললো আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আগে যদি জানতাম তুই হবি আমার বিয়ের গিফট তাহলে আরো আগেই বিয়ে করে নিতাম।
.
অতসী কিছুই বললো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান কে খুঁজছে। সায়ান খানিকটা দূরে দাঁড়িয়েছিলো। মুখে মুচকি হাসি। দিহানের দিকে তাকালো অতসী৷ প্রতিশোধ? প্রতিশোধ নিলো দিহান? কেনো অপেক্ষা করলো না? সেদিন সে সারপ্রাইজ পেয়েছিলো সায়ান অতসীর বিয়েতে তাই বলে আজ অতসী কে সারপ্রাইজ দিলো?.
একটু কি অপেক্ষা করা যেতো না?
.
.
রাইমা কথা বলেই যাচ্ছে। দিহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর অতসী কে দেখছে। অসহ্য লাগছে অতসীর। রাইমা কে থামিয়ে দিয়ে অতসী বললো
-আমি জানতাম না তোর বিয়ে। সত্যি সারপ্রাইজ হয়েছি। লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ। তোকে দেওয়ার মতো আজ আমার কাছে কিছুই নেই। না রে আছে। একটা জিনিস আছে।
.
গলার ভারী নেকলেসের নিচে থেকে গলার সাথে লেগে থাকা চিকন চেনের সাথে একটা লকেট। সেটাই খুলে অতসী রাইমার হাতে দিলো।
-আমার স্বর্বস্ব তোকে দিয়ে গেলাম। ভালো থাকিস। ভালো রাখিস।
.
বলেই অতসী দ্রুত পায়ে সায়ানের কাছে গিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো
-আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন। প্লিজ।
.
.
সায়ান অতসীর হাত ধরে বুঝলো মেয়েটা অসম্ভব প্রকার কাপছে। দ্রুত হাত ধরে বেরিয়ে গেলো ওরা।
দূর থেকে রাইমা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো। দিহান মনে মনে বললো
-ঠিক এমন লেগেছিলো আমার সেদিন যেদিন তুমি সায়ানের বউ সেজে বসেছিলে। মিসেস অতসী মাহমুদ।
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৯,১০
.
.
অতসীর অবস্থা সত্যি ভালো না। সায়ান বুঝতে পারছে। এতটা শক হয়তো নিতে পারেনি। অনবরত হাত পা কাপছে মেয়েটার। বাম হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে এনে নিজের কাধে জোড় করে মাথা রাখলো সায়ান।
অতসী চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের সামনে দিহানের চেহারা ভেসে উঠছে, কথা গুলো কানে বাজছে।
এমন ভাবে অতসী সব হারিয়ে ফেললো?
দিহান বেছে বেছে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করলো?
হ্যাঁ! রাইমা অতসীর বেস্ট ফ্রেন্ড। বোনের ভালোবাসা সে অনামিকার থেকে না রাইমার থেকে পেয়েছে।
যখন যখন বাবার কমতি অনুভব করেছে রাইমার বাবা ওর মাথায় হাত রেখেছে। রাইমার মায়ের কাছে রাইমার আগে অতসী।
রাইমার কোন দোষ দেওয়া যায় না। কারণ ও তো জানেই না দিহান নামের কেউ অতসীর জীবনে ছিলো।
হ্যাঁ! অতসী যে বলতে চায় নি এমন নয় কিন্তু ঢাকা থেকে টাংগাইল আবার টাংগাইল থেকে ঢাকা যাতায়াত করতে করতেই অতসীর দিন গুলো যাচ্ছিলো।
আজ অতসী মনে হচ্ছে সে সত্যি মরে যাবে।
গলায় কিছু একটা আটকে আছে যা শ্বাস নিতেও খুব কষ্ট দিচ্ছে।
.
.
সায়ান কে ছাড়িয়ে অতসী দ্রুত উপরে উঠে যায়। ডুপ্লেক্স এর উপর তলাতে কাজের লোক সবসময় থাকে না।
অতসী হয়তো নিজের ক্ষতি করবে এই ভেবে সায়ান দ্রুত গিয়ে ওকে ধরে।
অতসী পাগলের মত নিজের হাত পা ছুটাচ্ছিলো। বেগতিক অবস্থায় সায়ান দিশেহারা।
জড়িয়ে ধরলো অতসী কে। এটাই যেনো কাল হলো। না জানি পিচ্চি অতসীর শরীরে এত শক্তি কই থেকে এলো। সে সায়ান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কষিয়ে থাপ্পড় মারে।
.
.
কি পেয়েছেন কি আমাকে আপনারা?. আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয় না আপনার? যখন যা চাইবেন তাই করবেন? বলতে পারেন কি ক্ষতি করেছি আপনাদের? আমার সব তো কেড়ে নিলেন এখন শ্বাস টাও কেড়ে নিন। বাবার কাছে খুব বেশি ছিলাম। এত যখন বেশি তাহলে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে কেনো এনেছিলো? বলতে পারেন? কেনো মানুষ করলো? রাস্তায় পড়ে থাকতাম কুকুর শেয়াল খেয়ে নিতো। তাহলে তো বেঁচে যেতাম। না তা করে নি। কি করলো? বড় করলো তারপর বললো নিজের খরচ নিজে চালাতে পারলে পড়া লিখা কর না পারলে বাদ দে। ক্লাস নাইন থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম নিজের পরিচয় বানাতে। বানিয়ে তো খুব ভালোই ছিলাম। সব পরিপূর্ণ হলো আমার দিহানের জন্য কিন্তু কি করলেন আপনারা? আমাকে অনামিকার সতীন বানিয়ে দিলেন। দিহান কে সরিয়ে দিলেন।
এ সব হয়েছে অনামিকার জন্য৷ ওই অনামিকা সব কেড়ে নিলো। আমি ওকে ছাড়বো না। ওকে আমি মেরে ফেলবো।
.
কথাগুলো বলেই অনামিকার রুমের দিকে ছুটলো অতসী। অনামিকা কে কিছু করার আগে অতসী কে হ্যাচকা টানে রুম থেকে বের করে আনে সায়ান। অতসীর করা কাজ, আর কথা তে সায়ানের রাগ তখন চরমে।
.
কিছু না ভেবেই সে অতসী কে আঘাত করে। ইচ্ছে মতো আঘাত করে। তার ধারণা ছিলো অতসী তাকে বাধা দিবে বা কথা শোনাবে কিন্তু অতসী চুপচাপ মার সহ্য করে গেলো।
এক সময় সেন্সলেস হলে সায়ানের হুশ ফিরে। তখন ওর টনক নড়ে অতসীর সব প্রি-প্ল্যানড। অতসী চাইছিলো সায়ান ওকে মারুক আর সায়ান তাই করলো। মেয়েটার জালে সে পা দিয়ে দিয়েছে।.
.
চোখে মুখে পানি দিতেও যখন ওর জ্ঞান ফিরলো না তখন কল দিলো ইফাদ কে। ইফাদ দিহানের সাথে ছিলো। কোনভাবে ম্যানেজ করে চলে আসলো। ইফাদের ধারণা ছিলো অনামিকার কিছু হয়েছে কিন্তু এসে দেখলো
কাউচের পাশে ফ্লোরে অতসী পড়ে আছে। পড়নের শাড়ি অনেকটা লাল হয়ে গেছে। চোখ মুখের অবস্থা খারাপ।
.
-রেপ করেছিস?(ইফাদ)
.
সায়ান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতটা খারাপ সে না। আর তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করছে? থমথমে গলায় উত্তর দিলো
.
-না
-তাহলে এভাবে মেরেছিস কেনো?
-সেসব পড়ে হবে আগে ওর সেন্স ফেরা
-পুলিশ কেস। আমি পারবো না।
-দেখ এখন রাগের সময় না। প্লিজ ট্রিটমেন্ট শুরু কর। না হলে মরে যাবে।
-গ্রেট আইডিয়া। মেরে বাড়ির বাগানে পুতে দিতে পারি। কেউ জানবে না।
- ইফাদ! জানি ভাই তোর রাগ হচ্ছে কিন্তু ওকে আগে ট্রিটমেন্ট......
.
.
সায়ানের কথার উত্তর না নিয়ে ইফাদ অতসী কে কোলে তুলে পাশের রুমে নিয়ে যায়৷ মেইড কে দিয়ে ওর ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেয়। মোটামুটি ভাবে ড্রেসিং করে মেয়েটার৷ নাকের বা পাশের তিল টা দেখে ইফাদের দুচোখ ভরে উঠলো।
চুপচাপ সে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে সায়ানের সাথে কোন কথাই বলে যায় নি।
.
.
.
ইফাদ সচরাচর ড্রিংক করে না। কিন্তু ও আবার দিহানের পার্টি তে ফিরে এসেছে। পর পর কয়েকটা ড্রিংক নিলো।
শার্টে রক্ত লেগে আছে। দিহান দূর থেকে দেখে ইফাদের কাছে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলো
-দোস্ত! কি হয়েছে এত ড্রিংক করিছিস কেনো? আর রক্ত কার?
-দিহান? তোর ইফিতির কথা মনে আছে?
-ইফতির কথা মনে থাকবে না কেনো? আমাদের ছোট্ট পরী টা......
-সেবার ইফতি যখন কলেজ ট্যুরে গেলো মন খচখচ করছিলো কিন্তু আমি ওর স্বাধীনতায় বাধা হতে চাইনি। তাই যেতে দিয়েছিলাম। পরী টা সেই যে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো আর বাসায় ফিরেনি। আজো ফিরেনি....
-মৃত মানুষ ফিরে না ইফাদ! তুই কি ভুলে গেছিস আমরা ইফতির ক্ষতবিক্ষত লাশ পেয়েছিলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ে!
- আমার বোন টা কে আমি বাঁচাতে পারিনি, পারিনি আমি ওকে রক্ষা করতে। ইফতির পর আমি অতসীকে নিজের বোনের জায়গা দিয়েছি রে। অতসীর নাকের বা পাশের তিল দেখে মনে হয় আমার ইফতি ফিরে এসেছে। ওর ভাইয়া ডাক আমাকে ইফতির কমতি বুঝতে দেয় না কিন্তু আমি আমার এই বোনকেও বাঁচাতে পারলাম না। আমার চোখের সামনে আমার বোনের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে ওই অনামিকার বাবা আর সায়ান।
তুই জিজ্ঞেস করছিলি না? যে এই রক্ত কার? এই রক্ত অতসীর। মেয়েটাকে অচেতন অবস্থায় রেখে এলাম।
.
.
কথাগুলো ইফাদ বলছিলো আর কান্না করছিলো।
দিহানের মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরছে। কি বলছে ইফাদ? অতসী তো সুস্থ গেলো কি হয়েছে?
.
-ইফাদ ক্লিয়ার করে বল।ওরা তো মোস্ট হ্যাপিয়েস্ট কাপল তাই না?.
- হ্যাপিয়েস্ট কাপল।! (তাচ্ছিল্যের সাথে বললো ইফাদ).
.
সায়ান জোড় করে অতসী কে বিয়ে করেছে।
.
-মানে? কি বলছিস এসব?
-অতসী নিজ ইচ্ছায় সায়ান কে বিয়ে করেনি। খুব চেষ্টা করে পালিয়ে যেতে কিন্তু যেতে পারেনি। সেদিন ওর বাবা ওকে খুব মারে৷ শেষ লাথিটা ওর মুখে মারে। ওর ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছিলো। তবুও ও বিয়েতে রাজি ছিলো না। তারপর ওর বাবা ওর মা কে মেরে ফেলার হুমকি দিলে বিয়েতে রাজি হয়। আর হ্যাপিয়েস্ট কাপল?সায়ানের জন্য অতসী শুধুই একটা দাবার গুটি যা দিয়ে এক্সিডেন্ট কে করিয়েছিলো এসব বের করতে চাচ্ছে সে।
.
.
ইফাদের এসব কথা শুনে দিহান চমকে উঠে। টেবিলে পর পর কয়েকবার বাম হাত দিয়ে আঘাত করে
দিহান চিৎকার করে বলে আগে বলিস নি কেনো? আর সায়ানের সাহস কি করে হয় আমার অতসীর গায়ে হাত তোলার?
আমি ওর জান নিয়ে নিবো। চল তুই আমার সাথে।
.
তোর অতসী?
ইফাদ প্রশ্ন করে দিহান কে৷ দিহান ওদের মাঝের সব টা বলে।এটাও বলে অতসী কে দেখানোর জন্য ও ওর বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করেছে কিন্তু সে অতসী কে ভালোবাসে। ওর প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে না পেরে এসব করেছে৷
.
ইফাদ দিহান কে থামিয়ে দেয়।
-অতসী ফিরবে না দিহান। কারণ আমি অতসী কে চিনি ও নিজের জন্য কিছুই ভাববে না। আর সব থেকে বড় কথা রাইমা তোর বিয়ে করা বউ। তোর দায়িত্ব। তুই অতসী কে ছেড়ে দে দিহান। ও বাঁচলে বাঁঁচবে মরলে মরবে। ওর কথা যদি তোর এতই চিন্তা হতো তাহলে তুই ওর জন্য অপেক্ষা করতি তারপর না হয়৷
যাক গে বাদ দে। মেয়েটা যেমন আছে তেমন থাকতে দে। হয়তো কষ্ট হবে কিন্তু বোন আমার ধৈর্য্যশীল মেয়ে ঠিক কাটিয়ে উঠবে।
.
.
কথাগুলো বলে ইফাদ চলে গেলো। দিহান চুপচাপ বসেছিলো। নাহ্ কয়েকটা ঘন্টা আগে যদি এসব জানতো তাহলে হয়তো এসব কিছু সে করতো না। এখন কি করবে সে? রাইমা কে জেদের বশে বিয়ে করলেও তাকে কোন দিন অতসীর জায়গা কি সে দিতে পারবে?
হয়তো কোন রাতের আঁধারে পুরুষত্ব জেগে উঠবে কিন্তু মন থেকে সে কোন দিন মানতে পারবে না।
.
.
বউ সেজে হাজারো জল্পনাকল্পনা নিয়ে বসে আছে রাইমা। আজ তার বাসর রাত। কত স্বপ্ন থাকে এই রাত নিয়ে। বিবাহিত বান্ধুবীদের থেকে শোনা বিভিন্ন কাহিনী, সিনেমায় দেখা ছোট্ট ছোট্ট মোমেন্ট কিংবা নিজের স্বপ্নগুলো।
.
দিহানের উপস্থিতি বেশ বুঝতে পারছে রাইমা। আরো গুটিসুটি মেরে বসলো।
হঠাৎ কারো গানের গলা শুনতে পেলো। সামনে তাকিয়ে দেখে স্ক্রীনে একটা মেয়ে বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে গিটার হাতে বসে গান গাইছে
.
Pehle Kabhi Na Tune Mujhe Gum Diya
Fir Mujhe Kyu Tanha Kar Diya
Guzare The Jo Lamhe Pyaar Ke
Humesha Tujhe Apna Maan Ke
To Fir Tune Badli Kyu Ada
Ye Kyu Kiya
Kabhi Jo Badal Barse
Mai Dekhu Tujhe Aankhe Bhar Ke
Tu Lage Mujhe Pehli Barish Ki Dua
Tere Pehlu Me Reh Loon
Main Khud Ko Pagal Keh Loon
Tu Gam De Khushiyan Seh Loon Sathiyaa
Aaaa Sathiyan
Sathiyan
Hmm
Koii Nahii, Tere Siva Mera Yahan
Manzile Hain Meri To Sab Yahan
Mita De Sabhi Aaja Fasle
Main Chahu Mujhe Mujhse Bant Le
Zara Sa…
.
.
স্ক্রীনে অতসী। পাশে দিহান বসে আছে। খুনসুটিময় সময় তাদের। বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো রাইমার।
দিহান অপলক ভাবে স্ক্রীনে অতসীর দিকে তাকিয়ে আছে।
.
-রাইমা! আপনাকে কিছু বলার আছে আমার। এরপর আপনি যদি মনে করেন আপনি মুক্তি চান তবে আমি দিয়ে দিবো কিন্তু এর জন্য আপনি অতসী কে কখনো দোষ দিতে পারবেন না।
আমি অতসী কে ভালোবাসি।
.
.
রাইমা কিছুটা আন্দাজ করেছিলো। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কারণ বাঙালি মেয়েরা তিন বার কবুল বলার সাথে সাথে মানুষ টা কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। রাইমার জন্য পুরো পৃথিবী এখন দিহান কিন্তু বাসর রাতে যদি কোন মেয়ে জানতে পারে তার স্বামীর প্রাক্তন প্রেমিকা তার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং তার স্বামী এখনো প্রাক্তন কে ভালোবাসে বাসর রাতে তাদের বাসর ঘরে বাজছে তার স্বামীর প্রাক্তনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর ভিডিও তাহলে অবশ্যই তার জন্য আজকের রাত টা কি স্মরণীয় নয়?
.
দিহান এগিয়ে এসে রাইমার কাছে বসলো। ধীরেধীরে সব টা বললো। সব এমনকি বিয়ের কারণ টাও।এখন রাইমা বুঝছে অতসীর ওভাবে রিয়্যাক্ট করার কারণ। অতসীর জন্য রাইমা তো এটুক করতেই পারে৷ কারণ সে দেখেছে তো মেয়েটা ছোট থেকে শুধু অবহেলা পেয়েছে। তাছাড়া অতসী রক্ত দিয়ে তার ভাইয়ের জীবন বাঁচিয়েছিলো। অনেক ঋণ আছে মেয়েটার কাছে। যদি দিহান হয়ে থাকে সেসবের কিছুটা শোধ হয় তাহলে না হয় এতিম মেয়েটাকে রাইমা সব দিয়ে দিবে। হ্যাঁ এতিম তো। যার বাবা থেকেও নেই যে জীবনে শুধু হারিয়েছে সে না হয় এই একটু সুখের ভাগীদার হবে।
.
হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে রাইমা জবাব দিলো
-অসী যদি ফিরে আসে আমি অবশ্যই চলে যাবো। আপনি ওকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
রাত একটু গভীর হতেই অতসীর শরীর কাপিয়ে জ্বর এলো। বার দুয়েক বমি করাতে সায়ানের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। মেয়েটার মাথায় লেগেছে আর মাথায় ব্যথা পেলে যদি বমি করে তাহলে অনেক সমস্যা হয়।
এক দিকে অনামিকা অন্য দিকে অতসী। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে সায়ানের।
কিভাবে মেয়ে টা কে মারলো? আসলে অনামিকা কে মারার কথা বলাতে মাথা ঠিক ছিলো না। হ্যাঁ! সায়ানের একটা চাপা রাগ আছে অতসীর উপর৷ সেই রাগের বশে এমন করে।
কারণ সায়ান তার মা কে খুব ভালোবাসে। প্রথম দেখাতে না কি ওর মা অতসী কে পছন্দ করে কিন্তু অতসী বিয়ের জন্য না করে দেয়।
সায়ানের মা বড্ড অপমানিত হয়। সায়ান দেখতে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম, স্মার্ট।টাকা পয়সাও কম না তাও অতসী সায়ান কে দেখতেও না কি চায় নি। এই নিয়ে সায়ানের মায়ের মন বেশ খারাপ ছিলো।
এসব সায়ান কে জানায় অনামিকা, তারপর ধীরে ধীরে পরিচয়। বুঝতে পারে অনামিকা কে সে ভালোবেসে ফেলেছে। অনামিকার প্রতি অতসীর অত্যাচার কুড়ে কুড়ে খেতো সায়ান কে।
ওর লাইফের দুইজন মানুষ যাদের কে সায়ান সব থেকে বেশি সম্মান করে তাদের কে অতসী এতটা অপমান করেছে?
সায়ান সেদিন বলেছিলো
---- ক্ষমা যতই মহৎগুণ হোক না কেনো?
আমি প্রতিশোধ নিতেই পছন্দ করবো।
.
.
অতসীর পড়নের কামিজ ভিজে গেছে। সায়ান মেইড কে ডেকে চেঞ্জড করিয়ে দিলো। অনামিকার কাছে ছিলো আবার অতসীর কাছে এলো।
মেইডের কি কোন আক্কেল জ্ঞান নেই?.
নাইটি পড়িয়ে দিয়ে গেছে। এমনি তেই মেয়েটা জ্বরে কাবু হয়ে আছে।
হঠাৎ চোখ গেলো অতসীর গলার একটু নিচে। বুকের হাড় শুরু হয়েছে সেখান থেকে একটু নিচে বা পাশে বেশ খানিকটা নীল হয়ে আছে।
নাহ্! অতসী কে সায়ান ওখানে আঘাত করেনি তো!
তাহলে?
.
মনে পড়ে গেলো ওদের বিয়ের দিনের কথা!
ওহ্ হ্যাঁ! অতসীর বাবা কিছু একটা দিয়ে ওকে মেরেছিলো তবে কি সেই থেকে দাগ?
কালচে নীল হয়ে আছে। অতসী পাশ ফিরে। সায়ান চুপচাপ ওর পাশে বসে আছে।
.
.
সকালে ঘুম ভাংলো সায়ানের৷ অদ্ভুত ভাবে অতসী সায়ানের হাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ঘড়িতে জানান দিচ্ছে আটটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট।
সাড়ে নয়টার দিকে ইফাদ আসবে।
.
.
-অতসী?
- উঁহু
- উঠো তো একটু!.
-হু?
- উঠে চেঞ্জ করে নাও।
- না
- প্লিজ
- উঁহু
- ইফাদ আসবে! তার আগে প্লিজ চেঞ্জ করে নাও।
.
.
সায়ান অতসী কে নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। অতসী ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে অনামিকার রুমের দিকে পা বাড়ায়।
.
-কোথায় যাচ্ছো?
- যা কাজের জন্য আমাকে রেখেছেন সেই কাজ করতে
- তুমি অসুস্থ অতসী.....
- হুহ্! ঘোড়ার আবার খোড়া রোগ!
.
তাচ্ছিল্যের সাথে কথা গুলো বলে অতসী বাহিরে পা বাড়াতেই ইফাদ আসে।
.
- কেমন আছো?
-দাদাভাই আমি ভালো। তুমি?.
-আমিও! এসো তো
-কেনো?
- কপালের কাটা টা দেখবো।
-লাগবে না দাদাভাই! আমি ঠিক আছি। যার সব শেষ সে কি এই একটু আধটু তে......
-তুমি এসো।
.
.
ইফাদের জেদ অতসীর বড্ড ভালো লাগে। মনে হয় যেনো ওর আপন ভাই সে।
-অতসী! এক টা বার দিহানের কথা আমাকে বলতে.....
-বাদ দেও
-তুমি ফিরবে দিহানের কাছে?
.
.
কথাটা শুনে অতসী চমকে উঠে। কি বলছে এসব? দিহানের কাছে ফিরবে মানে? দিহানের কাছে ফিরলে রাইমার কি হবে? সে জানে হারানোর কষ্ট কি !
.
-জানো তো! ক্লাস ফাইবে থাকতে একদিন হেড স্যার সবার বাবা কে ডাকলো। যারা যারা বৃত্তি দিবে তাদের বাবা যেনো স্কুলে যায়। বাবা কে অনেক বলার পরেও বাবা গেলো না। সেদিন যদি বাবা গিয়ে স্কুলের স্যারের সাথে কথা না বলে তাহলে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে দিবে না। পুরাতন হেড স্যার থাকলে কোন ঝামেলাই হতো না। সেদিন অনামিকা আপু কে নিয়ে বাবা মেলায় গিয়েছিলো। শীতের মেলাতে তাই স্কুলে যাওয়ার সময় তার হবে না।
আমি সারা সকাল, সকাল থেকে দুপুর অব্ধি অপেক্ষা করলাম। বাবা এলো না। বিশ্বাস ছিলো আসবে কিন্তু আমার ছোট্ট মনের বিশ্বাস সেদিন ভেঙে যায়। মিটিং শুরু হয় কিন্তু বাবা আসে না।
জানি না সেদিন কিসের মিটিং ছিলো তবে স্কুলে ৭০০ টাকা জমা দিতে হচ্ছিলো।
এত কষ্ট করে নেওয়া প্রিপারেশন গুলো বৃথা গেলো।
হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ব্যাগ নিয়ে আসছিলাম। রাইমা দৌড়ে এসে বললো হেড স্যার আমাদের ডাকছে। যারা যারা বৃত্তি পরীক্ষা দিবো।
আমাকেও যেতে বলেছে। কাঁদোকাঁদো মুখ করে যখন বললাম
-আমার বাবাতো আসেনি। আমাকে দিবে না পরীক্ষা দিতে!
কাধে কারো স্পর্শে তাকিয়ে দেখি রাইমার বাবা আর মা।
দুহাতে আমার দুহাত ধরে বলেছিলো
-কেনো? আমি কি তোর বাবার মতো না? আমি কি পারি না? আমার অতসী মায়ের এইসব ছোট্ট ছোট্ট দায়িত্ব নিতে?
.
সেদিনের পর থেকে হিসেব ছাড়া আমি তাদের পাশে পেয়েছি। ঈদের দিন আমাকে না খাইয়ে ওরা কেউ খেতো না।আমার সাথে সব জিনিস ভাগ করে নিতো।
হয়তো রাইমা হাসতে হাসতে আমার জন্য সব ছেড়ে দিবে। কাকা কাকীও হয়তো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করবে। তাই বলে দাদাভাই আমি এতটা খারাপ না যে ওর থেকে সব কেড়ে নিবো।
তোমার বন্ধু কে বলো -আমার রাইয়ের খেয়াল রাখতে।
.
.
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সায়ান সব টা শুনলো। আশ্চর্য! অতসী অনামিকার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী কেনো বললো?
অনামিকা তো বলেছিলো অতসীর জেদের কারণে বাবা অতসী কে নিয়ে মেলায় যায় আর ওর বাবা স্কুলের মিটিং এটেন্ড করেনি, টাকাও দেয়নি তাই ও বৃত্তিও দিতে পারেনি।
.
সায়ানের কাছে বড্ড গোলমেলে লাগছে। কোন টা সত্য কোন টা মিথ্যে? সেদিনের অনামিকার চোখের পানি? না আজকের অতসীর চোখের পানি?
তবে এটা শিউর! অতসী চাইলে রাইমা কে সরিয়ে দিতে পারতো কিন্তু এত ত্যাগ?
.
.
বাধ্য হয়েই সায়ান নার্সের ব্যবস্থা করলো। অতসীর জন্য না অনামিকার জন্য। অতসী কে সে বকে ধমকিয়ে খাবার খাইয়ে দিতে পারে কিন্তু অনামিকার কি হবে?
অনামিকার জন্য অন্য মহিলা মানুষ প্রয়োজন। কারণ সায়ান নিজে পারে না ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে কিংবা অন্য কাজ করতে। জড়তা কাজ করে।
করবেই না কেনো! অনামিকা তো এখনো সায়ানের কাছে বিয়ের আগের মতোই। বিয়ের পর যে সময় টা অনামিকা সুস্থ ছিলো ওদের মধ্যে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। আলাদা আলাদা থাকতো। কথা ছিলো যেদিন সবাই কে পরিচয় দিয়ে ঘরে তুলবে সেদিন নতুন সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।
তাই হয়তো সায়ানের অনামিকার প্রতি কিংবা ওর শরীরে স্পর্শ করতে দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে। সেদিক থেকে অতসীর প্রতি কোন জড়তা কাজ করছে না।
.
.
.
পর পর কয়েকটা হাঁচি দিলো অতসী। সায়ান কাউচে বসে দেখছিলো। হাঁচি আসলেই অতসী মাথা দুলায় যাতে না দিতে হয়।আবার হাঁচি না আসলেও কটনবাট নাকের ভিতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাও থামছে না।
সায়ান উঠে এসে চুপচাপ ওর মাথা ধরলো সাথে সাথে গড়গড়িয়ে বমি করে দিলো অতসী।
সায়ানের মনে হচ্ছে দেই এক থাপ্পড়।অসুস্থ না হলে অবশ্যই মাইর খেতো কিন্তু এখন কিছুই বললো না। মেইড দিয়ে সব পরিস্কার করিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এলো।
অতসী জ্বরে কাপছে। পাঁচ দিন আগে কোন এএন্টিবায়োটিক দিবে না। এই পাঁচ দিন শুধু প্যারাসিটামল খেতে হবে তাই কিছু করাও যাচ্ছে না।
.
ইফাদের কল দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সায়ান।
.
-অতসীর জ্বর কমেছে?
-কিছুটা
(তারপর সায়ান অতসীর করা কাজগুলোর কথা বললো)
.
-চুপচাপ শুইয়ে রাখতো ৷ কিছু খাইয়েছিস? আচ্ছা শোন তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।
-হ্যাঁ! বল
-অনামিকার সাথে কি বিয়ের আগে মেলামেশা করতি?
-ঠিক কি বলতে চাইছিস?
-তোরা কি ফিজিক্যালি ইনভলভ ছিলি?
-তোর মাথা খারাপ?. আমাকে তোর এমন কেনো মনে হলো?. ইনফ্যাক্ট অনামিকার সাথে আমার আজ অবধি ফিজিক্যাল কিছুই হয় নি।
-সিউর তুই?.
-আমি না তো কি তুই সিউর হবি?.
-আচ্ছা অতসীর খেয়াল রাখিস।
.
.
বেশ চিন্তিত ভাবে কল কেটে দিলো ইফাদ। সায়ানের কথার সাথে তার হাতে থাকা রিপোর্ট গুলো তো মিলছে না। কোথাও কি কিছু একটা ভুল হচ্ছে না কি অনামিকা নিজেই একটা মরীচিকা......
ইফাদ রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে বাংলাদেশের বেস্ট gynecologist মিসেস.ফাতেমা ইব্রাহিমের কেবিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
রাত যত বাড়ছে অতসীর জ্বর দ্বিগুণ বেগে বেড়ে চলেছে।
একদিকে অতসী অন্য দিকে অনামিকা। আশ্চর্য হলেও সায়ান অতসীর সাথে আছে।
জ্বরের তাপে অতসী পুরো লাল হয়ে গেছে।
হঠাৎ মায়ের বলা একটা কথা সায়ানের মনে হলো।
একদিন মা জ্বর নিয়ে একটা হাদীস বলেছিলেন
.
আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে মহানবী (সা.) বলেছেনঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর। [৩২৬৩]
.
.
সায়ান অতসীর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিলো। গা মুছিয়ে দিবে কি না চিন্তা করতেই আবার ফিরে এলো। হাত পা, গলা ভালো করে মুছে দিলো।
মাঝেমধ্যে গিয়ে অনামিকার খোঁজ নিচ্ছে।
ইফাদ ঘন্টায় ঘন্টায় কল দিচ্ছে। শুধু একটা কথাই! কিছু খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিতে কিন্তু কপাল সায়ানের।
এই মেয়ে একটু পানি খেলেই বমি করে ফেলে দিচ্ছে৷ আর থরথর করে কাঁপছে।
এভাবেই রাত বারোটা বাজলো। আবার ইফাদ কল দিয়েছে।
.
-কিছু খেয়েছে?
-একটু আপেল খেয়েছিলো।
-মেডিসিন?
-না! বমি করছে আবার। ভাই কিছু কর! নইলে মেয়েটা মরবে।
-চুপচাপ শুয়িয়ে রাখ। আর শোন, আমার বোনের চুল মা-শাহ্-আল্লাহ্ অনেক বড়। চুল ভেজাবি না। নাহলে ঠান্ডা বেশি লাগবে। আজ আমার নাইট আছে তাই। কাল আসবো।
-আচ্ছা!
.
.
কল কেটে দেখে অতসী বিছানায় বসে আছে। সবে ড্রেস চেঞ্জ করেছে। সায়ান এসে বা হাতে ওর কোমর প্যাচিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ওর মাথা জোড় করে সায়ানের বুকে রাখে। অতসী প্রথমে উঠতে চাইলেও উঠতে পারে না।
.
-মি.মাহমুদ!
-বলো
-আমাকে ছাড়ুন! আমি ওয়াশরুমে যাবো। বমি আসছে।
.
.
সায়ান ডান হাতে অতসীর দুহাত ধরে। হায় আল্লাহ্! এত পিচ্চি পিচ্চি হাত? সায়ানের এক হাতে দু হাত এটে যাচ্ছে।
.
-অতসী? তোমার তিনটে স্বপ্নের কথা বলো তো!
-আমার তিনটে স্বপ্ন?
-হ্যাঁ!
-আচ্ছা!
১. আমার একটা গাভী থাকবে আমি আমি চুনু চুনু করে দুধ পানাবো।
২.আমার অনেক গুলো হাঁস-মুরগি থাকবে। অনেক ডিম পারবে আমি সেগুলো বিক্রি করবো।
৩. আমার হাফ ডজন বাচ্চাকাচ্চা থাকবে।
.
সায়ান অতসীর কথা শুনে ওর দিকে তাকায়। অবাক হওয়ার সপ্ত আসমানে সে অবস্থান করছে।
.
-আর ইউ সিরিয়াস?
-হ্যাঁ!
-হ্যাঁ?
-এসব অদ্ভুত স্বপ্ন? কোথায় পেলে? আর চুনু চুনু কি?
-যখন দুধ পানাবো তখন একটা শব্দ হয়৷ চুনুচুনু চুনুচুনু
.
.
অতসীর কথা শুনে গা কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। অতসীর বেশ রাগ হলো। হাতে জোরে চিমটি কাটলো।
-আউচ! কি করছো কি?
-হাসলেন কেনো?
-আচ্ছা! হাসবো না। কিন্তু তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করবো।
-এ্যা.......
-কি হলো?
-আপনি পূরণকরবেন মানে? করবে তো দিহানজি.....
-হোয়াট? দিহান কেনো তোমার বাচ্চার বাবা হতে যাবে? তুমি ভুলে গেছো? তুমি আমার লিগ্যাল ওয়াইফ?
-আপনি খুব খারাপ! আপনি আমার থেকে আমার সব কেড়ে নিছেন। আমার দিহান কে কেড়ে নিছেন। আমার সব শেষ করে দিছেন।আমার দিহান কে কাঁদিয়েছেন, আমাকে মেরেছেন, আমি আপনাকে খুন করবো। তারপর আমি পালিয়ে যাবো দিহানের সাথে দেখবেন তখন মজা কাকে বলে......
.
কথাগুলো বলেই অতসী সায়ান কে মারতে থাকে। সায়ান পুরোপুরি হতবাক৷ অতসী জ্বরের ঘোরে এমন করছে? গা তো পুড়ে যাচ্ছে। না হলে অতসী এমন করার মেয়ে না। অন্তত পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যানের কথা সায়ানকে বলতো না।
অন্যসময় হয়তো রিয়্যাক্ট করতো কিন্তু এবার করলো না। চুপচাপ অতসী কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো সায়ান।
আচ্ছা! কোন জড়তা কাজ করছে না কেনো? মনে হচ্ছে সব স্বাভাবিক। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। অনামিকার প্রতি অস্বস্তি অথচ অতসীর প্রতি স্বাভাবিক ব্যবহার সায়ান কে ভাবিয়ে তুলছে।
.
-অতসী!
-হু!
-কিছু খাবে?
-হু!
-কি?
-চুমু
-হোয়াট? আর ইউ কিডিং উইথ মি?
-আম সিরিয়াস মি.মাহমুদ।
-ওয়ান কন্ডিশন! এন্ড ওয়ান এন্সার
-হোয়াট?
-তুমি মিল্কশেক খেয়ে নিবে। আর একটা উত্তর দাও
-কি?
-দিহান কখনো তোমাকে কিস করেছে?
-না!
-কেনো?
-দিহান বলতো আমি ওর লেডি লাক। আমাকে কিভাবে অপবিত্র করবে? সম্পর্ক বৈধতা পেলেই না হয় সব হবে।
-আচ্ছা (সায়ান যেনো মনে মনে এটাই প্রার্থনা করছিলো। উত্তর পেয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে)
.
অতসীর দিকে মিল্কশেক এগিয়ে দিলো। প্রথমে নাইনুকুড় করলেও পড়ে পুরোটা শেষ করে মেডিসিন খেয়ে বিছানায় দু পা তুলে বসলো অতসী।
-আমার চুমু?
.
সায়ান ভেবে পাচ্ছে না কি করবে! এভাবে কি ঠিক হবে? তারপর অতসীর হাতে আলতো করে চুমু দিলো।
-এটা কি?.
-তুমি যা চাইলে.... তোমার ভাষায় চুমু.....
-এটাকে হামী বলে। চুমু হয় গভীর যেখানে ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ পায়।
-হইছে এখন ঘুমাবে৷ আসো।
.
অতসী কে জোড় করে নিজের সাথে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সায়ান। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো অতসী গভীর ঘুমে কিন্তু দুজনেই ঘেমে গেছে। অতসীর জ্বর ছেড়েছে অতসীর ভেজা শরীর সায়ান কে ভিজিয়ে দিচ্ছে।গায়ে টিশার্ট লেপ্টে যাচ্ছে।
.
.
সকাল সাতটার দিকে ঘুম ভাংলো অতসীর। মাথা প্রচন্ড ব্যথা। নিজেকে সায়ানের বাহুতে আবিষ্কার করে বেশ অবাক হয়েছে। তারপর আবার এই লোক এমন খালি গায়ে কেনো?.
.
এত ভাবতে পারছে না অতসী। তাই চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হয়ে অনামিকা কে দেখতে যায়৷ হ্যাঁ! অনামিকা ঠিক আছে। প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। নিচে নেমে এক পিস ব্রেড আর একটু পানি খায়। সব যেনো তেতো করল্লা।
রুমে এসে দেখে সায়ান এখনো ঘুমে।
এই লোক এখানে করছে টা কি?কাল তো দিনে বেশ যন্তাত্নি করেছে। সব কেড়ে নিয়ে এত আদিক্ষেতা?
.
উপায় না পেয়ে অতসী আবার গিয়ে বা পাশে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর সায়ানের কল আসে। অতসীর ডিস্টার্ব হবে তাই দূরে গিয়ে কথা বলে।
যেহেতু অফিস যাচ্ছে না তাই ফ্রেশ হয়ে অনামিকা কে দেখে ব্রেকফাস্ট করে আবার অতসীর রুমে।
অতসী কে সে চোখে হারাচ্ছে। অথচ কেনো?
.
.
চারদিন কেটে গেলো। অতসী মোটামুটি সুস্থ। তাই সায়ান আজ অফিস যাচ্ছে। অতসী নিচে কফি বানাচ্ছিলো এদিকে সায়ান ডেকেই যাচ্ছে।
কোমরে শাড়ির আঁচল গুজে সায়ানের সামনে দাড়ালো অতসী..
.
-কি সমস্যা? মি.মাহমুদ
-অফিস যাবো তুমি জানো না?
-তো আমি কি করবো?
-টাই বেধে দিবে কে?
-আমি পারবো না।
-কেনো?
-আপনি কত লম্বা! আমি নাগাল পাই না। কোমরে ব্যথা লাগে তো...
.
সায়ান দুহাতে আকড়ে অতসী কে উঁচু করে।
-তবুও বাধতে হবে।
.
অতসী চুপচাপ বেধে দেয়। এই লোকের মতিগতি কয়েকদিন যাবত বিশেষ করে অসুখের সময় থেকে ভালো লাগছে না। কি চায় কে জানে? এমন ভাবে কথা বলে, ব্যবহার করে যেনো আমি তার বিয়ে করা বউ।
বউ? হ্যাঁ! আমি তো তার বউ। তার প্রথম বউয়ের জন্য আনা দাসী। সে চাইলে আমার সাথে এসব করতেই পারে।
এসব মনে মনে ভাবতেই টাই বাধা শেষ হয়। সায়ান ছেড়ে দেয়।
.
-নার্স বাদ দিয়ে দিন। আমি এখন সুস্থ।
-তোমার না চিন্তা করলেও হবে। ঠিক সময় খেয়ে নিবে আজ আসতে লেট হবে। অনামিকার সাথেই থাকবে আর শোন! বিশ্রাম নিবে। ইফাদ আসলে ও যা যা বলবে মন দিয়ে শুনবে।
.
সায়ান কথাগুলো বলেই চলে যায়। অতসী নিজের রুমে গিয়ে লম্বা শাওয়ার নেয়। কেমন যেনো নিজের শরীর দিয়ে জ্বর জ্বর স্মেল আসছে৷
.
প্রায় দুই ঘন্টা পর সায়ান মিটিং শেষ করে সামনে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। বাসার ফুটেজ এর
স্ক্রীন অন হতেই চক্ষু চড়কগাছ।
দিহান! দিহান বাসায় কি করছে? আর ওর সাহস কি হয় এভাবে অতসী কে জড়িয়ে ধরার?
দিহান অতসীর হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কি সত্যি অতসী দিহানের সাথে চলে যাবে?
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে সায়ানের মিতসুবিশি পাজেরো দাঁড়ানো। দৌড়ে সায়ান ভিতরে গিয়ে পুরো বাসা অতসী কে খুঁজেও পেলো না।
তবে কি অতসী সত্যি দিহানের সাথে চলে গেছে? বাসায় এত গুলো লোক, এত গুলো গার্ড কেউ কেনো দিহান কে আটকায়নি?
অতসী বলে জোড়ে চিৎকার করে ড্রয়িংরুমে থাকা শোপিসের কর্ণারে জোড়ে আঘাত করে। কাঁচের দেয়াল নিমিষেই ভেঙে যায়। মাথা নিচু করে বসে আছে সায়ান। চোখেমুখে রাগ স্পষ্ট, দৃষ্টি নিচের দিকে। কাজের লোক গুলো ততক্ষণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এক কোণে।
হঠাৎ খেয়াল করলো খালি পায়ে লাল পাড়ের কালো শাড়ি পড়া কেউ সায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মুখ তুলে তাকাতেই দেখলো অতসী।
বাম হাত আঁচলের সাথে প্যাঁচাচ্ছে আবার খুলছে।
সায়ান এক মিনিট অপেক্ষা করেনা। হাত ধরে টানতে টানতে অতসীর রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
জোড় করে ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ার অন করে অতসী কে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
অতসীর দু হাত, গলা, পিঠ থেকে কিছু একটা ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। অতসী চুপচাপ সহ্য করলেও এখন মনে হচ্ছে চামড়া সহ তুলে ফেলবে এই লোক টা ।
.
-কি হচ্ছে কি মি.মাহমুদ? আমার লাগছে তো?
.
সায়ান চুপচাপ ওর কাজ করেই চলেছে। এবার অতসী জোড় করে সরে এলো। সায়ান চোখ তুলে ওর সামনের দিকে তাকাতেই অতসীর চোখে পড়লো সায়ানের লাল টকটকে হয়ে যাওয়া দুচোখ।
লোক টা অদ্ভুত৷ এভাবে কেউ ভিজে? অফিস থেকে এসে কোর্ট, টাই এমন কি জুতোও খুলেনি।
আল্লাহ্।! এ আবার নতুন কি মসিবত?
.
সায়ান অতসী কে আবার টেনে শাওয়ারের নিচে এনে দুহাতে আকড়ে ধরে উপরে উঠিয়ে নিজের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রাখে।
পানিতে দুজন ভিজছে অতসী নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারছে না। বার বার মুখে পানি এসে জমা হচ্ছে অথচ নড়েচড়ে লাভ নেই।
এবার অতসী মুখের ভিতর পানি জমিয়ে খুব সুন্দর করে সম্পূর্ণ পানি সায়ানের দিকে দিলো।
সায়ান চোখ খুলে তাকিয়ে ওকে নামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
.
-এটা কেমন ব্যবহার?
-আপনি বলুন এটা কেমন ব্যবহার?
-কই ছিলে তুমি?
-ছাদে।
-আমাকে না বলে কোথাও গেলে খুন করে ফেলবো।
-হুহ্! যান বের হোন। আমার শীত লাগছে। এই না না। বের হবেন না। এই নিন টাওয়াল চেঞ্জ করে বের হবেন। আমি রুমে যাচ্ছি।
-না! তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।
-আপনি এত ঠাট্যা কেনো? এই অবস্থায় রুমে গিয়ে পুরো রুম নষ্ট করবেন। পরিস্কার কে করবে শুনি?
-এত্তগুলা মেইড কি ঘাস কাটার জন্য রাখছি?
-হ্যাঁ! ওরাও মানুষ। নিচে কি করেছেন সেগুলো ওরাই পরিস্কার করছে তো? চুপচাপ যা বলছি তাই করুন।
.
.
সায়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে অতসী চুল মুছতেছে। অতসী দিহানের সাথে যায় নি। এটাই অনেক কিন্তু দিহান এত সহজে কেনো ছেড়ে দিয়ে গেলো? না কি অন্য প্ল্যান করেছে ওরা? না জানতে হবে।
.
.
-অতসী! প্লিজ লক্ষীটি এক কাপ কফি দাও
-হুম! দিচ্ছি কিন্তু আমাকে কখনো লক্ষী বলে ডাকবেন না।
-এটা আদরের ডাক। আমি তোমার স্বামী আমি ডাকতেই পারি। আমার অধিকার আছে।
-শুধু আমাকে নয়। অন্য কাউকে লক্ষী বলে ডাকলে ঈমান নড়বড়ে হয়ে যাবে।
-ঠিক বুঝলাম না
-লক্ষ্মী! যাকে হিন্দুরা ধন-ঐশ্বর্য ও সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করে।
তাই এ শব্দ দিয়ে তারা উক্ত বিশ্বাসকে স্মরণ করে থাকে।
আর কোন মুসলমান কোন দেব দেবীকে ধন সম্পদ ও সৌভাগ্যদাতা বিশ্বাস করতেই পারে না। করলে তার ঈমান থাকবে না।
তাই এটি একটি সুষ্পষ্ট শিরকী ও কুফরী কথা। এ শব্দটি বর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য।
আল্লাহ বলেন,(অর্থ) তারা কি জানে না, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করেন যার জন্য ইচ্ছা সীমিতকরেন। এতে রয়েছে মুমিনদের জন্য নিদর্শন।-সূরা যুমার, ৫২
.
হযরতসুহাইব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিনের বিষয় কতই না সুন্দর। তার সকল অবস্থা তারজন্য কল্যাণকর। আর এটা একমাত্র মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। যদি সে নেয়ামত ও সুখ লাভ করে তাহলে সেআল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি সে মুসিবতে আক্রান্ত হয় তাহলেসবর করে। ফলে এ অবস্থাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। [সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৯৯]
.
.
সায়ান অতসীর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। অতসী, অনামিকা দুজন যেনো এক পয়সায় এপিঠ ওপিঠ। অনামিকার মুখে সারাদিন ব্র্যান্ডের কসমেটিকস কিংবা ডিজাইনার ড্রেসের নাম থাকতো অথচ অতসী? ঠিক যেমনটা একজন পারফেক্ট রমনীর হওয়া উচিৎ। কিন্তু? সায়ানের অনেক প্রশ্ন জমে আছে যার উত্তর শুধুই অনামিকা।
.
.
ল্যাপটপে ফুটেজ অন করে কানে ইয়ারফোন লাগালো সায়ান।
স্ক্রীনে দেখা যাচ্ছে দিহান আসছে। অতসীর সামনে। অতসী সবে রুম থেকে বেরিয়েছে। দিহান দৌড়ে ডুপ্লেক্সের উপর তলায় অতসীর রুমের সামনে এসেই অতসী কে জড়িয়ে ধরেছে। অতসী চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর দিহান অতসী কে ছেড়ে ওর হাত ধরে বলে
-চল মাই লেডি। এক মুহূর্ত থাকতে হবে না।
-কি বলছেন এসব ছাড়ুন৷
-মানে কি? ছাড়বো তো আগে চল। আমি সব শুনেছি আগে বলোনি কেনো? এভাবে সব শেষ করে দিতে পারো না অতসী। তুমি চলো। সব ঠিক করে দিবো। আই প্রমিস।
-কি ঠিক করবেন?
-আমরা এখান থেকে বেরিয়ে প্রাইভেট জেটে করে সিংগাপুর যাবো তারপর ওখান থেকে তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে। সেখান থেকে সায়ান কে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবে। ব্যস সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আর রাইমা?.
-রাইমা সব জানে। ও বলেছে ও চলে যাবে। তুমি চলো।
.
এই বলে দিহান অতসীর হাত ধরে টান দেয়।
.
-এটা হয় না দিহান! রাইমার কি দোষ?
-দিহান? আমি তোমার দিহানজি। দিহান কেনো বলছো?
- কারণ আমি পারবো না রাইমার সুখে বাধা হয়ে দাড়াতে
-মেয়েটা কি শুধু রাইমা বলে ত্যাগ করছো? তোমার মনে হয় তুমি আমার সাথে না গেলে আমি নাঁচতে নাঁচতে রাইমা কে নিয়ে সংসার করবো? তাহলে সরি! আমি পারবো না।
- রাইমা আপনার বিয়ে করা বউ আর আপনি তো জানেন রাইমা আমার জন্য কি! রাইমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে হয়তো আমি আমার জায়গা ছাড়তাম না কিন্তু আমি রাইমার সুখ কেড়ে নিতে পারবো না। রাইমার মা-বাবার অবদান আমার জীবনে অনেক।
- আমি জেদের বশে রাইমা কে বিয়ে করেছি। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-আপমি সাকসেসফুল মি.মেহেবুব। আপনি যদি একটু অপেক্ষা করতেন.... যাই হোক আপনি চলে যান।
-অতসী প্লিজ! এত বড় শাস্তি দিও না।
-আপনি প্লিজ আমাকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করবেন না।
- অতসী পাগল হলে?
.
দিহানের ডান হাত অতশী ওর মাথায় রাখে।
- আপনি আপনাদের সম্পর্ক কে সুযোগ দিবেন। রাইমার সব স্বপ্ন পূরণ করবেন।
.
-এমন টা না করলেও পারতে। তুমি জানো আপুর পর তুমিই আমার সব।
-দিহান আমি ছিলাম। সময়ের স্রোতে আমি হারিয়ে যাচ্ছি আপনাকে রাইমাকে আকড়ে ধরতে হবে।
.
-লাইফ টা কি কোন গেইম না। অতসী প্লিজ চলো।
-দিহান আমি পারবো না।
.
দিহানের চোখে পানি, অতসী তো কখন থেকেই কাঁদছে।
.
--তুমি এত বোকা কেনো মেয়ে? এত বোকা কেনো? কেনো মানুষকে তোমাকে ছোট করার, অবহেলা করার সুযোগ দাও একটু বলবে? যারা তোমার ধারে কাছে আসার যোগ্যতা রাখেনা তারাও তোমাকে কথা শুনিয়ে যায় আর তুমি চুপচাপ থাকো। কেনো প্রতিবাদ করতে পারো না? যদি শুরু থেকেই সেসব মানুষকে জবাব দিয়ে আসতে তাহলে আজ এত দূর আসতো না। সাহস কি করে পায় কেউ তোমাকে কিছু বলার? কি প্রয়োজন সেসব মানুষকে সম্মান দেওয়ার যারা তোমাকে দিচ্ছে না?
-একসময় আপনিই বলতেন এসব ইগ্নোর করতে। সমালোচনা সহ্য করতে। এসব বাধা না আসলে উপরে উঠা যায় না।
-ভুল করেছি আমি। আমার উচিৎ ছিলো তোমাকে তখন থেকেই এসব বিষয়ে সাবধান করা। প্রথম প্রথম যদি এসব কথার উত্তর দিতে তাহলে আজ কেউ কথা বলার আগে দশবার ভাবতো। অতসী! লাইফ তোমার, চিন্তা তোমার। এমন কোন মানুষকে কোন ইম্পর্টেন্টস দিও না যারা আগার ও খাবে তলার ও কুড়াবে।
.
প্রমিস করো! যদি কোন দিন মনে হয় তোমাকে এই সম্পর্কে অপমানিত হতে হচ্ছে তুমি সেদিন বেরিয়ে আসবে। আমি তোমার জন্য সব সময় থাকবো। আজ থেকে বন্ধুর মতো আমাকে পাশে পাবে। রাইমার সাথে আমাদের সম্পর্ক কে আমি সুযোগ দিবো কারণ আমি তোমায় ছুয়ে বলেছি কি না!সুযোগ দিলেও আমার মনে তুমিই থাকবে আজীবন। ভালো থেকো মাই লাভ। নিজের খেয়াল রেখো।
.
দিহান হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে বেরিয়ে গেলো। অতসী সেখানে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো......
My pain maybe the reason somebody's love bt my love must never be the reason somebody's pain......
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
তুমি বরং কুকুর পোষো,
প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়,
তোমার জন্য বিড়ালই ঠিক,
বরং তুমি বিড়ালই পোষো
খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়
খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা
সোনা, এখন তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো
শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়,
কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।
ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি,
তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো
উংক পাবে, জলও পাবে।
চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই,
ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।
ঘোলা পানির আড়াল পেলে
কে আর পাবে তোমার দেখা।
মাছ শিকারেও নামতে পারো
তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে
দেখাও তোমার গভীর মেধা।
তুমি তোমার স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো
নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?
শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যধি
তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো,
কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়
তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে ?
.
.
সায়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে।অতসী ভাবলেশহীন ভাবে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর কবিতাটা আবৃত্তি করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো।
এই পাঁচ দিনে ওর পেটে খাবার খুব কম পড়েছে যা পড়েছে তাও বমি করে বেরিয়ে গেছে। একটুও শক্তি নেই। তার উপর আবার দিহানের সাথে দেখা। মন থেকে কিভাবে যে ওর সামনে ছিলো অতসী নিজেও জানে না।
হাত পা ভেঙে আসছিলো। মাথা ঝিমঝিম করছিলো। তবুও সাহস শক্তি জুগিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। দিহানের প্রতিটি কথার হয়তো উত্তর দেয়নি কিন্তু রাইমার জন্য কোন ক্ষতির কারণ নিজেও হয়নি।
চা মুখে দিতেই পেটের ভিতর মোচড় দিচ্ছে।
এই বুঝি বমি এলো।
কিন্তু এভাবে চলবে না, শারিরীক ভাবে সুস্থ হলে অবশ্যই মন থেকেও শক্তি আসবে।
.
-তোমার সাহস কি দিন দিন বাড়ছে না?
-সাহস জন্মগত ভাবেই আছে। দেখতে চাচ্ছেন?
- সুস্থ হয়েছো মনে হচ্ছে
- জ্বী! so stay away of me.. নইলে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিবো।
.
.
সায়ান কিছু বলার আগেই ইফাদ এসে হাজির হয়। ইফাদের দু হাতে দুই প্যাকেট। এগিয়ে দেয় অতসীর দিকে।
.
-দাদাভাই! এগুলো কি?
- যা খেলে আপুমণি দ্রুত শক্তি পাবে। পেয়ারা, আম।
-তুমি কি করে জানলে আমার খেতে ইচ্ছে করছিলো?
-বোনের মনের খবর আমি রাখবো না তো কে রাখবে শুনি?
-ধন্যবাদ। আচ্ছা চা না কফি?
-ঠান্ডা এক গ্লাস পানি।
-আমি নিয়ে আসছি।
.
.
ইফাদ সায়ানের দিকে ঘুরে বসলো। বন্ধু নয় সায়ান,দিহান,ইফাদ তিন ভাইয়ের থেকেও বেশি। দিহানের বিষয় টা ইফাদ আগে জানলে সায়ানের সাথে অতসীর বিয়ে যেভাবেই হোক বন্ধ করতো। অনামিকা যে এটেনশন সিকার ইফাদ খুব ভালো করেই জানে। অতসীর প্রতি সায়ানের রাগ ছিলো কেনো অতসী ওর মা কে ফিরিয়ে দিয়েছিলো তারপর অনামিকার ন্যাকামি তে ডুবে যায় সায়ান। কিন্তু জেদের বশে অনামিকার সাথে সম্পর্ক রাখলেও ভালো সে যে অতসী কে শুরু থেকে বাসতো এটা আর কেউ না বুঝলেও ইফাদ বেশ বুঝে। অনামিকার প্রতি সায়ানের শুধুই করুণা ছিলো অন্য কিছু না। কিন্তু এই বোকা ছেলেটা এত দিনেও বুঝলো না অনামিকা শুধুই মরীচিকা। যার সব থেকে বড় প্রমাণ ইফাদের হাতে৷
.
.
-আচ্ছা ইফু! চার-পাঁচ দিনে কাউকে ভালোবাসা যায়?
- চার-পাঁচ দিন অনেক বেশি সময়। ভালোবাসতে কয়েক মুহুর্ত যথেষ্ট।
জানিস তো হুমায়ূন আহমেদ কি বলেছেন?
-ভালোবাসাবাসির জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই। এক মুহূর্ত যথেষ্ট।
.
তুই কি আবার নতুন করে কারো প্রেমে পড়েছিস না কি?
কথাটা বলে ইফাদ হাসতে থাকে আর সায়ান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে।
.
-দাদাভাই তোমার পানি। আর শুনো আপুকে জলদি ঠিক করে দাও। আমি বাড়ি যাবো। আমার দম বন্ধ লাগে এখানে। দুইদিন পর এক্সাম ও আছে।এক্সাম না দিলে ইয়ার গ্যাপ যাবে এমনিতেও এ বছর আমার আর এক্সাম। আপু সুস্থ হলে আমি চলে যেতে পারবো আর হ্যাঁ প্লিজ তাড়াতাড়ি। বাবা বলেছে বাড়িতে উঠতে দিবে না। আমাকে হোস্টেলেই উঠতে হবে। তাড়াতাড়ি না হলে আবার হোস্টেলে সিট পাবো না।
.
অতসী কথা বলে ধপ করে বসে পড়লো। ইফাদ কিছু বললো না, হ্যাঁ! অনামিকা সুস্থ হলেই সব রহস্যের জট খুলবে। ওর রিপোর্ট গুলো দেশের বাহিরে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত আসবে কিন্তু অনামিকা সুস্থ হওয়ার আগে এই বিষয় ইফাদ কে গোপন রাখতেই হবে।
.
.
.
পুরো ফ্ল্যাটে কেউ নেই। রাইমা এ ঘর ওঘর করে দিন কাটাচ্ছে। দিহানের প্রতি অভিযোগ নেই না অতসীর প্রতি। আশ্চর্য হলেও দিহান কে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিন্তু অতসী! না রাইমা চলে যাবে। অতসী শুধু হারিয়েছে কিছুই পায়নি । এ বেলা না হয় একটু সুখী হোক।
একটা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাইমা। এই রুমে পাঁচ দিনেও আসা হয়নি।
রাইমা দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে পুরো হতবাক।
দেয়াল জুড়ে অতসীর অনেক ছবি। কখনো অতসী ক্যামেরার দিকে তাকানো কখনো আনসেন্সরড।
রুমের অন্য পাশে রাখা এক বিশাল টেডিবিয়ার।
টেডিবিয়ার টার গালে হাত রাখতেই রাইমা ডুব দিলো অতীতে........
.
.
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় সুপারশপে একটা বড় টেডিবিয়ার দেখা যায় বাহিরে থেকে। অতসী আর রাইমা প্রতিদিন দেখতো আর অতসী বলতো
-দেখিস ওটা আমি কিনবোই কিনবো।
দাম ছিলো ২৬৮০ টাকা কিন্তু অতসীর জন্য এতটাকা অনেক। নিজের খরচ নিজের দিতে হয়। রাইমা বলেছিলো গিফট করবে কিন্তু অতসী নিজেই কিনবে। প্রায় সাড়ে আটমাস সময় নিয়ে ২৭০০ টাকা জমিয়ে যেদিন কিনতে যাবে ঠিক সেদিন কে যেনো টেডিবিয়ার টা কিনে নিয়ে যায়। অতসী চুপচাপ পুকুরপাড়ে দু ঘন্টা কড়া রোদে বসে ছিলো। রাইমা পুরো শহর খুজেও ওরকম পেয়েছিলো না। মেয়েটা সচরাচর কিছুর শখ করেনা কিন্তু এই টেডির শখ ওর প্রচুর।
ভাগ্যে ছিলো না মেয়েটার৷ বেটার লাক নেক্সট টাইম বলে হেসেছিলো অতসী।
বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে টেডিবিয়ার টা দেখে দৌড়ে গিয়ে গালে হাত রাখে অতসী। সবে একটু স্পর্শ করেছিলো ঠিক তখন অনামিকা ওকে টেনে এনে গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারে।
ন্যাকা কান্না করতে করতে বাবা কে বলে ওর কোন এক বেস্ট ফ্রেন্ড গিফট করেছে আর অতসী নষ্ট করে দিচ্ছে।
অতসীর বাবা কিছু না বলেই বের হয়ে যায়। অনামিকা হাতে থাকা গরম চা অতসীর হাতে ঢেলে দেয়।
.
রাইমাদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়াতে সব দেখেছিলো সেদিন। পরে জানতে পারে ওর বাবা সেদিন ওকে খেতে অবধি ডাকেনি।
.
অনামিকা! অনামিকা! অনামিকা! তুই যে কতবড় কালসাপ তা যদি তোর বাবা বুঝতো! তোর জাস্ট ফ্রেন্ড গুলো কে লাইন করে দাড়া করালে এলাকা ছাড়িয়ে যাবে । তুই সুস্থ থাকতেও আমাদের শান্তি দিস নাই এখন মরার মতো পড়েও তুই অতসীর জীবন নষ্ট করে দিচ্ছিস। আল্লাহ্ তোকে মাফ করবে না।
.
দিহান ফিরে এসেছে । রাইমা ধুকপুকানি বুক নিয়ে দিহানের সামনে এসে দাড়ালো।
-অতসী?
-আসেনি। আসবে না।
-কেনো?
-তোমার জন্য।
-আমি চলে যাবো।
-অতসী কে ছুয়ে কথা দিয়ে এসেছি আমি আমাদের সম্পর্ক কে সুযোগ দিবো।
-আমার তো দয়া চাই না।
-কিন্তু আমি চাই অতসীর ইচ্ছা কে সম্মান দিতে।
.
রাইমা কথা বাড়ায় না। অতসীর প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো। সত্যি মাঝেমধ্যে আত্নার সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক থেকে বড় হয়ে দাঁড়ায়।
.
রাত বেড়েই চলেছে। অনামিকার পাশে বসে আছে সায়ান। মনে হাজারো প্রশ্ন পাশের রুমে অতসী।
বাহিরে হালকা বাতাস বইছে। সায়ান উঠে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো
---প্রত্যেকে একা হয়ে গেছি ।
কী ভয়ংকর এই একাকীত্ব !
কী নির্মম এই বান্ধবহীনতা !
কী বেদনাময় এই বিশ্বাসহীনতা !
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
সকাল সকাল এত বড় সারপ্রাইজ আশা করেনি অতসী। মা এসেছে। প্রায় এক দেড় মাস পর দেখলো মা কে। জ্বরের কথা শুনে এসেছেন। সাথে রান্না করে নিয়ে এসেছে মেয়ের পছন্দের সব। অতসী বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। সায়ান শুধু তাকিয়ে দেখছে। হালকা কফি কালারের সুতি শাড়ি পড়া অতসীর চুল গুলো হাত খোপা করা। সামনের চুল গুলো গলার দুপাশে স্পর্শ করছে।
নাকে ছোট্ট ডায়মন্ডের নাকফুল ঠিক তিল থেকে দুই সেন্টিমিটার নিচে। ঠোঁটগুলো বার বার নড়ছে। বাম হাতের কনিষ্টার তিল বার বার টানছে সায়ান কে।
এক ধ্যানে বসে থাকা সায়ানের ঘোর কাটে অনামিকার বাবার কথায়। অতসী মায়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। অতসী এত কথা বলতে জানে?
খেতে খেতেই অতসী বিষম খায়।
.
-না খাবার না মা, দুজনের একজনেও কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না। এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে? সাবধানে খাওয়া যায় না? সব কিছুতেই তাড়াহুড়ো!
.
কথাগুলো বলতে বলতে সায়ান দ্রুত উঠে গিয়ে পানি এগিয়ে দেয়। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অতসীর মা।
চোখ মুখে পানি এসে গেছে।কোন উত্তর না দিয়েই
নাক টানতে টানতে অতসী উঠে যায়। ওর মা পিছন পিছন যাচ্ছে।
অতসীর বাবা সায়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে সায়ান অতসীর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এমন টা হলে অনামিকা যখন সুস্থ হবে তখন যদি সায়ান অতসী কে না ছাড়ে? অনামিকার তখন কি হবে? না! কিছু একটা করতে হবে। অনামিকা সুস্থ হোক আগে তারপর অতসী কে সে নিয়ে যাবে। অনামিকা কে জানতেই দিবে না অতসী সায়ানের বিয়ের কথা।
.
সময় বহমান। ঈশ্! কাছের মানুষগুলো যখন আশেপাশে থাকে তখন যদি ঘড়ির কাটা বন্ধ করে দেওয়া যেতো! কতই না ভালো হতো।
অতসীর বাবা আগেই চলে গিয়েছে নিচে। অতসী মায়ের থেকে বিদেয় নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দূর দেখা যাবে এখান থেকেই দেখবে। আর জীবনে দেখা হবেই না নাই। কে জানে?
.
চলতে চলতে অতসীর মা থেমে যায়। ব্যাগ থেকে একটা ল্যাপটপের ব্যাগ বের করে সায়ানের হাতে দেয়।
-আমার মেয়ে জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছে কিন্তু আফসোস পরিবার থেকে কিছুই পায়নি। খুব শখ করে গ্রাফিক্সের কাজ শিখেছে কিন্তু ল্যাপটপের কথা বাবাকে বলেও লাভ হয়নি। তখন তোমাদের এক্সিডেন্ট হলো। যদিও তোমাকে আমাদের এক পয়সা দিয়ে চালানো লাগে নি কিন্তু অনামিকার বাবা অতসীকে বকেছিলো। তার মায়ের এই বিপদের সময় অতসীর গ্রাফিক্সের কাজ শিখা, ল্যাপটপ কেনা একদম বেমানান ছিলো। তাই কিনে দেওয়া তো দূরে... থাক গে সেসব কথা। এইটুকু আমার
মেয়েটা তার অনেক শখ আহ্লাদ দুই চোখের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। টু শব্দটা করেনি। কিন্তু আমি তো মা! তাই ওর আমার কাছে করা প্রথম আর শেষ আবদার টা রাখলাম। তুমি প্লিজ ওকে এটা দিও৷
বাসায় তো থাকে এটা পেলে মন ভালো থাকবে। বলবে আমি দিলাম না কেনো? ওর নানুর হাতের বালা জুড়ো বিক্রি করে কিনেছি। মেনে নিতে পারবে না তো কারণ আমার মায়ের শেষ স্মৃতি ছিলো।
আরো একটা কথা! বাবা ওকে এত ওভাবে মেরো না। ওর মার খাওয়ার অভ্যেস আছে। কিন্তু মেয়ে মানুষ তো। যদি উঁচনিচ কিছু হয়ে যায়?আমার কথার কিছু মনে করো না। পারলে মেয়েটাকে পরীক্ষা দিতে দিও। ভালো থেকো বাবা।
.
ভদ্র মহিলা কথাগুলো বলে কালো ওড়নার কোণা দিয়ে চোখ মুছে হাটতে লাগলেন। পিছন ফিরে বার দুয়েক তাকালেন উপরে বারান্দায়। হয়তো অতসী দাঁড়িয়েছে সেখানে।
.
.
অতসীর মায়ের বলা কথাগুলো কানে বাজছিলো সায়ানের।
অনামিকা কি তবে তাকে ঠকিয়েছে? না কি মেয়েকে বাঁচাতেই উনি এসব কথা বলে গেলেন?
অতসী যদি সত্যি গ্রাফিক্সের কাজ কয়েকদিনে শিখে তাহলে ওসব কিভাবে?
.
অনামিকা না অতসী! কাকে বিশ্বাস করবে সায়ান? কে বাস্তব কে মরীচিকা? অতসীর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ সায়ানের কাছে আছে অনামিকা কে অতসী কতো টা কষ্ট দিতো কিন্তু অতসীর ব্যবহার সব কিছু উল্টো প্রমাণ করছে। সায়ানের মাথায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। এক্সিডেন্টের পর থেকে কোন বিষয় নিয়ে টেনশন নিতে পারছে না সে।
না তার অতসী কে চাই। অতসীর ছোট্ট একটা হাসি যে কোটি টাকার সুখের থেকেও বেশি।
.
.
অনেকক্ষণ যাবত সায়ানের ফোন বেজেই চলেছে। অতসী পাশে হরর টিভি সিরিয়াল দেখছে। কালারস্ এ নতুন হরর টিভি সিরিয়াল শুরু হয়েছে "কবচ"। ভূতের প্রতি অতসীর টান বরাবর বেশি। মাঝেমধ্যে চিন্তা করে --- ঈশ্!আমার যদি একটা ভ্যাম্পায়ার বয়ফ্রেন্ড থাকতো।
.
নাহ্! সায়ানের ফোন বেজেই চলেছে। ওই খাম্বাটা কই গেছে? কল রিসিভ করে না কেনো?.
ব্রেক দেওয়াতে অতসী বাধ্য হয়ে কল পিক আপ করতেই ওপাশ থেকে বলতে থাকে
.
- সোনা পাখি কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে? ঘুমোচ্ছিলে না কি?
- আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া! আপনার বয়ফ্রেন্ড ভুলে ফোন বাসায় রেখে গেছে। আসলে বলবো।
-হোয়াট দি হেল অতসী! কি বলছো? আমি সায়ান।
- এহ্! আমি মনে করেছি আপনার কোন বয়ফ্রেন্ড।
- হোয়াইট কাইন্ড অফ ননসেন্স ইজ দিস? আর ইউ ম্যাড?
- আমি কি করে বুঝবো আপনি কল দিয়েছেন? স্ক্রীনে নাম উঠেছিলো My phone লিখা উঠছে। তো মনে করছি আপনার বফ কল দিছে। যেহেতু ছেলে কন্ঠ....
-উইল ইউ প্লিজ স্টপ!
-আচ্ছা!
-আমাকে দেখে তোমার ওমন মনে হয়?. আর ইউ থিংকিং নাটস্?
-না মানে!আপু ঘুমাচ্ছে, খাইয়ে দিয়েছি, নার্স আছে আর আমিও পালিয়ে যাই নি।
-আমি এসব জিজ্ঞেস করেছি?
-হয়তো করতেন তাই বললাম।
-তোমার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার বলো
-মানে?
-রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার বুঝো না? ওইটা বলো প্লাস এডমিন রোল।
-ওসব বাবা বিয়ের দিন ছিড়ে ফেলেছে। আমার কাছে নেই।
-মনে তো আছে না কি? প্লিজ জলদি বলো।
-আচ্ছা!
- ধন্যবাদ।
-ফোন রেখে গেলে কল দিলেন কি দিয়ে?
- আমার ফোন কি একটা না কি?
- আমি জানি না কি?
-আচ্ছা রাখছি একটু ব্যস্ত আছি। দ্রুত আসবো। খেয়াল রেখো দুজনের।
.
.
অতসী কল কেটে দিয়ে বসে থাকে কিছু ক্ষণ। লোক না খাম্বা? কি মনে করে নিজেকে? আমি কি করে বুঝবো যে উনি কল দিছে? জীবনে কোন দিন আমার সাথে ফোনে কথা বলেছে? ফোন টাই বা রেখে যাওয়ার কি দরকার ছিলো? ভাল্লাগে না।
আল্লাহ্!তুমি একটা বিমান দেও আমি উড়ে উগান্ডা চলে যাই।
বিমানের কথা মনে হতেই দিহানের কথা মনে হয় অতসীর। দুচোখ পানিতে টলমল করছে। দৌড়ে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে দিহানের কাছে কিন্তু রাইমা কষ্ট পাবে।
আচ্ছা? আজ বাদে কাল যখন অনামিকা সুস্থ হবে তখন অতসীর কি হবে? কোথায় যাবে? বাবার বাড়ি? বাবা জায়গা দিবে তো?
.
.
.
ক্যাফেতে প্রায় আটচল্লিশ মিনিট যাবত অপেক্ষা করছে আফরিন। ইফাদের সময়ের জ্ঞান কি কোন দিন হবে না? এমনি তেও সারা সপ্তাহ দুজনেই ব্যস্ত থাকে। এই বুধবার বিকেলে দুজনের জন্য একটু ফ্রি সময় বের করে নেয়। অথচ গত এক মাস যাবত ইফাদ তাও দিতে পারছে না। এভাবে যে মেয়েটার কষ্ট হয় বুঝে না?
.
প্রিয় মানুষের সাথে দেখা করতে আসলে একটু সাজগোজ করে আসতে হয়।
হালকা কাজল, লিপস্টিক সাথে খোলা চুল। এসব লাগে সামনের মানুষকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য।
.
কথাটা ইফাদ একদিন আফরিন কে বলেছিলো যেদিন আফরিন একটু অগোছালো ভাবে চলে আসে।খুব লজ্জা লেগেছিলো। এরপর থেকে আফরিন ইফাদের সাথে দেখা করতে আসলেই শাড়ি পড়ে সেজে বের হয়। কিন্তু ইফাদ টা যে কই?
.
পাঁচ মিনিট পর ইফাদ আসে। এসে বসতে বসতেই বলে
-সরি সরি! দেরি হয়ে গেলো।
-কোথায় ছিলে?
-একটু কাজে
-কি কাজ?
- অতসীর এডমিট.......
.
কথা টা শেষ করতে দেয় না আফরিন। অতসী নাম টা যেনো এতক্ষণের অভিমানের উপর ঘি ঢেলে দিলো।
-আবার ওই মেয়ে! আচ্ছা? ওই মেয়ে ছাড়া কি আর কোন কাজ নেই তোমার?
-মানে?
-মানে কি বুঝো না? আমার সময় হয় না। অথচ ওই মেয়ের জন্য এত কিসের আদিক্ষেতা? কি সম্পর্ক তোমাদের.?
- তুমি জানো ও আমার ছোট বোনের মতো। তারপরও? তুমি রেগে আছো! নাও পানি খাও।
- পানি মাই ফুট। আর ইউ থিংক আ'ম এ লিটল গার্ল? নো মি. ইফাদ চৌধুরী!
- আফরিন রিল্যাক্স ডিয়ার।
- শোন! মায়ের পেটের বোন ছাড়া অন্য কেউ কোন দিন বোন হতে পারে না। আর ওই মেয়েতো আরো না। যে মেয়ে নিজের বোনেত সতীন হতে পারে সে আর যাই হোক কারো বোন হতে পারে না। না কি তুমি ওকে রক্ষীতা হিসেবে রাখতে চাচ্ছো?.
-এনাফ আফরিন! এতক্ষণ অনেক বলেছো। আর না। তুমি সব জানার পরেও এভাবে বলতে পারলে?
-আজ ডিসাইড করো অতসী না আফরিন।
-যদি বলি অতসী?
-তাহলে আজকেই আমাদের শেষ দেখা। আমাদের মাঝে সব শেষ হয়ে যাবে।
-আমি অতসী কেই বেছে নিবো।
-ইফাদ!
-হ্যাঁ! তোমার মতো আফরিন আমার লাইফে অনেক আসবে ইফতি কে হারিয়ে আমি অতসী কে পেয়েছি আমি ওকে ছাড়তে পারবো না। ভালো থেকো আমার ভালোবাসা।
.
.
ইফাদ চোখের পানি মুছে বেরিয়ে আসে। আফরিন এখনো বসে আছে। এভাবে ইফাদ একটা রাস্তার মেয়ের জন্য ওকে ছেড়ে দিলো? অপর দিকে ইফাদ ভাবছে -মেয়েটার জন্মই হয়তো আজন্ম পাপ হয়ে গেছে। কেউ তোকে স্বাভাবিক ভাবে নিতেই পারে না রে বোন। কিন্তু চিন্তা করিস না! তোর এই ভাই তোর জন্য যেকোন কিছু করতে সব সময় প্রস্তুত।
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ ১৬
.
.
ক্যাফেতে বসে আছে দিহান অতসী।
দিহান কয়েক মিনিটের জন্য বাহিরে গিয়েছে। হয়তো জরুরি কল এসেছে। পাশেই রাখা দিহানের পাসপোর্ট। কফিতে চুমুক দিয়ে পাসপোর্ট হাতে নিলো অতসী।
কেমন বাচ্চা বাচ্চা আর মদন কুমারের মতো লাগছে।
মদন কুমার?
তাহলে কি দিহান ও গান গায় তার জন্য। মধুমালার গান?
.
--আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে....।
স্বপ্ন যদি মিথ্যা হইবো
গলার হার কেন বদন হইবো ওগো মা
আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে......
স্বপ্ন যদি মিথ্যা হইবো
আংটি কেন বদল হইবো গো মা
আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে......
স্বপ্ন যদি মিথ্যা হইবো
পালঙ্ক কেন বদল হইবো গো মা
আমি স্বপ্নে দেখলাম মধু মালার মুখরে......
.
- বাহ্! মধুমালার গান গাইছো যে?
.
দিহানের ডাকে ধ্যান ভাঙে অতসীর। হাতের পাসপোর্ট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে
.
-এটা এখানে?
-কিছু দরকার ছিলো তাই নিয়ে এসেছিলাম।
-আপনারো পাসপোর্ট লাগে?
-কেনো লাগবে না?
- না! মানে! পাইলটদের আবার কিসের পাসপোর্ট! তারা নিজেরাই তো প্ল্যানের ড্রাইভার। তাদের পাসপোর্ট লাগা টা বেমানান না?
.
অতসীর কথা শুনে দিহান হাসবে না কাঁদবে খুজে পায় না। কথা বলার সময় অতসীর মুখের ভাব এমন ছিলো যেনো কত বড় অন্যায় পাইলটদের পাসপোর্ট থাকা।
.
- পাসপোর্ট না থাকলে তো আমরা বাইরের দেশে স্টে করতে পারি না রে লেডি। তাই লাগে। অবশ্য তুমি যদি বলো তবে হয়ে যাক রাজ পথে মিছিল।
হবে হরতাল, হবে অনশন বন্ধ হবে এই পাইলটদের পাসপোর্টের নিয়ম......
.
-কবিতা টা মোটেও মিলেনি। ড্রাইভার মন দিয়ে ড্রাইভ করেন।
.
ততক্ষণে কথা বলতে বলতে গাড়িতে এসে বসেছে দুজন। পাসপোর্ট টা এখনো অতসীর হাতে।
ছবি দেখে হেসেই যাচ্ছে। দিহান তাকিয়ে আছে। মেয়ের মাথা গেছে নাকি?
.
-একদম মদন কুমার লাগতেছে।
-তুমি মধু মালা হইলে আমি মদন কুমার হইতেও রাজি। তারপর রাতে গলার হার, পালঙ্ক বদল হবে আর আমি গান গাইবো
আমি স্বপনে দেখি মধু মালার মুখ রে........
.
.
.
দূর থেকে রাইমা দেখলো দিহান পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বসে বসে হাসছে। মানুষ টা কে এই প্রথম হাসতে দেখলো। অমায়িক হাসি। হাসতে দেখে মনে শান্তি আসছে। আচ্ছা! দিহান কি সত্যি কোন দিন মেনে নিবে রাইমা কে? ঈশ্!যদি অতসীর সাথে যোগাযোগ করতে পারতো! তাহলে দিহানের মনে ঠিকই জায়গা করে নিতে পারবে।
এসব কথা ভাবতেই আবার রাইমার মনে হলো
-আচ্ছা! আমি কি অতসী কে ঠকাচ্ছি? ওর জায়গা জোড় করে কেড়ে নিচ্ছি? অতসী যদি ফিরে আসে? ফিরে আসলে কি হবে? নাহ্! রাইমা বুঝাবে অতসী কে দিহানের কাছে ফিরে আসার জন্য। কারণ ওদের দুজনের সুখ অতসীর ফিরে আসাতেই৷
.
.
টিভি অন রেখেই অতসী কাউচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। চুল খুলে আচল ফ্লোরে ছুয়ে আছে। সায়ান নিজেও খুব ক্লান্ত। এক্সিডেন্টের পর থেকে শরীর টা ভালো যায় না। একটুতে ক্লান্তি এসে যায়। চুপচাপ অতসী কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে অতসীর বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। সায়ানের প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। ঠিকমতো ঘুম হয় না। কাউচে আর কতো ঘুমানো যায়? উপর তলায় চারটে রুম। একটি ওর মা-বাবার। সে রুমে কাউকে যেতে দেয় না। কারণ রুমের আনাচে-কানাচেতে আছে তাদের স্পর্শ। আরেকটি তে অনামিকা যা সায়ানের রুম, পাশের রুম স্টাডি রুম অন্য রুমে অতসী।
ফ্রেশ হয়ে অতসীর পাশে শুয়ে পড়লো।সাথে সাথে যেনো রাজ্যের ঘুম জেকে বসেছে দু চোখে।
.
.
অতসী বেশ বুঝতে পারছে তার পাশে কেউ একজন আছে। মি. মাহমুদ! হ্যাঁ উনি ছাড়া আর কে থাকবে। কিন্তু উনি আমার বা পাশে কি করছে? উনি কি জানে না? স্বামীদের সবসময় স্ত্রীর ডানপাশে ঘুমাতে হয়? আশ্চর্য লোক তো। বলেই অতসী সায়ানের বা পাশে একদম কিনারা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো।
অতসী আবার ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো তার চুল ফ্লোর স্পর্শ করছে।
কি ভেবে আবার উঠে বসে চুল গুলো খোপা করে শাড়ির আঁচল টেনে সায়ানের পাশে শুয়ে পড়লো। ভাগ্যিস মনে পড়েছিলো দাদীর কথা!
দাদী বলতো বেহুলার চুল বেয়ে সাপ উঠে লক্ষীন্দর কে কামড়ে ছিলো। তাই স্বামীর পাশে শুলে যেনো কখনো চুল মাটি স্পর্শ না করে........
.
.
যদিও কুসংস্কার তবুও অতসীর অবচেতন মন এসব নিয়ম ঠিক মেনে চলছে। অতসীর অবচেতন মন সায়ান কে স্বামী বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ওই যে কবুল! কবুল শব্দটার শক্তি যে অনেক। যে শব্দ টা তিনবার পড়ে বাঙালী নারী পারে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা মানুষকে নিজের সব থেকে আপন মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে।
সত্যি কি অতসী পারবে সায়ান কে তার জীবনের সাথে বেধে রাখতে না অপেক্ষা করছে কোন ঝড়। যা শেষ করে দিবে সব টা।
.
.
চলবে....
#দায়িত্বে_সংসারে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ১৭
.
.
সায়ান বেশ বুঝতে পারছে মেয়েটা গুটিসুটি মেরে একদম বুক ঘেঁষে শুয়ে আছে। চুল গুলো খোপা করা, প্রায় খুলে গেছে, পায়ের টাখনু থেকে বেশ উপরে শাড়ি। পাতলা চাদর টেনে দিলো অতসীর উপর। তারপর পাশ ফিরে আবার ঘুম।
.
অতসীর যখন ঘুম ভাংলো তখন বিকেল পেরিয়ে রাত৷ নিজের উপর বেশ ভারী জিনিস অনুভব করলে খেয়াল হলো সায়ানের এক হাত ওর মাথার নিচে অন্য হাত পেটের উপরে। দিব্যি উপর দিয়ে পা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অতসী চুপচাপ থাকলো কিছুক্ষণ, হঠাৎ অনামিকার কথা মনে হওয়াতে সায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। দুহাতের আঁজলা ভরে পানি নিয়ে বার বার করে মুখে দিচ্ছে। চোখে পানি সে আসতে দিতে চাচ্ছে না। তবুও অস্ফুটস্বরে নিজের অজান্তেই মুখ থেকে দিহান নামের চিৎকার বেরিয়ে এলো।
বার বার ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু রাইমার জন্য সে আজ এখানে বাধা পড়েছে।
মনে মনে আওড়াচ্ছে দিহানের নাম। বাথটাবের পাশে বসে পড়ে অতসী।
কেনো সেরাতে দিহান কে সে ফিরিয়ে দিয়েছিলো? যদি না ফিরাতো তাহলে হয়তো আজ দিহান অতসীর সাথে থাকতো।
.
অতসীর চাপা কান্নার স্বর ঠিক সায়ানের কানে পৌঁছে যায়। সায়ান ডাক দিতে যেয়েও পারে না। অধিকার কি সত্যি আছে? জোড় করে বিয়ে করলেও অতসীর মন অবধি পৌঁছাতে সে পারছে না।
এদিকে অতসী দিহানের নাম নিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে৷
.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক বলেছিলেন
.
পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমেরমত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথমযৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর অতসী বেরিয়ে আসে। শাড়ী বেশ ভিজে গেছে। সায়ান তখনো বিছানায়। আবার শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করে বেরিয়ে যায় রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।
.
অতসী তেমন কিছু খেতে পারেনা তাই তার মা বেশ ঝাল দিয়ে বাদামের মরিচ বাটা, কালো জিরার মরিচ বাটা, তিলের মরিচ বাটা সহ আরো অনেক কিছুই নিয়ে এসেছিলো। অতসী ভাত, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি করছিলো। যদিও কাজের লোক আছে তবুও অতসী নিজে করতেই পছন্দ করে৷
.
.
-কি করছো?.
.
সায়ানের হঠাৎ এমন প্রশ্নে অতসী চমকে যায়।
- খাবারে বিষ দিচ্ছি। লেমন ফ্লেবার। চলবে?
-চলবে না দৌড়াবে। আচ্ছা মেনু কি?.
- আপনি এসব খাবেন না। আপনার জন্য হাবিজাবি আছে।
-বলো তো
.
অতসীর মেনু শুনে হেসে বললো
ইফাদের এসব বেশ পছন্দ। তুমি কি ইফাদ কে আসতে বলবে?
.
কথা শেষ হতেই ফোন এগিয়ে দেয় অতসীর দিকে। অতসী সানন্দে ফোন হাতে নিয়ে
কথা বলা শুরু করে৷ ইফাদের বাসা একই ব্লকে হওয়ায় ইফাদ আসবে৷
অতসী দ্রুত সব তৈরি করে টেবিলে রাখতে রাখতেই ইফাদ চলে আসে।
চেহারায় বেশ ক্লান্তি৷ বিকেলে আফরিনের ব্যবহারে সে বেশ বিরক্ত আছে। এত দিনের সম্পর্ক ওদের। কিভাবে আফরিন এসব বললো? সব জানার পরেও? যখন ওর ভাই এমন একটা পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছিলো তখন ভাইয়ের বড় সাপোর্ট ছিলো সে নিজে। আজ অতসীর সাপোর্ট ইফাদ হলেই বা সমস্যা কোথায়?
এসব ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইফাদ৷
.
রান্নাঘর থেকে অতসীর একটু চিৎকার শোনা গেলো। সায়ান, ইফাদ দুজনেই ছুটলো সেদিকে৷
ডান হাত রক্তে মাখামাখি। বৃদ্ধাংগুলি বেশ ভালোই কেটেছে। পাশে রাখা আধ কাটা লেবু দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে লেবু কাটতে গিয়েই এমন টা হয়েছে। সায়ান দুহাতে আকড়ে আছে অতসীর পিচ্চি আংগুল টা৷ ইফাদ ছাড়িয়ে নেয় কারণ সায়ান যেভাবে চাপ দিচ্ছে ব্লাড আরো বেশি আসছে।
.
ইফাদ ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশ করে ব্যান্ডিজ করে দেয়। তারপর নিজেরা ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে। অতসী খাবার সার্ভ করলেও কিভাবে খাবে?
ঈশ্! আলুভর্তা ভাত কি আর চামচ দিয়ে খেয়ে শান্তি আছে?
.
অতসীর এমন চেহারা দেখে সায়ানের বেশ হাসি পায়৷ ওর পাশের চেয়ারে ওকে বসিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে দেয়।
অতসী বেশ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ।
সামনে ইফাদ দাদা ভাই। সে কি মনে করবে?
সায়ান যেনো অতসীর মনের কথা বুঝে।
.
-ইফাদ কে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। চুপচাপ খেয়ে নাও।
.
প্রচন্ড ক্ষুধা লাগায় অতসী চুপচাপ মুখে তুলে নেয়। সায়ান অতসীর মুখে পুরো লুকমা ভাত দিচ্ছে না। হাফ ওর জন্য রাখছে। অতসীর হঠাৎ করে মায়ের বলা কথাটা মনে পড়ে গেলো
.
-যে স্বামী নিজ স্ত্রীকে
এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিবে, আল্লাহ ঐ স্বামীর ছগীরা গুনাহ গুলো মাফ করে দিবেন।
.
অতসী মন বা মস্তিষ্ক কি চাইছে? অতসীর অবচেতন মন সায়ান কে স্বামী হিসেবে মানছে কিন্তু অতসীর মস্তিষ্ক দিহানের কথা ভাবছে। নিজেকেই নিজের মাঝে গুলিয়ে ফেলছে অতসী৷ এসব ভাবতে পারে না সে।
.
.
.
ইফাদ একটা ফাইল এগিয়ে দিলো অতসীর দিকে। ঈশারা করলো অতসী যেনো খুলে দেখে।
ফাইল খুলে অতসীর চোখ ছানাবড়া। এডমিন, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড!
জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে অতসী। মুচকি হেসে মাথায় হাত রাখে।
.
-এক্সামের প্রিপারেশন নিয়ে নাও। কাল দিন আছে শুধু।
.
অতসীর হাত পা কাপছে। চোখ দিয়ে পানি এসে গেছে। মায়ের পর যদি কারো থেকে এমন স্নেহ পেয়েছে সে হলো ইফাদ৷
ইফাদ আবার একটা ল্যাপটপ এগিয়ে দিলো।
যদিও এসব সায়ান নিজে বলেছে ইফাদ কে দিতে কারণ অতসী হয়তো তার হাত থেকে নাও নিতে পারতো৷ তাইতো সায়ান ইফাদের হাত দিয়ে সব অতসী কে দিলো।
অতসী চুপচাপ হয়ে আছে।
ইফাদ অতসীর পাশে বসে বলতে থাকলো
.
-আপু! এক্সাম দিবি না?
-দাদাভাই! কিছুই তো পারি না। তাছাড়া বই.....
-সব আমি নিয়ে এসেছি। আচ্ছা কোন মতে এটেন্ড করো পরে সাপ্লি দিও? আমি কি আসবো তোমায় নিতে?
.
.
সায়ান এদের মাঝে কথা বলে উঠে।
-আমি নিয়ে যাবো। তাছাড়া বড়মা যেতে বলছিলো।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কাল আসবো। এবার আপু তুই পড় আমি আসি।
.
ইফাদ চলে যায়। সায়ান এসে অতসীর পাশে বসে আরো দুটো বক্স এগিয়ে দেয়৷
একটা তে মাউস অন্যটায় কীবোর্ড।
.
-শুনেছি তুমি না কি গ্রাফিক্স শিখেছিলে? এসব করতে পারো। ওয়াইফাই তো আছেই৷ কোন হেল্প লাগলে বলো। আমি স্টাডি রুমে আছি।
.
সায়ান উঠে স্টাডি রুমে চলে যায়। অতসী ল্যাপটপ বুকে জড়িয়ে চুপচাপ বসে আছে কিভাবে করবে ওসব কাজ? ওসব কাজ যে শুধুই দিহান কে মনে করিয়ে দিবে৷ কারণ দিহানের হাতেই তো এসব শিখেছিলো সে।
.
.
সবে মাত্র ফযরের আজান দিয়েছে।
গায়ে চাদর জড়িয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে রাইমা। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দাগ বসে গেছে৷
নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করবে না কি অসহায়? আজ প্রথম দিহান ওর এতটা কাছে এসেছে। তবুও নেশার ঘোরে। বার বার অতসীর নাম বলছিলো সে।
যখন দিহান সেন্সে আসবে তখন কি মেনে নিবে রাইমা কে? না কি সব হারিয়ে যাবে। দিহান কে প্রমিস করেছে অতসী কে ফিরিয়ে দিবে।
.
না চাইতেই বিয়ের বন্ধনে আগেই দিহান কে বেধে রেখেছিলো সে এসব জানিয়ে আর মানুষটা কে কষ্ট দিবে না।হ্যাঁ! দিহানের নেশার সাথে সাথে কাল রাতের সব স্মৃতি শেষ করে দিবে রাইমা৷
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
মনে হচ্ছে কেউ একজন মাথার ভিতর সব কিছু টান দিয়ে ধরে রেখেছে।উফফ অসহ্য যন্ত্রণা। কেমন একটা অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।
উঠে বসে দিহান। কোমর থেকে পা অবধি পাতলা কম্বল দিয়ে ঢাকা। উঠে বসেই বুঝতে পারে পড়নে কিছু নেই। আশ্চর্য! নেশার ঘোরে এমন অদ্ভুত কাজ তো কোন দিন করেনি সে।
পাশে রাখা টাওয়াল প্যাচিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে পা বাড়ায়।
শ্যাম্পু করার সময় শরীরে বিশেষ করে বুকে, পিঠে, গলায় ধরেছে কিন্তু আমলে না নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই শিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।
বুঝতে বাকী রইলো না কাল রাতে কি হয়েছে।
পুরো ফ্ল্যাট খুজেও রাইমা কে পেলো না।
এমন এক নেশাময় রাত কাটিয়ে সকালে অতসী কে হারিয়েছে সে।
সেরাতে অতসী কোন ভাবে দিহান কে ঘুম পাড়িয়ে দিলেও রাইমার উপর সে পুরুষত্ব জাহির করে ফেলেছে।
.
.
রাইমা কে অবশেষে অতসীর রুমে পেলো। এই রুম টা দিহান অতসীর সব স্মৃতি দিয়ে, ইচ্ছে দিয়ে সাজিয়েছে। রাইমা অতসীর ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলো কারো আবাশ পেয়ে পিছনে তাকালো।
দিহান উঠে গেছে। রাইমা দ্রুত গিয়ে লেবু পানি এনে দিলো। দিহান চুপচাপ খেয়ে ওর দিকে তাকালো।
মেয়েটার চোখ অস্বস্তিতে ফেলছে। দ্বিধা না করেই জিজ্ঞেস করলো
.
-রাইমা! কাল রাতে কি হয়েছে?
-কিছুই না!
-সত্যি করে বলো।
.
হায়রে পুরুষ! কিভাবে বলবো? আপনি মেনে নিতে পারবেন? আপনার কাছে আমি যে শুধুই অতসী ছিলাম। রাইমা না।
.
-ডিড আই রেপড ইউ?
.
রাইমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণে চোখে পানি জমে গেছে।
রাইমা কে চুপ থাকতে দেখে দিহানের রাগ বেড়ে গেলো। একে তো চিন্তা হচ্ছে আবার এই মেয়ে চুপ আছে।
হাতের গ্লাস সজোরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে দুহাতে রাইমার দুবাহু ঝাকিয়ে চিৎকার করে বললো
.
-আন্সার মি গড ড্যামেড! জাস্ট আন্সার মি!
.
রাইমা মাথা ঝাকায়। দিহান উত্তর পেয়ে অতসীর ছবির পাশে দেয়ালে হাত মুঠ পাকিয়ে আঘাত করে।
রাইমা দ্রুত গিয়ে দিহান কে থামিয়ে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলতে থাকে
.
-আপনার কোন দোষ নেই দিহান। আপনি নেশায় ছিলেন আমি গিয়েছিলাম আপনাকে আনতে ঠিক তখন আপনি যা করেছেন অতসী ভেবে করেছেন আমি পেরে উঠিনি আপনার শক্তিতে দোষ আমার। প্লিজ এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবেন না। অতসী কিচ্ছু জানবে না। আমি চলে যাবো তো। অতসীর জায়গা ওর থাকবেই। প্লিজ দিহান নিজেকে আঘাত করবেন না। আমার কষ্ট হচ্ছে।
.
দিহান এক পলক তাকায় রাইমার দিকে। কি দিয়ে বানিয়েছে আল্লাহ্ এই দুই মেয়েকে? এরা খালি যাইতেই চায়! কখনো অধিকার কেনো চায় না?
রাইমা ঠিকঠাক দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। দিহান ওকে রুমে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে বাহিরে কোথাও চলে গেলো।
রাইমা শুধু চাওয়ার পথে তাকিয়ে চোখের পানি ফেললো আর বললো
.
-কাল রাত টা দিহান অন্যরকম হতে পারতো। আমি এমনিতেও আমার সবটা আপনাকে দিতাম কিন্তু অতসী....
.
.
ইফাদ এসে রাইমা কে চেকাপ করে নিলো এতটা প্যানিক হওয়ার কিছু নেই। হালকা পেইন কিলার দিলেই পেইন চলে যাবে।
.
রাইমা কে দেখে ইফাদ, দিহান এসে দাড়ালো বারান্দায়। সিগারেট হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে দিহান। সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতের সিগারেট টা এগিয়ে দিলো ইফাদের দিকে।
.
সিগারেটে টান দিতেই দিহান বললো
.
- আই রেইপড হার লাস্ট নাইট।
.
কথাটা শুনে ইফাদ চমকে না থমকে যায়। হাতে সিগারেট মাটিতে ফেলে দিয়ে রেগে দাতে দাত চেপে বলতে থাকে
.
-শালা তোরা দুইটা আসলে মানুষ না বন মানুষ। তোরা কি করে আমার বন্ধু? এক বন্ধু এক মেয়েকে জোড় করে বিয়ে করে তাকে ইচ্ছা মতো মারবে আবার সেবা যত্ন করবে, অন্য বন্ধুর বিয়ের দিন জানবো আমার বন্ধুর প্রাক্তন প্রেমিকা অন্য বন্ধুর বউ। প্রাক্তন কে দেখানোর জন্য সে জেদ করে মেয়েটার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করবে আবার তাকে ছেড়ে দিয়ে আগের প্রেমিকা আনতে চাইবে। রাত পোহাতেই ফোন দিয়ে এনে বলবে আই রেপড হার?
শালা তোরা মানুষ না তোরা বন মানুষ ।
.
.
রাগে গিজগিজ করতে ইফাদ বেরিয়ে গেলো। দিহান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
গরম দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় রুমের দিকে। রাইমা কপালের উপর ডান হাত রেখে শুয়ে আছে। দিহানের উপস্থিতি বুঝে উঠে বসে।
.
দিহান হাতের গ্লাস এগিয়ে দেয়। চুপচাপ রাইমা চুমুক দিলো গ্লাসে।
.
-আচ্ছা আপনি কি করে বুঝলেন?
-এসব লুকানোর মতো?আমি না বললে কি তুমি বলতে না?.
-না!
-কেনো? লুকিয়ে যেতে?
-হ্যাঁ! আমি অতসীর জায়গা নিতে চাই না।
-অতসীর জায়গা আমি দিতেও পারবো না। কিন্তু তুমি বড্ড সিনেম্যাটিক
-মানে?
- রাতে ফিজিক্যাল হলে ছেলেদের মনে থাকে না বা তারা বুঝে না এটা শুধু মুভি বা গল্পেই হয়।
সি... তোমার নখের আঁচড়, লাভ সাইন....
- এটা কি সত্যি আপনার জন্য লাভ সাইন?
.
দিহান কোন উত্তর দেয় না। কারণ উত্তর টা জানা নেই।
.
.
.
সারাদিন সায়ান ছিলো না। কাল অতসী কে নিয়ে বের হবে তাই আজকে ব্যস্ত ছিলো।
বাসায় ফিরতে রাত্রি দশটা বেজে গেছে। রুমে ঢুকে দেখে অতসী পুরো বিছানা বই খাতা, পেন্সিল,ইরেজার সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পেটের নিচে বই রেখে উপর হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে।
.
সায়ান পাশে বসে শুধু অতসী কে সোজা করে শুয়িয়ে দিয়ে কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসেই বিছানা থেকে সব গুছিয়ে এবার অতসীর দিকে তাকালো। সারাদিনের ক্লান্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটা কি আমাকে চার্জ করছে না কি? আনমনে হেসে উঠে সায়ান।
পাশে বসেই সিগারেট জ্বালায় সে। একমনে চেয়ে আছে অতসীর দিকে৷ হঠাৎ পিটপিট করে তাকায় অতসী। আহ্লাদী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে
- কি খাচ্ছেন?
-সিগারেট।
-আমিও খাবো।
.
সায়ান চোখ বড় করে তাকাতেই অতসী উঠে বসে। নিশ্চিত পাগলামি করবে। অতসী ঘুমের মধ্যে এমন পাগলামি করে অতসীর মা বলেছিলো।
.
-এই না! না!
- খাবো! দিন।
- উঁহু আমি ফেলে দিচ্ছি।
-আমি খাবো তো। (চিৎকার করে)
.
সায়ান ধমক দিতেই অতসী রেগে উঠে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে সায়ান কোমর জড়িয়ে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। শাড়ির ফাকে হাত দিয়ে নাক ডুবায় চুলে।
.
-ছাড়ুন। নইলে মারবো।
-মারো
-আমি সিগারেট খাবো
-প্লিজ কথা বলো না। অনুভব করো।
- কি?.
-.আমার স্পর্শ।
-কবিতা শুনবো।
-হুম! বলবো।
.
সায়ান অতসী কে উঠিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড়ায়। এলোচুলে, ঘুম ঘুম চোখে অতসী আয়নায় তাকিয়ে দেখে সে সম্পূর্ণ সায়ানকে ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছে। সায়ানের এক হাত তার দুহাত ধরেছে। হয়তো সকালে অতসীর এসব কিছুই মনে থাকবে না তবুও সময়টা থেমে যাচ্ছে না কেনো?
আয়নায় ঈশারা করে বলতে শুরু করে.....
.
.
ওই যে ছেলেটাকে দেখছ, পছন্দ মতো ফুল ফুটল না বলে
মাটি থেকে উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো গাছটাকে ?
ছেলেটার ভীষণ জেদ , ও কখনও প্রেমিক হতে পারবে না ।
এই তো সেদিন কাঁচের জানালা দিয়ে রোদ ঢুকছিল বলে
কাঁচওয়ালার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কী বকা !
কাঁচওয়ালাতো থ’ !
সাদা কাঁচে রোদ ঢুকবে না এমন আবার হয় !
ছেলেটার খুব জেদ, ও শুধু দেখে আর চেনে
বুঝতে জানে না ।
প্রেমিক হতে গেলে ঋতু বুঝতে হয়
যেমন কোন ঋতুটার বুক ভরতি বিষ
কোন ঋতুটা ভীষণ একা একা, কোন ঋতুটা প্লাবন
কোন ঋতুতে খুব কৃষ্ণচূড়া ফোটে
ছেলেটা ঋতুই জানে না
ও শুধু দেখে আর চেনে, বুঝতে জানে না ।
ছেলেটা কখনো প্রেমিক হতে পারবে না
প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয় ।
ছায়ার মতো শান্ত হতে হয় ।
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ।
জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না ।
তারা শুধু আকাশ হতে চায় ।
(রুদ্র গোস্বামী)
.
.
চলবে
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
# পর্বঃ১৯
.
.
সায়ান অতসীকে প্রথম যেদিন দেখেছিলো সেদিন ছিলো মঙ্গলবার। দূরে একটা মেয়ে লাফালাফি করছে কিছু একটা পাড়ার জন্য। একটু কাছে যেতেই দেখলো মেয়েটা পেয়ারার কচি পাতা পাড়ার জন্য লাফাচ্ছে৷
কামিজের কাটা অংশ একটু সরে যেতেই চোখ দুটো প্রথমেই মেয়েটার কোমরে গিয়ে আটকে গিয়েছিলো। ছোট্ট একটা তিল। লাফালাফির জন্য খোপা করা চুল খুলে কোমর গড়িয়ে নিচের দিকে দুলছে। ব্যর্থ
ক্লান্ত হয়ে মেয়েটা চুপচাপ কোমরে হাত গুজে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর কই যেনো চলে গেলো। সায়ান গাছের নিচে এসে খুজলেও পেলো না। একটা ডাল ভেঙে ঝুলিয়ে রাখলো।
দূরে গিয়ে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা এসেছে। এসে ডাল ভাঙা দেখেই শান্তির হাসি দিলো।
কচি পাতা মুখে গুজে আবার যেনো কই হারিয়ে গেলো।
.
.
ঠিক এভাবেই প্রথম দেখে ছিলো অতসীকে। মায়ের সাথে গ্রামে বেড়াতে গিয়ে। অতসীর নানুর বাড়ির এলাকা তে।
অতসীকে এই একটু দেখাতেই ভালো লাগে সায়ানের। তারপর শুধু একটু দেখার অপেক্ষা।
দেখা মিলেছিলো প্রায় তিন ঘন্টা সাতান্ন মিনিট পর।
নদীর বাকে একটা গাছের গুড়িতে বসে সায়ান সিগারেট টানছিলো।
প্রায় সাত বছর বিদেশ থেকেছে কয়েকদিন হলো এসেছে। যথেষ্ট স্মার্ট ছেলে হলেও মেয়েদের নিয়ে এতটা ভাবেনি কিন্তু এই মেয়ের জন্য মন কেমন কেমন করছে।
ওই যে একটা অনুভূতি আছে না?
বুকের ঠিক মাঝে ডিপ ডিপ করে, শ্বাস নিতে কষ্ট লাগে। পেটে যেনো কেমন অনুভূতি হয়?
সেইরকম।
.
.
নদীতে কিছু মেয়ে গোসল করছে। তারা অতসী কে বারবার ডাকলেও অতসী না করছে।
কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে সাতার পারে না ।
.
সায়ান একটু পাশ ফিরে অন্য দিকে বসলো। যেখানে থেকে শুধু অতসী কে দেখা যায়।
ফোনে টুপটুপ করে কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছিলো।
.
.
অতসীকে বুকে নিয়ে আধশোয়া অবস্থায় এক হাতে ফোনে স্লাইড করে অতসীর সেই ছবি গুলো সায়ান দেখছিলো। অতীতের কথা মনে হচ্ছিলো।
আজ অতসী এত কাছে কিন্তু সেদিন অতসী কেনো সব উল্টো পাল্টে দিয়েছিলো?
খুব কি প্রয়োজন ছিলো? বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে সমস্যা নেই কিন্তু মা কে অপমান কেনো করেছিলে? সেই জেদ ধরে অনামিকার সাথে সম্পর্ক, বিয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। অনামিকার সাথে এতটা খারাপ তুমি করতে?
যে অতসী সায়ান মাহমুদ কে ফিরিয়েছিলো সে কিভাবে আমার বন্ধু দিহানের প্রেমে পড়লো? আমি সহ্য করতে পারিনি। প্রতিশোধের নামে ছিনিয়ে এনেছি আমার ভালোবাসা কে।
দিহানের বিয়ের দিন খুব মেরেছিলাম তাই না? কি করবো? দিহানের স্পর্শ গুলো তোমার শরীরে আমার সহ্য হচ্ছিলো না।
আমি চাইলেও এখন তোমার উপর রাগ, জেদ দেখাতে পারছি না। তবে কিছু তো একটা আছে, যেদিন সেই রহস্যের জট খুলবে সেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
অতসীর চুলগুলো খুলে দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে কথাগুলো ভাবছিলো সায়ান। পিচ্চি মেয়েটা শাড়ি পড়ে। সামলাতে তো পারেই না। তবে কোমরে আঁচল গুজে যখন কাজ করে। গিন্নি গিন্নি লাগে।
.
হঠাৎ অতসী উঠে বসে। সায়ান তখনো শুয়ে আছে। অতসী ঘুম ঘুম চোখে বলে
-- আপু মরে গেছে৷ অনামিকা আপু মরে গেছে।
.
.
.
অতসী কান্না করতে করতে কথা গুলো বলছিলো। সায়ান দ্রুত উঠে অনামিকার রুমে যায়। নার্স মাথায় হাত রেখে ঘুমোচ্ছে। না! সব ঠিক আছে। অতসী ততক্ষণে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গেছে। অতসী দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। পিছন ফিরে সায়ান দেখে অতসী প্রায় পড়েই যাবে। দুহাতে শক্ত করে ধরে। চুল গুলো পুরো পিঠে এলোমেলো।
.
-অতসী স্বপ্ন ছিলো। আর কিছু না৷ শান্ত হও।
-আপু! আপু মরে গেছে
-না, কিছুই হয়নি
-আপুর কাছে যাবো ছাড়ুন। আপু আমার জন্য মরে গেছে। আপু
-অতসী প্লিজ শান্ত হও। স্বপ্ন ছিলো।
.
সায়ান অতসী কে খুব যত্ন করে নিজের বুকের সাথে ঠায় দিয়ে দাড় করায়। যদিও খোপা পাড়ে না তবুও চুল পেচিয়ে রাখে।
আঁচল ঠিক করে চোখ মুছে অনামিকার কাছে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে হাত ধরে।
অতসী তখনো ফুপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।
অতসীর ডান হাত সায়ান হাতের মুঠোয় নিয়ে অনামিকার গালে স্পর্শ করিয়ে বলে
.
- দেখো তোমার আপু ঠিক আছে। খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
.
অতসী সায়ান কে ছাড়িয়ে অনামিকার বুকে মাথা রাখে৷ না সত্যি বেঁচে আছে। স্বপ্ন দেখছিলো সে।
.
উঠে দাঁড়াতেই আবার বসে পড়ে। শরীর ধকল নিতে পারছে না।
সায়ান অতসী কে টেনে বুকে নিয়ে এক হাত অনামিকার মাথায় রাখে।
জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে তবে আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করবো। অনামিকা তুমি সব সময় আমার দায়িত্বের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলে, অতসী আমার ভালোবাসায়। ভালোবাসার আরেক রুপ না কি করুণা। জেদের বসে আমি হয়তো তোমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম কিন্তু ভালো তো শুরু থেকে অতসী কেই বাসি। অতসীর প্রতি আমার রাগ,অভিমান তোমার প্রতি ওর অত্যাচার ওসব বাধ্য করে অতসী কে শাস্তি দিতে কিন্তু যে অতসী আমার বুকে সে অতসী তো আমার সব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মেয়ের প্রতি আমি চাইলেও কিছু করতে পারি না শুধু ভালোবাসা ছাড়া।
.
.
মনে মনে কথাগুলো বলে অতসীকে কোলে তুলে নেয় সায়ান।মেয়েটা অসুস্থই বলা চলে। জ্বর থেকে ভালো হতেই আবার মান্থলি পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে গেছে। যদিও সে মনে করে সায়ান কিছুই জানে না তবে ইফাদের প্রেসক্রাইব করা মেডিসিন আনতে গিয়ে সব বুঝেছে। তাইতো একটু বেশিই খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
.
সায়ানের বুকে অতসী চুপচাপ আছে, সায়ান অতসীর কপালে চুমু দিয়ে অনামিকার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো । পিছন ফিরে তাকালো না। তাকালে হয়তো দেখতো এক জোড়া নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ চোখ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
চোখ বেয়ে বেয়ে নেমে আসছে নোনাজলের স্রোতধারা।
.
.
অতসীর জন্য বানানো রুমে দিহান বসে আছে। অতসী কে সে ভুলতে পারবে না।
পুরুষ মানুষ কখনো তার প্রথম প্রেমের জায়গা কাউকে দিতে পারে না। এমন কি স্ত্রী কেও না।
বালিকার প্রথম প্রেম যদি সর্বগ্রাসী হয় পুরুষের প্রথম প্রেম হয় প্রথম অনুভূতি।
.
ইদানীং দিহান বেশ স্মোক করে। অতসী এটা পছন্দ করতো না। কিন্তু যেহেতু অতসী নেই তাই বাধাও নেই।
আচ্ছা অতসী কি সায়ান কে স্মোক করতে না করে? শাসন করে? খাইয়ে দেয়?
.
এসব ভাবতে ভাবতে ডুব দেয় অতীতে।
.
সায়ান অনামিকার বিয়ের জন্য এসেছে অতসীদের গ্রামের বাড়ি। যেদিন আংটি বদল,হলুদ চলছিলো সেদিন অনামিকার বাবা অতসী কে খুব বকে। বাড়ি শুদ্ধো মানুষের সামনে মারতে আসলেও অতসী কিছুই বললো না। সন্ধ্যের পর চুল ছেড়ে পুকুড় ঘাটের কিনারায় বসেছিলো।
হঠাৎ দিহানের গলার স্বর শুনে পিছনে তাকাতেই পা ফসকে পড়ে যেতে নিলো।
দিহান হাত ধরে টেনে ধরলেও যদি একটু ছাড়ে অতসী পানিতে পড়ে যাবে।
চোখ মুখ বন্ধ করে আছে মেয়েটা। এত ভয়?
.
-কি ম্যাম? রাত করে পুকুরে সাতার কাটবেন না কি?
- প্লিজ ছাড়বেন না।
-বাব্বাহ! আমাকে এত পছন্দ?
-আমি মোটেও ওমন মেয়ে নই।
-ওমন মেয়ে মানে? ভালো মেয়ে হলে কি আর এভাবে আমার হাত ধরে থাকতেন?
.
কথাটা মনে হয় অতসীর লাগলো। দিহান ওভাবে বলতে চায়নি। শুধুই মজার ছলে বলেছিলো।
.
-আমি সাতার পারি না। পুকুরে পানি অনেক। আমার পক্ষে উঠা সম্ভব হবে না। তাই বলেছিলাম।
.
কথাটা বলেই অতসী দিহানের হাত আগলা করে দিচ্ছিলো। ঠিক তখন দিহান আরো শক্ত করে ধরে টেনে তুললো।
.
- এই তো বললেন সাতার পারেন না। আবার হাত কেনো ছাড়ছিলেন? ভরসা করে ধরা যায় না? পড়লে তো মরে যেতেন।
.
-হয়তো! প্রত্যেক প্রানীর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ধন্যবাদ।
.
অতসী এক মিনিট দাঁড়ায় না। দ্রুত বাড়ি ফিরে আসে। যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে দিহান। মেয়েটা কেনো প্রতিবাদ করেনা?.
.
বেশিক্ষণ স্মৃতিচারণ করতে পারলো না দিহান। অস্পষ্ট স্বরে রাইমার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
.
.
সকালে ঘুম ভেঙে অতসী নিজেকে সায়ানের বুকে পেলো। যতদূর মনে পড়ে সে রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছিলো।পড়নের শাড়ির অবস্থা খুব বাজে। কয়েকটি কুচি খুলে গেছে আচল টান দিতে বুঝলো সায়ানের পিঠের নিচে।
আস্তেধীরে টান দিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। সকাল তখন সবে সাতটা।
সায়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে ডেইলি ওয়ার্ক আউট করে শাওয়ার নিতে নিতেই নয়টা বাজলো। অতসী বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রেখেছিলো।
.
পড়া শেষে অতসীর আরো এক চিন্তা। এ বাসায় ওর কোন কাপড় নেই। মানে শাড়ী ব্যতীত। যা শাড়ি আছে দোকান দেওয়া যাবে কিন্তু না আছে সালোয়ার কামিজ, না আছে বোরখা। আল্লাহ্ ! আজ কি পড়ে যাবে? শাড়ী? ভেবেই ঢোক গিললো অতসী৷
বেড সাইডে রাখা মিনি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি মুখের কাছে নিতেই সায়ান হাত থেকে কেড়ে নেয়।
.
-এখন মোটেও এসব খাবে না।
-কেনো?
- পেইনে সেদিন কেমন করেছো ভুলে গেছো? পিরিয়ডের সময় ঠান্ডা সব এভয়েড করবা।
.
পিরিয়ড শব্দ শুনেই রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে তাকায় অতসী। সায়ান মুচকি হেসে হাতে থাকা গরম দুধের গ্লাস এগিয়ে দেয়।
সকাল সকাল দুধ? আল্লাহ্! মাফ করো।
.
একে তো লজ্জা আবার অত্যাচার?
অতসী পারলে দৌড়ে পালায়। যাওয়ার আগেই সায়ান হাত ধরে বসিয়ে মুখের সামনে ধরে।
কারণ সায়ান জানে অতসী দুধ ফিরিয়ে দেয় না।
ওর মা বলেছে -অতসী যদি দুধ খেতে না চায় তবে বলবে
-- পথের সঙ্গী ছাড়তে হয় কিন্তু দুধভাত ছাড়তে হয় না।
.
অতসী চুপচাপ সহ্য করে খেয়ে নিচ্ছিলো।
সায়ান একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো
- রেডি হয়ে নাও। আমরা বেরুবো। পৌঁছাতে সময় লাগবে।
.
রেডি হয়ে এসে অতসী দেখলো সায়ান বেরিয়ে গেছে।প্রয়োজনীয় সব সায়ান আগেই মনে করে গাড়ির ভিতর রেখে অতসীর জন্য অপেক্ষা করছিলো।
.
দূর থেকে দেখলো অতসী আসছে। ক্রীম কালারের লং রাউন্ড ড্রেস, সাথে ম্যাচিং হিজাব। বোরখা না হলেও অনেকটা তেমন। বাম হাতে দুটো চুড়ি আবার ঘড়িও। নাকে ছোট্ট নাকফুল।
গাড়িতে উঠে বসেই আবার বইয়ে মুখ ডুবালো সে। সায়ান একমনে ড্রাইভ করছে। হঠাৎ রাইমার কথা মনে হলো। আজ তো রাইমাও আসবে।
চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। যদি দিহান আসে?. আচ্ছা? রাইমা কি জানে দিহান আর সম্পর্কের কথা? কিভাবে দাঁড়াবে রাইমার সামনে?
অথচ অতসী এটা কখনো চিন্তা করেনি সে নিজেই আজ অনেক বড় সত্যের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে?
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসী বেশ আরাম করে বসেছে। পা উঠিয়ে কোলের উপর বই রেখে বসে বসে পড়ছে। পৌঁছাতে মিনিমাম তিন ঘন্টা লাগবে। জ্যামে পড়লে তো কথাই নেই। সাড়ে নয়টা নাগাদ বেরিয়েছে। কিছুদূর যেতেই সায়ান দেখলো দিহানের গাড়ি দাঁড়ানো। ইফাদ বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। অতসীর দিকে তাকিয়ে দেখলো অতসী বইয়ের দিকে তাকিয়ে এক মনে পড়া দেখেই যাচ্ছে।সে চাচ্ছে না দিহান কে অতসী দেখুক। অন্তত এখানে তো নয়।
দিহানের গাড়ি ক্রস করে সামনে থামলো সায়ান।
সায়ানের গাড়ি দেখে ইফাদ এগিয়ে যায়।
.
অতসীর পাশের গ্লাস খুললেই অতসী মুচকি হেসে নেমে দাঁড়ায়।
ইফাদ পর পর দুটো বক্স এগিয়ে দেয়।
এখানে চকলেট আছে, যদিও তুমি খাও না। কিন্তু খেয়ে নিবে। এক্সামের আগে তো অবশ্যই একটা। আর পানি কিন্তু মাস্ট। শুনো যেতে সময় লাগবে অনেক। হিজাব খুলে নাও। না হলে মাথা গরম হয়ে যাবে।
.
অতসী হেসে মাথা নাড়িয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসে। দূর থেকে দিহান, রাইমা অতসী কে দেখছিলো। দিহানের চোখেমুখে প্রশান্তির হাসি থাকলেও রাইমার যেনো কেনো সব বিষাদ বিষাদ লাগছে।
.
.
ইফাদ সোজা হয়ে দাড়াতেই আবার অতসীর জানালায় ঝুকে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে অতসী হাত ধরে বলে
.
-আপুরে! জীবনে অনেক সময় হঠাৎ করেই আমদের জীবনের অপ্রিয় সত্য গুলো সামনে চলে আসে। তাই বলে কিন্তু আত্নার সম্পর্কগুলো ভেঙে যায় না! নিয়তি কে মেনেই চলতে হয়। তুমি সাহসী মেয়ে। যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারবে এটা আমার বিশ্বাস। সাবধানে যাও। ফাটিয়ে এক্সাম দিবা, এসে কিন্তু বাদামের মরিচবাটা দিয়ে ভাত রান্না করে খাওয়াতে হবে।
.
অতসী কে ছেড়ে দিয়ে সায়ান কে তাগিদে করে দ্রুত যেতে।
এদিকে অতসীর মন তো কু ডাকছিলো, ইফাদের কথা শুনে আরো তীব্রভাবে ভয় ঝেকে বসেছে।
.
.
সায়ান গাড়ি মাস্টার লক করে নেয়। সব জানালা উঠিয়ে এসি অন করে আনমনে এগিয়ে যাচ্ছে। অতসী পড়ছে তো পড়ছে। মনে হচ্ছে বিদ্যাসাগরের বউ।
চন্দ্রা ক্রস করতেই পড়লো জ্যামে।
টিফিন বক্স খুলে অতসীর সামনে নিতেই অতসী সরিয়ে দেয়।
.
-এক্সামের আগে আমি ডিম খাই না।
-আশ্চর্য! এটা কেমন কথা?
.
-ডিম খেলে এক্সামের খাতায় ডিম পাবো। তখন?
-চুপচাপ খেয়ে নাও।
-না! প্লিজ!
.
অতসী এমন ভাবে বললো সায়ান আর জেদ করলো না। জ্যাম ছাড়তে অনেক ক্ষন লাগবে। সায়ান নিজেই হাত ধুয়ে রুটি ছিড়ে এগিয়ে ধরলো অতসীর দিকে।
.
অতসী এক পলক তাকিয়ে আবার সায়ানের দিকে তাকায়।
.
- রাতে ঠিক মতো খাওনি, সকালে শুধু দুধ এখন না খেলে খবর আছে।
.
কথায় কথা বাড়ে অতসীর কথা বাড়ানোর মুড নেই । দ্রুত খেয়ে নিলো।
মির্জাপুর ক্রস করার পর কখন অতসী ঘুমিয়েছে নিজেও জানে না। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে সায়ানের হাত ধরে আছে, সায়ান ড্রাইভ করছে। কোথায় আছে দেখার জন্য চোখ খুললেই বুঝতে পারে কেবল ওরা টাংগাইল বাইপাস ক্রস করলো। উদ্বিগ্ন কন্ঠে অতসী সায়ান কে বলে
.
- এই এই! এদিকে না। আমরা ভুল এসেছি তো।
- উঁহু! ঠিক যাচ্ছি।
-বাইপাস রেখে আসছি।
-ঘারিন্দা বাইপাস দিয়ে ঢুকবো। সাবালিয়ার দিকে নিরিবিলি আছে। ওখানে পার্কিং প্রব্লেম হবে না।
.
.
সায়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে অতসী উঠে বসে। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছে। সায়ান পানির বোতল এগিয়ে দিলে চোখে মুখে পানি দিয়ে আবার হিজাব বেধে নেয়।
কুমুদিনীর পিছনে গাড়ি পার্কিং করে বসে আছে ওরা।
সায়ান মনে করেছিলো অতসী এসেই কলেজে চলে যাবে কিন্তু চুপচাপ বসে পড়ছে। এদিকে সময় যত এগিয়ে আসছে অতসীর অস্থিরতা দ্বিগুণ বেগে বাড়ছে। ঠিক পনেরো মিনিট আগে অতসী বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সায়ান একটা চকলেট খুলে অতসী কে দেয়। প্রায় গলেগেছে। অতসীর মুখে লেগে যাচ্ছে। সায়ানের হাত থেকে খেয়েই বের হয়। পিছন পিছন সায়ান আসে।
অতসীর দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে গেটে দাঁড়ায়। এর বেশি এলাউ না। অতসী বার বার আল্লাহ্ কে ডাকছে। সে পড়তে চায় না দিহানের সামনে, রাইমার সাথে কথা বলবে কিভাবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই এক্সাম হলে ঢুকে পড়লো।
সবাই অতসী কে দেখে এগিয়ে এসে কথার ঝুড়ি নিয়ে বসলেও বেশি সময় পারলো না। কারণ খাতা দিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবার এক্সামে অতসী এক মিনিট আগেও বের হয় না৷ কিন্তু এবার ৩০ মিনিট আগে খাতা জমা দিলো।
দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসতেই পিছন থেকে রাইমা হাত ধরে টেনে হোস্টেলের গেইটের কাছে নিয়ে যায়।
.
-অতসী! তুই কি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস?
- না! আসলে মি. মাহমুদ অপেক্ষা করছে।
-করুক! তুই এই গেট দিয়ে বেরিয়ে যা! দিহান তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
-মানে?মাথা ঠিক আছে?
-হ্যাঁ! এমন সুযোগ আর হয়তো আসবে না। দিহানের গাড়ি এখান থেকে কিছু দূরে। তুই যা। আমি সামলে নিবো।
.
অতসীর চোখ এবার রাইমার গলার দিকে যায়। ওড়না সরে গিয়েছে।
না বুঝলেও এতটা অবুঝ অতসী না। কান্নাগুলো কি দলা পাকিয়ে গলায় আটকে গেলো?
কয়েকবার জোড়ে শ্বাস নিলো মেয়েটা। রাইমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
.
-কি চাচ্ছিস রাই?
-তুই দিহানের সাথে চলে যা, নিজের সব স্বপ্ন পূরণ কর। দিহান তোকে খুব করে চায়৷
-আমি মি. মাহমুদের রেজিষ্ট্রি করে, কালেমা পড়ে বিয়ে করা বউ। যেমন টা তুই দিহানের। এখন কি তুই আমাকে মি.মাহমুদ কে আর তুই মি. দিহান কে ডিভোর্স দিতে বলছিস? জীবন টা কোন সিনেমা না! এখানে চাইলেও এসব হয় না।
.
অতসী এত শান্ত গলায় কথাগুলো বললো না ! রাইমার শিড়দাড়া ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
অতসী আবার বললো
- মি. দিহান অবশ্যই ভালো মানুষ। তোকে আগলে রাখবে। চিন্তা করিস না। সময় সব ঘা মিটিয়ে দিবে। আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই৷ অনামিকা আপু সুস্থ হলে আমি কোথায় যাবো জানি না। কিন্তু এতটা স্বার্থপর হতে পারবো না তোর থেকে সব কেড়ে নিবো।
.
কথা বলার এক সময় অতসী রাইমার গলায় ওড়না ঠিক করে দেয়।
-এসবের পর তুই পারবি দিহান কে ছাড়তে? সব তো তুই দিয়ে দিয়েছিস।
-তুই ভুল বুঝছিস! আসলে
-ভালো থাকিস।
-অতসী আমার কথা কিন্তু শেষ হয়নি
.
অতসী দাঁড়ায় না। দ্রুত পা চালায়। পিছন থেকে রাইমা জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে
- তুই কি জানিস? তুই আর অনামিকা আপু আপন বোন না? এক রক্ত না? তুই কি জানিস?.
.
.
চলবে..
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ২১
.
.
প্রথম সন্দেহ হয়েছিল সেদিন যখন আন্টি বললো তোর সাথে সায়ান ভাইয়ের বিয়ের কথা। প্রথমে আন্টি বলতে চায়নি। কিন্তু আমাদের জোড়াজুড়িতে বলতে বাধ্য হয়। তুই কি জানিস? ইসলামে মায়ের পেটের দুবোনের জীবিত অবস্থায় একজনের সাথে বিয়ে হারাম? প্রথম বউ তালাক হয়ে যায়?
তোর বাবা জেনেশুনে কখনো এমন কাজ করবে না। যদিও অনামিকা আপুর সাথে সায়ান ভাইয়ের শুধুই রেজিষ্ট্রি করা বিয়ে তবুও বিয়ে তো! বউ তো! কালেমা পড়ে, কবুল বলে বিয়ে না হলেও তো অনামিকা আপু সায়ান ভাইয়ের বউ। সেখানে তোর সাথে সায়ান ভাইয়ের বিয়েটা যখন সব মেনে হলো তখন এই প্রশ্নটা উঠেছিলো।
যখন দাদু বললো অনামিকা কে নিয়ে আসতেই হবে তখন তোর মা মুখ খুললো -অনামিকা কে সে পেটে ধরেনি। তার ঔরসজাত সন্তান শুধুই তুই। অনামিকা না।
.
.
কথাগুলো বলে রাইমা অতসীর দিকে তাকালো। চোখেমুখে আংকের ছাপ। অতসীর হাত -পা কাপছে। হঠাৎ করে এত বড় কথা হয়তো নিতে পারছে না। রাইমা অতসী কে নিয়ে বটতলায় বসে। শক্ত করে ওর হাত ধরে বসে আবার বলা শুরু করে
.
-তোর জন্ম মার্চ মাসে। আন্টির যেদিন লেবার পেইন শুরু হয় সেদিন তোর একমাত্র ফুপু আয়েশা তোর মা কে নিয়ে হাসপাতালে যায়।তুই জন্ম নিস রাত ১.১৫ তে। হঠাৎ আন্টির ব্লাড লসের পরিমাণ খুব বেশি হয়, ইমিডিয়েটলি ব্লাডের প্রয়োজন পড়ে। তোর ফুপু অনামিকা আপু কে নার্সের কাছে রেখে রাতেই ব্লাডের জন্য বের হয় । সময় টা এমন ছিলো না গরম না শীত।
সেসময় হুটহাট ঝড় শুরু হয়।তোর ফুপু একা গিয়েছিলো ব্লাড আনতে।কারণ সেরাতে তোর বাবা ছিলো চিটাগাং।
আন্টির গাড়ি ব্রেকফেল করে, অনামিকা আপুর মা মারা যায়। অনামিকা আপুর মা মারা যাওয়ায় সব থেকে বেশি কষ্ট পায় তোর বাবা কারণ তার বোন ব্যতীত এই পৃথিবীতে কেউ ছিলো না। অনামিকা আপুর বাবাও আপুকে নেয় না কারণ এক মেয়ের জন্য হয়তো জীবন থামিয়ে রাখতে পারবে না। তোর বাবা অনামিকা আপুকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করে এমনকি আংকেল এটা বিশ্বাস করে সেদিন যদি তোর জন্ম না হতো তাহলে হয়তো আপুর মা বেঁচে থাকতো।
.
রাইমা কথাগুলো শুনে অতসী চুপচাপ বসে আছে। ও মনে হচ্ছে শ্বাস নিতেও ভুলে গেছে। বাবার এত অপমানের কারণ আজ বুঝতে পারছে। সত্যি তো কি এমন হতো যদি জন্মের পর সে মরে যেতো? আচ্ছা? জন্মের পর মরে গেলে কি বাবা আমাকেও মনে করে কাঁদতো?
.
.
-এখনো ফিরে যাবি? সায়ান ভাইয়ের কাছে?
.
রাইমার কথায় অতসী মুচকি হেসে বললো
-আমার ক্ষণিকের ভালোবাসা আমি তোকে দিয়ে দিয়েচি রাই! অযত্ন করিস না।
-অতসী প্লিজ পাগলামো করিস না! ওসব তোর দায়িত্ব ! দায়িত্বের বেড়াজালে জড়িয়ে যাস না। অন্তত সব সত্যি জানার পর।
-আজ থেকে দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলোরে।
.
.
অতসী আর বসেনি। আজ যেনো সে কাঁদতেও ভুলে গেছে। দৌড়ে সায়ানের কাছে চলে আসে। দূর থেকে দিহান কে এক পলক দেখেছিলো। ভালোই তো আছো দিহানজি। রাইমা তোমাকে সুখী করবে। আমার কি আছে? কিছুই নেই। কিন্তু তুমি সুখী তো? ভালো থেকো।
সায়ান হাত বাড়িয়ে অতসীর হাত থেকে ফাইল নেয়। এগিয়ে দেয় আইসক্রীম। অতসী চুপচাপ নিয়ে গাড়িতে বসে খেতে শুরু করে। সায়ান আগের মতোই ঘারিন্দা বাইপাস হয়ে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
অতসীর সব কিছু অস্বস্তি লাগছে। হিজাব খুলে চুল ছেড়ে দিয়েছে। আরো একটা কাজ হচ্ছে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে চুলে। কেউ জানবে না দেখবে না।
আজ সত্যি অনামিকার জন্য খারাপ লাগছে। মা মরে যাওয়ার পর সে বাবা কেও হারিয়েছে। অতসীর নিজের মা কখনো অনামিকা কে নিজের করে নিতে পারেনি। কারণ অতসীর নিজের মনে হচ্ছে মা সব সময় আমাকে বেশি আদর করতো।
.
.
-তোমার কি খুব খারাপ লাগছে?
-নাহ্!
-কিছু খাবে? এক্সাম খারাপ হয়েছে?
- উঁহু!
-আচ্ছা এদিকে আসো গ্লাস অফ করে দিবো।
- থাক না! আপনি রাস্তা ভুলে যাচ্ছেন! এটা বাসাইলের রোড। এদিক দিয়ে যেতে সময় বেশি লাগবে। তাছাড়া নলুয়ার ওদিকের রাস্তাও তেমন ভালো না।
.
-মিস.বোটানি ডিপার্টমেন্ট! আমরা বাসুলিয়া যাচ্ছি। শুনেছি ওখানে না কি একটা গাছ আছে যা কখনো পানিতে ডুবে না! যত পানি আসুক না কেনো গাছের নির্দিষ্ট অংশ পানির উপরে থাকে?
-হুম!
-এর কারণ কি?
-জানি না। আজ অবধি দেখিনি।
-আজ দেখবে।
.
বাসুলিয়া পৌঁছে সায়ান দেখে অতসী ঘুমিয়ে গেছে। আইসক্রিমের চকলেট নাকের ডগায় লেগে আছে। টিস্যু ভিজিয়ে মুছে দিয়ে আলতো করে ছুয়ে ডাকছিলো অতসী কে। এই বুঝি সে ব্যথা পেলো।কিন্তু এই সায়ান যে মনে মনে অতসীর জন্য মরণ ফাদ পাতছিলো কে জানতো?
.
.
.
.
ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে
ও বন্ধু আমার!
না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে না রে
বুঝি গো রাত পোহালো,
বুঝি ওই রবির আলো
আভাসে দেখা দিল গগন-পারে--
সমুখে ওই হেরি পথ, তোমার কি রথ পৌঁছবে না মোর-দুয়ারে ॥
আকাশের যত তারা
চেয়ে রয় নিমেষহারা,বসে রয় রাত-প্রভাতের পথের ধারে।
তোমারি দেখা পেলে সকল ফেলে ডুববে আলোক-পারাবারে।
প্রভাতের পথিক সবে
এল কি কলরবে--
গেল কি গান গেয়ে ওই সারে সারে!
বুঝি-বা ফুল ফুটেছে, সুর উঠেছে অরুণবীণার তারে তারে
.
.
বাবাকে চোখে আইড্রপ দিয়ে স্টাডিরুমে দিকে যেতেই কানে এলো বেহালা বাজিয়ে গাওয়া গান। বর্তমানে বাংলাদেশের সব থেকে সেরা
ফার্মাসিস্ট মি. রেদোয়ান রাকিব এগিয়ে যাচ্ছে তার একমাত্র বোন আফরিন রওনকের রুমের দিকে।
রওনক নাম টা সচরাচর ডাকে না। কিন্তু বাবার বেশ প্রিয় নাম। বরাবর আফরিন বেশ ভালো রবীন্দ্র সংগীত গায় কিন্তু আজ বোনের গানের মাঝে বেশ কষ্ট অনুভব করছে সে।
.
দরজায় নক করতেই দরজা খুলে গেলো। ব্যলকণিতে বেহালা নিয়ে বসে আছে আফরিন । চোখের গাঢ় কাজল যেনো দুচোখের পানির সাথে মিশে বেদনার রঙ প্রকাশ করছে। আলতো করে বোনের মাথায় হাত রাখে রেদোয়ান।
ভাইয়ের স্পর্শ বুঝে কান্না বন্ধ করে হাসি মুখে তাকায় আফরিন।
.
ভাইয়ের দিকে তাকাতেই চোখ পড়ে ভাইয়ের বুকের দিকে। ভাইয়ার শরীরের সব থেকে আরামের এবং পছন্দের জায়গা ছিলো বুক। ঘন লোমশ বুক। এতটা লোমশ ছিলো যা কাউকে সত্যি খুব আকর্ষণ করতে বাধ্য৷
কিন্তু ভাইয়া তার প্রেমিকার কথায় যেদিন বুকের লোম কেটে ফেলেছিলো সেদিন আফরিন খুব কান্না করে। খুব! অভিমানের জন্য ভাইয়ের সাথে কথা অবধি বলেনি। তার প্রেমিকা তার বুকে মাথা রাখতো না এত লোমের জন্য তাই সে কেটে ফেলেছিলো কিন্তু এটা চিন্তা করেনি তার বোনের সব থেকে প্রিয় ছিলো।
অথচ দিন শেষে সেই মহান মানবী ভাইয়া কে ছেড়ে চলে গেলো। ভাইয়া খুব ভেঙে পড়ে তখন কিন্তু এই আফরিন সামলিয়েছিলো।
এটাই মনে হয় নারী! সে সব সামলাতে পারে কিন্তু নিজেকে পারে না।
এক হাতে সংসার অন্য হাতে বাবার বিজনেস, নিজের লেখাপড়া আবার অসুস্থ বাবার দেখাশুনা দিন শেষে প্রিয় মানুষের একটা কলের অপেক্ষা। এসব তো নারীই পারে। পুরুষ মানুষ বাহিরে সারাদিন কাজ না করলেও ঘরে এসে সে ক্লান্ত অথচ নারী! সে সারাদিন সব সামলিয়েও দিন শেষে তাকে প্রাণোবন্ত থাকতেই হবে। কারণ তার হাসিতেই যে পুরো পরিবার হাসে।
.
ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে ভাইয়ের হাত ধরে।
.
-কিছু হয়েছে আমার পাখিটার?
-না তো কি হবে?
-কাদঁছিস কেনো?
-কাঁদতে আবার কারণ লাগে?
-হুম! বড্ড বড় হয়ে গেছিস!
-ভাইয়া!
-বল!
-আমি এখানে থাকবো না ভাইয়া! আমি ক্যালিফোর্নিয়া ব্যাক করতে চাই!
-বেশ! যা চাইবি তাই! তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম কারণ বাবার চিকিৎসা ওখানেই ভালো হবে আর তোর স্টা.....
(রেদোয়ানের কথাটা শেষ করতে দেয় না আফরিন। আগেই বলে উঠে)
-আমরা যে যাচ্ছি কাউকে জানাবে না। এমন কি ইফাদ কেও না।
.
.
সায়ানের ফোন বার বার করে ভাইব্রেট হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করলো। অপরপাশে থেকে কেউ একজন খুব উত্তেজিত হয়ে বললো
.
-সায়ান যা করছিস ভেবে করছিস তো? এতে অতসীর লাইফ রিস্কে পড়বে । এমনকি...
-হ্যাঁ! বুঝেই করছি কারণ আমি আর দু মন দু দশায় থাকতে পারছি না।
.
.
চলবে
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ২২
.
.
অতসী কে নিয়ে সায়ান নৌকায় উঠার আগে বেশ শক্ত করে ওর হাত ধরে। সদ্য ঘুম থেকে উঠা অতসী ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে। অতসী কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা স্পর্শ চুমু দেয় কপালে।
সায়ান জানে যদি ওর সন্দেহ ঠিক হয় তাহলে হয়তো দুজনের এক জনেও বেঁচে ফিরতে পারবে না। আর যদি বেঁচে ফিরে তাহলে এটা তো নিশ্চিত হবে কোন প্রি-প্ল্যান্ড কিছুই না।
.
-কোন নৌকায় যাবে?
-ডিঙি নৌকায়।
.
ছোট্ট একটা নৌকায় বসে আছে সায়ান, অতসী আর নৌকা চালক। বয়স্ক মানুষ। হয়তো এখানে তার নৌকায় উঠে না। গ্রুপে যারা আসে সবাই পিচ্চি লঞ্চে করে ঘুরতেই পছন্দ করে।
নৌকা এদিক ওদিক দুলছে। অতসীকে দুহাতে আকড়ে ধরে আছে। হাত বাড়িয়ে পানি ছুইছে অতসী। সায়ান ধমক দিয়ে একদম নিজের বুকের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে।
.
সবাই হয়তো চিন্তা করবে সায়ান একটা ছেলে যে কি না অতসী কে এতটা অত্যাচার করেছে, মেরেছে, দিহান কে কেড়ে নিয়েছে তারপরও অতসী সায়ানের সাথে স্বাভাবিক?
দুজন মানুষ একজন অপরজনের সাথে থাকবে চলবে অথচ মায়া জন্মাবে না? শুধুমাত্র গল্পে এসব সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তো সবাই এটাই মানে "কায়া(মুখ) দেখলে মায়া বাড়ে "।
.
হঠাৎ করেই বুড়ো মানুষ গান ধরে
.
- বসে ভাবি নিরালায়
আগেতো জানিনা বন্ধের পিরিতের জালায়
যেমন ইটের ভাটায় কয়লা দিয়া আগুন জালাইছে।
আমি কি বলিব আর
বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজা আঙ্গার
প্রান বন্ধের পিরিতের নেশায় কুলমান গেছে।
বাউল আব্দুল করিম গায়
ভুলিতে পারিনা আমার মনে যারে চায়
কুলনাশা পিরিতের নেশায় কুলমান গেছে।
বন্ধে মায়া লাগাইছে,পিরিতি শিখাইছে
দেওয়ানা বানাইছে
কি যাদু করিয়া বন্ধে,মায়া লাগাইছে।
.
সত্যি অতসী কি যাদু করে যে মায়া লাগিয়েছে সায়ান সত্যি বুঝে না। সময় পরিস্থিতি সব কিছুর সাথে গানটা একদম পারফেক্ট। পরিবেশ বলছিলো সময় থেমে যাক কিন্তু সময় তো থামবে না। নিত্যনতুন গল্প লিখবে সময়।
প্রায় এক ঘন্টার মতো বিল দিয়ে ঘুরে ওরা আবার রাস্তায় ব্যাক করে। উঠে আসার সময় অতসী চুল গুলো হাত খোপা করে নেয়। বৃদ্ধ লোককে বিদায় দিয়ে সায়ান অতসী কে গাড়ির ভিতরে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়।
ফোন নিয়ে একটু দূরে এসে ওর বন্ধু রাফিউল কে কল দেয়।
.
-তোরা ঠিক আছিস? সায়ান?
-হ্যাঁ! তুই গার্ডস পাঠিয়ে দে।
-এর মানে কি?.
-অতসী এক্সিডেন্টের সাথে জড়িত নয়। জড়িত হলে আজ ও আমার ক্ষতি করতো। সব থেকে বড় কথা আজকে যদি অতসী চাইতো আমাকে মেরে ফেলতেও পারতো আর রইলো বিজনেস রাইভালদের কথা ওরাও আজকের সুযোগ হাত ছাড়া করতো না।
-হুম! তুই তোদের দুজনের লাইফ অনেক রিস্কে নিয়েছিস
-উপায় ছিলো না। আমি অতসী কে মন থেকে ভালোবাসি। সন্দেহ চাই না। সম্পর্ক আগানোর আগে আমার জানা প্রয়োজন ছিলো অতসী কি সত্যি আমার মা-বাবার খুনের সাথে জড়িত কি না।
-হতে পারে শুধুই এক্সিডেন্ট।
- হুম! এসে কথা বলছি। আর শোন এসব যেনো ইফাদ না জানে।
.
.
ফিরে এসে সায়ান দেখে অতসী আবার ঘুমে। এই মেয়ের এত্তত কিসের ঘুম। সায়ান অতসী কে ডাকে। সে নাইনুকুড় করে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়। করাতি পাড়া বাইপাস অবধি আসতেই সায়ান গার্ডসদের পায়। অতসী কে নিয়ে পিছনের সিটে বসে গা এলিয়ে দেয়। সত্যি এখন একটুও শক্তি নেই। ভাগ্যিস ড্রাইভারকে আসতে বলেছিলো।
.
.
খুব দ্রুত দিহান দেশ ছাড়বে। এখানে অতসী কে নিয়ে ডুবে থাকলে রাইমাকে মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু এখন ওর পক্ষে কোন ফ্লাই করা সম্ভব নয়৷ মেন্টালি টেস্ট দিয়েই ওকে আবার ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। যদি মেন্টালি টেস্টে ও ফিট না হয় তাহলে কতৃপক্ষ কিছুতেই পারমিশন দিবে না।
কাজের প্রতি নিজের ডেডিকেশন বরাবর দিহানের বেশ ভালো।
কিন্তু আজ ঘুম প্রয়োজন কারণ কাল টেস্ট।
অথচ রাত হলে ঘুম আসে না৷ শুধু অতসীর স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। নেশারঝোঁকে বলা কথাগুলো, অপমান করে দরজার বাহিরে বের করে দেওয়া, বিয়ের দিন রাইমাকে দেখানো, সায়ানের মারের দাগ।
এসব বড্ড পোড়ায় দিহান কে।
রাইমা সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে এসেছে। দিহান কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসে।
বিছানায় হেলান দিয়ে রাইমা হাত বাড়িয়ে দিহানের হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।
ঈশারা করে কোলে মাথা রাখতে। দিহান ভ্রু-কুচকে তাকায়।
.
-চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । আসুন ঘুমাবেন।
-প্রয়োজন নেই।
-খুব আছে।
-অধিকার ফলাতে চাইছো?
-হ্যাঁ! আমার স্বামীর চুলে আমি হাত বুলিয়ে দিবো। আপনার সমস্যা হলে আপনি আসতে পারেন।
-মানে? তোমার স্বামী তো আমিই।
- উঁহু! আমার স্বামী মি.দিহান মেহেবুব।
-তো আমি কে?
-অতসীর প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হওয়া ব্যর্থ প্রেমিক।
.
দিহান চোখ রাঙিয়ে উঠে যেতে নেয়। কিন্তু রাইমা হাত ধরে জোর করে নিজের কোলে দিহানের মাথা রাখে।
চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
-আমি অতসীর জায়গা চাইনা। আমি শুধু আমার জায়গা চাই দিহান। অতসী ফিরবে না কিন্তু অতসীর আমাকে দেওয়া সেরা উপহার আপনি। আমি আপনার অযত্ন করতে পারি না। প্লিজ ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
.
.
বাসায় ফিরে অতসী ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়ে নেয়। ডিনার রেডি করতে বলে চলে যায় অনামিকার কাছে৷ অনামিকার বুকে মাথা রেখে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকে।
.
অনামিকাও হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো। হয়তো ওর সাথে ঘটে যাওয়া কথাগুলো অতসী কে বলতে চায় সে।। অতসী সব সমস্যার সমাধান করতে পারে এটাও পারবে কিন্তু নিয়তি সায় দিচ্ছে না।
অতসী উঠে অনামিকার গা মুছিয়ে কাপড় পাল্টে সায়ানের জন্য ডিনার রেডি করে নেয়।
আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব সে পুরোপুরি নিবে। খুব দ্রুত অনামিকাকে সুস্থ করে তুলবে। সায়ানের কাছে ফিরিয়ে দিবে তার ভালোবাসা৷ বাবাকে ফিরিয়ে দিবে তার মা কে।
.
.
ইদানীং হয়তো সায়ান অতসীর প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এটা অতসী মনে করছে। এমন হলে ভবিষ্যতে অনামিকা যখন এসব জানবে কষ্ট পাবে। আমার জন্য আগেই সব হারিয়েছিলে আপু আর কিছুই হারাবে না তুমি। তোমার সব আগলে রাখবো শুধু সুস্থ হয়ে নাও।
.
রাতে ঘুমানোর সময় সায়ান এসে পাশে শুয়েছে। অতসীর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে৷ অতসী বেশ বুঝতে পারে সায়ান তাকে চাইছে কিন্তু এভাবে অনামিকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করার প্রশ্নই উঠে না।
একটা মেয়ে যতই অসুস্থ থাকুক না কেনো কোনদিন ফিরে এসে তার স্বামীকে অন্যের বাহুতে দেখার সাহস বা ক্ষমতা নিয়ে এই পৃথিবীতে কোন মেয়েই জন্মায়নি ।
মনে প্রচন্ড সাহস নিয়ে অতসী সায়ানের দিকে ফিরে সেই কাজ করে ফেললো যার পরিনামে হয়তো সায়ান কোনদিন ফিরবে না অতসী কুঞ্জে।
.
.
অতসীর এক ধাক্কায় সায়ান বিছানা থেকে পড়ে গেলো। মেয়েটার এত শক্তি এলো কই থেকে । ইগোতে লেগেছে সায়ানের। উঠে দাড়াতেই অতসী বললো
.
-প্লিজ বেরিয়ে যান আমার ঘর থেকে। আমাকে তো আপুর নার্স হিসেবে রেখেছেন। আমি একটা খারাপ লোভী মেয়ে। খুব তো বলেছিলেন অনামিকা কে ছাড়া কাউকে ভালোবাসেন না তাহলে রাত বিরাতে আমার ঘরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা লাগে না?
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসীর কথাগুলো শুনে সায়ান কোন রিয়্যাক্ট করেনি। চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে স্টাডিরুমের কাউচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আপাতত ঘুমের প্রয়োজন। অতসীকে পড়েও দেখা যাবে।
.
এদিকে অতসী সায়ানের কোন রিয়্যাক্ট না দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে। সায়ানের উচিৎ ছিলো অন্তত একটা চড় অতসীকে মারা। এতে অতসী পাল্টা ফিডব্যাক দিতো কিন্তু এমন কিছুই হলো না ভেবে অতসী একটু অবাক।
.
কিছুক্ষণ পর পা টিপে টিপে ভ্রু-কুচকে এগিয়ে যাচ্ছে স্টাডিরুমের দিকে গিয়ে দেখলো কাউচের উপর উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে সায়ান। এসি তো অন। একটু পরেই আবার ঠান্ডা লাগবে। তাই দ্রুত ফিরে এসে চাদর নিয়ে ঢেকে দিলো। মানুষটার স্বভাবটাই এমন। যতই গরম পড়ুক না কেনো রাতে ঘুমানোর সময় পাতলা চাদর বা কম্বল তো তার লাগবেই। আর কয়েকটা দিন মাত্র মি. মাহমুদ! তারপর আপু সুস্থ হয়েগেলে আপনাকে আর এভাবে ঘুমাতে হবে না।
.
.
অতসী চলে যাওয়ার পর সায়ান উঠে বসে। মুচকি হেসে হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিক করতে করতে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কথা টা বলে
.
"নারীর হৃদয়ের রহস্য জানিবার মতো অভিজ্ঞতা আমার হইল না। নিতান্তই
উপর হইতে, বাহির হইতে, যেটুকু দেখিলাম তাহাতে আমার এই বিশ্বাস
জন্মিয়াছে যে, যেখানে মেয়েরা দুঃখ পাইবে সেইখানেই তারা হৃদয় দিতে
প্রস্তুত।"
.
মিসেস.মাহমুদ! তুমি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছো। আমিও দেখবো তুমি আমার থেকে কত দিন দূরে থাকতে পারো।
.
.
আজকে নাইট ডিউটি নেই। বাসায় ফিরে গা এলিয়ে ফোন গাটছিলো ইফাদ। আফরিন কোন বার এত রাগ করেনা।
নিজে থেকে এসে রাগ ভাঙায়। দোষ যদি ইফাদের থাকে তবুও আফরিন সরি বলে। এবার তিন দিন হয়ে গেলো অথচ আফরিন কোন যোগাযোগ করলো না?ইফাদের ইগোতে লাগছে। আরে ভালোবাসবে তো সরি বলবে না কেনো? এবার দোষ তো সত্যি আফরিনের৷ যখন দোষ থাকে না তখন সরি বলে অথচ এবার দোষ যে নিজের তবুও বলবে না।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওয়াইফাই অন করলো ইফাদ৷
আগে ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে আফরিনের ইনবক্সে
ছোট্ট একটা ম্যাসেজ সেন্ড করলো।
.
তোমার বাড়ি থেকে
আমার বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়
আমি না হয় নিষ্ঠুর স্বার্থপর
আমার না হয় পেট ভর্তি রাগ
তুমি তো আসতে পারো
কত কেউ তো
ভুল করেও কত দিকে চলে যায়
চিৎকার করে ভালোবাসতে জানো
একটা ভুল করতে জানো না?
(রুদ্র গোস্বামী)
.
নিউজফিডে আসতেই ইফাদের চোখ ছানাবড়া। আফরিন ১১ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে চেকইন করেছে। কোথায় যাচ্ছে ও?
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে কল দিলো আফরিন কে। অপর পাশ থেকে যান্ত্রিকমানবী বলছে
-The number you have dialed is currently unreachable. Please try sometime latter.
.
.
টানা ২২ ঘন্টা জার্নি করে আফরিন, রেদোয়ান ওদের বাবাকে নিয়ে পৌছালো লস অ্যাঞ্জেলেসে। ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত শহর লস অ্যাঞ্জেলেস৷আয়তনের দিকে ক্যালিফোর্নিয়া ৩য় তম শহর যুক্তরাষ্ট্রের। লস অ্যাঞ্জেলেস! এই বৃহত্তর নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নাতিশীতোষ্ণ রৌদ্রময় জলবায়ু সব মিলিয়ে মন ভালো হতে বাধ্য৷
কিন্তু আফরিনের বুকের ভিতর কেমন যেনো চিনচিন ব্যথা হচ্ছে।
.
প্রচন্ডরকম ক্লান্ত সে। এপার্টমেন্টে গিয়ে যে যার যার রুমে চলে গেলো। এক আদিবাসী ছেলে এখানে ওদের দেখাশোনা করার জন্য বরাদ্দ। ফ্রেশ হয়ে প্রচন্ডরকম ক্ষুধা নিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসলো রেদোয়ান, আফরিন। ডিনারের পালা শেষ করে রুমে এসে গা এলিয়ে দিতেই ফোনে টুংটাং শুরু হয়ে গেছে। ওয়াইফাই অন করেও শান্তি নেই।
ফোন হাতে নিতেই ইফাদের সাথে অনেক ম্যাসেজ চোখে পড়লো। ভ্রু-কুচকে দেখে আফরিন রিপ্লাই করলো
.
ধরবোনা,ছুবোনা।
আশেও থাকবোনা,পাশেও থাকবোনা।
কথাও বলবোনা,কথাও শুনবোনা।
তাও পাবি মরন যন্ত্রণা.........
.
.
সারা রাত ইফাদের ঘুম হয়নি। চোখ-মুখ দেখেই সায়ান বুঝতে পারছে। এদিকে সে ঘাড় ব্যথায় নড়তে পারছে না। উফফ কি অসহ্য যন্ত্রণা!
.
-তোর অফিস নেই?
-বাসায় বসেই সব ম্যানেজ করতে হচ্ছে।
-দুই বউ সামলানো তো আর চারটে খানি কথা না।
.
বলেই বিদ্রুপের হাসি হাসলো ইফাদ।
-পিঞ্চ মারছিস?
-নাহ্! তা যখন অনামিকার সুস্থ হবে তখন কি করবি?
-সময় আসুক।
-যদি অনামিকা অতসী কে ছাড়তে বলে? ছেড়ে দিবি? আফটার অল তোর প্রথম বউ হক বেশি।
.
.
এসময় অতসী এসে বললো
-আপুর স্বামী সংসারের দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র। আপু সুস্থ হলে চলে যাবো। চিন্তার কিছু নেই।
.
দুই গ্লাস দুধ দুজনের সামনে রাখতে রাখতে কথাগুলো বলে অতসী। দুধ দেখে সায়ান,ইফাদ দুজনেই না করে। অতসী বোকা বোকা চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করে৷
.
-তোমরা কি মদ খাও! আমি শুনেছি যারা মদ খায় তারা দুধ খায় না।
.
সায়ান, ইফাদ একজন আরেকজনের দিকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর ইফাদ মুখ খুললো
-আমরা মোটেও মদ খাই না।
-তাহলে দুধ খেতে সমস্যা কি?
-আপুরে বুঝবা না তুমি!
-তাহলে আমিই ঠিক।
-আমরা শুধু মাঝেমধ্যে বিয়ার খাই।
-ওইতো মদ
-বিয়ার আর মদ এক না রে পাগলী। বিয়ার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সপ্তাহে একটা বিয়ার খেলে মুখে পিম্পল উঠে না, স্কিন ভালো থাকে।
(ইফাদ শুরু করলো অতসী কে বিয়ার নিয়ে ভাষণ দেওয়া)
.
-যে লাউ সেই কদু। বিয়ারেও অ্যালকোহল আছে সো খাওয়া হারাম।
.
এবার সায়ান বলে উঠলো
-শুনো! তোমার ভাই ওসব খেতে পারে! আমি ভদ্র ছেলে আমি কিন্তু ওসব খাই না।
.
অতসী উত্তর না দিয়েই আবার কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। ইফাদ সায়ানের গলা চেপে ধরে বলে
.
-শালা তুই আমাকে কেস খাওয়াচ্ছিস কেনোরে? আর কবে থেকে বাদ দিলি?
-এ-সম্পর্কে তুই আমার শালা। আর ঘরে যখন তোর বোনের মতো অ্যালকোহল থাকে না? তখন আর অন্য কিছুর নেশার দরকার হয় না।
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ ২৪
.
.
নিজের প্রতিটা মুহুর্ত অতসী অনামিকা কে দিচ্ছে। পুরো দায়িত্ব যেনো নিজের। খুব যত্ন করে অনামিকার সব কাজ করে। সারাদিন বোনের সাথে থাকবে, ননস্টপ কথা বলেই যাবে। ইফাদ বলেছে অনামিকা সব শুনতে পাচ্ছে।ফিল করছে কিন্তু ব্রেনের কিছু নার্ভ ঠিকমতো রেসপন্স করছে না। যতটা পারা যায় অনামিকাকে বাঁচার তাগিদে দিতে।
.
সায়ান অফিসে যাওয়ার পর থেকে ঘুমানোর আগ অবধি অতসীর সব যেনো অনামিকা। মুভি দেখছে, কথা বলছে আবার হাতের কাজ ওর পাশে বসেই সেরে নিচ্ছে।
এইতো সেদিন সাকিব আল হাসান আর শিশিরের কথা বলাতে অনামিকা মনে হয় হাসলো। মানুষ হাসলে তো মানুষের চোখ হাসে। অতসীর জানে অনামিকা হেসেছিলো।
কারণ সাকিব হলো অনামিকার ক্রাশ। শিশির কে একদম সহ্য করতে পারে না।অতসী মাঝেমধ্যে শাকিবের বিভিন্ন ইন্টারভিউ পড়ে শোনায় অনামিকা কে। আজকে একটা ইন্টারভিউ পড়ে শুনিয়েছে। যেখানে সাকিব শিশিরের প্রথম দেখার কথা বলেছে আবার শিশির না কি ক্রিকেট মোটেও পছন্দ করতো না। শুরুর দিকে বলতো তুমি আস্তে দৌড়াও কেনো? জোড়ে বল ফেলো না কেনো?এভাবে কেনো ব্যাট ধরেছো সহ অনেক কথা। অতসী পড়ার সময় এমন ভাবে পড়ছিলো যা শুনে যে কেউ হাসবে হয়তো তাই অনামিকাও হেসেছে।
.
.
অতসীর প্রতি সায়ানের অত্যাচার ধীরেধীরে বেড়েই চলেছে। অতসী যতই চাচ্ছে সায়ানের থেকে দূরে যেতে সায়ান যেনো আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলছে।
প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় তার বায়না। টাই বেধে দাও,ঘড়ি পড়িয়ে দাও আরো কত কিছু।
.
অতসী যদি না করে তখন বিখ্যাত ডায়লগ দেয়
-------আজ যদি আমার অনামিকা সুস্থ থাকতো! তাহলে সব করে দিতো।
.
নাক ফুলিয়ে অতসী যখন সায়ান কে টাই পড়িয়ে দেয় সায়ানের দুই হাত খেলা করে অতসীর কোমরে।
কখনো গোজা আঁচল খুলে দিচ্ছে আবার বা কখনো ফাজলামো করে চিমটি কাটছে। এসব অতসীকে হেনস্তা করার জন্য সায়ান বেশ ভালো ভাবেই পারে।
.
.
কী হচ্ছে আমার এসব!
যেন তুমি ছাড়া জগতে কোনও মানুষ নেই, কোনও কবি নেই, কোনও পুরুষ নেই, কোনও
প্রেমিক নেই, কোনও হৃদয় নেই!
আমার বুঝি খুব মন বসছে সংসারকাজে?
বুঝি মন বসছে লেখায় পড়ায়?
আমার বুঝি ইচ্ছে হচ্ছে হাজারটা পড়ে থাকা কাজগুলোর দিকে তাকাতে?
সভা সমিতিতে যেতে?
অনেক হয়েছে ওসব, এবার অন্য কিছু হোক,
অন্য কিছুতে মন পড়ে থাক, অন্য কিছু অমল আনন্দ দিক।
মন নিয়েই যত ঝামেলা আসলে, মন কোনও একটা জায়গায় পড়ে রইলো তো পড়েই রইল।
মনটাকে নিয়ে অন্য কোথাও বসন্তের রঙের মত যে ছিটিয়ে দেব, তা হয় না।
সবারই হয়ত সবকিছু হয় না, আমার যা হয় না তা হয় না।
(তসলিমা নাসরিন)
.
.
রাতের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কবিতাটা আবৃত্তি করে জোড়ে শ্বাস নিলো অতসী। এই একটা জিনিস প্রচন্ড প্রশান্তি এনে দেয়।
প্রেমের বিয়েও বিচ্ছেদ হয়েছিলো রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এবং তসলিমা নাসরিনের। একসময় ছেড়ে চলে যায় তসলিমা কারণ রুদ্র বাবুর পরকিয়া কিন্তু বিচ্ছেদের চার বছরের মাথায় রুদ্র বাবু পৃথিবীর ত্যাগ করে। হয়তো তসলিমা নাসরিনের বিচ্ছেদ সইতে পারেনি তাইতো অতিরিক্ত মাদক সেবন প্রাণ নিয়ে নিলো।
দুজনের কবিতায় কষ্টের ছাপ গুলো বেশ ফুটে ওঠে তাইতো অতসীর এত ভালোলাগে।
.
.
নিস্তব্ধতার মাঝে কখন যে সায়ান এসে পাশে দাঁড়িয়েছে অতসী বুঝেনি। নীরবতা ভেঙে সায়ান বললো
.
-দিহান কে মনে পড়ছে?
.
হঠাৎ কন্ঠস্বর শুনে অতসী হচকচিয়ে যায়। দুহাতে সায়ানের বাম হাত খামচে ধরে। বেশ খানিকটা ছিলে গেছে।
সায়ান রেগে যাওয়ার বদলে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
.
-মিসেস মাহমুদ! আমার অফিস আছে তো। যে গরম পড়েছে! শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখি এই দাগ যদি কেউ দেখে মান সম্মান থাকবে না। বলবে বউ না কি রাক্ষসী!
.
গা দুলিয়ে হাসছে সায়ান। অতসী চুপচাপ এসে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কারণ সায়ান এখন মরীচিকা। মরীচিকা কে বাস্তব ভেবে আবেগ দিয়ে কাছে টেনে নেওয়া যায় না।
.
.
দিনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন অতসীর মা এসে হাজির। মা কে দেখে অতসী হাসবে না কাঁদবে! অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে ছিলো কিন্তু হঠাৎ মা বললো দ্রুত রেডি হয়ে নিতে।
নিজের হাতে মেয়ে কে সাজিয়ে দিচ্ছে। লাল পাড় কালো শাড়ি, চোখে হালকা কাজল, চুল গুলো খোলা।
মা কে জিজ্ঞেস করেও লাভ হচ্ছে না তবে এটা নিশ্চিত সায়ানের সাথে অতসীর মায়ের বেশ ভাব। দুজনের প্রতিদিন কথা হয়৷
সন্ধ্যে হতেই ইফাদ চলে এলো। অতসী কে রেগুলার চেকাপ করে নিচ্ছে।মেয়ের শরীরে ভিটামিনের খুব অভাব।
তখন অতসী জানতে পারলো দুইদিনের জন্য গ্রামে যাচ্ছে কোন একটা অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র সায়ান-অতসী। তাইতো মা এসেছে অনামিকা কে দেখাশোনা করার জন্য।
অতসী বেকে বসলো না সে যাবে না। এদিকে সায়ান পুরো দিন অফিস করে এসে ক্লান্ত হয়ে অতসীর ড্রামা দেখছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে একই ড্রামা আবার।
যতই ইফাদ বুঝাচ্ছে এটা সায়ানের জন্য দরকার কারণ বয়স্ক মহিলা সায়ানের বাবার একমাত্র ফুপি। সায়ানের বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু অতসীর এক কথা।
অনামিকা আপুকে নিয়ে যাক না। আমি যাবো না।
অতসীর শাড়ির সাথে ম্যাচ করে সায়ান ব্ল্যাক শার্ট , অফ হোয়াইট প্যান্ট পড়েছে সায়ান। পায়ের জুতো পড়তে পড়তে অতসী কে দেখে নিলো।
হুট করে এসে ওকে কাধে তুলে নিয়েই সায়ান বেরিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় ইফাদ, অতসীর মা অবাক হয়ে গেছে অতসী তো চুপ।
কেনো জানি এই মানুষ কে বড্ড ভয় লাগে।
.
অতসী কে সায়ান গাড়ির ভিতর বসিয়ে দিয়ে চোখ মুখ লাল করে বললো
.
- তোমার সাথেই আমার বারবার কেনো হারতে হয় বলবে?
তোমার জন্য আমার বুক ফেটে বারবার চৌচির কেনো হয় সেটাও বলবে.....
কেনো আমি সইতে পারি না! কেনো অন্যদের জন্য এই ফিলিংসটা হয় না আমার?.
কেনো আমার দীর্ঘশ্বাসের কারণ টাও তোমাকে হতে হবে?
.
.
চলবে
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ২৫
.
.
কুম্ভকর্ণ পৃথিবীতে হয়তো সত্যি ছিলো, হয়তো না অতসীকে দেখার পর থেকে সায়ান এটা বিশ্বাস করে।
গাড়িতে বসার পর বড়জোড় পাঁচ-সাত মিনিট জেগেছিলো তারপরেই ঘুম।
এত ঘুম কই পায় মেয়েটা? একটু ফ্রি পেলেই ঘুমিয়ে যায়। ইফাদ কে জিজ্ঞেস করেছিলো মেডিসিনের জন্য এমন হয় না কি? কিন্তু ইফাদ বলেছে এমন মেডিসিন অতসী কে প্রেস্ক্রাইব করা হয়নি যা খেলে অতসী মরার মতো ঘুমাবে৷
.
ব্যাক সিটে আরাম করে ঘুমাচ্ছে অতসী। পুরোভর সায়ানের উপর । চুল খুলে গেছে, হাত দিয়ে সায়ানের হাত ধরে অন্য হাত সায়ানের কোমর জড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে সায়ান কোলবালিশ মাত্র।
.
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সায়ান। প্রচন্ড ভুল করে ফেলেছে সে। এভাবে অনামিকার জীবন নষ্ট করা উচিৎ হয়নি।কিন্তু সেদিনের ঘটনার ভুল টা যদি না হতো।
.
.
সায়ান যে করেই হোক অতসী কে চেয়েছিলো। তাইতো অতসী কে কিডন্যাপ করাতেও চিন্তা করেনি। অতসী প্রতিদিন যে সময় বাসায় ফিরতো সে সময় অনুসারেই সায়ানের সিকিউরিটি গার্ড অতসী কে তুলে আনে। অতসী সব সময় বোরখা পড়ে, হিজাব পড়ে। মুখ দেখে চিনার উপায় নেই। তাইতো বোরখা দেখেই তুলে এনেছিলো। যখন মুখ খুলে দেখা হলো স্পষ্টত জ্ঞানহীন অনামিকা কে।
সায়ান বেশ অবাক হয়ে যায়। যতদূর অনামিকা কে চিনে অনামিকা ওয়েস্টার্ন ড্রেসে চলাফেরা করে কিন্তু আজ বোরখা?
ততক্ষণে অনামিকার কিডন্যাপের খবর কিছুটা সায়ানের বাবাও জেনে যায়।
এরপর থেকে বাধ্য হয়েও অনামিকার সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছিলো সায়ান। অতসীর করা অনামিকার প্রতি অত্যাচারের কথা গুলো শুনে অনামিকার প্রতি হয়তো করুণা জন্মাতো যাকে সায়ান এক সময় ভালোবাসা বলে মেনে নেয় কিন্তু ভালোবাসা কি এত সহজ?
.
হুমায়ূন আহমেদ একদম ঠিক বলেছেন
---- যুদ্ধ এবং প্রেমে কোন কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না।
.
.
অতসীর ডান হাতের আঙুলগুলো নিয়ে খেলছিলো সায়ান। বাম হাত তো সায়ান কে জড়িয়ে আছে। এদিকে সায়ানের বাম হাত অতসীকে জড়িয়ে আছে। এই মেয়ে আসার সময় হাতে কোন চুড়ি পড়েনি। কোন গহনা পড়ে না। নাম মাত্র হাতে চুড়ি , গলায় পাতলা চেইন,আর নাকফুল পড়ে। কিন্তু এভাবে বড়মা এর সামনে গেলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
পিছনে ব্যাগ থেকে জুয়েলারী বক্স বের করে দুহাতে মোটা দুটো বালা, আংটি পড়িয়ে দিচ্ছিলো।
ঘুমের মধ্যে অতসী কোন শান্ত। একদম গুটিসুটি মেরে জড়িয়ে আছে অথচ যদি জেগে থাকতো?
আল্লাহ্ মাফ করো! কামড়িয়ে, খামছিয়ে অবস্থা খারাপ করে দিতো।
.
যে নারী ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দরী সে প্রকৃত রুপবতী কিন্তু অতসীর এই বাড়াবাড়ি সৌন্দর্য সায়ানের সহ্য হচ্ছে না। তাইতো ড্রাইবার কে বলে পিছনের লাইটস অফ করিয়ে দিয়েছে।
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দুচোখে ঘুম নেমে এলো সায়ানের।
.
.
.
.
গ্রামের পথ ধরতেই বেশ ঝাকুনি লাগছিলো। এক সময় ঘুম ভেঙে যায় সায়ানের। বাহিরে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে কোথায় আছে! হ্যাঁ আর ১০-১২ মিনিটের পথ বাকী। খুব ধীরে সুস্থে অতসী কে ডেকে তুলছিলো।
বাড়ির সামনে এসেই চোখ খুলে অতসী।
চুলগুলো পাঞ্চক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে আঁচল টেনে মাথায় দেয়।
গ্রামে ১১ টা মানেই গভীর ঘুমে আছে গ্রামবাসী।
একটা বনেদি বাড়ির গেটের সামনে দাড়ানো। বাড়ির গেট বেশ পুরোনো। ওরা দাড়াতেই কেউ একজন টর্চ হাতে এগিয়ে এসে গেট খুলে দিলো। কেমন একটা গা ছমছম পরিবেশ!
অতসী দুহাতে সায়ানের বাম হাত আঁকড়ে ধরে রেখেছে। সায়ান মুচকি হেসে অতসীর ডান হাত নিজের বাম হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
বাড়ির উঠোন বেশ বড়। কয়েকজন এগিয়ে এসে কুশলাদি বিনিময় করে ভিতরে নিয়ে যায়।
একে তো ঘুম ঘুম চোখ তারপর কালো শাড়িতে অতসীকে দেখতে সত্যি অপরুপ লাগছিলো।
থাকার জন্য ওদের দু তলায় একটা ঘরে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জিনিসপত্র এনে দিয়ে যাওয়ার পর
সায়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়, এসে দেখে অতসী কেমন ব্যাক্যাত্যাড়া হয়ে শুয়ে আছে।
.
.
-কি হয়েছে? এভাবে আছো কেনো?
-নড়তে পারছি না তো! কোমরে ব্যথা লাগছে!
-পুরো পথ ঘুমিয়ে এসেছো তো তাই পেশি টান দিয়েছে । এসো উঠো, আমি দেখছি।
.
.
-দূরে থাকুন! খালি স্পর্শ করার বাহানা। দূরে থাকুন তো। যত্তসব।
-আমার স্পর্শ ভালো লাগবে না কিন্তু ওই যে পুকুরঘাট ওখান থেকে যখন ভূত এসে স্পর্শ দিবে তখন ভালো লাগবে।
জানো তো এ বাড়িতে.....
.
-থামুন! আমি ভূতে বিশ্বাসী না! ভূত বলতে কিছুই নেই। হ্যাঁ! কিছু জ্বীন আছে! যা মানুষকে ভয় দেখায় এই আর কি! হইছে, হইছে থামেন! রাত করে তেনাদের কথা তুলতে নেই! কখন আবার এসে যায়!
.
-তেনারা মানে?
-জ্বীন! চুপ করুন। আর একটা কথাও না।
.
অহ্ আচ্ছা মিসেস. তুমি তাহলে জ্বীনে ভয় পাও। কথাটা মনে মনে বলেই ঘর কাপিয়ে মনে মনেই হাসলো সায়ান।
.
-তাহলে বলছি কি! শোন মেয়ে! বড়মা জ্বীন পোষে। যদি এবাড়িতে কোন স্ত্রী রাতে স্বামীর বুকে মাথা না রেখে ঘুমায় তারা এসে ওই মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তেলাপোকার মধ্যে বসিয়ে রাখে।
-হু কেয়ারস! আমি তেলাপোকা ভয় পাই না।
-সাপ তো পাও! না হলে তেনারা সাপের রুপ ধরে এসে প্যাচিয়ে ধরবে।
.
.
অতসীর মুখের আদল পরিবর্তন হয়ে গেছে। ভয় পাচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে।
.
-সত্যি?.
-মিথ্যা বলে লাভ?
-মি. মাহমুদ! আমি ওয়াশরুমে যাবো!
-তো যাও! না করেছে কে?
-আপনি আসুন।
.
হাত ধরে টেনে ওয়াশ রুমের দরজার সামনে দাড় করায়। এখানে থাকুন বলে সুতি একটা শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়। কয়েক সেকেন্ড পর আবার দরজা খুলে শাড়ি, তোয়ালে সব সায়ানের হাতে দেয় আর বলে যখন যখন চাইবো আপনি দিবেন। এখান থেকে যাতে না নড়তে পারেন তাই এই ব্যবস্থা৷ বলেই আবার দরজা লাগিয়ে দেয়।
.
কিছুক্ষণ পর পর সায়ান কে ডাকছে। সায়ান প্রথম দুইবার উত্তর নিলেও পরের বার ইচ্ছে করে চুপ ছিলো। অতসী ঝড়ের বেগে দরজা খুলে দেখে সায়ান হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর শাড়ি থেকে সুতো মুখে নিয়ে চিবোচ্ছে।
.
রাগে কটমট করে অতসী বললো
-ওটা খাওয়ার জিনিস না মি. মাহমুদ! আর আপনি কি চাচ্ছেন? আপনাকে আমি ওয়াশ রুমের ভিতরে দাড় করিয়ে রাখি? যদি না চান তাহলে চুপচাপ উত্তর দিবেন।
.
বলেই তোয়ালে আর শাড়ি নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
সায়ান হেসে কুটিকুটি অবস্থা! এই মেয়ে কি বলছে?
শিয়াল কে বলছে আপনি কি চাচ্ছেন! আপনাকে মুরগির খোয়ারে ঢুকতে দিতে? যদি না চান....... হাহাহা
.
.
অতসী যে বেশ ভয়ে আছে দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। সায়ান মুখের সামনে খাবার ধরতেই মাথা ঝাকিয়ে না করে।
সায়ান তখন ইদানীং কালের বিখ্যাত ডায়লগ দেয়
.
-আজ যদি অনামিকা সুস্থ থাকতো !
.
আর কিছু বলতে হয়না। অতসী চুপচাপ খেয়ে শুয়ে পড়ে। রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজলো। বিছানার এক পাশে অতসী পাশ ফিরে গুটিয়ে শুয়ে আছে অপর পাশে সায়ান এক হাত বুকে অন্য হাত চোখের উপর রেখে। কারণ অতসী লাইট বন্ধ করতে দেয় নি। যদি তারা আসে?
এক সময় যথারীতি শিয়ালের ডাক শুরু হয়। সায়ান যেনো এটার অপেক্ষাতেই ছিলো। টুপ করে বেড সাইডের সুইচ টিপে লাইটস অফ করে দেয়৷ অতসী সবে ঘুমিয়ে যাচ্ছিলো। শিয়ালের ডাক শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে যখন দেখে লাইটস অফ তখন সায়ান কে ধাক্কাতে লাগে।
.
- কি হলো
- লাইটস অফ হলো কেনো?
- আমি কি জানি?
-উঠে দেখুন!
-পারবো না
-ফোনে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালান।
-চার্জ নাই।
-উফফফ! ভয় লাগছে তো।
.
সায়ান কোন উত্তর দেয় না।
কিছু সময় পর সায়ান বেশ বুঝতে পারে অতসী ধীরে ধীরে বাম হাত বুক থেকে সরিয়ে কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছে। সায়ানের অন্য হাত এনেও নিজের উপর দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অতসী আবার গভীর ঘুমে।
সায়ান হেসে অতসীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো
.
-তোমাকে জ্বালাতে এত ভালো লাগে কেনো?
.
ঘুম ঘুম কন্ঠে অতসীও উত্তর দিলো।
-আমার জ্বলতে এত ভালো লাগে কেনো?
.
.
চলবে
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ২৬
.
.
ভোর রাতে সায়ান অতসী কে ডেকে তুলেছে। এবাড়িতে সবাই আজানের পর পর নামাজ পড়ে। যদিও অতসী নামাজ সচরাচর বাদ দেয় না তবুও আজানের সাথে সাথে পড়তে পারেনা কিন্তু এবাড়িতে পড়তে হয়।
সায়ান, অতসী যাদের বাড়ি এসেছে সে মূলত সায়ানের বাবার ফুপু। সায়ানের দাদার বড় বোন। ভদ্রমহিলার বয়স শতক পার করেছে কিন্তু কমেনি চেহারার ঝৌলস। যথেষ্ট স্মার্ট মহিলা। বিষয় নামাজ-রোজার হোক কিংবা বিজ্ঞান এখনো খুব ভালোভাবে মেনে চলে।
ভদ্র মহিলা ফ্রিজের কোন জিনিস খান না, ফ্যানের বাতাস নেয় না। উনার সব পছন্দ প্রাকৃতিক নির্বাচন।
তাই হয়তো এখনো জীবিত আছেন এবং সুস্থ আছেন ।
.
.
নামাজ শেষে অতসী দাঁড়িয়ে দেখলো সায়ান হাতে গ্রীনটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পৃথিবীর সব থেকে অসহ্য, বাজে খাবার হচ্ছে গ্রীণটি। নায়িকাদের জন্য ভালো হলেও অতসীদের জন্য বেদনাদায়ক। ওসব মজা করে, মুখ না ভেংচিয়ে শুধু টিভিতেই খাওয়া যায়। বাস্তবে না।
কিন্তু নাইনুকুড় করেও লাভ হয় না। সায়ান প্রতিদিন জোড় করে এসব খাওয়ায়। ইফাদের ভাষ্যমতে অতসী একদম পারফেক্ট কিন্তু যে হারে ঘুমায়! যদি মুটিয়ে যায়?
.
আল্লাহ্! তুমি আমারে উঠাইয়া নাও না কেনো?
.
অতসীর কথাটায় সায়ান কর্ণপাত করলো বলে মনে হলো না।
মুখের সামনে ধরেই আছে। অতসী চুপচাপ কয়েক সিপ নিয়ে বসে আছে। বাকীটা সায়ান ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। তারপর অতসীর হাত ধরে বাহিরে উঠোন পেরিয়ে গ্রামের ফসলি জমির আইল ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
অতসী জিজ্ঞেস করলো
.
-মি. মাহমুদ! কোথায় যাচ্ছি?
-তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে।
.
.
দিহানের কাপড় গোছাতে গিয়ে কাল রাইমা কিছু কাগজ পত্র পেয়েছে।
অতসীর ভিসা, পাসপোর্ট। দিহান সব বানিয়ে নিয়েছিলো হয়তো অতসী কে নিয়ে যাবে বলে কিন্তু অদৃষ্টের বিচিত্র ইচ্ছা ছিলো।
রাইমা কে কিছু জিনিস প্রচন্ড যন্ত্রণা দেয়।
প্রতিদিন যখন দিহান নিয়ম করে অতসীর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে, অতসীর গলার চেইন দিহানের হাতে দেখে কিংবা ওয়ালপেপার, ওয়ালেটে অতসীর ছবি।
.
হিংসে হয় না কষ্ট হয় রাইমার।শুধু দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। অতসী সব ছেড়েও সব কিছুর অধিকারী কিন্তু আমি? সামান্য একটু অধিকারের জন্য ক্লান্ত পরিশ্রান্ত নারী।
.
.
তাই হয়তো ভোরের আলো, স্নিগ্ধ বাতাস সব কিছু অসহ্য লাগে রাইমার।
দম বন্ধ হয়ে আসছে। একটু মুক্তি চাই! একটু মুক্তি!
.
.
সায়ান অতসী দাঁড়িয়েছে একটা বাড়ির সামনে। বাড়ি না! হ্যাঁ! এটা তো খামার। আশেপাশের ঘর থেকে পিচ্চি পিচ্চি গরুর বাচ্চা বেরিয়ে আসছে। গ্রাম বাংলায় বাছুর বলে ডাকে। অতসীর কাছাকাছি আসতেই অতসী এক লাফে সায়ানের পায়ের উপর পাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচন্ডরকম ভয় পায় গরু দেখে।
সায়ান ভ্রু কুঁচকে অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো
.
.
-তুমি গরু ভয় পাও?
-হ্যাঁ! জানেন! এগুলো গুতো মারে।
-তাহলে দুধ দোয়াবে কিভাবে?
-মানে?
-তুমিই তো বলেছিলে "চুনুচুনু করে গরুর দুধ পানাবো "
-কবে বলেছি? সব আপনার ষড়যন্ত্র!
-বাহ্! রে এখন ভুলে গেলে? আচ্ছা চলো ওদিক টায় চলো।
.
ওদিকে অনেক গাভী রাখা। সায়ান অতসী কে নিয়ে যায়। একজন মহিলা এসে অতসী কে নিয়ে বসিয়ে দেয় দুধ পানাতে।
অতসী তো ভয়ে শেষ। হাত বাড়িয়ে সায়ানের হাত ধরে, যেনো সায়ানের হাতের থেকে বিশ্বস্ত হাত আর নেই।
সায়ান হেসে অতসীর হাত ধরে বসে। কিন্তু দুধ দোয়াতে তো দুই হাত লাগে আর যদি লাথি মারে?
ঢোক গিললো অতসী। তবুও সাহস করে শুরু করলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সব স্বাভাবিক দেখে অতসী বেশ আনন্দের সাথে কাজটা করছিলো।
এক এক টা গাভী প্রায় সাত -আট কেজি করে দুধ দেয়।
সায়ান এর মাঝে একটা কাজ করে বসলো। অতসীর হাত একটু বাকিয়ে কাচা দুধ খেয়ে নিলো। এই অবস্থা দেখে অতসী প্রায় বমি করেই দিয়েছিলো। সায়ানের টি-শার্ট, মুখে লেগে আছে গরুর কাঁচা দুধ!
.
সায়ান উঠে ভদ্র ছেলের মতো অতসীর আঁচল দিয়ে মুখ মুছে নিলো যাতে এমন কিছুই হয়নি। অতসী ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো।
.
.
ফিরে এসেই সামনে পড়লো একটা পেয়ারা গাছ। অতসীর এই পেয়ারা অনেক পছন্দের। এতই পছন্দ সে পেয়ারার কচি পাতা অবধি খেয়ে ফেলে৷
গাছটি একটু উঁচু। গাছে মাত্র দুটো ফল। সায়ান সহজেই উঠে গেছে। দুটো পেয়ারা হাতে নিয়ে চিন্তা করছে অতসী কে দিবে কি না! অবশ্যই দিবে কিন্তু একটু বাজিয়ে।
.
-মিসেস মাহমুদ! তোমার কি চাই?
-অবশ্যই। প্লিজ দিন না!
-বাচ্চাদের এসব খেতে নেই।
-শাট আপ মি. মাহমুদ! ফাজলামোর সীমা থাকে।
-আমি এটা কষ্ট করে পারলাম। তোমাকে এমনি এমনি দিবো কেনো?
-কি চাই?
-উম্মম! একটা চুম্মা!
-ছিঃ আপনি কি অশ্লীল!
-নিজের বউকে এসব বললে অশ্লীল হলেও আপত্তি নেই।
-লাগবে না।
.
অতসী রাগ করে চলে যাচ্ছিলো। সায়ান দাঁড়াতে বলে, অতসী তো অপেক্ষায় ছিলো।
আঁচল পেতে দেয়। সায়ান ঢেল দিয়ে পেয়ারা দুটো দেয়।
.
তখন হটাৎ একজন এসে বলে বড় মা ডাকছে। আসার পর তো উনার সাথে দেখাই হয়নি।
.
সায়ান অতসীকে একবার দেখে নিলো। সব ঠিকঠাক। নাক ফুলটা একটু ঠিক করে দিয়ে হাত ধরে এগিয়ে যায় একটা ঘরের দিকে।
.
মাটির ঘর! ঠান্ডা পরিবেশ। পুরো ঘরেই আগরবাতির স্মেল। অতসী এই স্মেল ভয় পায়।এই স্মেল মৃত বাড়িতে পাওয়া যায় কি না!
শক্ত করে সায়ানের হাত ধরে আছে অন্য হাতে আঁচলে রাখা দুটো পেয়ারা।
ঘরে প্রবেশ করেই দেখলো সাদা পর্দা দিয়ে ভিতরে আড়াল হয়ে বসে কেউ তিলাওয়াত করছে।মিষ্টি সুর ভেসে আসছে। অতসী কে নিয়ে ভিতরে যায় সায়ান। ওদের দেখে তিলাওয়াত বন্ধ করে ঈশারায় বসতে বলে। কুশলাদি বিনিময় করার পর সায়ান চুপচাপ তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। ভদ্র মহিলা এক হাতে সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চোখের পানি স্পষ্টত।
.
মি. মাহমুদ কান্না করছে? আশ্চর্য! কেনো?
.
ভদ্রমহিলা চোখ তুলে তাকায়। শান্ত চাহনী। বয়স্কের ছাপ স্পষ্ট কিন্তু নূরানী চেহারা। অন্য হাত দিয়ে অতসীর হাত ধরে।
.
-আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আস সালাম। সানুর পছন্দ আছে! সানু তো পুতুল নিয়ে এসেছে।
.
অতসী মুচকি হেসে মাথা নিচু করে। অনেক কথা বলে এমন সময় সায়ানের কল আসাতে সায়ান বাহিরে চলে যায়। অতসী আরো কিছু সময় ছিলো। একটু পর বেরিয়ে রুমে চলে এসে পেয়ারা দুটো রাখে। মাথা ঝিমঝিম করছে। কিছু সময় পর সায়ান এসে অতসীর কপাল নিজের কপালের সাথে ঠেকিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে আছে। দুজনের শ্বাস-প্রশ্বাস একজনের মুখে এসে লাগছে।
কিছুক্ষণ পর সায়ান বললো
.
-জানো! বড় মা কি বলেছে?
- উঁহু!
-আমাদের সন্তান আসবে খুব দ্রুত! খুব দ্রুত আমি বাবা হবো।
.
সায়ান মনে করেছিলো অতসী চমকে যাবে। কিন্তু অতসী চমকায় নি।কারণ কিছুক্ষণ আগে তাকেও এই কথা বলেছে বড় মা।
.
সায়ান বেরিয়ে যাওয়ার পর আঁচলে দুটো পেয়ারা দেখতে পায় বড়মা। জিজ্ঞেস করে
.
-সানু পেড়ে দিয়েছে?
-হ্যাঁ! উঠনের শুরুর দিকের গাছ থেকে।
-আঁচলে কি ওই দিয়েছে?
-হ্যাঁ!
-তুমি কি জানো ওই গাছে বছরে দুটো কি একটা ফল হয়। গাছের ফল যে বিবাহিত মেয়ের ঝুলিতে পড়ে সে পোয়াতি হয়। তোমার কোল জুড়ে আমার শামীম, আয়েশা যেনো ফিরে আসে।
.
শামীম আয়েশা সায়ানের মা-বাবার নাম। ছেলেটা সব হারিয়েছে। সন্তান তো বাবা-মায়ের মতোই। দেইখো আমার শামীম, আয়েশা ফিরে আসবে।
.
.
কথাটা শুনে অতসী ফাকা ঢোক গিললো। মি. মাহমুদের সাথে ওমন কোন সম্পর্ক নেই। অনামিকা সুস্থ হলেই চলে যেতে হবে কিন্তু এটা মিথ্যে নয়।
অতসী ইদানীং এমন স্বপ্ন দেখে। মি.মাহমুদ শূন্য আঁচল ভরে দিয়ে ফল দিয়ে। তবে কি সত্যি?
.
এই কথাটা শোনার পরেই অতসী চুপচাপ হয়ে যায়। সায়ানের ডাকে হুশ ফিরে।
.
-অতসী!
-হু!
-সত্যি আসবে তো!
-অবশ্যই! আপু সুস্থ হলেই আপনাদের সন্তান আসবে।
.
সায়ান অতসীর কোথায় পাত্তা না দিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ তলপেটের দিক টায় শাড়ি সরিয়ে পর মুখ ডুবালো গভীর ভাবে। কয়েক মুহুর্ত পর মুখ তুলে অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো
.
- উঁহু! আমার সন্তান এখানে থাকবে। ঠিক এখানে।
.
কিন্তু অতসীর স্থির চাহনী বিছানার এক পাশে রাখা পেয়ারা দুটোর দিকে।
.
কি এমন হবে একটু স্বার্থপর হলে? আচ্ছা! আমি যদি আপুর সুস্থতা কামনা না করি তবে কি খুব খারাপ হয়ে যাবো?এমন কি হতে পারে না আপু আর কখনো সুস্থ না হলো! এটা কি খুব অন্যায় চাওয়া?
.
.
চলবে।
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ২৭
.
.
গ্রামের বিয়েগুলো শহরের মতো নয়। বিয়েবাড়ি মানেই চারপাশের যত পাড়া-প্রতিবেশী, আত্নীয়স্বজন আছে সব মানুষ সবাই এসে আড্ডা, খাওয়া, হাতে হাতে কাজ।
বিশেষত নানী-দাদীরা। হাসি-তামাশায় মাতিয়ে রেখেছে।
সায়ান-অতসী গ্রামে এসেছে মূলত বিয়ে উপলক্ষে। অতসী নিজের ঘরে বসে বাহিরে তাকিয়ে দেখছিলো। সবাই কত আনন্দে আছে। আজকে মেয়েটার হলুদ আবার বিয়েও৷ কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠানগুলো।
কবিতা আবৃতি করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু হলো না। কেউ একজন এসে জানিয়ে গেলো বড়মা ডাকছে।
.
.
ঘরের কাছে যেতেই নাকে এলো আতরের মিষ্টি গন্ধ। সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অতসী।
.
-এসো! তুমি কি ক্লান্ত? বিরক্ত হলে?
-না! বিরক্ত হবো কেনো?
-কাল সকালে চলে যাবে তাই ভাবলাম এখন কথা বলবো তোমার সাথে৷ কিছুক্ষণ পর থেকে তো বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে ।
- আচ্ছা!
-তোমার প্রিয় রঙ?
-কালো
-প্রিয় কবি?
-রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।
-প্রিয় মানুষ? যাকে তুমি অনুসরণ করো
- সর্ব শ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (সাঃ)
-তাহলে নিজে হেরে কেনো যাচ্ছো?
.
অতসী কোন উত্তর দিলো না। হয়তো কথার মানে বুঝেনি।
.
-বুঝো নি? এসো! আমার চুলে তেল দিয়ে দাও।
.
অতসী তেলের বাটি নিয়ে চুলে তেল দেওয়া শুরু করে।
.
--- মহানবীর চলার পথে যে বৃদ্ধা কাটা দিয়ে রাখতো, বিপদের সময় মহানবীর সেবা যত্নে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
- জানো?
-জানি।
.
-সর্বকালের সকল মানবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব,
কতটা সহ্য করেছেন আমরা সবাই জানি। আমরা মহানবীর উম্মত। আমরা কি হার মানতে পারি?
-অনেক সময় সহ্যের বাহিরে চলে যায়।
-তাহলে শোন! একটা গল্প বলি। গল্প না আমার স্বামীর কথা।
আমি তখন সবে মাত্র উনিশ বছর বয়সী তরুণী। আমার স্বামী এলাকার জমিদার। চারিদিকে বেশ নাম-ডাক। সবাই একনামে চিনে কারণ সুনাম খুব অল্প দিনে ছড়িয়ে পড়েছিলো। একদিন ফেরার সময় কোন এক জেলের ক্ষতি হয়। কারণ উনি বহর নিয়ে চলতো। নিরাপত্তার বিষয় ছিলো কি না! তাই। দোষ কার কি ছিলো জানার প্রয়োজন বোধ করেনি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত, আঘাতপ্রাপ্ত জেলেকে বাড়ি নিয়ে আসে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, সুস্থ হলে আমার স্বামী জেলেকে বুকে জড়িয়ে মাফ চেয়েছিলো। এই কথার রটনা রটে গেলো। আমার স্বামী না কি জমিদার হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা,অত্যাচারী, অহংকারী, জাতপাত মানে না আরো কত কিছু।
একদল লোক, গুটিকয়েক মানুষ উনার নামে বদনাম ছড়াচ্ছিলো তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলো এমন কিছু লোক যারা পাত বেড়ে আমার ঘরে ভাত খেয়ে যেতো। আমার খাবার খেয়ে, আমার স্বামীর নামে চলে আবার চারিদিকে বদনাম ছড়াচ্ছিলো। আমার তখন রক্ত গরম, সব দেখে আমিও বেশ রেগে গেছিলাম কিন্তু আমার স্বামী? কোন প্রতিক্রিয়া নেই। মনে হচ্ছিলো যেনো কিছুই হয়নি। তখন রাগ আরো বেশি হচ্ছিলো। একদিন রাগ দেখালাম কিন্তু উনি বললো
-------ইরানী! ওরা চাইছে আমি ওদের মুখ লাগি, কিছু করি কিন্তু এমন না। কহে যে বড় না, সহে যে বড়। শুধু শুধু তাদের কথা চিন্তা করে লাভ নেই। তাদের কাছে সময়ের মূল্য হয়তো নেই তাই তারা আমাকে নিয়ে ভাবছে, কথা বলছে। কিন্তু আমার তো এত সময় নেই গো, ওটুক সময় যে আমি অন্যকাজে ব্যয় করে ভালো কিছু করতে পারবো। তুমিও কিছু মনে রেখো না৷ দেখো না অন্যমনস্ক হয়ে আজ দুধের পেয়ালায় চিনির বদলে লবণ দিয়েছো।
.
লজ্জা পেয়েছিলাম এবং পরের চিন্তা করে আমার নিজের করা সেটাই ছিলো প্রথম এবং শেষ ভুল।
.
.
চুলে তেল দেওয়া শেষে অতসী বসে আছে। বড়মা চুল বেধে ঈশারা করলো অতসী কে কোলে মাথা রাখতে। অতসী চুপচাপ তাই করলো।
অতসীর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বড় মা আবার বলা শুরু করলো
.
-আমি তোমার সম্পর্কে সব খোঁজ নিয়েছি। এতটা প্রতিবাদী অথচ নিজের বাবাকে কোন দিন কিছু বলো না কেনো?
-বাবা কে কিছু বলা যায় বুঝি? বাবা তো বাবাই। সন্তানকে বাবা যদি মারে, এটা মেনে নেওয়া যায় কিন্তু এর মানে তো এই না যে সন্তান বাবাকে আঘাত করবে।
-এটা শিক্ষা। যা তুমি তোমার মায়ের থেকে পেয়েছো৷ জানো তো হিন্দুধর্মের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। শকুনি মামার চক্রান্তে যখন ভাই ভাইদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিলো পুরো বংশ নিঃশেষ হয়ে যায়। শুধু পান্ডবরা পাঁচ ভাই বেঁচে ছিলো। শকুনি মামা যার কথা সব সময়
দুর্যোধন এবং তার ৯৯ জন ভাই শুনতো, মানতো সেই মামা কিন্তু তাদের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলো।
.
তুমি সাহসী মেয়ে। এসব ঠুনকো বিষয়ে নিজেকে ছোট মনে করবে না। নিজের দায়িত্ব সবসময় পালন করবে। গুটি কয়েক মানুষের কথায় কান দিলে, নিজেকে আবদ্ধ করে রাখলে হয়তো আজকে দেশ স্বাধীন হতো না। কারণ শেখ মুজিবুর রহমান কে কতটা হেনস্তা করেছিলেন আমরা স্বাধীনতার ইতিহাসে সবাই জানি। তবুও তিনি দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভেবে এগিয়েছিলেন বলেই কিন্তু আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
.
কথা শেষ করার আগেই সায়ান প্রবেশ করে। গা দুলিয়ে হেসে কোমরে হাত দিয়ে বলে
-বড় মা ! কি বলছো? যাকে বলছো সে কি জেগে আছে? ঘুমিয়ে গেছে। দেখো। মেয়েটা এত্ত ঘুমায়!
-তাতে কি হয়েছে?হয়তো ক্লান্ত
- উঁহু! ও ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে ।
উচ্চস্বরে হেসে উঠলো সায়ান।
.
.
অতসীর যখন ঘুম ভাঙলো সায়ান কে দেখলো বড় মা খাইয়ে দিচ্ছে। আপন বলতে এই বড়মা শুধু আছে। অতসীর বেশ লাগলো। বড়মা হাত দিয়ে ঈশারা করলে পাশে গিয়ে বসলো।
বড়মা ভাতের লোকমা তুলে ধরলো। অতসী বিনা বাক্যে মুখে তুলে নিলেই সায়ান বললো
.
-এই ছিহ্ ! ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ না হয়ে কেউ খাবার খায়? তুমি কি অপরিষ্কার অতসী! ইয়াক
.
অতসী রাগে কটমট করে তাকালো সায়ানের দিকে। সায়ান বড়মার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-আচ্ছা বড়মা! আগে তো শুনেছিলাম এবাড়িতে জ্বীন আছে। এখনো কি আছে?
-কিছু জিনিস তো বাবা থাকেই।এরা বান্দা পড়ে যায়। বাড়ি ছেড়ে চাইলেও যায় না।
.
.
অতসী ঢোক গিলে সায়ানের দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে রইলো।
খাওয়া শেষে সায়ান অতসীকে জোড় করে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়।
.
-আমি সাতার জানি না মি. মাহমুদ! প্লিজ ভয় লাগে।
-আমি তো আছি।
-পানির স্রোত দেখুন। ভেসে যাবো তো।
-চুপ! চুপ! একদম চুপ।
-না ! প্লিজ
-এসো। না হলে রাতে জ্বীন আসলে আমাকে ডাকতে পারবে না।
.
এবার অতসী চুপচাপ পানিতে নামে। সায়ানের দুই হাত অতসীকে জাপ্টে ধরে আছে। অতসী এখনো চোখ বন্ধ। মনে হচ্ছে পায়ে এই বুঝি সাপে প্যাচিয়ে ধরবে।
সায়ান ধীরেধীরে আরেকটু গভীর পানিতে যাচ্ছিলো। হঠাৎ অতসী সায়ান কে বললো
.
-মি.মাহমুদ! আমাকে একটু উঁচু করবেন৷
.
সায়ান কোমর ধরে উঁচু করায় অতসী দুহাত রাখে সায়ানের কাধে।হঠাৎ অতসীর কি হলো সে নিজেও জানেনা। কিন্তু এক সুপ্ত ইচ্ছে যেনো পূর্ণতা পেতে চলেছে।
ভর সামলে হঠাৎ নামা এক পশলা বৃষ্টির মতো অবাধ্য চুমুতে ভরিয়ে দেয় সায়ানের গাল, কপাল এবং দুচোখের পত্রপল্লব।
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
-মিসেস.মাহমুদ! তুমি কি ডুব দিবে?
- উঁহু!
-চোখ খুলে তাকাও!
-না!
-এত কিসের লজ্জা?আমিই তো!
.
.
অতসী চুপচাপ দুই চোখ বন্ধ করে আছে। মনে হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি কমিয়ে দিয়েছে। সায়ান তো মুচকি মুচকি হেসেই চলেছে। বেশ লাগছে অতসীর এমন ব্যবহারে।
.
-আচ্ছা! চোখ খুলতে হবে না৷ বি প্রিপেয়ার্ড! আমিই তোমাকে নিয়ে ডুব দিচ্ছি।
.
সায়ান একটু গভীর পানিতে যেতেই অতসী নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আর যাই হোক নদীর পানিতে সে ডুব দিবে না। বিশেষ করে এই পানির মৌসুমে। ছোটবেলায়
নানুর থেকে শুনেছে নদীতে যখন নতুন পানি আসে, পানির সাথে বিভিন্ন জীব জোনার আসে।চুল প্যাচানি আসে। চুল দিয়ে প্যাচানোর তারপর গভীর পানিতে নিয়ে উপর করে মেরে রাখে৷ তাইতো একা একা কোনদিন পানিতে নামতে নেই৷
.
কিন্তু অতসীর এসব ভাবনার মাঝে সায়ান এক ডুব দিয়েছে অতসীকে নিয়ে।উঠার পর অতসী নিজেকে জোড় করে ছাড়িয়ে পাড়ে উঠে আসে।
.
-মিসেস.মাহমুদ! এটলিস্ট তিনটে ডুব তো দিবে?
-দিলে কি হবে? গা ভর্তি গহনা আসবে না আমি রূপবতী হবো?
-তুমি কি ভয় পেয়েছো? কাঁপছো কেনো?
.
অতসী উত্তর দেয় না। বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে
যে বাড়িতে তেনারা বাস করে, সে বাড়িতে পানিতে যখন তখন নামতে নেই। তেনারা নানা রুপ ধরে, তেনাদের সাথে মশকরা করা মোটেও উচিৎ নয়। এটা আপনারা কি বুঝবেন? যেদিন একটা ছ্যাঁচা খাবে সেদিন বুঝবে।
.
বাড়ি ফিরে অতসী হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে। সায়ান তখনো ফিরেনি।অতসী চাইছে সায়ান আসার আগেই দ্রুত বড়মার ঘরের দিকে চলে যেতে। আজ কি কান্ডটাই না বাধিয়েছে।
.
-নাও এটা পড়! এটা তে বেশি ভালো লাগবে।
.
আচমকা সায়ানের কথায় বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে অতসী। অতসী চিন্তায় পড়ে গিয়েছে এটা কি মি.মাহমুদ? না কি......
ফাঁকা ঢোক গিললো অতসী৷ টুপ করে চিমটি বসিয়ে দিলো সায়ানের হাতে।
.
-কি করছো?
-না সিউর হচ্ছিলাম।
-কি?.
-কিছু না।
.
অতসী কেনো চিমটি কেটেছে বিষয় টা বুঝতে সায়নের কয়েক সেকেন্ড লাগে না।বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে হাতে রাখা অফ হোয়াইট কালারের কাতান শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো
.
-এটা পড়! তোমাকে মানাবে।
.
অতসী সায়ানের দিকে তাকিয়ে বেখেয়ালি ভাবে বললো
.
.
যদি আমাকে কাজল পড়তে হয় তোমার জন্য,
চুলে মুখে রঙ মাখতে হয়,
গায়ে সুগন্ধি ছিটোতে হয়,
সবচেয়ে ভালো শাড়িটা যদি পড়তে হয়,
শুধু তুমি দেখবে বলে মালাটা চুড়িটা পরে সাজতে হয়,
যদি তলপেটের মেদ,
যদি গলার বা চোখের কিনারের ভাঁজ
কায়দা করে লুকোতে হয়,
তবে তোমার সঙ্গে অন্য কিছু, প্রেম নয় আমার।
প্রেম হলে আমার যা কিছু এলোমেলো
যা কিছু খুঁত, যা কিছুই ভুলভাল,
অসুন্দর থাক, সামনে দাঁড়াবো,
তুমি ভালোবাসবে।
কে বলেছে প্রেম খুব সহজ, চাইলেই হয়!
এতো যে পুরুষ দেখি চারদিকে,
কই, প্রেমিক তো দেখিনা !!(তসলীমা নাসরিন)
.
-আজ এত রোমান্টিক রোমান্টিক আবহাওয়া? কি ব্যাপার? মিসেস.মাহমুদ?
-মানে?
-প্রেমিক,প্রেম, কবিতা তারপর নদীর পাড়ের.....
.
সায়ানের কথা শেষ করার পূর্বেই অতসী শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজাসুজি বড়মার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। ঠিক তখন কারো সাথে ধাক্কা লাগে।
দুজনেই পড়ে গিয়েছে। বেশ লেগেছে হাতে।
অতসী উঠে পড়ে যাওয়া ব্যক্তির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
একটা মেয়ে! পড়নে জিন্স, লেডিস টিশার্ট। বেশ ফিটিং কাপড় পড়েছে। পায়ে হিল জুতো। অতসী হাত বাড়িয়ে মেয়েটি কে উঠিয়ে বললো
.
-আমি দুঃক্ষিত আপু! আমার জন্য....
-ইটস্ ওকে লেডি! দোষ দুজনের ছিলো। বাই দি ওয়ে... আমি সাহারা তুমি?
.
-মিসেস অতসী মাহমুদ! ওয়াইফ অফ সায়ান মাহমুদ।
.
পিছন থেকে উত্তর দেয় সায়ান।এগিয়ে এসে অতসীর ডান হাত ধরে।
.
-ওহ্! কংগ্রাচুলেশনস। বিয়ে করেছো তাহলে?
-হ্যাঁ। কেমন আছো সায়রা বানু?
-এই তোমাকে না বলেছি আমাকে এই নামে ডাকবে না।
-কত সুন্দর নাম! কেনো যে পছন্দ করো না.... আচ্ছা থাকো। পড়ে কথা হচ্ছে,বড়মা ডাকছে অতসী কে।
.
.
অতসীকে নিয়ে সায়ান দ্রুত চলে আসে কিন্তু অতসীর মনে হচ্ছিলো এক জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে এদিকেই।
.
.
বিয়ের কনেকে সাজানোর দায়িত্ব অতসীর উপর এসে পড়েছে৷ সবার ধারণা অতসী খুব সুন্দর সাজাতে পারে কিন্তু এটা ভুল। সে নিজেই তো ভালোভাবে কাজল দিতে পারে না। মেকাপের সাথে সম্পর্ক দূরদূরান্তের।
.
অতসী বিয়ের কনের হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছিলো। হঠাৎ সেখানে সাহারা এসে উপস্থিত। মেয়েটার ব্যবহার অতসীর কাছে ভালোই লেগেছে।ড্রেস সেন্স হয়তো ওয়েস্টার্ন বা হতেও পারে দেশের বাহিরে থাকে।
কথায় কথায় জানতে পারলো বড়মার নাতনী হয়। হ্যাঁ দেশের বাহিরে ছিলো।
.
-তোমার নাম যেনো কি? অতসী? রাইট? তোমাকে না শাড়িতে আন্টি আন্টি লাগে।
.
উত্তর টা বিয়ের কনে দিলো
-শাড়ি পড়লে সবাই কে বড় বড় লাগে। এটা জানো না?
-অহ্! এমন জিনিস পড়ার কি দরকার যা পড়লে বড় বড় লাগবে?
.
অতসী কিছুই বলেনা চুপচাপ কাজে মন দিচ্ছিলো। কিন্তু সাহারার কথায় পারলো না।
.
-আমি বুঝলাম না! সায়ানের টেস্ট এতটা বাজে হলো কবে থেকে?. তোমাকে পছন্দ করলো কোন হিসেবে? তোমার তো কোন ক্লাস নেই,না আছে অন্য কিছু কিভাবে এসব পড়ো? মনে হয় গরু কে ঘাসপাতা খেতে দিয়েছে। ঘাস পাতা সহ গরু বসে বসে খাচ্ছে। নো মেনারস্, নো ড্রেসিং সেন্স। নাথিং! ব্লাডি
থার্ড ক্লাস পিপলস্!
.
অতসী খুব শান্ত গলায় উত্তর দিলো
-জ্বী আপু! আমার কোন ক্লাস নেই তবে আমার এতটুক বুদ্ধি আছে কোথায় কি পড়ে যেতে হয় অথবা কি বলতে হয়৷ শালীনতা বজায় রেখে, সম্মান দিয়ে কথা বললে যদি থার্ডক্লাস হতে হয় তবে আমার কোন আপত্তি নেই।
.
অতসী আর কোন কথা না বলে চুপচাপ রুমে চলে আসে।এদিকে সায়ান অতসীকে খুঁজতে গিয়ে সব টা বিয়ের কনের থেকে শোনে।
.
এটা বুঝতে বাকী নেই সাহারা সায়ান কে পছন্দ করে। অতসীকে মেনে নিতে পারছে না। তাইতো কি ভাবে অতসীকে অপদস্ত করা যায় সে উপায় খুঁজতে ব্যস্ত।
.
কয়েকজন মেয়ের সাথে বসেছিলো সাহারা।প্ল্যান সিম্পল। অতসীকে অপমান করা। সায়ান ওদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এটুক শুনতে পায়
-বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান! এবার ঘুঘু তোমার বধিবো পড়াণ!
.
কাছে গিয়ে সায়ান বেশ চিৎকার করেই বলতে শুরু করে
.
-হ্যালো! মিস এটেনশন সিকার! তুমি অতসীকে কি বলেছো? ঘাসপাতা খাওয়া গরু? যদি তাও হয় তাহলেও ও দেশি গরু! তোমার মতো অস্ট্রেলিয়ান গাই না! যার না আছে গুণ না আচ্ছে অন্য কিছু। জানো এদেশে অস্ট্রেলিয়ান গরুর কদর নেই?.
.
-সায়ান কি বলছো এসব? আর ইউ ড্রাংক? নেশা করেছো না কি?
-নেশা আমি করবো কেনো? নেশা করা তো তোমার কাজ। তুমি মনে হয় প্রতিদিন নেশা করো তাই তো তোমার মুখেই সব সময় উইড, ড্রিংক্স এসব শোনা যায়।
-ইউ! তুমি কি আমাকে অপমান করছো? আমি কেনো নেশা করবো?
-যে ব্যক্তি যেমন! অন্য কে তেমন ভাবে। তুমি নেশা সম্পর্কে জানো বলেই, নেশা করো বলেই অন্যকে সব সময় বলো।
-তোমার বউ কে আমি কি বলেছি না জেনেই তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারো না। ওই মেয়েটা আমাকে যে বলেছে? আমার শালীনতা নেই সে বেলায়?.
(কান্না করতে করতে কথাগুলো বললো)
.
-ভুল কি বলেছে? এটা গ্রাম ! এখানে এভাবে কেউ চলে না। সামান্য পয়েন্ট বুঝো না?.
.
-এবার কিন্তু তুমিও আমাকে ইনসাল্ট করছো!
-অহ রিয়েলি? নিজেকে আর কি কি ভাবে ভিক্টিম প্রমাণ করবে? এক দিকে না হয় এক দিকে নিজেকে আমি ভিক্টিম প্রমাণ করেই ছাড়বো! এই মনোভাবে চলো তাই না?মানব সমাজে বাস করি আমরা। কিছু মানুষ তোমাকে খোশামোদ করলেও সত্য টা অনেকেই জানে। কিন্তু কেউ বলে না কারণ জানো কি? সবাই তোমার মতো এটেনশন সিকার না।তাই তোমার চালচলন বা পোশাক নিয়ে কিছু বলে না। বললে তুমি তাদের অপমান করো। কিন্তু বাস্তবতা?
.
-আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? তুমি আমার বান্ধুবিদের কে জিজ্ঞেস করো! ওরা বলবে তোমাকে তোমার বউ কেমন মেয়ে!
.
-কুকুরের কাজ দল বেধে চলা কিন্তু সিংহ একাই চলে এটা মনে রাখবে। তোমার কুকুরের পাল তোমার মতই ঘেউঘেউ করবে আমি জানি।আর কি বলছিলে? বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান! এবার ঘুঘু তোমার বধিবো পড়ান?
বাহ্! আমার প্রাণ বধিবে? এতই সহজ? আমি কি করতে পারি আশা রাখছি উত্তর পেয়ে গেছো!
আমার সাথে লাগতে এসো না। খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ রেগে গেলে কি কি করে এর ধারণা তোমার নেই।
নেক্সট টাইম অতসীর থেকে দূরে থাকবে। দশ ঘর পড়ে কোন কাহিনী হলো সেই কাহিনী নিজের মধ্যে টেনে নিজেকে এভাবে এটেনশন দিতে যেয়ো না। তোমাকে আমার আগে থেকে ভালো লাগে না। আমি এতটা বোকা না যে আজকে তোমার কোন প্ল্যানে আমি ফেসে যাবো। ছোট বয়সেই যখন তোমার চক্রান্ত থেকে বেঁচেছিলাম এটা আবার কি? নারীর বড় সম্পদ নারীর সম্মান। এভাবে ঠুনকো করে দিও না যাতে কেউ সম্মান না করে।
ভালো থেকো।
.
.
সায়ান অপেক্ষা করে না। এই মেয়েকে হাড়ে হাড়ে চিনে সায়ান।তখন সায়নের বয়স আঠারো আর সাহারা চৌদ্দ কি পনেরো। সায়ান কে সাহারা নিজের মনের কথা জানায় কিন্তু সায়ান না করে দেয় । একদিন রাতে সায়ান ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে দেখে ওর বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে সাহারা৷ সেরাতে বুদ্ধি করে মায়ের ঘরে চলে যায় সায়ান। তাই সফল হতে পারেনি সাহারা।
এই বাড়িতেই ঘটিয়েছিলো এত জঘন্য কাজ সাহারা।
.
.
রুমে এসে ধপ করে অতসীর পাশে শুয়ে পড়লো সায়ান।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। কিন্তু অতসীর সেদিকে খেয়াল নেই। দৃষ্টি বাহিরে।
উঠে টেবিলের উপর থেকে পেয়ারা দুটো এনে অতসীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
.
-মিসেস.মাহমুদ! পেয়ারা খেলে কেউ প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় না! তুমি খেতে পারো। এত চিন্তার মতো কিছুই হয়নি।
.
অতসী উঠে বসে পেয়ারা হাতে নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো
.
-অনামিকা আপু সুস্থ হয়ে গেলেও কি আপনি আমাকে এভাবে কেয়ার করবেন? না কি চলে যেতে বলবেন?
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অনামিকা আপু সুস্থ হয়ে গেলেও কি আপনি আমাকে এভাবে কেয়ার করবেন? না কি চলে যেতে বলবেন?
.
.
এমন প্রশ্নে সায়ান কিছু মুহূর্ত নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো অতসীর দিকে। মুচকি হেসে অতসীর পাশে বসে দু হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয় অতসীর বাম হাত। জিজ্ঞেস করে
.
- আজকে হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
-সাহারা কে বলা প্রতিটি কথা আমি শুনেছি। আপনি নিজেই যেখানে আমাকে সম্মান করেন না! সেখানে অন্য কে কি বললো এই নিয়ে অবশ্যই আপনার চিন্তার বিষয় হওয়ার কথা না।
-মানে?
-আপনি তো আমাকে আপুর জন্য বিয়ে করেছেন, তার দেখাশুনা করার জন্য।মনে পড়ে? আপুর পাশে ঘুমিয়েছিলাম বলে আপনি আমাকে কত কথা শুনিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ! সব মনে আছে।
-আপনি তো আপুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তবে এখন! এক সাথে কি দুজন মানুষ কে ভালোবাসা যায়?
-অনামিকার প্রতি আমার ফিলিংস কখনো ভালোবাসা ছিলো কি না আমি জানি না তবে এটা সত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুরু থেকে ভালোবাসি।
-মানে?.
-কিছুনা। আচ্ছা! তুমিও তো দিহান কে ভালোবাসতে। ইচ্ছে করে না ওর কাছে চলে যেতে?
-দিহানের ভালোবাসার থেকেও আমি রাইমাকে বেশি ভালোবাসি।
-আমার প্রতি তোমার অনেক রাগ তাইনা?
-রাগ, হিংসে, জেদ মানুষকে পশু বানিয়ে দেয়। আমি মানুষ! এসব আমার না থাকাটা শ্রেয়।
.
সায়ান বুঝতে পারে অতসী তাকে উদ্দেশ্য করেই এসব বললো কারণ সায়ানের ব্যবহার সত্যি পশুর থেকে জঘন্য ছিলো।
.
-হয়তো তোমার-আমার অতীত এজন্য দায়ী!
-আমার আপনার এমন কোন অতীত নেই মি.মাহমুদ! যে অতীতের জন্য আপনি এভাবে আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছেন।
-সব ক্ষতিপূরণ কি আমার ভালোবাসা দিয়েও পূর্ণ হবে না?
-ভালোবাসা? সে তো আমার একার ভাগ নয়! আপু সুস্থ হলে আমায় চলে যেতে হবে।
-কে বলেছে?
-এটাই বাস্তব।
-কথা দিচ্ছি সব সময় তোমার বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াবো।
-আর আপু? মেনে নিবে আমায়?
-হয়তো! হয়তো না। তবুও আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না। অনামিকা যদি ডিভোর্স চায় আমি দিয়ে দিবো কেননা শুধুমাত্র আমাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছিলো মোট কথা কাবিন হলেও বিয়ে বাতিল করা যায়।
.
-বোন হয়ে বোনের সংসার ভাঙবো?
-স্বামী-সংসার দিয়ে দিবে?
-আমার কিছু দিতে হবে না! সময় হলে আপনারা কেড়েই নিবেন।
.
.
কথা শেষে অতসী জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর বরযাত্রী আসবে। শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। চারিদিকে মরিচবাতির আলোর ঝলকানি।মেয়েটা হাজারো স্বপ্ন, গায়ে হলুদের গন্ধ নিয়ে অপেক্ষা করছে।
অতসী স্বপ্ন দেখতো একদিন দিহান এভাবে এসে নিয়ে যাবে কিন্তু যেদিন দিহানের জীবনে রাইমা চলে এসেছে সেদিন থেকে দিহান কে মনে করতে চায় না। অনেকদিন হলো মনেও পড়ে না। হয়তো মি.মাহমুদ ধীরেধীরে জায়গা করে নিচ্ছে মন,মস্তিষ্কে।
একটা মানুষ! সবসময় তোমার আশেপাশে থাকলে মানুষটার প্রতি তোমার আবেগ,অনুভূতি, মায়া জন্মাবে। এটা হিউম্যান সাইকোলজি। তাইতো বলে কায়া দেখলে মায়া বাড়ে।
.
.
সারাদিন বাহিরে কাটিয়ে সবে মাত্র দিহান বাসায় ফিরেছে৷
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাইমা চিৎকার করে উঠলো।
.
-এসব কি?
-চিল্লাচ্ছো কেনো? কি হয়েছে?
-ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে, পায়ে জুতো পড়ে কেউ বিছানায় ঘুমায়?
-আমি ঘুমাই! তোমার সমস্যা?
-হ্যাঁ! কারণ পরিষ্কার তো আমাকে করতে হয় না?
-তো করো না! মেইড কি ঘুম পারতে রেখেছি?
-প্যান প্যান বাদ দিয়ে উঠুন। ফ্রেশ হয়ে আসুন। তোয়ালে পড়ে বের হবেন না।
.
দিহান এই পর্যায়ে উঠে বসে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-মানে?
-আপনি তোয়ালে পড়ে বের হবেন না । তাই বলেছি।
-কেনো? কন্ট্রোল হয় না বুঝি?
-হ্যাঁ! তাই। এখন জলদি যান তো।
.
.
দিহান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলো রাইমা হালকা জলপাই রঙের শাড়ি পড়েছে, চুলগুলো ছাড়া। হালকা সাজগোজ৷ দিহান কে দেখে দিহানের দিকে পাঞ্জাবি বাড়িয়ে দিলো রাইমা।
.
-কোথাও যাচ্ছো তুমি?
-আমি না আমরা। নিন পড়ে নিন।
-কোথায় যাবো?
-বেড়াতে!
-আমার মোটেও এনার্জি নেই ড্রাইভ করার মতো।
-আপনি কি রিক্সাচালক? আপনি কেনো চালাবেন?.
-আমি রিক্সায় উঠিনা। কেমন খোলামেলা, মনে হয় ঠাস করে পড়ে যাবো।
-গেলে যাবেন। আর আমি আছি তো এই যে শাড়ির আঁচল! বেধে রাখবো আপনাকে। পড়তে দিবো না।
.
.
রাইমার কথায় না পেরে দিহান বেরিয়ে আসে। আজ পুরো শহর ঘুরবে রিক্সায়৷ মুক্তো বাতাসে কিছুক্ষণ বিচরণ করলে ক্ষতি কি?
.
-পরের শিখানো বুলি বেশ তো বলছো! কেমন আছে তোমার বান্ধুবী?
.
দিহানের এমন প্রশ্নে হয়তো রাইমার চমকানো উচিৎ ছিলো তবে খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো।
-ভালো।
-ওর তো ফোন নেই! যোগাযোগ হলো কিভাবে?
-আপনার বন্ধুর নাম্বার দিয়ে
-কেমন আছে আমার লেডি? সায়ান কি এখনো মারে?
.
খুব নির্লিপ্ত ভাষায় জিজ্ঞেস করলো দিহান।
.
-ভালো আছে৷ না এখন স্বাভাবিক সব।
-কিছু বলেছে অনামিকা সুস্থ হলে কি করবে? এক বার ভেবে দেখেছে? কেনো পড়ে আছে?
-আর যাই করুক আপনার কাছে ফিরবে না। হয়তো গলায় কলসি বেধে নদীতে লাফ দিবে তবুও ফিরবে না।
কারণ আমি! আমার সংসার সে নষ্ট করবে না।
আমি আপনার লেডির জায়গা নয় আপনার জীবনে রাইমার জায়গা চাইছি। একটু সাহায্য করুন কারণ আমার হাসিকান্নার মাঝেও আপনার লেডি নিজের অনুভূতি খুজে বেড়ায়।
-আমাকে কিছু সময় দাও! আমি যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! অবশ্যই তোমাকে অধিকার দিবো কিন্তু প্লিজ আশা করি বুঝবে।
.
রাইমা কথা না বাড়িয়ে নিজ থেকে দিহানের হাত খুব শক্ত করে ধরে কাধে মাথা এলিয়ে দিলো।
হোক না দেরি তবুও মানুষটাকে ছাড়া যে এখন চলছে না। অধিকার মাঝেমধ্যে আদায় করে নিতে হয়। কে আগে এগিয়ে আসবে এই ভেবে কুয়াশার আড়ালের সূর্যকে তো প্রত্যাখান করা যায় না।
.
.
বিয়ে বাড়ির সব কাজ শেষে সবে মাত্র অতসী বিছানায় গা এলিয়েছে। সায়ান ব্যস্ত অতসীর হাত নিয়ে আঁকিবুঁকি করতে।
আচ্ছা? মেয়েদের হাত এত নরম হয় কেনো? মমতাময়ীর হাত?
কে বলেছে মমতাময়ীর হাত? এগুলো রাক্ষসীর হাত! এত বড়বড় নখ! মনে মনে কথাগুলো বলেই মুচকি হাসলো সায়ান। ইতিমধ্যে
অতসী তখন গভীর ঘুমে। বেড সুইচ টিপে লাইটস অফ করে দিলো সায়ান।
তেনাদের ভয়ে তো অতসী আগে থেকেই কাছাকাছি। খুব দ্রুত ঘুমের সাগরে ডুব দিলো সায়ান।
.
রাত তখন বেশ! বারবার কল আসছে সায়ানের ফোনে৷ ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে ইফাদ কল দিয়েছে।
.
-ইফু বল!
-তুই কি এখন আসতে পারবি?
-কেনো?
-অনামিকার অবস্থা ভালো না। রেসপন্স খুব কম। মনে হচ্ছে এটাক হয়েছে। আমি ওকে হস্পিটালাইজড করছি। যে কোন কিছু হতে পারে৷ পারলে জলদি আয়।
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি নামবে।
সায়ানের বুকে চুপটি মেরে ঘুমিয়ে আছে অতসী।
কিন্তু সায়ান তখনো ইফাদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।
এত রাতে অতসীকে নিয়ে ফিরে যাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। তাছাড়া এলাকায় পানি দিন দিন বাড়ছে। যেতে হলে নদীর ধারের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ্! না করুক যদি কিছু হয়?
সায়ান একা থাকলে হয়তো বেরিয়ে যেতো কিন্তু অতসীর জন্য মোটেও রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। এদিকে অনামিকার জন্য খারাপ লাগছে। মেয়েটা খুব ছোট বয়সে সব হারিয়েছে কিন্তু অনামিকা অতসী দুজনের কথা একত্রে মনে হলে একটা ধোয়াশার সৃষ্টি করে। দুটো মেয়েকে খুব কাছে থেকে দেখেছে কিন্তু অনামিকার বর্ণনার অতসীকে আজ অবধি সায়ান খুজে পায়নি।
.
.
সবে মাত্র চোখ লেগেছিলো সায়ানের। সাত-পাঁচ ভেবে পুরো রাত ঘুমোতে পারেনি। নিজেকে বড্ড স্বার্থপর মনে হচ্ছে। এক জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছিলো।
অতসীর প্রতি রাগ, জেদ, অনামিকা কে বিয়ে, এক্সিডেন্টের পুরো বিষয়ে অতসীর দোষ ধরা, দিহানের থেকে অতসী কে আলাদা তারপর অতসীকে বিয়ে।
সবটা জঘন্য খেলা ছিলো কিন্তু এর মধ্যে একটা সত্যি ছিলো। সত্যিটা হলো অতসী কে সায়ান ভালোবাসে। যতটা ভালোবাসা যায় তার থেকে বেশি ভালোবাসে।
.
.
অতসীর হাত সায়ানের বুক থেকে সরাতেই সায়ান খুব শক্ত করে হাত ধরে ফেললো। অতসী চোখ খুলে তাকিয়ে সায়ানকে একপলক তাকালো। সায়ান কিছু না বলে খুব গভীরভাবে অতসীর কপালে চুমু দিলো। দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। এই বুঝি হারিয়ে যাচ্ছে।
.
অতসী নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।
সায়ান আজকে কোন ফাজলামো করছে না৷
এটা অতসীর জন্য চিন্তার বিষয়। কারণ
একজন মানুষ যখন অনবরত কাউকে জ্বালাতন করে আবার হুট করে জ্বালাতন বন্ধ করে দেয় ঠিক তখন তুমি মানুষটার জ্বালানো প্রচন্ডরকম ভাবে অনুভব করবে।
কেনো চুপচাপ হয়ে আছে কারণ জানতে চাইবে কিন্তু পারবে না। অস্বস্তিতে পার হবে সময়।
ঠিক এমন হচ্ছে অতসীর৷
খুব দ্রুত সায়ান অতসীকে তৈরী হতে বলে বেরিয়ে যায়।
.
ফিরে আসার সময় বড়মা অতসীর হাতে একজোড়া বালা পড়িয়ে দিয়ে বলেন
-এটা আমার ছিলো। এর বয়স দুশো বছরের বেশি হবে। আমিও উপহার পেয়েছিলাম সাথে একটি কথা ।
.
-সম্পর্কে মান-অভিমান স্বাভাবিক। যদি কখনো খুব অভিমান হয় তখন কিছুটা দূরে সরে গিয়ে নিজেকে সময় দিও। সম্পর্ক কে সময় দিও কিন্তু কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবো না।
.
.
সকাল থেকে রাইমা বেশ কয়েকবার বমি করেছে। কপালে ভাজ ফেলে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে দিহান।
প্রথমে যা মনে হচ্ছে যদি এমন হয়?
সম্পর্ক এখনো এতটা মজবুত হয়নি। এক রাতের ভুল কি সারাজীবন এই মেয়েকে কষ্ট দিবে?
ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে দিহানের।
.
কথা না বাড়িয়ে রাইমাকে নিয়ে হস্পিটালে ছুটলো দিহান।
.
.
রাতেই অনামিকাকে এডমিট করানো হয়েছে। অতসীর মা সাথেই। অতসীর বাবা চল্লিশ দিনের জন্য কোন এক মসজিদে জামাতে গিয়েছেন। উনাকে জানানোর সুযোগ হয়নি।
সায়ান অতসীরা হস্পিটালের সামনে।
অতসীর চোখমুখে এখন চিন্তা ফুটে উঠেছে।
সকাল থেকেই মন কু ডাকছিলো কিন্তু অতসী মনে করেছিলো সায়ান চুপচাপ তাই এমন লাগছে।
লিফটে উঠে পরিচিত ছয়তলার জন্য বাটন প্রেস করলো সায়ান।
অতসী খুব শক্ত করে ওর হাত ধরে আছে।
সায়ান বেরিয়ে যাওয়ার আগে শুধু এটাই বললো
- অতসী! যাইহোক না কেনো কখনো এই হাত ছাড়ার চেষ্টা করো না।
.
.
অনামিকার কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই তবে দূর থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে অনামিকাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
ইফাদের সাথে কথা বললে জানতে পারলো
-এক্সিডেন্টে ব্রেইন অনেকটা ক্ষতির স্বীকার হয়েছে৷ ইদানীং ইম্প্রুভ করছিলো কিন্তু কাল একটা মাইনর এট্যাক এসেছে। এটা খুব খারাপ ভাবে ব্রেইনে ইফেক্ট করেছে। শ্বাস চলছে কিন্তু নিজ থেকে নেওয়ার ক্ষমতা অনামিকার নেই।
.
.
অতসী এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আইসিইউ এর বাহিরে দাঁড়িয়ে অনামিকা কে দেখছিলো। ইফাদ শুধু সায়ান কে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে। অতসী অনামিকা কে এই অবস্থায় দেখলে কান্না করবে হয়তো ভয় পাবে৷
তাই অতসীকে যেতে দিচ্ছে না। হঠাৎ অতসী চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।
ইফাদ কান্নারত অতসীকে কেবিনে নিয়ে এসে বসিয়ে পানি এগিয়ে দিলো।
.
-অতসী! শান্ত হও! তুমি না অনেক লক্ষী একটা মেয়ে? আপুরে কান্না করিস না।
.
অতসী টেবিলে মাথা রেখে কান্না করেই চলেছে৷ আরো দুটো মানুষ সেখানে ছিলো। অতসীর জন্য এইদুটো মানুষ যে কাঁদতে পারে।
.
মাথায় কারো স্পর্শ পাওয়াতে চোখ তুলে তাকায় অতসী। রাইমা কে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে।
অতসীর হঠাৎ কান্নায় রাইমা নিজেও কাঁদছে।
.
-জানিস তো রাই! আমি না খুব স্বার্থপর রে। কাল আমি কি চিন্তা করেছি জানিস? আমি চিন্তা করেছিলাম আপু যদি আর ঠিক না হতো?
আজকে দেখ? বাবা সত্যি বলে আমি খুব খারাপ রে। আমার জন্য এতকিছু হয়।
.
অতসীর কান্নায় হিচকি উঠে গেছে। ইফাদ রাইমা থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। এক সময় দিহান এসে রাইমার থেকে অতসীকে ছাড়িয়ে নিয়ে অতসীর দুহাত ধরে হাটুতে ভর দিয়ে মাটিতে বসে।
শক্ত করে দুহাত ধরে বলতে থাকে
-মাই লেডি! কান্না করো না। প্লিজ। সহ্য হচ্ছে না। তোমার চাওয়া তে কিছুই হয়নি। প্লিজ শান্ত হও।
.
অতসী আলোর বেগে হাত ছাড়িয়ে নেয়।এত জোড়ে টান দেওয়াতে বড়মায়ের দেওয়া হাতের বালায় লেগে অতসীর হাত খানিকটা কেটেছে। সেদিকে খেয়াল না করে বলতে থাকে
.
-কষ্ট? সহ্য? এসব কোথায় ছিলো দিহান যখন রাইমা কে বিয়ে করলেন? তখন আমার কথা মনে হয়নি? না আমি তো খারাপ মেয়ে, লোভী মেয়ে আজ আমার জন্য আপনার কষ্ট হওয়ার কোন মানেই হয় না।
যদি সত্যি ভালোবাসতেন তাহলে আমার জন্য অপেক্ষা করতেন, জানতে চাইতেন কি হয়েছে? না! আপনি করেন নি এমন। আপনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে এনেছেন যখন সবটা জানলেন তখন বললেন আমাকে নিয়ে চলে যাবেন। রাইমা কে ছেড়ে দিবেন?.
কি মনে করেন আপনারা আমাকে? আর এই যে আমার দোস্ত! আমার কলিজার টুকরা! সে কি বললো?. স্বামী ত্যাগ করবে আমার জন্য.... হাহ্! আমি কত অভাগী! সবাই শুধু দান করতে চায়।
.
বাহিরে থেকে অতসীর চিৎকার শুনে সায়ান দ্রুত কেবিনে প্রবেশ করে। অতসীকে পাগলের মতো প্রলাপ করতে দেখে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।
দিহান চুপচাপ তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।সবাই হয়তো ভেবেছিলো অতসী শান্ত হবে কিন্তু অতসী আরো রেগে যায়৷
সায়ান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। না জানি এত শক্তি কোথায় পাচ্ছে সে আজ!
.
-আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না মি.মাহমুদ! আপনার জন্য আজ এই অবস্থা। আপনি কেনো এসেছেন আমার জীবনে? আমি তো ভালোই ছিলাম। যেমন ছিলাম রাতে অন্তত শান্তির শ্বাস নিতে পারতাম কিন্তু যখন আপনি এলেন সব বদলে দিয়েছেন। আমার সব শেষ! সব।কি মনে করেছেন কি? আমার কোন আত্নসম্মানবোধ নেই? কিছু বলিনা, চুপচাপ থাকি তাই আমার কোন অনুভূতি নেই? যখন যার যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করবেন?কেনো আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না?
আমি আপনাকে কোন দিন মাফ করবো না। কোন দিন না। আপনাদের কাউকে কোন দিন মাফ করবো না।
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
মানুষের সব কিছুই ছোট ছোট।
জীবন ছোট, ভালবাসাবাসির দিন ছোট,
শুধু দুঃখের দিন কাল দীর্ঘ !
হুমায়ূন আহমেদ এর কথাটা হয়তো সত্যি । অতসীর জন্য সুখের সময়কাল গুলো সত্যি খুব ছোট। সবে মাত্র সুখের গন্ডিতে পা রেখেছিলো। সুখ হয়তো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
.
পাগলের প্রলাপ করে অতসী একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। সায়ান বা দিহান! কেউ তুলেনি। ইফাদ দুহাতে আকড়ে তুলে কাউচে শুইয়ে দিয়েছে।
ব্লাড প্রেশার একদম লো। এত কম ব্লাড প্রেশারের জন্য মানুষের বেশ ক্ষতি এমনকি এট্যাকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাইমা ঠাই বসে আছে অতসীর পাশে। অতসীর মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে অতসীর মা।
.
.
-বাবা তুমি তো ডক্টর! এমন কিছু দেও আমার মেয়েকে যেনো ও মরে যায়। ওর মতো মেয়ে বেঁচে থেকে কি করবে?
আজ সত্যি মনে হচ্ছে ওর বাবা ঠিক বলে
ও আসলেই কুফা। না হলে অভাগীর কপাল যেদিকে যায় পুড়তে পুড়তে কেনো যায়? তোমরা ওকে মেরে ফেলো। আমি তো মা! সহ্য করতে পারবো না। আমি নামাজে বসবো বাবা। আল্লাহ্ এর কাছে এই প্রথম আমি আমার মেয়ের মৃত্যু চাইবো। তোমাদের সুখের জন্য। শুনেছি মা-বাবা আল্লাহ্ এর দরবারে সন্তানের জন্য যা চায়, মুখ ফুটে বলে আল্লাহ্ তালার ফেরেশতা না কি সাথে সাথে আমিন বলে। এতদিন ওর বাবা চাইতো। আজ মা হয়ে আমিও চাইছি
ওকে মেরে ফেলো। বেঁচে থাকলে শুধু অবহেলায় পড়ে থাকবে।
.
কথাগুলো শেষ করে অতসীর মা দ্রুত উঠে চলে যায়। অতসীর মাথা ওর মায়ের কোলে ছিলো, উঠে যাওয়াতে অতসী কাউচের থেকে কিছুটা নিচে পড়ে যাচ্ছিলো।
রাইমা আগে দিহান হাত পাতে। দিহানের হাতে অতসীর মাথা এলিয়ে আছে। চুলগুলো পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
এক হাতে অতসীর চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছিলো দিহান।
.
অতসীর চেহারার পরিবর্তন বেশ স্পষ্টত। চোখ, মুখ বেশ শুকনো। চোখের কার্ণিশে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
কি এমন হতো কিছু দিন অপেক্ষা করলে?
অতসীর কান্নামুখ কখনো দিহানের পছন্দ ছিলো না।
সে বার যখন অনামিকা-সায়ানের বিয়ের জন্য গিয়েছিলো গ্রামে! তখন অতসীর বাবা ওকে বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে বকেছিলো, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলো।
তখন অতসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিলো পুকুরের পানির দিকে।
বিকেলে যখন অনামিকার গায়ে হলুদ শুরু হলো
অতসীর বাবা সবার সামনে অতসীকে ডেকে বলেছিলো রীতিনীতি শেষ না হওয়া অবধি অতসী যেনো বাড়িতে না আসে।
টকটকে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পড়ে অতসী হয়তো এসেছিলো সবার মতো হলুদে থাকতে কিন্তু ওই যে! ওর বাবা তো মানে অতসী কুফা। শুভ কাজে থাকতে নেই।
.
অতসী সে বিকেল পুরোটা গ্রামের বাড়ির দিঘির পাশে বসে ছিলো। অনুষ্ঠান শুরু হলো সন্ধ্যেবেলা। মেয়েটার তো আবার তেনাদের ভয়!
ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা অতসীকে দেখে প্রথম বার প্রেমে পড়েছিলো দিহান। শুনেছি
করুণা থেকে ভালোবাসা জন্মায়। হয়তো অতসীর প্রতি দিহানের করুণা ছিলো।
.
-এখানে কি করছেন?
অতসী একবার দিহানের দিকে তাকিয়ে আবার পানির দিকে তাকালো।
দিহান অতসীর পাশে বসে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে বললো
.
-বাহ্! মানতেই হবে আপনি তো খুব সাহসী মেয়ে৷ না হলে এই ভর সন্ধ্যে বেলা কেউ এভাবে দিঘির পাশে বসে থাকে? চলেন! বন্ধুর শালী।
.
অতসী তবুও চুপ। বাড়ি গেলে কথা শুনতে হবে। আর কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শেষ হলেই মা ডাকতে আসবে।
.
-কি হলো চলুন! আপনার বোনের গায়ে হলুদ আর আপনি......
-আমাকে বাড়ির কোন শুভ কাজে থাকতে নিষেধ আছে।
-কেনো?
-আমার জন্মের সময় আমার ফুপু মারা যায়,তাছাড়া আমি কোন কাজে থাকলে সে কাজ ঠিকঠাক হয় না।
-কি সব কুসংস্কার! আচ্ছা তবে অন্য কোথাও গিয়ে বসুন। যদি ভূতে নিয়ে যায়?
.
অতসী এবার শব্দ করে কান্না করে দিলো। দুহাতে শাড়ির আঁচল শক্ত করে আকড়ে ধরে বললো
.
-আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই।
থাকলে আমি অনেক আগেই চলে যেতাম। বিশ্বাস করুন! আমি সত্যি থাকতাম না। আমার তেনাদের বড্ড ভয় করে। যদি আমাকে মেরে পানিতে ফেলে রেখেও যায় আমার লাশ কেউ পাবে না। আর এখন বাড়ি ফিরে গেলে আপুর অনুষ্ঠানে কিছু হলে আবার প্রমাণ হবে আমি কুফা।
.
দিহানের প্রচন্ড খারাপ লাগছিলো কিন্তু কিছু করার নেই। অতসীর পাশে বসে চুপচাপ দেখছিলো। প্রায় ঘন্টাখানেক পর অতসীর ডাক পড়লো বাড়ি ফিরে যেতে। অতসী উঠে দাড়াতেই দিহানের পায়ের নিচে থাকা শাড়ির আঁচলের এক কোণায় টান পড়লো। হুড়মুড়িয়ে দিঘির পানিতে পড়ে যাচ্ছিলো। দিহান একহাতে অতসীকে টেনে ধরে।
অভয় দিয়ে দিহান বলেছিলো
-ভয় পাবেন না মাই লেডি! আমি তো আছি। বিশ্বাস করে দেখুন আমি আপনার হাত ছাড়বো না।
.
.
কারো ধাক্কায় দিহান অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। ধাক্কাটা আর কেউ না সায়ান দিয়েছে।
দিহান কে সরিয়ে সায়ান অতসী কে কোলে তুলে নেয়।
পা বাড়ায় দরজার দিকে। দিহান বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করে
.
-সায়ান এই অবস্থায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
-বাসায়।
-এখন ওর ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।
-ও এতটা অসুস্থ না যে হস্পিটালাইজড করতে হবে।
-লিভ হার সায়ান! লিভ মাই লেডি!
-নো সি ইজ মাই ওয়াইফ! এন্ড ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ হার!
.
দিহান এই পর্যায়ে বেশ রেগে যায়। বলতে থাকে
.
-কয় বউ লাগে তোর? হ্যাঁ? আজকে তোর ওয়াইফ! যেদিন মেরেছিস সেদিন? অত্যাচারের সময় মনে ছিলো না? আজকে হঠাৎ তোর ওয়াইফ হয়ে গেলো?আজ যদি বলি তোর জন্য লেডির এই অবস্থা! তুই কেনো সব শেষ করে দিলি? আমার সাথে কি ভালো ছিলো না? ছিলো তো। আমরা বিয়ে করে নিতাম। ওকে নেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলাম কিন্তু ফিরে আসার আগেই তুই সব শেষ করে দিয়েছিস।
.
দিহানের দিকে তাকিয়ে সায়ান খুব শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো
.
-আমার বুকে অতসী কে দেখে তোর যেমন কষ্ট হয়, ঠিক তেমন তোর পাশে অতসীকে দেখেও আমার কষ্ট হতো।
অতসী কে তুই যখন লেডি বলে ডাকতি তখন মনে হতো আমি তোর ঠোঁট কেটে ফেলি।
তোর শার্টে যখন অতসীর চোখের কাজল লেগে থাকতো আমার কি ইচ্ছে হতো জানিস?
তোর হৃদপিণ্ড বরাবর ছুড়ি দিয়ে আঘাত করি।
তোর জন্য অতসীর হাসি, অপেক্ষা সব আমাকে হিংস্র করে তুলতো।
কারণ অতসী শুধু আমার।
এই যে ওর দুহাত! এই দুহাত শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য, এই চোখের কাজল,ঠোঁটের লিপস্টিক, শাড়ির আঁচল সব শুধু আমার জন্য। অথচ তুই কি করতি? তুই আমার সামনে অতসীর আঁচলে মুখ মুছে নিতি। এসব বড্ড লাগতো। পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছিলো আমায়। তাই তো........
.
- সায়ান! তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? তোর চিকিৎসা প্রয়োজন! ইফাদ ওকে মনোবিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ করতে বল।
- আমাকে যেতে দে দিহান। অতসীর রেস্ট প্রয়োজন।
- এত যখন অতসী কে ভালোবাসিস তাহলে অনামিকা কে বিয়ে কেনো করেছিলি? না কি বিয়ের পর......
- তুই ভালোবাসার ৫ মাস ১৭ দিন ২৩ ঘন্টা আগে থেকে আমি অতসীকে ভালোবাসি।
-তাহলে কেনো এত কষ্ট দিচ্ছিস? জানিস না ভালোবাসাকে মুক্ত রাখতে হয়?
-আমার ভালোবাসা আমাতেই আবদ্ধ থাকবে। অতসীকে বিয়ে আমি প্রতিশোধ নিতে করেছিলাম। যে মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে না বলে আমার মা কে অপমান করেছিলো সে মেয়ে কিভাবে আমার বন্ধুর প্রেমে পড়লো? আমাকে ভালোবাসতে আমি ওকে বাধ্য করেছি।আশা করছি উত্তর পেয়ে গেছিস।
.
.
পিছন থেকে অতসীর মা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো
.
-তোমার বাড়ি থেকে অতসীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসেনি, এমনকি অতসী তোমার মা কে অপমান করেনি। করেছিলো তোমার প্রথম স্ত্রী অনামিকা।
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
কিছুক্ষণ আগে একজন নার্স এসে রাইমার রিপোর্ট দিয়ে গিয়েছে।
রিপোর্ট নেগেটিভ।নরমাল ফুড পয়েজেনিং। শুধু শুধু দিহান এত চিন্তা করছিলো। হয়তো মনের কোণে এখনো আশার প্রদীপ ক্ষীণ আলো দিচ্ছে। অতসী ফিরবে তাই হয়তো বাবা হওয়ার সুখের খবর থেকেও নিজেকে বঞ্চিত রাখতে চাইছে।
.
.
খুব সাবধানে হাতের চুড়ি সহ বালা জোড়া খুলে নিলো রাইমা। হাত ড্রেসিং করছে। ইফাদ। অতসীর মা চুপচাপ বসে আছে। মেয়ের জীবনের থেকে অতীত বড় নয়।
হ্যাঁ! আজ সে বলবে কিন্তু অতসীর ট্রিটমেন্ট বেশি প্রয়োজন ছিলো।
সায়ানের বুকেই মাথা এলিয়ে আছে অতসী। জ্ঞান ফিরেছে, কিন্তু সায়ান ছাড়ে নি।
অদ্ভুত! দুই বন্ধুর কাছে এই মেয়েটা যেনো একটা পুতুল মাত্র।
দিহান অতসীকে সায়ানের কাছে থাকতে দিতে নারাজ অথচ সায়ানের অধিকারের কাছে দিহান নিরুপায়।
.
জ্ঞান ফিরলে সায়ান অতসীর সামনে জুসের গ্লাস এগিয়ে দিলে দিহান বাধা দিয়ে বলে
-লেডি কখনো জুস খায় না৷ সি জাস্ট হেইট ইট। স্ত্রী বলিস আর এটা জানিস না?
.
কথা শেষ করেই দিহান অতসীর দিকে ডাবের পানি এগিয়ে দেয়। এ পর্যায়ে সায়ান বলে
-তুই কেমন প্রেমিক পুরুষ? প্রাক্তন প্রেমিকা ডাবের পানি খায় না! তুই এটাও জানিস না?
.
ইফাদের মনে হচ্ছে দুই শালার মাথা ফাটিয়ে দিতে। শুরু করেছে টা কি? ন্যাকামো হচ্ছে। রাইমার দিকে তাকালো ইফাদ। মেয়েটার মনে না জানি কি চলছে। অদ্ভুত! রাইমা হাসছে? এ কেমন মেয়েরে বাবা!
স্বামী অন্য মেয়ের জন্য এতটা আবেগী অথচ এই মেয়ে মজা নিচ্ছে?
সব কয়টা পাগল।এদের মাঝে আমি থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো।
এসব মনে মনে ভাবছিলো ইফাদ।
হাতের গ্লাস এগিয়ে দিলো অতসী দিকে। অতসী তিন শ্বাসে পুরো এক গ্লাস গ্লুকোজ মেশানো পানি খেয়ে নিলো।
.
অতসী একটু সুস্থ। সায়ানের বুকের সাথে লেগে আছে একদম।সায়ানের পাশে বসেছে রাইমা।
অপর পাশে দিহান বসেছে, সাথে ইফাদ। অতসীর মা আলাদা বসেছে।
কিছুটা শ্বাস নিয়ে অতসীর মা বলা শুরু করলো........
.
.
বছর দেড়েক আগের কথা৷ অনামিকা, অতসী কে নিয়ে আমি আমার বাবার বাড়ি গিয়েছিলাম।
একদিন বিকেলবেলা এক ভদ্রমহিলা আসে৷ সম্পর্কে আমার চাচাতো বোনের ননদ। বেশ মার্জিত ভাষায় কথা বলছিলেন,পোশাক, ব্যবহার,আচরণ সব অমায়িক ।
উনি উনার ছেলের জন্য আমার মেয়েকে দেখতে এসেছেন। প্রথমে অতসী মনে করলেও পরে উনি বলেন আমার বড় মেয়ে অনামিকার জন্য এসেছে। সবাই তো ওদের দু বোন বলেই জানে।
অনামিকাকে দেখে বেশ পছন্দ হয়।
ছেলে কি করে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেছিলেন
.
-হালাল পথে যা ইনকাম হয় আরকি। ছোট একটা বিজনেস আছে। বাবা ছেলে মিলে তাই দেখাশুনা করে।
ছেলে সন্তান একটাই আমার। আমাদের যা আছে সব ওর।
.
.
কিছুক্ষণ পর অনামিকা বেশ তেতে উঠে। কারণ ছোট ব্যবসায়ী হয়ে অনামিকা কে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস হয় কি করে? অনামিকা রুপে রূপবতী, গুণে গুণবতী। অবশ্যই অনেক ভালো ফ্যামিলি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সাহস কি করে হয় এই মহিলার এসব বলার?
.
এমন অনেক কটু কথা সেদিন অনামিকা ভদ্র মহিলা কে শুনিয়েছিলো। ভদ্র মহিলা চুপচাপ শুনে শুধু উত্তর দিয়েছিলো
-তুমি একবার আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ করে দেখো!
.
অনামিকা কোন কথা না বলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়।
.
ভদ্রমহিলা এক ঘর মানুষের সামনে অপমানিত হয়। হয়তো উনি সেদিন মনে প্রচন্ড আঘাত নিয়ে বেরিয়েছিলো।
.
.
এটুক বলে থামলো অতসীর মা। অতসী সায়ানের বুকেই মাথা রেখে শুনছিলো সব। হঠাৎ মনে হচ্ছে মি.মাহমুদ এর হৃদ স্পন্দন অনেকটা বেড়ে গেছে।
ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে, সাথে মাথা ফেটে যাচ্ছে এমন অনুভূতি হওয়া স্বত্বেও সায়ানের হাতে আলতোভাবে হাত রাখলো অতসী৷ সায়ান নিজের মধ্যেই ডুবে ছিলো। অতসীর স্পর্শে নিজেকে সামলে নিলো।
অতসীর দুহাত নিজের হাতে বদ্ধ করে জিজ্ঞেস করলো
.
-এটা কি করে সম্ভব? মা কে তো আমি অতসীকে দেখিয়েছিলাম। ইফাদ সেদিন আমার সাথে ছিলো। তাহলে মা কেনো অনামিকার সাথে বিয়ের কথা বলতে গেলো?
.
সায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগে ইফাদ বললো
-তাহলে আন্টি অতসীর কথা বলতো? মেয়ের বোন অনেক ভালো! তুই মেয়ের বোনকে যদি বিয়ে করতে চাস তাহলে এনে দিবো?
.
অতসী ধীর গলায় বলে
.
-আমি জানতাম না উনি আপনার মা! সেদিন নদীর পাড়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম আন্টিটা হাটতে পারছে না।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ঈশারায় ইনহেলার বের করে দিতে বলে।উনার অবস্থা সত্যি খারাপ ছিলো, উনি নিজ থেকে বের করতে পারছিলেন না। দ্রুত স্প্রে দেওয়ার পর বুঝলাম এটা হার্ট প্যাশেন্টদের দেওয়া হয়।
কিছুক্ষণ পর উনি কিছুটা সুস্থ হলে পাশের বাড়িতে নিয়ে পানি খাইয়ে, হাত মুখে পানি দিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন উনি আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমি জানতাম না এত কিছু ততক্ষণে বাড়িতে এত কিছু হয়ে গেছে।এটাই ছিলো আন্টির সাথে আমার প্রথম দেখা। দ্বিতীয় বার দেখা হয় সরাসরি আপনাদের বিয়েতে।
.
.
দিহান এতক্ষণ চুপচাপ ছিলো। এক সময় বলে উঠলো
- এত কথার মাঝেও কথা কিন্তু সেই থেকেই গেলো। অনামিকার এত সমস্যা থাকলে কয়েকদিন পর কেনো সে সায়ানের সাথে দেখা করলো এবং, এবং, এবং কেনো সব দোষ অতসী কে দিলো?
এসবের উত্তর কিন্তু শুধু অনামিকা নিজে দিতে পারবে। তাছাড়া অন্য কেউ নয়। এজন্য হলেও অনামিকা কে আমার সুস্থ চাই ইফাদ! এই ধোয়াশার অন্ত একমাত্র অনামিকার সুস্থতায় কাটবে।
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ ৩৩
.
.
নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় ডুকরে কেঁদে উঠলেন আমিনুর সাহেব। ইদানীং মেয়েটার জন্য মনটা বেশ ছটফট করছে।
বোনের একমাত্র শেষ অংশ এই মেয়েটা। কখনো কোন কিছুতে কমতি রাখেনি।
মা-বাবা দুটোই হয়েছে। এতিম মেয়েটা না হলে কোথায় যেতো?
সবাই এই মেয়েটাকেই কেনো এত কষ্ট দেয়?
"" আল্লাহ্!এই জীবনে যদি আমি কোনদিন কোন ভালো কাজ করে থাকি, কারো একটু কাজেও সাহায্য করে থাকি একটু পূন্যের বিনিময়ে হলেও তুমি আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও। ""
.
মোনাজাতে কথাগুলো বলছিলো সাথে চোখের পানি ফেলছিলো আমিনুর সাহেব।
.
নামাজ শেষে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। হুজুর সাহেব হাদিস বলছে।
.
হযরত মুসা (আ:) ছিলেন অনেক বেশি কৌতুহলী ।তিনি যে কোন বিষয় তার মনের মতো জবাব হওয়ার আগ অবদি আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করতেই থাকতেন ।তো একবার হযরত মুসা (আ:) আল্লাহকে প্রশ্ন করলেন_
হে আমার রব আপনি যখন বান্দার উপর খুশি হন তখন কি করেন?
আল্লাহ সুবাহানা তায়ালা বললেন _ "আমি তখন তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি । "
এরপরে তিনি আবার প্রশ্ন করলেন যে _ এরচেয়ে যখন বেশি খুশি হন তখন কি করেন ? ?
মহান পরওয়ারদেগার বললেন _ " তখন আমি তোমাদের ঘরে মেহমান দেই । "
তো মুসা (আ:) পুনরায় প্রশ্ন করলেন _
তাহলে আপনি যখন সবচেয়ে খুশি হন বান্দার উপর তখন কি করেন ? ?
মহান দয়াময় আল্লাহ সুবহানা তায়ালা বললেন _ " হে মুসা শুনে রাখো আমি যখন বান্দার উপর সবচেয়ে বেশি খুশি থাকি তখন তোমাদের ঘরে কন্যা সন্তান দেই ।
.
কন্যা সন্তান! হ্যাঁ! আমিনুর সাহেবের মন এখন অতসীর চিন্তা করছে। মেয়েটা সব সহ্য করে, অনেক অত্যাচার তো নিজেই করেছে কিন্তু এভাবে রাগের বশে,জেদের বশে সায়ানের সাথে বিয়ে দিয়ে মেয়েটার জীবন অনিশ্চিয়তার বেড়াজালে বন্দী।
অনামিকা সুস্থ হলে অতসীর কি হবে?
এক মেয়ের জন্য আমি কিভাবে পারলাম অন্যজনের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে?
হয়তো এভাবেই শুরু হচ্ছে আমিনুর সাহেবের অনুতাপের অধ্যায়।
.
.দিহানের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে মুখে দিলো ইফাদ।
সায়ানের পাগলামো, জেদ বা যাই হোক না কেনো এগুলোর জন্য পাঁচটা লাইফে আজ অশান্তি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইফাদ বলতে লাগলো
.
-সায়ান আমাদের ছোটবেলার বন্ধু। আমরা তিনজন, আমাদের বন্ধুত্ব সবার হিংসের কারণ ছিলো। এক সাথে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। তারপর আলাদা হয়ে গেলাম কিন্তু দিন শেষে আমরা এক। জানিস তো সায়ানের জেদ৷ ও কখনো জেদ করে না কিন্তু যা চাই তা ওর চাই।কোন ভাবে নিজেকে সামলাতে পারে না। আর অতসী তো ভালোবাসা।
অতসীকে ছাড়া হয়তো ওর সব শেষ করে দিতো।
.
-জানি আমি। অতসীকে আগলে রাখবে কিন্তু আমি কি করবো?
(নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিহানের)
- এখন সময় সায়ানের পাশে দাঁড়ানো। অনামিকা নামক যে রহস্য সমাধান আগে করতে হবে।
-হ্যাঁ! কিন্তু তারপর লেডির কি হবে?
-তুই রাইমাকে ছাড়িস না। মেয়েটার তো দোষ নেই
-দোষ তো আমার লেডি লাকের ও নেই।
-তোর লেডি লাক অন্যের সহধর্মিণী। তুই অনেক ভাগ্যবান অতসীর প্রথম প্রেম তুই। কতটা ভালোবাসিস এখন প্রমাণ করার সময়। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেতেই হবে এমন তো নয়। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। তুই না হয় তাই কর!
অতসীকে, সায়ানকে সাপোর্ট দিতে হবে।
অতসী কে দুই বন্ধুর মাঝে টেনে এনে সম্পর্ক নষ্ট করিস না।
.
-আমাদের বন্ধুত্ব এতটা ঠুনকো নয় যে এভাবে ভাঙবে৷ তবে অতসীকে সায়ান কষ্ট দিলে আমি ছেড়ে দিবো না।
-সায়ান যে সাইকো লাভার! যে ছেলেটা মেয়েদের দিকে তাকায় না। সেই ছেলে একটা মেয়ের জন্য কি তুলকালাম বাধিয়েছে?
-রহস্য তো রয়েই যাচ্ছে। অনামিকা, যার জন্য তিনটা জীবন আজ অনিশ্চিত হয়ে দাড়াচ্ছে। সুস্থ হবে না?
-আশা করছি খুব দ্রুত।
.
.
অতসী ঘুমিয়ে আছে। একটা চেনা স্পর্শ! স্পর্শ সুবাস ঘিরে রেখেছে।
চোখ না খুলেই বুঝতে পারলো মায়ের বুকে ঘুমিয়ে আছে। আচ্ছা! আল্লাহ্ এখানে এত শান্তি কেনো দিয়েছে? এতটা শান্তি! এই বুকে মাথা রেখে হাসতে হাসতে চোখের পানি ফেলা যায় অভিমান করা যায়।
.
রাত ২.১৩ বাজে। সায়ান সবে মাত্র ফিরলো। অতসী কে রেখে আবার বেরিয়েছিলো। শত শত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সাথে একটা ধোয়াশাময় ভবিষ্যৎ।
অতীত না জানলে ভবিষ্যৎ শুধুই অন্ধকার।রুমে এসে ইজি চেয়ারে বসে সবে মাত্র দুচোখ বন্ধ করেছে সায়ান। আজ দুচোখে ঘুম নেই। মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে৷ মা তবে কেনো এসব বলেনি? অনামিকা অপমান করেছিলো অতসী না। এসবের উত্তর শুধুই মা দিতে পারতো। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে সায়ান।
.
অতসী চুপচাপ এসে সায়নের পাশে দাঁড়িয়েছে। সায়ান হাত ধরে বসাতে চাইলে অতসী হাত ছাড়িয়ে নেয়। সায়ান তখন দুহাতে আকড়ে ধরে অতসীর কোমর। চুপচাপ অতসীকে বসিয়ে অতসীর মাথা বুকের বা পাশে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।আজ যেনো সায়ানের হৃদ স্পন্দন একটু বেশিই। এক সময় প্রশ্ন করে.....
.
-অভিমান?
-নাহ্!
-ভালোবাসি!
-কেনো এমন করলেন?
-তোমাকে ছাড়া আমার থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না।অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।
.
-এভাবে আমাদের দু বোনের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার আপনার ছিলো না। আপনি তো অনামিকা কে ভালোবাসেন।
-সব জেদ ছিলো।
- আমার কি হবে কখনো চিন্তা করেছেন? আপু সুস্থ হলে? আমি কোথায় যাবো? সব কেড়ে নিয়েছেন। আমার বাবার ঘরে জায়গা দিবে না, এই সংসারের কোন অংশীদার আমি নই।
-এসব তোমার অতসী। এভাবে কেনো বলছো?
-আমার কি করা উচিৎ? নারীবাদীদের মতে আপনাকে সেসব ব্যবহার ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ? যা আপনি আমার সাথে করেছেন? না বড়মার কথা মতো আপনার ভুল শুধরে আগলে রাখা?জীবন কেনো গল্পের পাতার মতো হয় না? এখানে কেনো সবাই শাস্তি পায় না? কারণ জীবন গল্পের মতো চলে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন আমার মতো অনেক অতসী আছে, শুধু মাত্র সমাজের মানুষের কথার ভয়ে শত অপরাধ মুখ বুজেও সহ্য করছে। অতসীরা কেনো সমাজের সায়ানদের শাস্তি দিতে পারে না?
আপনি আমি না চাইলেও আপনি আমার স্বামী। আমার সবকিছু শুধু মাত্র আপনার জন্য কিন্তু অতীত ভুলতে পারছি না আমি।
কাল রাতেও আমি স্বার্থপর ছিলাম, আপুর কথা না ভেবে আপনাকে চেয়েছিলাম।
দিহান কে ভালোবাসা অনেকটা হারাম ছিলো কিন্তু আপনার প্রতি আমার অনুভূতি বৈধ হওয়ার পরেও আমি মানতে পারছি না।
আপুর আমানত আপনি।হয়তো দিহানের কাছে ফিরে যেতাম কিন্তু রাইমার জন্য পিছিয়ে এসেছিলাম, তারপর না চাইতেও আপনার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আপুর জন্য আমাকে আপনাকে ছাড়তেই হবে। আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করে চলে যাবো। কারণ
আমি এই বন্ধন থেকে মুক্তি চাই মি. মাহমুদ!
.
আমি ডিভোর্স চাই মি:মাহমুদ,আমি ডিভোর্স চাই...
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসীর থমথমে কান্নাজড়িত কন্ঠে ডিভোর্স চাওয়া সায়ানকে একটুও বিচলিত করলো না।
এমন চুপচাপ থাকতে দেখে অতসী মাথা তুলে সায়ানের দিকে তাকালো।
চোখ বন্ধ করে আছে।
চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। একদিনে বয়স কি বেড়ে গেলো?
দাড়ি গুলো হালকা বড় হয়েছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।
অতসীর শ্বাস সায়ানের মুখে পড়তেই সায়ান চোখ মেলে তাকালো।
অতসী আবার বলে উঠলো
.
-আমার ডিভোর্স চাই!
.
অতসীর কথায় সায়ান কোন কিছুই বললো না। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অতসীর চোখের দিকে।
সায়ানের স্থির চাহনী অতসীকে এলোমেলো করে দিচ্ছে।
.
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়ান বললো.....
-একটা কবিতা শুনবে?
- উঁহু! আমি কিছু বলেছি
-হ্যাঁ!
-কবে দিবেন? আপু সুস্থ হওয়ার পর? না কি আগে?.
.
অতসী কথা শেষ করতে পারে না। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে। অতসীর কথায় কোন কর্ণপাত করলো বলে মনে হলো না।
.
সায়ান অতসীকে কোলে নিয়েই উঠে দাঁড়ায়।পা বাড়ায় বিছানার দিকে।
.
অতসীর শাড়ির আঁচলে বাধা পড়েছে যে সায়ান! পৃথিবীর কোন প্রেমিক পুরুষ তার প্রিয়তমার এই বাধন থেকে মুক্ত হতে চায় না। একজন পুরুষ চায়, একজন নারী তাকে আগলে রাখুক, সামলে রাখুক। ভালোবাসার আবদার করুক প্রয়োজনে শাসন! যদি কোন প্রেমিক পুরুষ এমনটা না চায়! তাহলে বুঝে নিতে হবে
সম্পর্কে প্রেম নামক কোন কিছু ছিলোই না! যা ছিলো শুধুই আবেগ,মায়া কিংবা আকর্ষণ।
.
সায়ানের স্পষ্টত্ব চাহিদা জানান দিচ্ছে তার দু চোখ।
অতসীর সায়ানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো
.
খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।
তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।
(রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্)
.
.
সায়ান মুচকি হেসে উঠে আসে।
-তুমি যেদিন নিজ থেকে এসে আমাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিবে! যেদিন পুরো পৃথিবীর প্রতিটি ঈশারা তোমাকে জানান দিবে, তুমি আমাকে ভালোবাসো! সেদিন আমি আমার অধিকার চাইবো। কিন্তু তোমাকে মুক্তি দিতে পারবো না।তোমার ভাষায় ডিভোর্স আমার ভাষায় মরণ! আমি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে কেনো বেছে নিবো? আমি এতটা বোকা না মিসেস. মাহমুদ!
তুমি আমার নও তো কারো নও! এটা মাথায় রেখো৷
.
খুব ছোট কিন্তু একটা গভীর স্পর্শ চুমু দিলো সায়ান অতসীর কপালে। গায়ে চাদর টেনে দিয়ে বললো
-ঘুমাও! সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।
.
.
বেহালায় সুর তুলেছে রেদোয়ান। আজ হঠাৎ ইচ্ছে করছে।
অফিসে নিজের কেবিনে বসেই সুর তুলেছে রেদোয়ান।
.
Everytime in my dreams গানের সুর তুলেছে।
হ্যাঁ! ইদানীং সে বড্ড মিস করে। হাসি হাসি মুখ,গালের তিল, হাত নাড়িয়ে কথাবলা।মেয়েটা হাসলে যেনো চোখ দুটো হাসে৷
ইদানীং নিঃসঙ্গ সময় বড্ড পোড়ায়,শত ব্যস্ততার মাঝেও রেদোয়ান ফোনের স্ক্রীনে হাসি মুখ দেখতে সময় হয় কিন্তু আগে না ছিলো চাহিদা না ছিলো ইচ্ছা।
মেয়েটা চাতক পাখির মতো বসে থাকতো একটু কথা বলার জন্য। অথচ তখন সময় দেয়নি।
কি করেছে সে? আজ যদি সব ঠিক থাকতো তাহলে ছোট্ট একটা পরী হয়তো আজ রেদোয়ানের সন্তান হিসেবে পৃথিবীতে থাকতো। কোন নর্দমায় ভেসে থাকতো না।
প্রেমটা হয়তো শুধু শারিরীক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো তাই তো ভালোবাসা প্রমাণ করতে রেদোয়ান যেমন বুকের লোম ত্যাগ দিয়েছিলো তেমনি মেয়েটার স্বতীত্ব নিয়ে ভালোবাসার প্রমাণ নিয়েছিলো।
যখন জানতে পারলো মেয়েটার ভিতরে বেড়ে উঠছে তার নিজ স্বত্বা! ঠিক তখন ঘিরে ধরলো ব্যস্ততা! শতশত কল, ম্যাসেজ দেখেও দেখার সময় হয়নি রেদোয়ানের। যেদিন সব শেষ হয়ে গেলো সেদিন থেকে মেয়েটি আর যোগাযোগ করেনি।ভালোবাসার দাবী, অধিকারের দাবী নিয়ে আর আসেনি। রেদোয়ান ফিরে গিয়েও লাভ হয়নি। কারণ সে এক কথাই বলেছিলো
.
-আমি আমার প্রথম সন্তানের খুনীকে কখনো মাফ করতে পারবো না। কখনো না৷
.
.
দিহান ছয় মাসের জন্য ছুটিতে আছে। সেদিনের মেন্টাল টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। তাই ছয় মাসের জন্য বিরতি দেওয়া হয়েছে।কিন্তু সায়ানের বেশ সাপোর্ট হয়েছে দিহান।
যেখানে এদেশে এক মেয়ের জন্য দুই বন্ধুর প্রাণ যায় সেখানে এক মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দিহান সায়ানকে আগলে রাখছে।
বছর খানেক পর আজ তিন বন্ধু আড্ডায় বসেছে। অনামিকা কে বাসায় নিয়ে এসেছে। ইফাদ আশা করছে খুব দ্রুত সুস্থ হবে। প্যারালাইজড হলেও অনামিকা সব শুনতে অনুভব করতে পারে।
.
সময় বহমান। পার হয়ে গেলো দুটো মাস। আজকের দিনের জন্য অতসীর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। রাত জেগেছে, সব দায়িত্ব পালন করেছে, সায়ান কে সামলেছে, সংসার সামলেছে। সম্পর্কগুলো গুছিয়ে নিয়েছে। কেমন? যেমন
.
অতসীর সারাদিন কেটে যাচ্ছে সব সামলাতে।
আবার আজ শাড়ি পড়েছে। সায়ান শাড়ি ছাড়া অতসীকে দেখতে নারাজ। ইদানীং অবশ্য অভ্যেস হয়েছে।
অনামিকার প্রোপার কেয়ার তারপর আবার সবার জন্য রান্না করতে হচ্ছে। রাইমা, অতসী আজকে পাক্কা গিন্নী লুকে আছে।
সারাদিনে বেশ আড্ডা হলো।
.
ধীরেধীরে রাইমার সাথে দিহান স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এদিকে আফরিনের সাথেও সব ঠিক। আজ সায়ান-অনামিকার বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো। সায়ানের বন্ধু,রাইমা, আফরিন, অনামিকার অতসীর মা-বাবা সবাই আজ এসেছে। অতসী আজ সায়ান কে উপহার দিবে।সবাই এসেছে। আফরিন আজ ওদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছে। অতসীর প্রতি কোন অভিমান নেই। সব জানার পর অতসীর কাছে আফরিন নিজে সরি বলেছে। বেলা গড়িয়ে
প্রায় সন্ধ্যে। সায়ান অপেক্ষা করছে অতসীর উপহারের জন্য।
ধীর পায়ে অতসী অনামিকার রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। সায়ানের উপহার নিয়ে।
.
অনামিকা! সায়ানের উপহার অনামিকা কে নতুন বউয়ের সাজে সাজিয়েছে অতসী৷ সব থেকে অবাক করা বিষয় অনামিকা নিজের দুপায়ে দাঁড়িয়ে বউ সেজে হাসি মুখে এগিয়ে যাচ্ছে সায়ানের দিকে।
.
.
চলবে..
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
পুরো বাড়ি জুড়ে অতসীর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।প্রথম যেদিন এ বাসায় এসেছিলো তখন কি ভেবেছিলো? সব পাল্টে যাবে কয়েক মুহুর্তে?
এ বাড়ির আনাচে-কানাচেতে অতসীর বড্ড মায়া পড়েছে।
বাগানের প্রতিটি ফুলের টব নিজ হাতে গুছিয়েছে। সায়ান অনামিকার বিবাহিত জীবন যেনো সৌরভময়ী হয়ে উঠে।
তিতির পাখিটা ছোট্ট দুটো বাচ্চা দিয়েছে।
বারান্দায় তিতিরপাখির জন্য বানানো ছোট্ট একটা ঘরে খুটিপাতিলে পানি রেখে এলো অতসী।
বিছানায় তাকাতেই মনে পড়লো জ্বরের সময় করা পাগলামোগুলো।
সায়ানের জেদ,আবদার আজ থেকে খুব মনে পড়বে।
কটু হলেও সত্য অতসী সায়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে৷
কিন্তু এটা ভুল।সায়ান অনামিকার আমানত৷ যা কিছুক্ষণ আগেই অতসী সায়ান কে ফিরিয়ে দিয়েছে।
এক বছর আগে অতসীর জীবনে এই দিনে দিহান ছিলো, সময়ের ব্যবধানে কেউ নেই। আজ নিঃস্ব হয়েও পরিপূর্ণ লাগছে।
.
কারণ? সায়ানের কাছে অনামিকা, বাবার কাছে তার মেয়ে সুস্থ ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।
সায়ান যখন অনামিকাকে প্রথম দেখলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।মুখে কোন কথা ছিলো না। বাবা প্রথমে এসে অনামিকাকে জড়িয়ে ধরে কি কান্নাটাই না করলো!
অতসী যখন অনামিকার হাত সায়ানের হাতে দিলো! সায়ান খুব শক্ত করে অনামিকার হাত ধরেছে। ছাড়লে এইবুঝি আবার হারিয়ে যাবে!
খাবার টেবিলে সবাই আড্ডায় মেতে উঠেছে।
সবাই জুটিতে আছে। সেখানে অতসী বড্ড বেমানান। আর তাছাড়া কিছুক্ষণ পর বাবা-মা চলে যাবে। অতসীকে তো আর রেখে যাওয়া যায় না। তাই বাবা বলেছে তৈরী হতে। বাবা না বললেও অতসী তৈরী হয়েই নিতো।
মায়ের কাছে বলে আগেই অতসী সালোয়ার কামিজ আনিয়েছে।
গায়ের শাড়িটা ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পড়ে নিয়েছে।
আজ অনেকদিন পর চুলগুলো বিনুনি করেছে। বাম হাতে ঘড়ি। নাকফুল খুলে ছোট্ট একটা নাকফুল পড়ে নিলো।
বিলাসিতা করার কোন উপায় নেই। কারণ কিছুক্ষণ পর থেকে নিজের হাল নিজের ধরতে হবে।
.
ঘরের সবকিছু একবার করে ছুয়ে দেখছিলো অতসী৷ বাহিরে থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
.
অপেক্ষা না করে অতসী নিচে চলে আসে।
এমনিতেও অনেক সময় হলো।
সব সার্ভেন্টদের সাথে দেখা করে অতসী আড্ডার জায়গায় এসে দাঁড়ালো।বাবা মসজিদে নামাজে গিয়েছে মা অন্য রুমে রেস্ট করছিলো।
অতসীকে দেখে রাইমার হাসি হাসি মুখ মলিন হয়ে যায়।
কিন্তু অতসীর মুখে হাসি লেগেই আছে।
রাইমার মুখ অনুসরণ করে দিহান, ইফাদ তাকাতেই ওরাও অতসীকে দেখলো।
সায়ান তখনো ব্যস্ত অনামিকার সাথে কথা বলাতে।
অতসীর উপস্থিতি বুঝে অনামিকা প্রথম জিজ্ঞেস করলো
.
.
-তুই কি আজকেই চলে যাবি?
-হ্যাঁ!
-থাক না দুদিন। প্লিজ
-আপু ছয়মাস হয়েছে এসেছি। তাছাড়া.....
-তাছাড়া কি?
-আপু তুই এবার নিজের সংসারের দায়িত্ব নিজে নে।
-তুই কি সত্যি চলে যাবি?
.
অনামিকার প্রশ্নের উত্তর আমিনুর সাহেব দিলেন।
.
-হ্যাঁ রে মা! আবার কে আসবে ওকে নিতে?
.
অতসীকে উদ্দেশ্য করে বললো
-যা তোর মা কে তৈরী হতে বল।
.
অতসী মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে চলে গেলো। রাইমা উঠে আসছিলো দিহান হাত ধরে বললো
.
- কোথায় যাচ্ছো?
-অতসীর কাছে।
-কেনো?
-কথা বলতে....
-পরেও তো বলা যায় না কি? আড্ডা থেকে উঠলে সবাই কি মনে করবে?
.
দিহানের কথার কোন জবাব দিলো না রাইমা। চুপচাপ আবার আড্ডায় মেতে উঠলো।
.
.
অতসী যাওয়ার জন্য মোটামুটি প্রস্তুত। কিন্তু কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে। অতসী জানতো এমন হবে তবুও কেনো এমন কষ্ট হচ্ছে?
.
ইফাদ, আরেফিন,রাইমা, দিহান সবাই চুপ। অতসী হেসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে আসছিলো।
হঠাৎ সায়ানের ডাকে সবাই পিছনে তাকালো
.
-অতসী! রুমে যাও।
.
সায়ানের কথার জবাব অনামিকা দিলো
-চলে যাওয়ার সময় এভাবে পিছন ডাকতে নেই। যেতে দাও!
-অনামিকা তোমাকে আমার কিছু জানানোর আছে কিন্তু তার আগে তুমি প্লিজ চুপ থাকবে।
.
অতসী আমি কিছু বলেছি? রুমে যাও।
.
-ওর দায়িত্ব এখানেই শেষ! ওকে আমার সাথে যেতে দাও। জেদ করো না। (নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর আমিনুর সাহেবের)
-অতসী! আমি কি বলেছি? কানে যাচ্ছে না?
-আমি চলে যাবো মি.মাহমুদ!
.
.
সায়ান এতক্ষণ চুপ থাকলেও রেগে এগিয়ে যাচ্ছিলো অতসীর দিকে। এটা দেখে অতসী মায়ের হাত আরো শক্ত করে ধরে। সায়ান টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে কাধে উঠিয়েই সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই চুপ।
.
রুমে নিয়ে এসেই অতসীকে সায়ান বিছানায় ফেলে দেয়৷ একহাতে ওর হাত বিছানায় আকড়ে ধরে অন্য হাতে অতসীর দুগাল চেপে ধরেছে।
.
-বলেছিলাম না? যা ইচ্ছে করো! কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করবে না।সাহস কি করে হয় তোমার? এত সাহস কে জুগিয়েছে?
মরার শখ জেগেছে? তুমি কি চাইছো আমি তোমাকে মেরে নিজে মরে যাই? আর এসব কি পড়েছো? বেনুনি কেনো করেছো?.
.
কথাগুলো বলতে বলতে সায়ান অতসীকে টেনে তুলে উঠিয়ে বসাই। এলোপাথাড়ি টেনে অতসীর বেনুনি খুলে ফেললো। অতসী ব্যথায় সায়ান কে ধাক্কা দিতে চাইলে সায়ান আরো জোরে চুল টানতে থাকে। ওড়নায় হাত দিতেই অতসী বাধা দেয়। কে শুনে কার কথা? টান দিয়ে ওড়না সরাতেই সেফটিপিন লাগানো অংশ ছিড়ে আসে।
.
অতসী তাকিয়ে দেখে সায়ান কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে চিৎকার করে বলে
.
-আপনি সাইকো মি. মাহমুদ! আপনি সত্যি একটা সাইকো
.
.
অতসীর এক কথায় সায়ান এগিয়ে গিয়ে অতসীর কামিজের পিছনের দিকটা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।
.
এটা কি পড়েছিস তুই? শাড়ি কেনো চেঞ্জ করেছিস? এত কোথায় পেলি? শাড়ি পড়িস নাই কেনো? না করেছিলাম না এসব পড়তে?
.
অতসীর দুহাত পিছনের দিকে নিয়ে এক হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। অন্য হাতে অতসীর চুলের মুঠি ধরে বলে
.
-আমার ভালোবাসার গভীরতা তুই ভাবতেও পারবি না। তোর জন্য আমাকে যদি কাউকে মারতে হয় আমি মারবো নিজের মরতে হলে আমি মরবো। কিন্তু তোকে আমি ছাড়বো না। আমি সবার মতো না। আমি সায়ান মাহমুদ! আট দশটা ছেলের মতো আমি ভালোবাসা ত্যাগ দিয়ে মহান আমি সাজবো না। আমি মহান বাহিরে সাজবো ঘরে না।
আমার ভালোবাসা আমি ছিনিয়েই নিবো। এটা আমি খুব ভালোভাবে করতে জানি।
.
শাড়ি কি তুই নিজে চেঞ্জ করবি না আমি......
আমিই পড়াবো।
.
ওয়ারড্রব থেকে শাড়ী ব্যতীত বাকী কাপড় দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। পাঁচ মিনিট না হতেই ওয়াশরুমের দরজায় কড়া নাড়ছে সায়ান। অতসী চুপচাপ এসে সায়ানের সামনে দাঁড়ালো। সায়ান খুব যত্ন করে অতসীকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো ।অতসীর শরীর থেকে তোয়ালে ফেলে দিয়ে আঁচল উঠিয়ে দিয়ে খুব যত্ন করে চুলগুলো ঠিক করে দিলো।
অতসী নিজে হাত খোপা করলো।
সায়ান ড্রয়ার থেকে নাকফুল,চুড়ি,চেইন সব বের করে নিজে হাতে পড়িয়ে দিলো।
.
অতসীকে নিজের সামনে দাড় করিয়ে খুব গভীর ভাবে কপালে একটা আবেগী চুমু দিলো সায়ান।
আধো আধো কান্নামিশ্রিত কন্ঠে সায়ান বললো
.
-তোমার ভালোবাসা যদি আমাকে হিংস্র করে তুলে তবে আমি তোমার জন্য হিংস্র হবো।স্বার্থপর হবো কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়বো না। না হলে আমি মরে যাবো। কিন্তু আমি বাঁচতে চাই শুধু তোমার সাথে । তোমাকে কেউ স্পর্শ করুক এটা আমি চিন্তাও করতে পারি না। তুমি যদি চলে যেতেই চাও তাহলে প্লিজ আমাকে একবারে মেরে তারপর যাও না হলে আমার থেকে নিজেকে আলাদা করো না।
.
.
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
সাত মিনিটে তিনটে সিগারেট শেষ করেছে দিহান।
ভয়, টেনশন একটাই! সায়ান আবার বেশি রাগ করে অতসীর কোন ক্ষতি না করলেই হলো।
সব আগে থেকেই প্ল্যান ছিলো, অনামিকা যেহেতু সুস্থ হয়েছে। সবাই ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবে তাইতো অনামিকার সাথে এত ভালো ব্যবহার না হলে দিহান আগেই এই মেয়েকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে দিতো।
.
ইফাদের স্পর্শে পিছনে ফেরে দিহান।
-উপরে চল! সায়ানের সাথে কথা বলা দরকার। অনামিকার স্বাস্থ্যের জন্য কিন্তু এটা......
.
ইফাদের কথা শেষ হতে না হতেই দিহান বললো
-সব সময় বন্দুক অতসীর কাঁধে রেখেই কেনো চালাতে হবে? তুই কি দেখিস নি?লেডির কতটা কষ্ট হচ্ছিলো?
-আমি জানি! কিন্তু আমরা নিরুপায়। অনামিকার সুস্থ থাকা প্রয়োজন। না হলে সত্য জানবো কি করে?.
.
.
সায়ান চুপচাপ অতসীর সামনে বসে আছে। রাগ অনেকটা কমে গেলেও অতসীর হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। বা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ফ্লোরে অনবরত আঘাত করছিলো অতসী। সায়ানের দৃষ্টি সেদিকে। হঠাৎ অতসীর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কটাশ করে ভেঙে গেলো।
সায়ান আনমনেই হেসে অতসীর দিকে তাকিয়ে ধীরে গলায় বললো
.
- ক্ষতি কার হলো?
-রাগ ভালো না মি.মাহমুদ! রাগ হলে পানি খেতে হয়৷ আপনি বসুন আমি পানি নিয়ে আসছি৷
-লাগবে না। আজ থেকে তুমি এই রুম থেকে বেরুবে না। যতদিন না অবধি অনামিকাকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানানো হচ্ছে৷
-জানানো কি খুব প্রয়োজন? না! মানে আমি চলে গেলেই তো আপনারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে পারবেন।
-এটা ঠাকুমার ঝুলি না! যেখানে গল্পের শেষে সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো বলে তুমি ইতি টানবে।
-কিন্তু!
-এই ঘরে সব আছে৷ যা যা লাগবে তোমার সব এসে যাবে। কিন্তু রুম থেকে বেরুবে না।
.
অতসীর করুণ দৃষ্টি সায়ানের দিকে। দৃষ্টি উপেক্ষা করেই সায়ান আবার বললো
- হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন অধিক ভালোবাসলে হয় ছেলে মেয়ের হাতের পুতুল হয়ে যায় না হয় মেয়ে ছেলের হাতের পুতুল।দুজনে একসাথে একে অপরের কাছে হাতের পুতুল হয় না।
জানো অতসী! আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমার হাতের পুতুল আমি হতে পারবো না। তুমি যেদিন শুধু আমার হবে! শুধুই আমার! সেদিন আমি তোমার হাতের পুতুল হবো। এর আগে না। কারণ আমি তোমাকে হারাতে পারবো না।
.
সায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে অতসীকে দাড় করিয়ে খুব শক্ত করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
কপালে একটা গভীর উষ্ণ চুমু দিয়ে সাবধানে থেকো বলে বের হয়ে আসলো।
বাহিরে থেকে লক করতে অবশ্যই সায়ান ভুলে যায় নি।
হ্যাঁ! গৃহবন্দী করেই রাখবে অতসীকে তবুও ছাড়বে না।
.
.
.
অনামিকা অবশ্যই এসব স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি । তাই ইফাদ কৌশলে মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। উঠলে কিছু একটা বলে ঠিক ম্যানেজ করে নিবে।
সায়ান কে নিচে নামতে দেখে এগিয়ে গেলো রাইমা। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
.
-আপনি কি অতসীকে মেরেছেন? ও কি কান্না করছে?
.
সায়ান বেখেয়ালি হেসে জবাব দিলো
- নাহ্! ম্যাম ঠিক আছে। বসে বসে টুইলাইট মুভি দেখছে। রিলাক্স!
.
ইফাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ইফাদ বললো
অনামিকা ঘুমিয়েছে। বেশ ভালোই রিয়্যাক্ট করেছে । বিশেষ করে অতসীকে ওভাবে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অনামিকা অনেকটা উগ্র হয়ে উঠেছিলো। তাই বাধ্য হয়েই...৷
.
কথা শেষ করার আগেই সায়ান বললো
-বুঝতে পারছি না কি করবো! তবে অতসী কোথাও যাচ্ছে না । এটা ফাইনাল।
.
ইফাদ উত্তর দিলো।
-যেতে দেওয়া উচিৎ ছিলো। কারণ আমাদের প্ল্যানে...
.
দিহান কথায় ফোড়ন কেটে বললো
-লেডি চলে গেলে সমস্যার সমাধান নয়! তাছাড়া সায়ানের সাপোর্ট লেডি। লেডি এখানে থাকবে। অধিকার কেনো ছাড়বে?
.
ইফাদ আর কথা বাড়ালো না। তিন বন্ধু আগালো অনামিকার বাবার দিকে। আমিনুর সাহেব কে উদ্দেশ্য করে সায়ান বললো
.
-আংকেল আপনারা চাইলে চলে যেতে পারেন কিন্তু অতসী যাবে না।
-কেনো? এখানে আর দরকার নেই। তাহলে কেনো থাকবে? (আমিনুর সাহেব)
-অধিকারে থাকবে। (দিহান)
-কিসের অধিকার? এটা অনামিকার সংসার। এখানে অতসীকে আমি রেখে যেতে পারবো না। (আমিনুর সাহেব)
-অতসী আমার স্ত্রী! সে অধিকারে থাকবে। আমি না চাইলে অতসী এক পা এই বাসা কেনো রুম থেকেও বের হতে পারবে না। (সায়ান)
-তুমি কিন্তু ঠিক করছো না সায়ান! (আমিনুর সাহেব)
-আংকেল! কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। আপনি নিজে বলবেন আমার আজকের সিদ্ধান্ত ঠিক। (সায়ান)
.
আমিনুর সাহেব বাধ্য হয়েই অতসীকে রেখে চলে আসলো। রাতে দিহান-রাইমা,ইফাদ-আফরিন চলে গেলো।
অনামিকা তখনো ঘুমে।
.
.
হঠাৎ অতসী রুমের দরজার লক খুলার শব্দে দরজার দিকে তাকালো।
সায়ান এসেছে। সাথে একটা বড় সুটকেস, খাবারের ট্রলি।
এসব রেখেই বিনাবাক্য ব্যয়ে সায়ান ওয়াশরুমে চলে যায়।
অতসীর মনোযোগ তখন ল্যাপটপের স্ক্রিনে।
এইতো এডওয়ার্ড কে অনেক খোঁজার পর পেয়েছে বেলা৷এত্তগুলা ভ্যাম্পায়ার এর মধ্যে..... উফফফ অস্থির মুহুর্তে আছে। ঠিক তখন সায়ান এসে টুক করে ডিসকানেকটেড করে দিয়েছে।
অতসী রেগে তাকাতেই মুচকি হেসে সায়ান বললো
-তেরা ধ্যান কিদার হ্যে? তেরা এডওয়ার্ড ইধার হ্যে....
-মি.মাহমুদ! আপনি একটা বান্দর!
.
-হ্যাঁ! তুমি সায়ান বান্দরের বউ। নাও হা করো খেয়ে নাও।
.
কথা না বলে চুপচাপ অতসী খাচ্ছিলো কিন্তু নজর যাচ্ছিলো সুটকেসের দিকে।
.
হঠাৎ মনে পড়লো মি.মাহমুদ তো আমাকে মেরে এই সুটকেসে ভরে পানিতে ফেলে দিবে না তো?
ক্রাইম সাসপেন্সে এমন অনেক কিছু দেখেছে! তাই বুঝি মি.মাহমুদ এত আদর যত্ন করে খাওয়াচ্ছে?শুনেছি মানুষ নিজের মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে থেকে বুঝতে পারে তবে কি সময় শেষ? উনি তো আগেই বলেছিলো
বিয়েটা শুধুই প্রতিশোধের। তাহলে কি আমার মৃত্যু দিয়েই সব শেষ হয়ে যাবে?
ভাবতেও বার দুয়েক বিষম খেলো অতসী।
.
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসীর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো সায়ান।
এক শ্বাসে পুরো পানি খেয়ে নিলো অতসী। কে জানে? এটাই হয়তো শেষ খাওয়া।
সায়ান মুচকি হেসে বললো
-তোমার চিন্তাভাবনা তারিফ করতে হয়। ভাবলে কিভাবে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো?
.
সায়ানের কথা শুনে অতসী থমকে যায়। মনের কথা মি.মাহমুদ জানলো কিভাবে?
এটা শুধু ভ্যাম্পায়ারদের দ্বারাই সম্ভব। কারণ তারাই পারে মাইন্ড পড়তে। আল্লাহ্! তাহলে কি?
.
ফাকা ঢোক গিলে কাঁপানো হাতে স্পর্শ করলো সায়ানের হাত। না গরম লাগছে। ভ্যাম্পায়ার হলে অবশ্যই শরীর ঠান্ডা থাকতো।
.
সায়ান খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে এসে অতসীকে উদ্দেশ্য করে বলে
.
-না আমি মরে গিয়েছি, না আমি তোমাকে মেরে সুটকেস বন্দী করে পানিতে ফেলবো। এসব আজগুবি চিন্তাভাবনা বাদ দাও। যাও সুটকেস খুলে দেখো কি আছে....
.
সায়ানের বলতে দেরি হলেও অতসীর খুলতে দেরি হলো না।
সুটকেস খুলে অতসী বিষ্ময়ের সপ্তম আসমানে পৌঁছেছে।
পুরো সুটকেস ভর্তি বিভিন্ন লেখকের বই।
শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে ফিফটি শেডস অফ গ্রে।
অতসীর যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
কিছু সময়ের মধ্যে রুমের এক পাশে ছোট একটা লাইব্রেরী হয়ে গেলো।
ইজি চেয়ারের পাশের দেয়াল শুধুই বই।
.
.
তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্ক থেকে উত্তাপ
শীতলতা থেকে উষ্ণতা
প্রেমের খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা,
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছাকাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।
.
(রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ)
.
অতসীর কবিতা আবৃতি বরাবর সায়ানকে মুগ্ধ করে। আজ ব্যতিক্রম হয়নি। কালো সবুজ রঙের শাড়ি, হাত খোপা এসব যেনো বারবার বাধ্য করে প্রেমে পড়তে।
ইদানীং সিগারেটের নেশায় নেশা হয় না যতটা হয় অতসীর কথায়৷ ইজি চেয়ারে বসে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
অতসীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সায়ান জিজ্ঞেস করলো
-এখনো অভিমান?
- উঁহু!
-ভালোবাসি। তাইতো কষ্ট হয়! তুমি কেনো ছেড়ে চলে যেতে চাইলে? তাইতো বাধ্য হয়ে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে হলো......
-এটাও হয়তো ভালোবাসা প্রকাশের একটা ধরণ মাত্র ।আমার মতে ছেলেদের ভালোবাসার অনেক পদ্ধতি ব্যবহার । তারা ব্যবসায় যেমন নিত্যনতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে হয়তো ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রেও তাই।না হলে হিংস্রতায় কি ভালোবাসা প্রকাশ হয়?
(অতসীর কন্ঠে বিদ্রুপের স্পর্শ)
-এটা ভুল। ভালোবাসা মানুষকে হিংস্র কেনো খুনী অবধি বানিয়ে দিতে পারে। নির্ভর করে সামনের ব্যক্তিকে কতটা ভালোবাসো।আচ্ছা!
কিছু কথা বলবো হয়তো তুমি বুঝতে পারবে।
রোমান্স আর ইন্টিমেন্সির মধ্যে পার্থক্য জানো? ইদানীং কালের কিছু লেখা পড়লে মনে হয় রোম্যান্স মানেই কাপড় খোলা, নগ্ন দেহ ছাড়া রোমান্স হয় না। যদি এমনটা হতো তাহলে ধর্ষণ ও রোমান্সের কাতারেই পড়তো। আজকাল মানুষ ভুলেই গিয়েছে। চোখে চোখ রেখে, হাতে হাত ধরে কিংবা প্রেয়সীর চুলে, হাতের চুড়িতে রোমান্স খুজে পাওয়া যায়। না কি প্রেয়সীর নাভির গভীরতা পরিমাপে কিংবা তার দেহাকৃতির অঙ্গভঙ্গিতে। হ্যাঁ! শারীরিক চাহিদা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে বাসর রাতে কি হয় এটা তো আর বলে বেড়ানোর কথা না! মানুষ বুঝে ভাই! কিন্তু একদল মানুষ এটা নিয়েও কুটক্তি করবে। কারণ তাদের চোখে নিজের মতবাদ সঠিক অন্য সবাইকে এরা মানুষ মনে করে না। অন্যকে ছোট করে এরা যা আনন্দ পায় হয়তো এই আনন্দ এদের একদিন কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতি নিয়ম প্রতিশোধ নেওয়া। তুমি ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ছাড়বে না। কারণ?
karma is a bitch..... (প্রত্যয় হিরন)
তুমি হয়তো বলবে আজ সন্ধ্যেবেলা আমি যা করেছি তা কি?
সেটা আমার হিংস্রতা ছিলো। ভালোবাসা মাঝেমধ্যে মানুষকে হিংস্র করে তোলে।
কিন্তু আমার কোন আফসোস নেই। তোমার জন্য আমি যেমন হিংস্র, স্বার্থপর ঠিক তেমন আমার ভালোবাসায় তোমাকে সিক্ত করতেও সবসময় প্রস্তুত।
.
.
অতসী ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সব থেকে রহস্যময় চরিত্র তো সায়ান।কিন্তু এখন যা বললো সব মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। কি বুঝালো মি.মাহমুদ!
কিন্তু এখন প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তাইতো কথা না বাড়িয়ে অতসী চুপচাপ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো প্রায় দু সপ্তাহ। এই দু সপ্তাহে অতসী এক বারের জন্য রুম থেকে বাহিরে যায়নি। পুরো সংসার সাজিয়েছে এই রুমেই। সারাদিন কেটে যায় অনলাইনে কাজ করে না হয় বই পড়ে। সময় মতো খাবার রুমে চলে আসে। তিতির পাখি, বারান্দায় ছোট্ট বাগান এসব অতসীর সাথী।
সায়ান অফিস থেকে এসেই প্রথমে অতসীর কাছে আসবে কিছুক্ষণ থেকে অনামিকা কাছে চলে যায়।
অনামিকা যে সায়ান কে সেদিনের জন্য প্রশ্ন করেনি এমন কিন্তু নয়। করেছিলো কিন্তু সায়ান কোনভাবে কাটিয়ে নিয়েছে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো অনামিকা সায়ানের থেকে দূরত্ব মেপে চলে।
হিসেব মতো অনামিকার চাহিদা বেশি থাকবে। সায়ান,অধিকার সব চাইবে কিন্তু এসবে বড্ড অনীহা।
একদিকে অবশ্য সায়ানের জন্য ভালোই হয়েছে। কারণ অনামিকা যদি অধিকার চাইতো তাহলে কি যে হতো......
.
ইফাদ এসেছিলো অনামিকা কে দেখতে। আপাতত সব ঠিক। এখন উচিৎ অনামিকা রিপোর্ট সম্পর্কে জানানোর। কিন্তু যদি হিতে বিপরীত হয়? অনামিকার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই ইফাদ আরেক দফা পিছিয়ে এলো৷
.
অতসীর সাথে দেখা করতে যায় ইফাদ।সায়ান একপ্রকার বন্দী করে রেখেছে। ভালোবাসার বিভিন্নরুপ ইফাদ দেখেছে। খুব অল্প সময়ে দেখেছে। অতসীর জন্য সায়ানের পাগলামো,দিহানের জেদ, অতসীর বন্ধুত্ব কিংবা রাইমার আত্নত্যাগ। সব যেনো একেকটি জীবন্ত উদাহরণ।
অতসীর সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো ইফাদ। একথা সে কথা কত কথা হলো। আফরিন -ইফাদের সম্পর্ক ঠিক করতে বেচারিকে বেশ ভুগিয়েছে। কিন্তু দিন শেষে অতসী সব সামলে আফরিন কে বাধ্য করেছিলো ফিরে আসতে। তাই হয়তো ইফাদ আফরিন এক হয়েছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে
রাইমা, দিহানের সম্পর্কে বিনা দ্বিধায় জিজ্ঞেস করে অতসী।
ইফাদ সবটা বলে।বিয়ের কারণ,দিহানের নেশায় করা ভুল, সব বলে। অতসী চুপচাপ শুধু শুনছিলো। রাইমা কেনো এসব বলেনি? কিছু ধারণা সে করেছিলো কিন্তু এতটা?
ইফাদের কথা শুনে অতসী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এছাড়া আর কি বা করার আছে।
তবে হ্যাঁ! এটা বিশ্বাস আছে রাইমা ঠিক দিহানের মনে জায়গা করে নিতে পারবে।
.
.
দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটে চেকইন করলো রেদোয়ান। লাস্ট মোমেন্টে আজ দেশে ফিরছে সে৷ অনেক প্রশ্নের জবাব চাই, ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান করেছিলো তার জন্য মাফ চাই। কিন্তু আদৌ কি পাবে?
নাহ্ পারতে তো হবেই।প্রায় সতেরো মাস পর আজ তার একটু দেখা পেয়েছে। মেয়েটা উধাও হয়ে গিয়েছিলো। ফিরিয়ে দিবে তো? দিক না! কিন্তু একবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। ভালোবাসার দাবী নিয়ে না, ক্ষমার জন্য। নিজের সন্তান অস্বীকার করার পাপ থেকে মুক্তির জন্য।
কিন্তু এ পথ যে কখন শেষ হবে.........
.
.
ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলো সায়ান৷ আজ বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছে। অতসী প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। সায়ান এসে টেনেটুনে খাইয়ে দিতেই আবার ঘুম। রাতের খাবার সায়ানের হাতে খাওয়ার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে অতসীর।
ফ্রেশ হয়ে এসে অতসীর পাশে শুয়ে একহাতে নিজের দিকে টেনে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় সায়ান।
.
.
কারো হালকা চিৎকারে ঘুম ভাংলো অতসীর। চোখ বুঝেই নিজেকে আবিষ্কার করলো সায়ানের বুকে।
আধোঘুমে চোখ মেলে তাকাতেই একজন কে দেখতে পেলো অতসী৷ হঠাৎ গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। বুকের মাঝখানে কেমন জ্বালাপোড়ার অনুভূতি।
বাম হাতে সায়ানের বুকের কাছটার টিশার্ট খামছে ধরে অতসী।
অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো
-অনা আপু! তুই এখানে? .....
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
অতসী খুব দ্রুত উঠতে চেষ্টা করেও পারে না। এদিকে অনামিকা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে হালকা আকাশী রঙের শাড়ি।
চুলগুলো বড্ড অগোছালো। শরীর বেশ ভালোই লাগছে। স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে আগের থেকে একটু।
অতসী যতই উঠতে চাইছে, সায়ান আষ্টেপৃষ্টে আবদ্ধ করে নিচ্ছে বারবার।
অতসীর ডাক সায়ান গ্রাহ্যেই করছে না।
এদিকে সায়ান ঘুমের মাঝে ভাবছে হয়তো আজান দিয়েছে তাই অতসী উঠতে চাইছে।
সায়ান অতসীকে শক্ত করে দুহাতে আকড়ে ধরে টেনে শুইয়ে দিয়ে অতসীর কাধে মাথা রাখলো।
অনামিকার চোখের সামনে সব স্পষ্টত ঘটছে।
এদিকে অতসীর ছটফটানো বেড়েই চলেছে।
এবার সায়ান চোখ খুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
.
-এমন করছো কেনো? বাহিরে এখনো আলো ফোটেনি তো....
.
কাঁপাকাঁপা কন্ঠে অতসী বললো
-আপু!
-আপু ঘুমে আছে... প্লিজ ঘুমাতে দাও।
.
.
- না সায়ান! আমি ঘুমে নেই। ভাগ্যিস আমার ঘুম ভেঙে ছিলো! না হলে তো.....
.
.
অনামিকার কন্ঠস্বরে সায়ান উঠে বসে। দরজার দিকে তাকাতেই অনামিকা কে দেখতে পায়। এক হাতে দরজায় ভর দিয়ে হেলানো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সে।
কিন্তু এই দরজা তো.....
.
নিজেকেই মনে মনে গালি দিলো সায়ান।
ফোনে কথা বলার সময় এতটা ব্যস্ত ছিলো যে দরজা ঠিক মতো লাগিয়েছে কি না খেয়াল করেনি।
সায়ানের চিন্তার ঘোর কাটলো যখন অতসী দ্রুত নেমে গিয়ে অনামিকার দুহাতে আকড়ে ধরে বলতে শুরু করেছে
.
.
-আপু! তুই ভুল বুঝছিস! আসলে
.
অনামিকা অতসীকে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে...
-ভুল? অতসী নিজের স্বামীকে বোনের বিছানায় দেখে আমি ভুল ভাবছি? না কি আমার বোনকে আমার স্বামীর বুকে দেখেছি বলে ভুল করেছি?
তুই না চলে গিয়েছিলি? কখন আসলি?
-আপু! প্লিজ শান্ত হও। চিৎকার করো না। তোমার স্বাস্থ্যের জন্য....
- চিৎকার?লজ্জা করছে না তোর? আমার সংসার এভাবে শেষ করে দিতে? আরে ও তো পুরুষ মানুষ! চাহিদা থাকতেই পারে তাই বলে রাস্তার মেয়ের মতো সব বিলিয়ে দিলি?
-আপু আমার কথা শোন!
-বাবা ঠিক বলে তুই রাস্তার মেয়ে। আসলে তুই রাস্তার মেয়ে না তুই বাজারি মেয়ে। ছোট বেলা থেকে আমার সব কিছুই তোর চাই। তাই এভাবে আমার স্বামীকে কেড়ে নিলি? সমাজে কি পরিচয় দিবি নিজের? সায়ানের রক্ষীতা বলে?
.
অতসী এ পর্যায়ে অনামিকার পায়ে বসে পড়ে। পা ধরে মিনতির সুরে বলতে থাকে
-আপু! তুই যা বলবি আমি মাথা পেতে নেবো। কিন্তু এবার শান্ত হয়ে যাও।
.
সায়ান এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার এগিয়ে এসে বললো
.
-অতসী আমার স্ত্রী! লিগ্যাল ওয়াইফ। আশা করি তুমি বুঝেছো.....
-স্ত্রী? মানে? অতসী তোমার স্ত্রী হলে আমি কে সায়ান?
-তুমি আমার প্রথম স্ত্রী।
.
সায়ানের কথায় অনামিকা দরজা ঘেঁষে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে খুব সহজ গলায় বললো
.
- তোমরা দুজন আমাকে এভাবে ঠকাতে পারো না। সায়ান মাহমুদ! তুমি অতসীকে ছাড়বে। এমনকি এখনি তালাক দিবে।
-সম্ভব নয়। (সহজ উত্তর সায়ানের)
-সব সম্ভব। তুমি মুখে মুখে এখনি তিন তালাক না দিলে আমি কিছু করে বসবো
.
অতসী চুপচাপ উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে বলে
-আপু আমি চলে যাচ্ছি। প্লিজ তুই শান্ত হও। কোনদিন ফিরে আসবো না। আমার জন্য তুই অনেক হারিয়েছিস আর হারাতে হবে না।
.
সায়ান অতসীর হাত খুব শক্ত করে ধরে। হাত ধরে টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে অনামিকার মুখোমুখি দাড় করায়।
.
-অনামিকা! এটা তোমার জীবনের একটা সত্যি! তুমি মানতে বাধ্য। তোমার যতটা অধিকার ঠিক ততটা অধিকার অতসীর।
- আমি মানি না!
.
কথা শেষ করার আগেই অনামিকা অতসীর হাত ধরে টান দিয়ে উল্টো ধাক্কা দেয় যার ফলে অতসী পাশে রাখা ল্যাম্পের স্ট্যান্ডের কাছে ফ্লোরে ধপ করে পড়ে যায়। এদিকে অনামিকা নিজেও সেন্সলেস হয়ে সায়ানের পায়ে লুটিয়ে পড়ে।
.
.
রাত প্রায় ২.২৩
.
দিহান,ইফাদ চলে এসেছে। অনামিকার ব্লাড প্রেশার প্রায় ১৮০ /১৩০ যেখানে নরমাল ১২০/৮০ । অনামিকার মাইনর এট্যাক হয়নি এটাই বেশি। এত দ্রুত ব্রেন হয়তো নিতে পারছে না। কিন্তু যদি বেশি জোর দেওয়া হয় অনামিকা মারা অবধি যেতে পারে।
.
ইফাদ বেশ রেগে আছে। এতটা কেয়ারলেস সায়ান কিভাবে হতে পারলো? অনামিকার লাইফ রিস্ক? হ্যাঁ! মেয়েটা যা করেছে হয়তো ঠিক না। কিন্তু সত্যতা এখনো প্রমাণ হয়নি। তাছাড়া কারো লাইফ নিয়ে এমন রিস্ক নেওয়ার অধিকার কারো নেই।
কিন্তু দিহানের দৃষ্টি অতসীতে স্থির। মেয়েটা অনবরত কাঁপছে। দরজার হাতল ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
দিহানের প্রচন্ড ইচ্ছে করছে অতসীর কাছে এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে দুহাত ধরতে। সাহস দিতে
-লেডি! আমার লেডি লাক তুমি চিন্তা করো না। আমি তো আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
কিন্তু আফসোস আজ দুহাত ধরার অধিকার নেই। না আছে সামনে দাঁড়ানো কোন যোগ্যতা। জেদ এতটা কেড়ে নেবে জানলে দিহান হয়তো জীবন থেকে জেদ শব্দ মুছে ফেলতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়ানের দিকে আগালো দিহান।
মাঝেমধ্যে পুরুষ মানুষের এমন অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় যার কারণে তার হৃদয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ হতে থাকে কিন্তু তবুও মেনে নিতে হয়। কারণ পুরুষ জাতি এমন এক জাতি তাদের ভিতরে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাক তবুও তাদের চেহারায় যেনো সামান্য আঁচ না আসে।
.
.
অতসী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেনো সেদিন সে চলে গেলো না? বারবার কেনো সবার সুখের পথে বিষাদের রুপ নিয়ে আসে?
বাবা হয়তো ঠিক বলে
-আমি মেয়েটাই খারাপ। মন্দ ভাগ্য নিয়ে এসেছি সবার জন্য। আচ্ছা? আমার কি দোষ? আমি তো বলেছিলাম না আমাকে মি.মাহমুদের সাথে বিয়ে দিতে। জোর করে কেনো আমাকে নিয়েই এসব হলো। বাড়ির ভাঙা কুলোটা ব্যবহার হয় সব আবর্জনা পরিষ্কারে। কাজ শেষে ফেলে রাখা হয় কোন একটা কোণায়। আজকে নিজেকে বড্ড তেমন মনে হচ্ছে।
.
ধীরেধীরে সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো অতসী। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে আসতেই গার্ডস গুলো বাধা দিলো। পায়েও যেনো শক্তি নেই। তাইতো অতসী গেটের পাশটায় ঠায় বসে আছে।
.
একটা মেয়ে! কোথায় যাবে, কি করবে, কি হবে আগামী সে জানে না। তবে নিজের বোনের ক্ষতি তো আর করতে পারবে না।
অতসী এখানে থাকলে সায়ান কোনদিন অনামিকাতে আসক্ত হতে পারবে না।
তাই আমাকে দূরে সরে যেতেই হবে।
এমন হাজারো একথা সে কথা ভাবছিলো অতসী ।
.
ভালোবাসা আমি তোমাকে নিয়েই
সবচেয়ে বেশি বিব্রত আজ
তোমাকে নিয়েই এমন আহত
এতো অপরাধী, এতো অসহায়!
তোমাকে নিয়েই পালিয়ে বেড়াই
তোমাকে নিয়েই ব্যাকুল ফেরারী।
(মহাদেব সাহা)
.
সায়ানের কন্ঠস্বর শুনে পিছন ফেরে অতসী। সায়ান এসে চুপচাপ অতসীর পাশে বসেছে।
অতসীর
ঠোটের কোনায় লেগে আছে রক্ত। আস্তেধীরে এগিয়ে যায় রক্তিম ঠোঁটের প্রান্তে।
আজ সায়ান অন্য এক নেশায় ডুব দিয়েছে। নেশা যেনো গভীর থেকে গভীরতম৷
মানুষের রক্তে আলাদা এক স্বাদ আছে। সত্যি কি তাই? না এই স্বাদ শুধুই অতসীর.....
.
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
.
.
আমিনুল সাহেব অনামিকার মুখোমুখি বসে আছে। পুরোটা বিষয় সব নিজের মুখে অনামিকা কে জানিয়েছে সে।
সায়ান অতসীর বিয়ে সে নিজে দিয়েছে এটা সে স্বীকার করে নিয়েছে।
.
অনামিকার দৃষ্টি বাহিরের দিকে। শান্ত স্বরে আমিনুর সাহেবকে প্রশ্ন করলো
-আমি যদি আপনার নিজের সন্তান হতাম তাহলে কি এমন করতে পারতেন?
অনামিকার এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠে আমিনুর সাহেব।
অনামিকা তার সন্তান নয় এটা অনামিকা জানে? কিভাবে?
-না! তুমি আমার সন্তান৷ আমি তোমার বাবা। এমন কেনো বলছো?
তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে অনামিকা জবাব দিলো
-আমি জানি আপনি আমার বাবা নন মামা। আমার মায়ের ভাই।তাইতো আজ আপনি এমন করতে পেরেছেন৷
-তুমি ভুল বুঝছো মা! আমি তোমার.....
-আমার সুখের জন্য? কেমন সুখের জন্য আপনি এমন করেছেন? কি সুখ পাচ্ছি আমি?
-অনামা!
-আজ যদি আমার মা-বাবা থাকতো তারা হয়তো আমার জন্য এমন সিদ্ধান্ত কোনদিন নিতো না।
এমন সময় সায়ান-ইফাদ রুমে প্রবেশ করলো। অতসী চুপচাপ রাইমার হাত ধরে বাহিরে অপেক্ষা করছে। পাঁচ মিনিট পর দিহান আসলো। দিহান এসে অনামিকার মুখোমুখি বসে আছে।
কিছুটা সময় নিয়ে অনামিকাকে দিহান জিজ্ঞেস করলো
-অনামিকা তুমি ঠিক আছো?
অনামিকা চুপচাপ বসে আছে৷ দৃষ্টি এখনো বাহিরের দিকেই। কেমন আছে? হাহ্! হ্যাঁ! ভালো আছে সে বেশ ভালো। এতটা ভালো যে তার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী যেনো শুধু তাকেই ভালো রেখেছে৷
দিহান আবার বলতে শুরু করে।
অনামিকা! আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই।
সায়ানের মা যখন তোমাদের বাড়িতে বিয়ে নিয়ে যায় তখন তুমি আন্টিকে যা নয় তা বলে অপমান করো। ঠিক তার কয়েকদিন পর সায়ানের সাথে দেখা করে সব দোষ অতসী কে দাও৷
এর কারণ জানতে পারি?
অনামিকা তবুও নিশ্চুপ। আমিনুর সাহেব দিহানকে ধমকে উঠে। কারণ এখন এসব প্রশ্ন করার সময় না। অনামিকা অসুস্থ। কিন্তু দিহান অনড়! আজ সে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে অনামিকার সামনে। কারণ এগুলো না জানা অবধি কোন সিদ্ধান্তে কেউ পৌঁছাতে পারছে না।
কিছু সময় পর অনামিকা বিছানা ছেড়ে উঠে অতসীর দিকে এগিয়ে যায়। খুব শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে
-আমার সব কেড়ে নিলি কেনো রে? সারা জীবনের শোধ একবারে তুলে নিলি?
মা -বাবা কেড়ে নিয়ে শান্তি আসেনি?
অনামিকা হঠাৎ হিংস্র হয়ে উঠে। অতসীকে আঘাত করতে লাগলে ইফাদ গিয়ে সামনে দাঁড়ায়।রাইমাকে আগেই ধাক্কা দিয়েছে। সায়ানের পায়ের কাছে পড়েছে সে। সায়ান দুহাতে রাইমা কে তুলেছিলো। মেয়ে মানুষের এত শক্তি কোথা থেকে এলো ভেবে পায় না ইফাদ। খামছে গলার পাশটায় রক্ত বের করে ফেলেছে ইফাদের।
দিহান, সায়ান পিছন থেকে অনামিকা কে ধরলেও অনামিকা শান্ত হচ্ছিলো না। বাধ্য হয়েই ইফাদ খুব দ্রুত সিডেটিভ দিলো। চিৎকার করে কিছু সময় পর ঘুমিয়ে পড়লো।
.
রাইমার হাতে হ্যান্ডরাব দিয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো অতসী। ইফাদের গলা সে নিজেই পরিষ্কার করে নিয়েছে।
আমিনুর সাহেব চুপচাপ বসে আছে। অনামিকা এই রুপ যেনো তাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
ইফাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনামিকা কে একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যাবে।
অথবা এখানে কল দিয়েই নিয়ে আসবে।
দুই ঘন্টার ভিতর একজন মনোবিজ্ঞানী চলে আসলো। সম্পূর্ণ কথা শোনার পর সে হিপনোটিজম এর পরামর্শ দিলো।
হিপনোটিজম হিপনোটাইস কিংবা সম্মোহন বিদ্যা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত এই মানব সমাজে।
একজনের চরম প্রস্তাবনা,তীব্র আবেগ ও কল্পনা শক্তি দ্বারা অন্যের মনকে প্রভাবিত করা এবং পরিচালনা করাকে বলা হয় হিপনোটিজম।
অষ্টাদশ শতকে সম্মোহন বিদ্যার নামকরণ হয় ‘মেজমেরিজম’। অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের ড. ফ্রাণ্ডস্ অ্যান্টন মেজমার সম্মোহন বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। ফলে
এর ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং ডাক্তারবাবুর নামানুসারে সবাই একে ‘মেজমেরিজম’ বলতে থাকে।
এটি এক ধরণের চরম প্রস্তাবনা, শিথিলতা এবং তীব্রতার কল্পনা শক্তির দ্বারা একটি অস্বাভাবিক স্বপ্নায়ন মোহগ্রস্তের অবস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে। যা অনেকটা ঘুমের মত মনে হলে আসলে ঘুম নয়। কারণ বিষয়টি পুরো সময়জুড়ে সজাগ থাকে। অধিকাংশ সময় একে দিবা স্বপ্নের মত মনে হয়। অথবা কোন বই বা মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত। হিপনোসিস চলাকালীন সময়ে মস্তিষ্কের সচেতন অংশকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ঐ ব্যক্তির বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং তাকে রিলাক্স করার দিকে মনোনিবেশ করা হয়। যখন আমাদের মন কোন একটি দিকে নিবিষ্ট হয়, কেন্দ্রীভূত হয় তখনই আমরা শক্তি অনুভব করি। যখন কোন ব্যক্তি সম্মোহিত হয় তখন আমরা তার মাঝে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ও লক্ষ্যনীয় হয়। যেমন তার নাড়ীর স্পন্দন ও কমে যায়, শ্বাস প্রশ্বাস ও কমে যায়। এই সময়ে ঐ ব্যক্তিকে কোন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বা বিশেষ কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
.
সম্পূর্ণ বিষয় ডক্টর নাতাশা সায়ানদের বুঝিয়ে বললো।প্রশ্নের উত্তরগুলো যে চাই। তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে কোন সমস্যা নেই।
কিছুক্ষণ পর অনামিকার রুমে প্রবেশ করলো ডক্টর নাতাশা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অনামিকাকে হিপনোটাইস করতে সক্ষম হলো
.
ডক্টর নাতাশা কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে অনামিকার সাথে আলাপন শুরু করে। যেমন নাম, কি পছন্দ এসব দিয়ে। তারপর ধীরেধীরে অনামিকার জীবনের সম্পূর্ণ এলোমেলো অধ্যায় শুরু হলো
.
(অনামিকার উত্তর)
আমার বয়স তখন সবে মাত্র সাত বছর।আমার ছোট বোন অতসী পাঁচ বছরের। আমি আমার বোন, মা-বাবা বেশ ভালোই ছিলাম। মায়ের আদরে কোথাও কমতি ছিলো। আমি মনে করতাম বোন ছোট তাই মা আমাকে সময় দিতে পারে না। মেনেও নিয়েছিলাম। আমরা সুখী পরিবার, এটা আমি মানতাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমি তাদের আসল মেয়ে না। আমার মা মারা যায় আরো পাঁচ বছর আগে আর বাবা নিজের কাছে নেয়নি। কিন্তু মামার ঘরে আমি রাজকন্যা বৈ আর কি? আদর যত্ন সব পেয়েছি। অতসীর মতো বোন। নিজেকে অনেক বুঝিয়ে সবার সাথে স্বাভাবিক হতে থাকলাম। কিন্তু ওই অভাগী যে দিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। আমিও তেমন।
দিন যেতে থাকে মায়ের অবহেলা বাড়তে থাকে। তার ধারণা আমার জন্য বাবা অতসীকে আদর করতে পারে না।
একজন মেয়ের জীবনে মায়ের প্রয়োজন সব থেকে বেশি কিন্তু আমার তথাকথিত মায়ের কাছে আমার কোন মূল্য ছিলো না।
সে শুধুই অবহেলা করতো। আমারো ইচ্ছে হতো মায়ের সাথে থাকতে, কথা বলতে, একসাথে ঘুমাতে। কিন্তু আমার জন্য তো এসবের সময় ছিলোই না।
রাতের পর রাত বিছানায় একা ঘুমিয়েছি। আর অতসী মায়ের বুকে। তাই একরাতে আমি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। যে অতসীর জন্য আমার মা মারা যায়, বাবা ছেড়ে চলে যায় সে অতসীকে আমি কোনদিন শান্তি দিবো না। ওর থেকে ওর সব আনন্দ কেড়ে নিবো। ওর বাবা শুধুই আমার বাবা হবে। ও যেমন মা পেয়েছে! মা নিয়েই থাকতে হবে আর আমি ওর বাবাকে সম্পূর্ণ আমার বাবা করে নিবো।
এবং আমি খুব দ্রুত করেও নিয়েছিলাম।
.
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
একজন নারী পারে সন্তানকে যেকোন ভাবে গড়ে তুলতে। সন্তান কেমন হবে নির্ভর করে মায়ের উপর। সন্তানের শৈশব হলো কাঁদা মাটির মতো। মা যেমন চায় তেমন শিক্ষা দিয়ে সন্তানের মনুষ্যত্বের কাঠামো তৈরী করতে পারে। তারপর বাস্তবতা, শিক্ষা দিয়ে সেই কাঠামোকে শক্ত, মজবুত তৈরী করার ক্ষমতা শুধু মা রাখে।
মায়ের অবদান সন্তানের জীবনে সব থেকে বেশি। বাবা চাইলেও মায়ের কমতি পূর্ণ করতে পারে।
নারী কি নদীর মতো
নারী কি পুতুল,
নারী কি নীড়ের নাম
টবে ভুল ফুল।
নারী কি বৃক্ষ কোনো
না কোমল শিলা,
নারী কি চৈত্রের চিতা
নিমীলিত নীলা।
(হেলাল হাফিজ).
নারী চাইলে গড়তে পারে ভাঙতে পারে। অতসীর মা নিজের মাঝে কুকড়ে যাচ্ছে। কারণ সে নিজে। সে চাইলে অনামিকার প্রতি যত্নশীল হতে পারতো। তাহলে অতসীর প্রতি তার বাবার এমন মনোভাব কেটে যেতো।
শুরু থেকে! অতসীর জন্মের পর থেকেই সে অতসী অনামিকা কে আলাদা চোখে দেখেছে। খুব কি ক্ষতি হতো যদি দুজন মেয়েকে নিজের বুকে সমান ভাবে আগলে রাখতো? হয়তো পারতো! তাহলে হয়তো আজ দুই মেয়ের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতো না।
ডক্টর নাতাশা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে অনামিকাকে আবার জিজ্ঞেস করে
-তুমি কি মিসেস মাহমুদ কে চিনো?
অনামিকা ধীর গলায় উত্তর দেয়
-হ্যাঁ! আমার শ্বাশুড়ি মা
-তার সাথে তোমার প্রথম দেখা কোথায় হয়?
-নানা বাড়ি
-তুমি কি তাকে আগে থেকে চিনতে?
-না!
-অপমান করেছিলে কেনো?
-আমি করতে চাইনি। কিন্তু সে যখন আমাকে আংটি পড়াতে এসেছিলো তখন আমার এটা ছাড়া উপায় ছিলো না।
-কেনো?
-কারণ......
-কি কারণ?
-আমি.... আমি...
-আচ্ছা! বাদ দাও। তাহলে পরে কেনো সায়ানের সাথে দেখা করেছিলে?
-প্রতিশোধ নিতে
-প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ?
-অতসীর জীবন থেকে সব ভালোবাসার মানুষ কেড়ে নিতে।
-কেনো? অতসী তোমার বোন।
-আমিও মানতে চেয়েছি। বার বার চেয়েছি। যখন যখন সব ভুলে মায়ের কাছে গিয়েছি শুধু শান্ত অপমান ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আমারো মা চাই! বাবার আদর ছিলো কিন্তু মা তো মা! জীবনের সবথেকে খারাপ সময় পার করছিলাম আমি। ভালোবাসার প্রত্যাখ্যান, একটা নতুন স্বত্বা, ক্যারিয়ার সব কিছু আমাকে জেকে ধরেছিলো। আমি চাইলেও মুক্ত হতে পারছিলাম না। তখন আমার মায়ের কোল বেশি প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু যেদিন আমার মায়ের অবহেলার কারণে আমি আমার নিজের ছোট্ট স্বত্বা হারিয়ে ফেললাম! সেদিন থেকে আমি আবার প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেছিলাম।
সায়ানের সাথে দেখা করে সব দোষ অতসীর দেওয়া ছিলো আমার ইচ্ছাকৃত। কারণ সায়ানের মা বুঝতে পারেনি সায়ানের পছন্দ কে ছিলো। এরপর সব ভালোই চলছিলো, সায়ানের সামনে নিজেকে ভিক্টিম প্রমাণ করা, অতসীর দোষ সব কিন্তু ঝামেলা বাজলো তখন যখন সায়ান অতসীকে কিডন্যাপ করতে যায়। আমিও উল্টো চাল দিয়ে নেক্সট মোমেন্টে অতসীর জায়গায় নিজেকে কিডন্যাপ করিয়ে নিয়েছিলাম। আমি জানতাম সায়ান এদিক দিয়ে অনেক দায়িত্বশীল মানুষ। কারণ তার জন্য একটা মেয়ের সম্মানহানী সে মেনে নিবে না। হলো ঠিক তাই! এরপর খুব দ্রুত আমাদের বিয়ের সব ফাইনাল কিন্তু আমি বিয়েটা করতে চাইনি। আবার যখন যখন অতসীর কপালে মা চুমু দিতো তখন তখন আবার পুরোনো ঘা সতেজ হতো। প্রথমে আমার মা-বাবা পরে সন্তান হারিয়ে আমি যেনো আহত সিংহী হয়ে উঠেছিলাম।
-তোমার সন্তান?
আমার সন্তান! আমার ছোট্ট সন্তান! যখন ওকে ছোট্ট ট্রে করে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছিলো আমি শুধু ছোট্ট হাত-পা দেখেছিলাম। তাও আবার ছিন্নভিন্ন! আমার তথাকথিত মায়ের জন্য আমার সন্তান মরে যায়। কারণ পাকা পেপে সে আমাকে খেতে দিয়েছিলো।
আমি জানতাম না পেঁপে বা আনারস খেলে আমার বাচ্চাটার কষ্ট হবে। জানি এতে মায়ের দোষ ছিলো না তবুও সব পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা আমাকে শেষ করে দিচ্ছিলো। তাই আমি এসব করেছি।
কথাগুলো শেষ করার আগেই অনামিকার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ভিষণ ভাবে। তাই ডক্টর নাতাশা অনামিকা কে নরমাল করে। কিন্তু অনামিকা বেশ ক্লান্ত হওয়ায় নেতিয়ে পড়ছিলো বারবার। অতসী, রাইমা দুজনে অনামিকা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই আজ কান্না করছে। রাইমা বেশ স্পষ্ট করেই বলে উঠলো
-কি ভয়ংকর একা ছিলে তুমি আপু! সবার মাঝে থেকেও তুমি ছিলে না। আর আমি কি না! তোমাকে! আপু! প্লিজ মাফ করে দিও।
অতসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে কান্না করছিলো। এদিকে অতসীর মা ঠায় বসে আছে। সবাই নিশ্চুপ।
ডক্টর নাতাশা ইফাদের দিকে এগিয়ে যায় ।
-ইফাদ! সব জানার পর জানিনা তোমাদের সিদ্ধান্ত কি হবে, তবে মেয়েটা মানুষিক ভাবে অসুস্থ। ছোট বয়স থেকে এসব আঘাত নিয়ে, অবহেলা নিয়ে ওর মাইন্ড নেগেটিভ দিকে চলে যাচ্ছিলো। এমন হওয়াটা স্বাভাবিক ছিলো। শুধু হারিয়ে আজ এমন। যদি পারো ভালোবাসায় আগলে রাখো। শাস্তি দিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে ঠেলে দিও না।
একসময় ইফাদ সায়ানের দিকে একটা ম্যাটার্নিটি রিপোর্ট এগিয়ে দেয়। ফাইলের উপরে বাচ্চার ছবি স্পষ্টত।
রোগীর নামে লিখা "অনামিকা ইসলাম "
রিপোর্ট দেখে দিহান বলতে লাগলো....
অনামিকার প্রেগ্ন্যাসির সময়ের সব এই রিপোর্টে লিখা আছে। অতিরিক্ত দুর্বলতা, এবং অক্সিজেনের অভাবে বাচ্চা ১৩ সপ্তাহ বয়সে মারা যায়।তার মানে সায়ানের জন্য প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার সময় টা ছিলো অনামিকার প্রেগ্ন্যাসির সময়। তাই বাধ্য হয়েই অনামিকা সায়ানের মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কারণ অবশ্যই বাচ্চাটা ভালোবাসার মানুষের ছিলো। অনামিকার কথায় স্পষ্ট সে অনামিকা কে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। তাই হয়তো মানুষিক চাপে এমন করতে বাধ্য হয়েছে।
তবে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায় অনামিকার সন্তানের বাবা কে?
পিছন থেকে কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসে। দৃঢ়, স্পষ্ট, বলিষ্ঠ কন্ঠে কেউ বলে
-- অনামিকার সন্তানের বাবা আমি ছিলাম।
পিছন ফিরে ইফাদ খেয়াল করলো আফরিনের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি আর কেউ নয়
আফরিনের বড় ভাই মি. রেদোয়ান রাকিব।
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
ধীরপায়ে রেদোয়ান এগিয়ে যাচ্ছিলো। অনামিকা কে দেখে দুচোখ উপচে পানি আসছে।মেয়েটা কি হতে কি হয়েছে!
আধোঘুমে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে অনামিকা।
রেদোয়ানের প্রথম স্পর্শে হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রেদোয়ান ধীরেধীরে দুহাতে মাঝে অনামিকার ডান হাত আবদ্ধ করে নেয়।
কপালে হাত ঠেকিয়ে চুপচাপ হাটুতে ভর দিয়ে বসে আছে।
অনামিকা চোখ মুখ শক্ত করে আছে।
বাকী সবার দৃষ্টি তখন ওদের দিকে। হাজারো কথার ঝট আজকে খুলছে। আচ্ছা আজকে কি রহস্য সমাধান দিবস?
কিছুটা সময় নিয়ে রেদোয়ান বলতে শুরু করে
"আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আমি প্রথম অনামিকা কে দেখেছিলাম। একলা একটা মেয়ে ক্যাম্পাসের পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে। বইয়ের পাতায় ডুব দিয়ে সে যেনো অন্য এক জগতে। চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে কোন খেয়াল নেই৷ হঠাৎ মেঘ ডাকলো! বৃষ্টি শুরু হলো। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে সে হাটছিলো লাইব্রেরীর দিকে৷ যতক্ষণ লাইব্রেরী খোলা ছিলো ততক্ষণ সে বসে এক মনে পড়ছিলো। বিকেলের দিকে চলে যাচ্ছিলো আমার মন খারাপ হলো কারণ সেই দুপুরের সময় থেকে আমার চোখের প্রতি পলকে যে মেয়েটা ছিলো।
তারপর প্রায় মেয়েটা দেখতাম। খুঁজে বেড়াতাম। কারণ জানি না।হঠাৎ হঠাৎ পেয়েও যেতাম। পুরো ক্যাম্পাস যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো! তখন মেয়েটা বই নিয়ে চুপচাপ এক কোণে বসে পড়তো।একদিন নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করেছিলাম, মেয়েটার কি কোন বন্ধুই নেই?
হ্যাঁ! মেয়েটার কোন ফ্রেন্ড ছিলো না। একদম একা। তবে ভবঘুরে বাচ্চাদের প্রতি বেশ টান। নিজে তাদের জন্য এটা ওটা কিনতো।কেউ সাহায্য চাইলে ফিরিয়ে দিতো না৷
একদিন অনুভব হলো আমি তো ভালোবাসি! হ্যাঁ! এই মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেদিন ভালোবাসার দাবী নিয়ে সামনে যাই সেদিন প্রত্যাখ্যান করে।
সে বলেছিলো
" পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছুই নেই। সব সাময়িক আকর্ষণ কিংবা দায়িত্ব। "
তবুও আমি তো পিছিয়ে থাকিনি। প্রতিনিয়ত দাবী নিয়ে সামনে দাড়িয়েছিলাম। একদিন সে বললো
"আপনি কি জানেন?আমি অনাথ! আমার বাবা-মা কেউ নেই? এমন মেয়েকে করুনা করা যায় ভালোবাসা যায় না।"
"তোমার মা-বাবা নেই এটা তোমার দোষ না। আর ভালোবাসতে হলে এসবের প্রয়োজন নেই। "
" দুদিন পর এই আমি আপনার কাছে অসহ্য হয়ে উঠবো! তখন?"
"আমি ভালোবেসে আগলে রাখবো।"
"আমাকে ভালোবেসে আপনি কি করতে পারবেন?"
"তুমি যা বলবে তাই!"
"বিসর্জন দিতে পারবেন আপনার ওই বুকের সৌন্দর্য?"
"জান দিতে পারবো এটা আর কি?"
"পুরুষ মানুষের গোপন সৌন্দর্য তার বুকের ঘন লোম। কোন নারীর জন্য এটা বির্সজন দিয়েন না। আমার থেকে ভালো মেয়ে পাবেন।আমার জন্য নিজের সময় নষ্ট করবেন না। ভালো থাকবেন।"
দুদিন পর যখন সে আমাকে দেখলো অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। হয়তো ভাবতে পারেনি আমি এমন করবো। কিছুক্ষণ পর আমার বুকে হামলে পড়ে কাঁদতে থাকে। সেদিনের কান্নায় কিছু তো ছিলো! হয়তো একটু ভালোবাসা পাওয়ার পূর্ণতা!
শুরু হয় আমদের পথ চলা৷ অতসী, মামি,মামা সম্পর্কে সব বলতো, প্রচন্ড কান্না করতো যেদিন অতসীকে ওর জন্য অপমানিত হতে হতো। বারবার প্রতিজ্ঞা করতো অতসীকে কিছুই বলবে না। মাফ চাইবে বার বার ভুলেও যেতো।
এভাবেই চলছিলো। একদিন আমার মাথায় ভূত চাপলো ! বিয়ে করার ভূত। অনামিকা প্রস্তাব পাঠাতে বললে আমি বলেছিলাম পরে পাঠাবো তো। আগে আমরা নিজেরা বিয়ে করে নিবো। এতে ফ্যামিলি না মানলেও আলাদা করতে পারবে না।
প্রথমে সে রাজি হয়নি। কিন্তু পরে বাধ্য হয়। হুজুর আমাদের কালেমা পড়ে বিয়ে দেয়। তিন কবুলে বিয়ে!
তারপর বেশ চলছিলো। আমার তখন অনামিকা কে শারিরীক ভাবে চাই ! খুব চাই। কিন্তু অনামিকার এবারো রাজি না। পরে যখন বলি আমার হক আছে সে ফেরায় না।
সেরাতের পর থেকে অনীহা আসতে শুরু করে। তখন ওর কথা,কান্না অসহ্য লাগতো। ইগ্নোর করতাম।
কয়েকদিন পর যেমন মুখে মুখে কবুল বলে বিয়ে করেছিলাম ঠিক তেমন তালাক বলে সব শেষ করে দেই। আমি জানতাম অনামিকার কেউ নেই। ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
কিন্তু বোকা মেয়েটা কি করলো জানো? বোকা মেয়েটা ক্যাম্পাসে ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করলো।বন্ধু বানাতে লাগলো। হয়তো মনে করেছিলো আমি জেলাস হয়ে ফিরে আসবো। কিন্তু তার প্রতি আমার একরাশ অনীহা! আমাকে ফিরে আসতে দেয়নি। কয়েকদিন পর কল দিয়ে সে বলল সে কন্সিভ করেছে। আমি সহজ ভাবে এবোরশন করাতে বললাম। সে প্রতিউত্তরে বলেছিলো
"আমি এবোরশন করাবো না।নিজে এতটুক যোগ্যতা রাখি নিজের সন্তান কে আগলে রাখার,মানুষ করার। ভয় নেই! কোনদিন সামনে এসে দাঁড়াবে না, অধিকারের দাবী নিয়ে। "
তারপর আর তার সাথে কথা হয়নি। পরে একদিন জানতে পারলাম বাচ্চা কে এবোরশন করিয়েছে। মেজাজ গরম হয়ে যায় কিন্তু পরে জানতে পারি অক্সিজেনের অভাবে আমাদের সন্তান ১৩ সপ্তাহে মারা যায়। কারণ আমি, আমার দেওয়া টেনশন হয়তো নিতে পারেনি তাইতো এমন হলো।
তারপর অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। তারপর সেদিন আফরিন যখন ফেসবুকে অনামিকার সাথে ছবি আপ্লোড করে তখন দ্রুত দেশে ফিরে এসেছি।আফরিনের থেকে সব জেনে নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি।
আমি জানি আমি খুব খারাপ। আমার উচিৎ ছিলো যখন অনামিকা শুরুর দিকে অতসী বা মা নিয়ে পাগলামো করতো সে বিষয় সিরিয়াসলি নেওয়া।কারণ ওর ব্যবহার মাঝেমধ্যে উগ্র হয়ে উঠতো যা একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি আমলে নেইনি। ভেবেছিলাম হয়তো স্বাভাবিক কিন্তু এসব মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না।
রেদোয়ানের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে। ঠিক সে মুহূর্তে আফরিন অন্য এক কথা বলে বসলো।
"আমরা সবাই এটা জানি সায়ানভাই অতসী কে ভালোবাসে। বিয়েটা কি আজ তাও ক্লিয়ার হলো। তাই বলছিলাম তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াই ভালো। অনামিকা আপুকে আমাদের মেনে নিতে সমস্যা নেই৷ তাই বলবো যত দ্রুত ডিভোর্স করানো যায় তাই দেখা উচিৎ।
আফরিনের কথায় এবার রাইমা ফুসে উঠলো। কিছুটা চিৎকার করেই বললো
" কেনো গো? মেয়েটাকে তোমাদের মানুষ মনে হয় না? যার যখন ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করবে? অনামিকা আপু যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে থেকে সায়ান ভাইকে ডিভোর্স না দিবে সে পর্যন্ত ডিভোর্স এর কথাও কেউ মুখে আনতে পারবেন না। যখন ইচ্ছা হবে মাথায় নিয়ে নাঁচবেন ইচ্ছা হবে দূরে ফেলে দিবেন তা হচ্ছে না। দেখি কে কি করে?"
চলবে
চলবে
#দায়িত্বের_সংসার
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৪২
"শাস্তি? ঠিক কি শাস্তি দিতে চাইছেন অনামিকা আপু কে? কি করবেন? মারবেন? না কি পুলিশে দিবেন? না! মানে আমি তো এদুটো ছাড়া কোন শাস্তি খুজে পাচ্ছি না। অনা আপুর জন্য আপনাদের কোন সিম্প্যাথি না থাকলেও আমার হচ্ছে। মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই যে এক প্রকার গুমোট জীবন পার করেছে এটা চোখে পড়ছে না? ক্রিমিনাল মাইন্ডেড? স্বাভাবিক! আমরা মানুষ চামড়ার মুখ দিয়ে অনেক কিছু বলতে পারি। কিন্তু ততক্ষণ অবধি সমস্যা অনুভব করতে পারি না, যতক্ষণ আমাদের নিজেদের উপর না আসে৷ অনামিকা আপু যাই হোক না কেনো সে স্বাভাবিক মাইন্ডে এসব করতো না। সে কারো দয়ার পাত্রী না। আমি বলছি না দয়া দেখাতে৷ কিন্তু তার অনুমতি ব্যতীত, কোন প্রকার জ্ঞানহীন অবস্থায় তার ডিভোর্স করানো উচিৎ না । তার জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কেউ আমাদের দেয়নি। অথচ দেখেন কোন না কোন ভাবে আমরা সবাই এই জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছি।
আমি জানি অতসী কতটা সহ্য করেছে কিন্তু অতসীর জন্য বাবা বাদ দিয়ে আমরা সবাই ছিলাম। অনামিকার কে ছিলো? কেউ না। তাছাড়া হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না।ঠিক তেমনি অতসী, অনামিকা দুজন আলাদা মানুষ। অতসীর ধৈর্যের প্রশংসা করতে আমি বাধ্য সেদিকে অনামিকার পরিস্থিতিতে আমি আশাহত। আমি নিজেও অনামিকা আপুকে বারবার কথা দ্বারা অপমান করেছি। কিন্তু আজ বুঝছি মেয়েটা কতটা ভয়ংকর একা ছিলো।
একটা গল্প যখন আমরা পড়ি
আমরা গল্পে একটা নায়িকার এমন কষ্টে কষ্ট পাই ঠিক কিন্তু সে বাদে অন্য কারো এমন কষ্ট মেনে নিতে পারি না। গল্পটা শুধু নায়িকা নিয়ে হয় না। একটা গল্প তখন স্বয়ংসম্পূর্ণ যখন প্রতিটি চরিত্র পরিপূর্ণ। প্রতিটি মানুষের জীবনে গল্প থাকে, থাকে বেঁচে থাকার লড়াই। বার বার হারতে হারতে জিতে যাওয়া। আমি অনামিকা আপুর পক্ষ নিচ্ছি না। বলছি না সে যা করেছে এর জন্য অবশ্যই সে ধিক্কারের যোগ্য কিন্তু তাই বলে তার অসহায়ত্বের সুযোগ ব্যবহার করে আমরা কি তার থেকে খুব ভালো কাজ করছি?
এখন আমাদের তার প্রয়োজন। সাপোর্ট প্রয়োজন, ভালোবাসা প্রয়োজন। এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে বড্ড একলা তো সারাজীবন ছিলোই এখন হয়তো মরেও যাবে।
সায়ান ভাই অতসীকে ছাড়বে না এটা আমার বিশ্বাস। আবার সুস্থ মস্তিষ্কে
অনামিকা আপু সায়ান ভাই আর অতসীর মাঝে আসবে না। আমি অতসীর কথা চিন্তা করি কিন্তু অনামিকা আপুকে ফেলে দিতে পারছি না। তার ভালোবাসার প্রয়োজন। কেয়ার,ভালোবাসা সব দিয়ে অনামিকা আপুকে নরমাল লাইফে আমরা ছাড়া কে ফিরিয়ে আনবে?
রাইমার কথায় ইফাদ সহমত হলো। সায়ান অতসীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে
"এই মেয়েটার তাহলে কি দোষ? এই মেয়েটা কেনো সহ্য করছে? তবে যাইহোক না কেনো আমি তোমাকে ছাড়বো না অতসী। "
আমি একা ।
এই ব্রক্ষ্মান্ডের ভিতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা ।
আমার অন্তর রক্তাক্ত ।
আমার মস্তিষ্ক জর্জরিত ।
আমার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রিত ।
আমার শবীর লাবন্যহীন ।
আমার জীভ কাটা ।
তবু এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন আমাকে কাতর করে
আমাকে তড়ায়...(রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্)
অনামিকা সত্যি বড্ড একা। ক্লান্তিতে দুচোখ ভেঙে আসলেও নিজেকে সামলে নিচ্ছে সে। শাওয়ারের পানিতে ভিজে যাচ্ছে পুরো শরীর। মা কে তার মনে নেই৷ বাবাকে দেখেছে বছর দুয়েক আগে। সংসার করছে দিব্যি।আজকে নিজের জীবন কেমন যেনো খয়রাতী জীবন মনে হচ্ছে। এমন জীবন তো কাম্য ছিলো না। ভুলেও সে কারো করুণার পাত্রী হতে চায় না।
নিজেকে গুটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো অনামিকা। বাহিরে সবাই বসে আছে।
হালকা গতিতে অতসীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো অনামিকা। অতসী এগিয়ে এসে দুহাতে আকড়ে ধরতে চাইলে অনামিকা ছাড়িয়ে নেয়। আর কত করুণা! আর চাই না তার।
"অতসী! তোকে এখন প্রচন্ড আদর করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু একটু পরেই আবার তোকে খুন করতে ইচ্ছা করবে। তাই কথাগুলো বলছি।
আমি জানি না কেনো আমার সাথেই এমন হয়েছে। জানতেও চাই না। তোর সংসার তুই সামলে নে। আমাকে মুক্তি দে। আমি মুক্তি চাই৷ কিন্তু হ্যাঁ! সায়ান মাহমুদ! তোমার সাথে আমার বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন টা ফেইক ছিলো। চাইলে খোঁজ নিতে পারো। এই কারণে আমি শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে রাজি হই নি। না সে এক মাসে তোমার কাছাকাছি এসেছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম অতসীর প্রতি ঘৃণা কি আমার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে? যদি করে তাহলে ধুমধামে বিয়ে করে নিবো।এভাবে আমার প্রতিশোধ শেষ হবে। কিন্তু কথায় আছে না? রাখে আল্লাহ্ মারে কে?
যাইহোক যেখানে কোন সম্পর্ক নেই সেখানে ডিভোর্স আসবে না। "
অতসীর সাথে কথা শেষ করে অনামিকা রেদোয়ানের দিকে এগিয়ে যায়। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলতে থাকে
"আমি মনে করতাম আমার মা আমার সন্তান হয়ে ফিরে আসবে! কিন্তু আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি। কোথাও না কোথাও আমার সন্তানের খুনী আপনি। কোন মা কি পারে তার সন্তানের খুনীকে মাফ করে দিতে? আমিও পারবো না। তাই আমার সামনে কোন দাবী নিয়ে আসবেন না। "
কথাগুলো বলে অনামিকা মামা কে গিয়ে হাত ধরে বললো
"কয়েকটা দিন! মাত্র সাতটা দিন আমাকে আপনার বাসায় ঠায় দিন। আমি চলে যাবো। "
সেদিন অনামিকা সত্যি চলে যায় অতসী-সায়ানের জীবন থেকে। তারপর সায়ান খবর নিয়ে জানতে পারে সত্যি তাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। এতটা নিখুঁত ভাবে সব অনামিকা হ্যান্ডেল করেছিলো যেখানে সন্দেহের কোন অবকাশ ছিলো না।
অনামিকার মাইন্ড এতটা প্রতিশোধ নেশায় মত্ত ছিলো ভাবলেই গা শিউরে উঠে। অনামিকা রেদোয়ান কে মাফ করেনি । রেদোয়ান আশা ছাড়েনি। সাতদিন পর অনামিকা ইন্ডিয়ার ব্যাঙ্গালুরু চলে যায় । কারণ সে নিজেকে সময় দিতে চায় । কেউ বাধা দেয়নি।
অতসী সায়ানের লাইফ ভালোই চলছিলো৷ কিন্তু হঠাৎ একদিন অতসীর কথায় সায়ানের সব যেনো বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। যে অতসী কে পাওয়ার জন্য এত কিছু! সে অতসী সায়ান কে ছেড়ে যেতে চাইছে?
"মি.মাহমুদ! সব কর্মের ফল না পেলেও কিছু কর্মের শাস্তি এই পৃথিবীতে পেয়ে যেতে হয়। ধরে নিন না এটা আমার প্রতি,আমার বোনের প্রতি করা প্রতিটি অন্যায়ের শাস্তি।"
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
"কোন ধরনের শাস্তি এটা? তুমি বললে আমার মেনে নিতে হবে?"
"হবে তো!"
"মিসেস মাহমুদ! আমার জেদ সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা কি নেই?"
"বিয়ের পরে আপনার কাছে আমি কিছু চেয়েছি? শুধু আজকে......."
"চাওয়া না চাওয়া ফ্যাক্ট না! ফ্যাক্ট ইজ দ্যাট, আই কান্ট এলাউ দিস "
"আপনি কি চান না মানুষ আমাকে আমার নিজের পরিচয়ে আমাকে চিনতে পারবে?"
"তুমি আমার কোম্পানি জয়েন করো! ইনফ্যাক্ট তুমি চাইলে আমি দেশেই....."
"মি. মাহমুদ! এটা একটা স্বপ্নের মতো। আমি ফ্রি কিছু চাই না। সাফল্যের কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই। আপনি যেতে দিতে না চাইলে আমি যেতে পারবো না। কিন্তু এভাবে হয়তো আমার সব ইচ্ছেগুলো মাটিচাপা পড়ে যাবে। "
অতসীর কথা শেষ হতে না হতেই সায়ান দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যাবেই না কেনো? যে অতসীর জন্য এ গল্পের শুরু সে গল্পের অতসী এভাবে সায়ান কে ছেড়ে দুই বছরের নামে সিংগাপুর চলে যাবে? শুধু মাত্র একটা ভালো কোম্পানির থেকে জব অফার এসেছে বলে? গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর আরো বিস্তর জানতে পারবে বলে? আবার বলছে কি না এসব শাস্তি? দুই বছরের হিসাব ও জানে না কি? দিহানের বাচ্চাকে পানিতে চুবিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে। আজ ও যদি অতসী কে সে এসব না শিখাতো তাহলে হয়তো এমন স্বপ্ন অতসী দেখতো না।
বেশ রাত করেই সায়ান বাসায় ফিরে। অতসী দিব্যি বসে আমলকি খাচ্ছে।বেশ রাগের সাথে
সায়ান এসে হাত থেকে আমলকি নিয়ে নিলো।
অতসী ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। কথা না বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো সায়ান। ফিরে এসে সায়ান অতসীকে খাবার খাওয়ানোর জন্য হাত বাড়াতেও অতসী বললো
"আজ আমি দেই? "
সায়ান মুচকি হেসে খাবার অতসীর মুখের দিকে খাবার তুলে দিয়ে বললো
"আমরা একজন অপর কে কতটা ভালোবাসি এটা জানতে হলেও, বুঝতে হলেও আমাদের দুজন, দুজনকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। আজ থেকে ঠিক পাঁচ দিন পর তোমার যাওয়ার সময়৷ আশা করি বুঝেছো। "
কথাগুলো বলার সময় সায়ানের কন্ঠস্বর পাল্টে যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে অতসীর মুখে খাবার তুলে দিলো।অতসীর গলা দিয়ে আজ যেনো খাবার গুলো কেনো নামছিলো না! কে জানে?
সারা রাত অতসী সায়ানের বুকের পাশে মাথা রেখে জেগে ছিলো। ইদানীং আগের মতো অস্বস্তি কাজ করে না। কিন্তু অনামিকার এসব কাজগুলো মানতে বেশ কষ্ট হয়। ভাবতেই অবাক লাগে সায়ান,ইফাদ কিংবা দিহানের মতো মানুষদের এত সহজে মিথ্যে বিয়ের অভিনয়ে এত নিখুঁত ভাবে কিভাবে ফাসিয়ে ফেললো?
পরের দিনগুলো খুব দ্রুত পার হলো। অতসী যেদিন চলে যাচ্ছিলো অতসীর বাবা এসেছিলো কিন্তু সায়ান তার সাথে অতসীকে একা ছাড়েনি। এয়ারপোর্টে সবাই ছিলো কিন্তু সায়ান ছিলো না। বাসা থেকে তাকে বিদেয় দেয়৷ কারণ সে অতসীর চলে যাওয়া হয়তো সহ্য করতে পারছিলো না।
সবাইকে ছেড়ে যেতে অবশ্যই খারাপ লাগছিলো। অতসী ভেবেছিলো মি.মাহমুদ অন্তত আসবে। এয়ারপোর্ট অবধি তার হাতে হাত রেখে যাবে কিন্তু এমন হলো না। শুধু ইফাদ এসেছে সাথে।
ইমিগ্রেশন শেষ করে অতসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। খুব কষ্ট হচ্ছিলো অতসীর। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে পাড়ি জমালো স্বপ্নের দেশে।
প্রথমে অতসীর সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছিলো। জলবায়ু পরিবর্তন, ঠিক মতো কিছুই করতে পারতো না,খেতে বসলে সায়ান কে মনে করে কেঁদে উঠতো। সবসময় অতসী সায়ানের কমতি অনুভব করতো। মুঠোফোনের ওপর পাশে সায়ানের কন্ঠে শুনে মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠতো অতসী। তবুও অতসীর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে আসতে দিচ্ছিলো না সায়ান। কারণ ভালোবাসার জন্য নিজের মন কে আকাশের মতো উন্মুক্ত করে দিতে হয়, যাতে ভালোবাসা শুধু যেনো আপন আকাশেই উড়তে পারে। উড়ার জন্য যেনো অন্যের আকাশে পাখনা না মেলে!
নিজেকে সামলে, গুছিয়ে উঠতেই কেটে গেলো তিনটে মাস। তিন মাসে অনেক কিছু শিখেছে অতসী৷ মানুষ চিনেছে, পরিবেশ বুঝে চলেছে৷ পাওয়ার খাতায় জমা অনেক হয়েছে শুধু সায়ানের উপস্থিতির অনুভব গুলো বাদে৷
আজ কোন এক ফ্রেন্ডের বিয়েতে ইনভাইট করেছে অতসীকে। খ্রিস্টানদের বিয়ে কখনো অতসী দেখেনি।তাইতো বিনা বাক্যে রাজি হয়েছে। মোটামুটি থিম অনুসারে লং ড্রেস পড়েছে৷ অফ হোয়াইট কালারের, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে, সাথে কিছু ফুল। দ্রুত তৈরী হয়ে পৌঁছে যায় ভেনুতে। বিয়ের সব নিয়ম সে দেখতে চায়।
বিয়ে শেষ হওয়ার পর একটা সময় নতুন বউ নিজের হাতের ফুল ছুড়ে মারে। যা অন্য কোন মেয়ের হাতে পড়লে তার বিয়ে দ্রুত হয় এটা তাদের মান্যি। কিন্তু এবার ফুল এক ছেলে পেলো।
ছেলেটা অতসীর কলিগ। হুট করে এসে অতসীর সামনে হাটুগেড়ে ফুল নিয়ে বসে। চারপাশের সবাই হৈ হুল্লোড় করে অতসীকে প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে বলছিলো । অতসী এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। বেশ ঘাবড়ে নিজের দুহাতে কাপড় শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটা যেই না অতসীর হাত ধরতে যাবে ঠিক তখন কেউ একজন ছেলেটাকে সজোরে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
অতসী কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনের ছেলেকে একজন মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে।সেদিকে তাকিয়ে কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় সে। এ আর কেউ না মি.সায়ান মাহমুদ।
হাসবে না কাঁদবে অতসী বুঝতে পারে না। দৌড়ে সায়ানের কাছে যেতেই সায়ান হাত দিয়ে ইশারা করে থেমে যেতে।
চারপাশে লোকজন জমে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে কয়েকজন মিলে সায়ান কে ছাড়িয়ে নিয়েছে।পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিলো। পরিস্থিতি সামলে উঠতে অতসী সবাইকে বলে সায়ান ওর স্বামী। কারণ না হলে সায়ানের জেলে যাওয়া নিশ্চিত।
সায়ান অতসীকে টেনে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে।
রাস্তায় ফুটপাত ধরে হাটছিলো অতসীর হাত ধরে। গাড়ির কাছে আসতেই অতসী বললো
"মি.মাহমুদ আপনি শার্ট খুলে ফেলুন। ভিজে গেছে তো! "
"কেনো আমার জরিমানা করানোর খুব প্রয়োজন? "
"মানে? জরিমানা আসলো কোথা থেকে? "
"এদেশের নিয়ম এটা। খালি গায়ে কেউ রাস্তায় চললে তাকে জরিমানা করা হয়। "
"আচ্ছা! আপনি এখানে? কিভাবে? কখন? কবে এসেছেন? "
"তোমার সাথে একই ফ্লাইটে!"
রাইমা-দিহানের সম্পর্ক ইদানীং বেশ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।একদিন বিকেলে দিহান খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু চিন্তা করছিলো। কফির মগ সামনে রাখতে রাখতে রাইমা জিজ্ঞেস করলো
"কি হয়েছে? এত কিসের চিন্তা?"
"ভাবছি!"
"কি?"
"আচ্ছা! এটা কখনো ভেবেছো? সায়ান যদি আন্টিকে অতসীর কথা স্পষ্ট ভাবে বলে থাকে, তাকে দেখিয়ে থাকে তাহলে আন্টি কেনো অনামিকার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলো? অনামিকা অপমান করার পরেও কেনোই বা আন্টি বিয়েতে রাজি হলো? সব রহস্যের সমাধান হলেও ঘুরে ফিরে আমরা সেখানেই আটকে আছি। কারণ মূল অধ্যায়ে আমরা এখনো যেতেই পারিনি। "
চলবে
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
এপার্টমেন্টে ফিরে এসে অতসী দ্রুত ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়ে নিলো। সায়ান অতসীকে শাড়িতেই পছন্দ করে। ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস বের করে নিয়ে দ্রুত ভুনা খিচুড়ির প্রিপারেশন নিচ্ছিলো। ইতিমধ্যে সায়ান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। কলিংবেল বেজে উঠতেই সায়ান বেরিয়ে যায়। ফিরে আসে লাগেজ হাতে।
অতসীর যখন রান্না শেষ হলো তখন সায়ান কাউচে বসে ল্যাপটপে কিছু করছিল।অতসী পাশে বসতেই দেখতে পেলো ল্যাপটপের স্ক্রিনে আর কিছুই না কিচেনের সব কিছু দেখা যাচ্ছে। কয়েক মুহুর্ত সময় লাগলো পুরো বিষয় বুঝতে। এর মানে হচ্ছে মি.সায়ান মাহমুদ অতসীকে নজর বন্দী করে রেখেছিল।পুরো বাসায় সিসি ক্যামেরা ইন্সটল করা।
পা তুলে অতসী সায়নের পিঠের উপর ভর দিয়ে বসে। এখানে আসার পর একবারও কথা বলেনি সায়ান৷
অভিমান? হুম! তাইতো।
"মি.মাহমুদ! আপনি এখানে কেনো এসেছেন? মিস করছিলেন আমায়? "
"না!"
অতসী ভেবেছিল উত্তর হ্যাঁ হবে কিন্তু না! মুখের উপর না! এ বড্ড অন্যায়!
"তবে কেনো এসেছেন? আমি তো আপনাকে মিস করিনি! "
সায়ান অতসীর কথার উত্তর না দিয়ে উঠে চলে যায়। ফিরে আসে হাতে খাবার নিয়ে। প্রায় তিনমাস পর অতসী আজ সায়ানের হাতে খাবার খাবে। খুশিতে ডগমগ।
সায়ান অতসীর মুখের দিকে খাবার তুলে দিয়ে শান্ত গলায় বললো
"তোমার কলিগরা জানে না তুমি বিবাহিত?"
"কি জানি!"
"কখনো বলো নি?"
"কেউ জিজ্ঞেস করেনি তো! আচ্ছা, আপনি বলেছেন আপনি আমার সাথে এসেছেন তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন? "
অতসীর কথায় সায়ান বাম পাশের জানালার দিকে ইশারা করে। তারমানে অতসীর ধারণা ঠিক। কেউ একজন জানালার পর্দার আড়ালে অতসী কে দেখতো ।কেউ যে অতসীকে ফলো করে এমন কথা সায়ান কে অতসী বলেছিল। কিন্তু সায়ান কথা গায়ে মাখেনি। আজ বুঝতে পারছে কেনো গায়ে মাখেনি।
"মি.মাহমুদ! আপনার ব্যবসা- বানিজ্য তো লাটে উঠবে!
" কেনো?"
"বাহ্! আপনি এখানে আমার সাথে থাকবেন, দেশের বাহিরে তাহলে ওসব কে দেখবে? "
"কাল সকালে বুঝতে পারবে।"
খাওয়া শেষে সায়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে লাইটস অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়৷ অতসী কি ভেবেছিল কাল রাতেও যে সায়ান আজ এভাবে এখানে থাকবে?
সায়ানের হাতে হাত রেখে অতসী বললো
"মি.মাহমুদ! অভিমান?"
"নাহ্!"
"তাহলে কথা বলছেন না কেনো? "
"কারণ অতসী তুমি সব বুঝতে পারো, শুধু আমায় ছাড়া। "
"ভালোবাসি তো!"
অতসীর কথায় সায়ান ধড়ফড়িয়ে উঠে লাইট অন করে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে
"কি বললে?"
"ভালোবাসি তো!"
"সিউর তুমি?"
"নাহ্! আমি সিউর হবো কেনো? সিউর তো হবে সাহারা আপু! আহা কত প্রেম। যত্তসব"
"মেয়েদের নিজেদের মধ্যে এই একটা গুণ খুব ভালো ভাবে রপ্ত করতে জানে।তা কি জানো? আর যাইহোক প্রিয় মানুষকে যদি কেউ ভুলেও বলেছে যে পছন্দ করে তবে সারা জীবনেও তার নাম ভুলবে না এবং সময় সময় প্রিয় মানুষকে এটা নিয়ে খোটা অবশ্যই দিবে। "
"ভালো করি।"
"এটা বেশ! অভিমান করার কথা আমার, আর এখানে উল্টো? "
সায়ানের কথায় উত্তর না দিয়ে অতসী নাক ফুলিয়ে বসে আছে৷ রাগ করলে মানুষ গাল ফুলিয়ে বসে থাকে কিন্তু অতসীর নাক ফুলে যায়। সেই ফোলা নাকেই টুক করে সায়ান একটা কামর বসিয়ে দিয়েছে।
সে রাতে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। শুরু হলো নিত্যনতুন ভাবে একে অপরকে আবিষ্কার করে নেওয়া।
কয়েকদফা ভালোবাসাবাসির পর ভোর রাতে কখন অতসী ঘুমিয়েছে নিজেও জানে না। কিন্তু সায়ান পুরো সময় জেগে রইলো। পুরো দুটো বছর এনালাইসিস করতে ব্যস্ত সায়ানের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো অতসী ফোনে আসা কলে।
ম্যাসেঞ্জারে এত সকালে কল? হিসেব করে দেখলো বাংলাদেশে তখন বেলা প্রায় এগারোটা।
অনামিকার কল দেখে সায়ান মোটেও অবাক হয়নি। সায়ান জানে ইদানীং দুই বোনের মধ্যে বেশ সখ্যতা। বাবা-মায়ের ভুলের জন্য মাঝপথে দুবোন আলাদা হয়েছিল কিন্তু সময়ের স্রোত সব ঠিক করেছে। তবুও সায়ানের মনে অনামিকা কে নিয়ে একটা খুঁতখুঁত ভাব কাজ করে। হয়তো অনুশোচনা! যাইহোক ফোন সাইলেন্ট করে রেখে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো সায়ান।
একজন সফল পুরুষের পিছনে যেমন একজন নারীর অবদান থাকে ঠিক তেমন একজন সফল নারীর পিছনে থাকে একজন পুরুষের অবদান।সায়ান অতসীর জন্য এক আশীর্বাদস্বরুপ অবদান রেখেছে। সবসময় ছায়ার মতো সাথে চলেছে, কেয়ার করেছে,শাসন করেছে,ভালোবেসেছে,ভুল শুধরে দিয়েছে। তাইতো ঠিক দুবছর পর আজকে সেই কাংখিত দিন এসেছে।
Best women entrepreneur এর খেতাব আজ অতসী পেতে চলেছে। দেশে, বিদেশে প্রায় ২০০ জন দরিদ্র নারীদের নিয়ে কাজ করে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পেরেছে। এতে দিহান, রাইমার অবদান কিন্তু কম নয়! দিহানের হাত ধরে কাজের শুরু, কিন্তু সায়ানের সাথে পথচলা।
হ্যাঁ! দুই বছর পার হয়েছে। সায়ান নিজের বিজনেসকে মাল্টিন্যাশনাল করতে সক্ষম হয়েছে সেদিকে অতসী নিজেকে প্রমাণ করেছে।
এমন একদিন সায়ানের অফিসে একটা পার্সেল আসে। নাম,ঠিকানা কিছুই নেই। শুধু সায়ানের নামে এসেছে এটাই। পার্সেল খুলে সায়ান হতভম্ব হয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর দ্রুত উঠে ফিরে আসে অতসীর কাছে।
অতসী তখন দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। অনেক হয়েছে। এবার ফিরে যাবেই। সায়ান কে এসময় ফিরে আসতে দেখে অতসী উঠে দাঁড়ায়। ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?কিছু একটা টেবিলে রেখে ধীরেধীরে অতসীর দিকে এগিয়ে আসে সায়ান।
অতসীর কথায় উত্তর না দিয়ে হাটু গেড়ে অতসীর সামনে বসে। পেটের দিকটার কাপড় সরিয়ে দিয়ে অজস্র ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছিলো।
অতসী সায়ানের চুলে হাত রেখে বললো
"এত সহজে বুঝলেন কিভাবে? আমি তো মনে করেছিলাম আপনি ভয় পাবেন। কে পাঠলো? চিন্তায় থাকবেন আর আপনি? আমার সব আশায় পানি ফেলে দিলেন। "
সায়ান উঠে দাঁড়িয়ে প্যাকেট থেকে প্রেগন্যান্সি কিট বের করে অতসীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে
"এটা তুমি ছাড়া আর কেউ করবে না মিসেস.মাহমুদ! রেজাল্ট পজেটিভ। আমি বাবা হবো। অথচ তুমি আমাকে না জানিয়ে নিজের মুখে না বলে কুরিয়ার করে আমাকে এটা পাঠিয়েছো।শুধু মাত্র আমি যেনো চিন্তায় থাকি কে পাঠাতে পারে? অথচ এটা চিন্তা করলে না? আমি তোমার সব পাগলামির সাথে খুব ভালোভাবে পরিচিত। তবে এ ভারী অন্যায়!"
"অন্যায়?"
"তা নয় তো কি? এভাবে সকাল সকাল সারপ্রাইজ দেয়? জানো কতটা দ্রুত ড্রাইভ করে এসেছি। এদিকে ট্রাফিক রুলস অন্যদিকে এই নিউজ। আমার মধ্যে কি চলছিল শুধু আমিই জানি। জরিমানা হয়েছে। আর আমি কখনো কারো জরিমানা মওকুফ করিনা। "
বেশ কয়েকদিন পর সায়ান-অতসী দেশে ফিরে আসে। অতসীর আদর যত্নে কমতি রাখছে না সায়ান। মাঝে বড়মা এসে অতসীর সাথে দেখা করেছে।
অতসীর বাবার প্রতি দুই মেয়ের এখন কোন অভিযোগ নেই। বাবা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক। অনামিকা এখন দরিদ্র বিধবা মহিলা,এতিমদের নিয়ে কাজ করছে। চেষ্টা করছে তাদের সুন্দর একটা জীবন উপহার না দিতে পারলেও যেনো স্বাভাবিক একটা জীবন দিতে পারে। কিন্তু রেদোয়ান কে মাফ করতে পারেনি। আদৌও পারবে কি না সে জানে না। তবে রেদোয়ান হাল ছাড়েনি। অনামিকার সাপোর্ট হওয়ার চেষ্টা সে করেই চলেছে।
আজ সায়ানদের বাসায় সবাই একত্র হয়েছে। অনেকদিন পর পুরো ফ্যামিলি, দিহান-ইফাদরা সবাই একসাথে।
কিন্তু সকাল থেকে অতসী বার চারেক বমি করে ক্লান্ত শরীরে গা এলিয়েছে মায়ের কাছে। এসির মধ্যেও ঘামছে সে। সায়ান অতসীর পায়ের কাছে বসে আছে। অনামিকা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছিল তখন রাইমা হাতে তেতুলগোলা পানি নিয়ে আসে। অতসীর দিকে এগিয়ে দিতেই অনামিকা বাধা দেয়৷ সবে মাত্র তিনমাস চলছে।
রাইমা কে বাধা দেওয়ায় রাইমা বেশ খানিকটা মন খারাপ করে। কারণ সে ভেবেছিল অতসীর বমি এতে কমে যাবে।
অনামিকা সায়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো
-মি.সায়ান মাহমুদ! নিজের জিনিসের খেয়াল নিজে রাখতে শিখুন। খেলা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। ভুলে যাবেন না "প্রতিটি চুনোপুঁটির পিছনে রাঘব বোয়াল থাকে।"
শেষ বাক্যে বলার সময় অনামিকার স্থির দৃষ্টি ছিলো রাইমার দিকে।
চলবে।
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পুরো পৃথিবী একটা সংসার। এখানে কারো জন্য কিছুই থেমে থাকে না। একজন না থাকলে অপর মানুষ ঠিক না থাকা মানুষের দায়িত্ব গুলো পালন করে। তাই হয়তো পৃথিবীকে জগৎ সংসার ও বলে। আমার মতে থাকুক না এই পৃথিবী দায়িত্বের সংসার হিসেবে ! যেখানে দায়িত্বগুলো নিতে হয় না চাইতেও,পালন করতে হয় হাসিমুখে কিংবা অধিকারে!
আজ সত্যি অতসীর সংসারে সুখ নেমে এসেছে। ছেলেরা খেতে বসেছে। সায়ান,ইফাদ,রেদোয়ান, আমিনুর সাহেব, দিহান। কিছুক্ষণ আগে বলা অনামিকার কথা হয়তো তোলপাড় করে চলেছে কারো কারো মনে। তবুও সবাই আড্ডায় মগ্ন।
কিন্তু দিহান স্থির বসতে পারছে না। একটা অজানা অস্থিরতা কাজ করছে মনে। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে হলেও দিহানের প্লেটে খাবার তেমনি আছে। সহ্য না করতে পেরে ডায়নিং টেবিলের উপর সজোরে আঘাত করে দিহান বলল
"কেনো করলি এসব? কেনো? এসব করার খুব প্রয়োজন ছিলো? তুই কি সত্যি মানুষ? "
খাবার টেবিলে সবাই হতভম্ব হয়ে বসে আছে। দিহান কথা শেষ করতে করতে জোরে আবার আঘাত করে। কয়েক মুহুর্ত পর অতসীর হাত অনামিকা এগিয়ে নিয়ে আসছিলো। মেয়েটা কয়েক ঘন্টায় নুইয়ে পড়েছে। ওদের আসতে দেখে
দিহানের সামনে থাকা মানুষটা বেশ আয়েসি ভঙ্গিতে
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। এঁটো হাত খাবারের থালায় রেখেই বলতে শুরু করে
"ওহ! মিস.অনামিকা ইসলাম তাহলে সব বলে দিয়েছে? হুম! ভালো, বেশ ভালো। শেষ পর্যন্ত" আমে দুধে মিশে গেলো,আটি গড়াগড়ি খেলো"।
এদিকে সায়ান খুব শক্ত করে অতসীর ডান আকড়ে ধরে আছে। চেয়ারে বসিয়ে আলতো করে মাথায় ডান হাত রেখে বললো
"যা হচ্ছে বা শুনবে শুধু হালকা ভাবে নিজে শুনবে। মাইন্ডে নিয়ে এগুলো চিন্তা করলে আরো ভেঙে পড়বে। তোমার থাকা প্রয়োজন। না হলে কখনো এখানে নিয়ে আসতাম না। "
সায়ানের কথা শুনে সামনে থাকা ব্যক্তিটি হাসলো। হেসে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
"এত প্রেম কোথায় থেকে আসে রে? তোর এই প্রেমেরে জন্য আজ এই দশা৷ তুই কি জানিস! এই মেয়ের জন্যই তোর মা কেল্লাফতে হতে যাচ্ছিলো?"
দিহান এই কথা শুনে এগিয়ে গিয়ে কলার ধরে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করে
"শালা! জানোয়ার! লেডিকে আর একটা কিছু বললে মেরে এখানে পুতে দিব।
রাইমা খুব শক্তি দিয়ে দিহান কে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
সামনের ব্যক্তি এক ঢোকে পুরো গ্লাস পানি শেষ করে। হাত ধুয়ে চেয়ারে পুনরায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে বলতে লাগলো
" ফাঁদ! আমার নামের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল তোদের জন্য পাতা ফাঁদ। অথচ তোরা বুঝিসনি। হ্যাঁ! আমি ইফাদ, এই পুরো পুতুল নাঁচ নাটকের সংলাপ আমি সাজিয়েছি, আর তোরা? তোরা তো আমার পুতুলনাঁচের সেই পুতুল, যাকে আমি যখন যেমন চেয়েছি, ঠিক তেমন নাঁচিয়েছি। ওয়েট, ওয়েট! প্লিজ কেউ কোন প্রশ্ন করবে না রাইমা! আমি সব বলবো। কিন্তু ডিস্টার্ব আমার মোটেও পছন্দ নয়।
তো মি.সায়ান মাহমুদ! তোর মনে আছে তুই কোথায় তোর মিসেস. মাহমুদ কে দেখেছিলি? আমার কিন্তু মনে আছে। কারণ আমি তোর সাথে ছিলাম।আমাকে লুকিয়ে চড়িয়ে সেদিন দুপুরে যখন তুই অতসীকে নদীর পাড়ে দেখছিলি তার ঠিক ৫৬ মিনিটের মাথায় অতসীর পরিবারের পুরো ডিটেইলস আমি পেয়েছিলাম। যদিও তখন এসব কিছুই প্ল্যান করিনি। কিন্তু ওই যে কপালে লিখন না যায় খন্ডন! তুই যেদিন আন্টিকে অতসীকে দেখিয়েছিলি? সেদিন মাত্র ৩৭ সেকেন্ডের মধ্যে তোর নিয়তি আমি পাল্টে দিয়েছিলাম। কিভাবে?
তুই যখন আন্টিকে দেখালি, ঠিক সে মুহূর্তে তোর ফোনে কল এলো, তুই পিছন ফিরলি, অতসী হঠাৎ কোন কারণে মাটিতে বসে পড়লো, ওর জায়গায় অনামিকা দাঁড়ালো। আন্টি অনামিকা কে দেখলো।,দেখ নিয়তির খেল! তুই পিছনে ফিরতে ফিরতে অনামিকা বসে আর অতসী দাঁড়িয়ে যায়। তুই মনে করিস আন্টি অতসীকে দেখেছে, আন্টি মনে করে তুই অনামিকা কে পছন্দ করিস। তারপরের কাহিনি সবার জানা। যেহেতু ওদের সব খবর আমার কাছে ছিলো তাই আমি খুব সহজেই এরপর অনামিকার সাথে যোগাযোগ করি। আমি জানতাম অনামিকার অতীত,বর্তমান। তাইতো ওকে হাত করতে আমার বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু ঝামেলা হতো অনামিকার বাচ্চা। কি করবো বল! এত বছরের প্রতিশোধ কয়েক সপ্তাহের ভ্রুণের জন্য তো আর নষ্ট হতে দিতে পারি না। তাই জুসের সাথে মেডিসিন মিশিয়ে দিয়েছিলাম।যথারীতি অনামিকার মিসক্যারেজ হলো। ও মানষিক ভাবে আবার ভেঙে পড়লো। আমার জন্য সুবিধা হচ্ছিলো। কিন্তু মাঝেমধ্যে অতসীর জন্য দরদ দেখাতো তখন আবার ছোটবেলা থেকে না পাওয়ার লিস্ট ধরতে হতো।
আন্টি সায়ানকে বলেছিলো
মেয়ে ভালো না, তুই মেয়ের বোন বিয়ে করতে চাইলে আমি এনে দিব। এটা আরো ভালো খবর ছিলো আমার জন্য। ওই যে হিউম্যান সাইকোলজি! দুদিকেই খাটাতে লাগলাম। যখন যখন অনামিকা সায়ানের কাছে অতসীর নিন্দেমন্দ করতো তখন আমি আগুনে ঘি ঢালতাম আমার কথা দিয়ে। অনামিকার অসহায়ত্ব এমন ভাবে সায়ানের কাছে উপস্থাপন করতে লাগলাম যাতে সায়ান বাধ্য হয় অনামিকার সাথে যোগাযোগ রাখতে। এদিকে সায়ানকে আমি যতই বুঝিয়েছি অতসী খারাপ ততই সে ওর জন্য পাগল হচ্ছিলো তাইতো কিডন্যাপ করতে যাচ্ছিলো। ঠিক আগ মুহূর্তে অনামিকাকে অতসীর জায়গায় কিডন্যাপ করাতে হয়। আন্টি যেহেতু বিয়ের আগে কনে দেখেনি তাই আগে বুঝেনি। দেখেনি না আমি দেখতে দেইনি। একদম বিয়ের বরযাত্রী নিয়ে অনামিকা বাড়ি পৌঁছে অনামিকাকে দেখে। আন্টি তখন চাইলেও কিছুই বলতে পারেনি, ছেলের খুশি আর অনামিকার সম্মানের জন্য। কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে অনামিকা বললো সে বিয়ে করবে না। কোন ভাবেই রাজি হচ্ছিলো না। তাই মিথ্যে বিয়ের ড্রামা করতে হয়। তারপর সব নরমাল। কিন্তু এক্সিডেন্ট সব পাল্টে দিলো।ভেবেছিলাম অন্যভাবে দিহানের থেকে প্রতিশোধ নিবো কিন্তু এক্সিডেন্টের পর অতসীর প্রতি দিহানের কেয়ার দেখে অনামিকাকে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য হলাম। না হলে অনামিকা কে মারা আমার জন্য কোন ব্যাপার ছিল না।
আচ্ছা দিহান? তোর কি এটা মনে হলো না? যে ইফাদ বিয়ের পর অতসীর সাপোর্ট হচ্ছে সে চাইলেই বিয়ে আটকাতে পারতো?
রাইমার সন্ধান তোকে আমি দিয়েছিলাম।অতসী, রাইমার মাঝে তুই যে কষ্ট পাচ্ছিস, বিশ্বাস কর! তোর কষ্টে এমন শান্তি আমি সারাজীবনে অনুভব করিনি।
হঠাৎ একসময় মনে হলো অনামিকা কে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাইতো সায়ান অতসী গ্রামে গেলে চেষ্টা করলাম।কিন্তু অতসীর মায়ের জন্য পুরো প্ল্যানে পানি পড়লো। এদিকে হাসপাতালে আবার সবার মিটমাট। শান্ত ভাবে আবার পুনরায় সাজানোর আগেই অনামিকা সুস্থ।কিন্তু কোনভাবে আমার মনে হলো অনামিকা সায়ানের সাথে নিজেকে আবদ্ধ করতে চাচ্ছিলো। হয়তো নিয়তি মেনে। তাইতো অতসীর রুমের ঠিকানা আমিই দিলাম অনামিকাকে। সায়ান ভুল করেনি। কথায় কথায় সায়ানকে এতটা মগ্ন করেছিলাম ও দরজা খোলা থাকার কথা ভুলেই যায়। ওই যে সব মস্তিষ্কের খেলা।
পরবর্তী সব সবার জানা। আমি চাইছিলাম অনামিকা যেনো কোনভাবে আমার নাম মুখে না আনে। অন্তত সেদিন৷ পরবর্তী পুতুল হলো রাইমা। ওকে দিয়ে সবটা এমন ভাবে উপস্থাপন করিয়েছিলাম যে সবাই বাধ্য হয় অনামিকাকে সহমর্মিতা দেখাতে।ইন্ডিয়া পাঠিয়েছিলাম আমি নিজে।সেখানেও চেষ্টায় ছিলাম ওকে সরিয়ে দেওয়ার কিন্তু পারিনি রেদোয়ানের জন্য। আজ সে না পারা আমাকে সত্যি বলতে বাধ্য করে দিলো।
এদিকে সায়ান বাবা হতে চলেছিস। এত সুখ তোকে দেই কি করে? তাইতো অতসীকে কাল রাতে সে মেডিসিন দিয়েছি যার ফলে ও অসুস্থ হবে, বাচ্চা এবোর্ট হয়ে যাবে।
ইফাদের কথা শুনে অতসী খুব জোরে সায়ানের হাত ধরে৷ সায়ান অতসী হাত ছেড়ে দিয়ে ইফাদের নাখ বরাবর ঘুষি মারলে ইফাদ পড়ে যায়।
আফরিন দ্রুত ইফাদকে টেনে তুলে শাড়ির আঁচল দিয়ে নাক থেকে পড়া রক্ত মুছে দিচ্ছিল।অঝোরে কাঁদছিল আফরিন।
দিহান শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো কেনো করলি এমন?
উচ্চশব্দে গা দুলিয়ে হেসে ইফাদ উত্তর দেয়
মনে আছে মাধ্যমিকের পর আমাদের সাইকেল রেস? সেই রেসে তোরা হেরেছিলি, জিতেছিলাম আমি। কিন্তু ফিরে আসার সময় আমাদের এক্সিডেন্ট হয়। তোরা একজন আরেকজনের হাত ধরলেও আমার হাত ধরিস নি। আমি পড়ে যাই প্রায় ৭০ফিট উঁচু জায়গা থেকে।
আমার স্বপ্ন,সব শেষ হয়ে যায় সেরাতে। আমি কখনো সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারিনি। কেনো জানিস? আমার ডান পায়ের গোড়ালিতে সমস্যা হয়।আমি ঠিক মতো দৌড়াতে পারিনা। ঠিক যেদিন আমার সুখ আমার স্বপ্ন তোরা ছিনিয়ে নিয়েছিলি সেদিন থেকে আমিও প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি। এবং আমি পেরেছি।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সায়ান বললো
"ইফাদ! সেদিন যা হয়েছিলো সব এক্সিডেন্ট মাত্র। আমাদের কারো হাত ধরার সুযোগ তুই পেয়েছিলি না। দিহান আমাকে তুলে নেওয়ার পর হাত বাড়ানোর আগেই তুই পড়ে গিয়েছিলি। এতে কারো দোষ ছিল না।যা দোষ ছিল সব আমাদের নিয়তির।
বিনিময়ে হাসলো ইফাদ। কিন্তু কোন উত্তর দিলো না।
প্রায় দুইমাস পর
আজকে অতসীর প্রথম সোনোগ্রাফী রিপোর্ট হাতে পেলো। তিন তিনটে বাবু আসতে চলেছে। সায়ানের খুশীর থেকে চিন্তা বেশি। এই একটু পেটে তিনজনের জায়গা হবে কি করে?.
সায়ানের এমন মিষ্টি চিন্তায় অতসী শুধুই হাসে। ইদানীং তো রাইমা প্রতিদিন আসে। পেটের কাছে মুখ নিয়ে হাজারো গল্প করে। অতসী কে? অতসীকে তো রাইমা চিনেই না।
সেদিন সায়ান দিহানের ডান হাত নিয়ে অতসীর পেটে রেখে বলে
" তোর অনুভব করার অধিকার আছে। অন্তত অতসীর বন্ধু হিসেবেও তুই এই সুখ অনুভব করতে পারিস। "
দিহান সেদিন সবে মাত্র দুবাই থেকে ফিরেছে। ক্লান্ত শরীরে যেনো স্নিগ্ধতার বৃষ্টি হচ্ছিলো। মিনিট দশেক পর দিহান রাইমার দিকে তাকিয়ে বললো
"এবার তো রাই আমারো জুনিয়র মেহেবুব চাই। না হলে আমার এই বাবাইগুলো কার সাথে খেলবে? "
রাইমা লজ্জা পেয়ে অতসীর কাধে মুখ লুকালে অতসী বলে
"দিহান! আমাদের দুই বান্ধুবীর আগে থেকেই ডিল করা আছে। আমরা ভবিষ্যৎ কালে বেয়াইন হবো। আপনার আপত্তি আছে? "
"আরে আপত্তি? কিসের আপত্তি? আজকেই পাকা কথা দিয়ে দিলাম।দিহান তোর মেয়েকে আমার ছেলে দিয়ে আনবো। আপত্তি থাকলে তুলে আনবো। তারপর বিয়ে করিয়ে দরকার পড়লে ঘরে বন্দী করে রাখবো।"
"শালা! তুই এছাড়া আর পারিস টা কি? খালি গুন্ডামি? তবে আমি রাজী। কিন্তু তার আগে লেডি তোমার রাই কে বুঝাও! "
রাইমা মেকি রাগ করে দৌড়ে চলে যায়। তখন অতসী বলে
"আমাদের সবার সব গুছিয়ে উঠতেই দাদাভাইয়ের সব তছনছ হয়ে গেলো। সামনের মাসে হয়তো রেদোয়ান ভাই আপুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে। বাবার অনুরোধ কিংবা আমরা মিলে হয়তো আপুকে রাজী করিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু কখনো ভেবেছো? আফরিনের মনের অবস্থা? ও কি করে আপুকে মেনে নিবে? আর দাদাভাই?
" ইফাদ যা করেছে এর জন্য ওর যা শাস্তি হয়েছে উপযুক্ত শাস্তি। ও যদি ওর ভুল বুঝে অনুতপ্ত হয় তবে ফিরে আসার পর আমরা ওকে ফিরিয়ে দিব না। ভালোবেসে জড়িয়ে নিবো। কিন্তু আগে অনুতপ্ত হতে হবে। "
সায়ানের কথায় দিহান সহমত প্রকাশ করে বললো
"লেডি! এসব চিন্তা করো না।আমরা ইফাদ কে ফেলে দিবো না। কিন্তু ও প্রতিশোধের নেশায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে৷ বিবেকহীন, মনুষ্যত্বহীন মানুষ যে পশুর থেকেও অধম। "
তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে ইফাদের। অনামিকা মামলা দায়ের করে। ইফাদ সব দোষ স্বীকার করে। অনামিকা নিজের দোষের কথাও বলে সে নিজের শাস্তি চাইলেও ডক্টর নাতাশা জবানবন্দি দেয় অনামিকা তখন মানষিক ভাবে অসুস্থ ছিলো। ডক্টর নাতাশাকে ইফাদ স্বাক্ষী দিতে অনুরোধ করে।
মাঝেমধ্যে অতসী আসে ইফাদের সাথে দেখা করতে কিন্তু ইফাদ দেখা করেনা। সে বলেছে
"যেদিন পশু থেকে মানুষ হতে পারবো সেদিন তোমার কাছে আসবো। "
অতসী ওর দাদাভাইয়ের অপেক্ষায় আছে। হয়তো ইফাদ অনুতপ্ত! তাই হয়তো এমন বলে।
এত কিছুর মাঝেও আফরিন ইফাদকে ছেড়ে যায়নি। কারণ যে মানুষকে অন্তর থেকে ভালোবাসা যায় তাকে কখনো ঘৃণা করা যায় না। "
আফরিনের সাথে ইফাদ দেখা করলেই ইফাদ বলে
"তুমি অবশ্যই চাইবে না, জেল ফেরত আসামীকে তোমার জীবনসঙ্গী হিসেবে! তুমি নিজের জীবনে এগিয়ে যাও। আমি দাবী রাখবো না। "
আফরিন বাকা হাসি হাসে প্রতিউত্তরে। যতখানি হাত স্পর্শ যায়,ততখানি স্পর্শ করে বলে
"তুমি ফিরে আসা অবধি তোমার দায়িত্বগুলো না হয় আমার থাকুক।আমি নিলাম তো সব দায়িত্ব তোমার। তুমি শুধু ভুলগুলো শুধরে, পবিত্র হয়ে ফিরে এসো।
আমি অপেক্ষা করবো। "
সমাপ্ত
Comments
Post a Comment